লাইফস্টাইল

Yoga and Meditative Asanas | এক ঢিলে তিন পাখি! এখন থেকেই এই যোগাসনগুলি করলে পুজোয় মিলবে সুঠাম শরীর, জেল্লাদার ত্বক ও চুল!

Yoga and Meditative Asanas | এক ঢিলে তিন পাখি! এখন থেকেই এই যোগাসনগুলি করলে পুজোয় মিলবে সুঠাম শরীর, জেল্লাদার ত্বক ও চুল!
Key Highlights

পুজোতে ঝরঝরে শরীর ও পরিষ্কার ত্বক ও চুল পেতে হাজার হাজার টাকা খরচের দরকার নেই। বিশেষ কিছু যোগাসন বা ধ্যানমূলক আসন করলেই মিলবে সুফল।

যোগাসন (Yogasana) বা ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas)  এর উপকারিতা অনস্বীকার্য। শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে এবং নানান জানা-অজানা রোগ ব্যাধি থেকে রক্ষা কবচের মতো কাজ করে যোগব্যায়াম। বর্তমানে ভারত (India) থেকে এই শরীরচর্চার অভ্যাস ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। গোটা দুনিয়া জুড়ে আলোচিত হয় এর উপকারিতা। যোগব্যায়ামের গুনাগুন এবং উপকারিতা সম্পর্কে সমাজে আরও ইতিব্বাচক বার্তা প্রচার করতে এবং সকলকে যোগব্যায়ামের অভ্যাস করার জন্য উৎসাহ করতে যোগব্যায়াম সক্রান্ত একাধিক বিশেষ দিবস পালন করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম, ২৫সে সেপ্টেম্বর। এদিন পালন করা হয় জাতীয় যোগফিট দিবস (National Yogafit Day)।

জাতীয় যোগফিট দিবস ।  National Yoga Fit Day :

২৫ সে সেপ্টেম্বর, জাতীয় যোগফিট দিবস, যোগাসন (Yogasana) ও ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) এর মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার উদযাপন করা হয়। যোগব্যায়াম হল একটি প্রাচীন মানসিক, শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক অনুশীলন, যা ভারতে উদ্ভূত হয়েছিল। 'যোগ' শব্দটি সংস্কৃত থেকে এসেছে, যার আক্ষরিক অর্থ হলো- যোগদান বা একত্রিত হওয়া। অর্থাৎ দেহ ও মনের মিলনের প্রতীক।

 অনুমান, খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের প্রথমার্ধের প্রথম দিকের উপনিষদে, যোগাসন  উদ্ভূত হয়েছিল এবং ৫০০ থেকে ২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে, জৈন এবং বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলিতেও যোগ ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিমা বিশ্বে এলিটদের মধ্যেও  যোগাসন (Yogasana) ও ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) এর চর্চা ছড়িয়ে পরে। ১৮৯০ সালে ইউরোপ এবং ইউনাইটেড ভ্রমণের সময়ে যোগব্যায়ামের সম্পৰ্কে প্রচার করেছিলেন স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ। এরপর ধীরে ধীরে ভারত অতিক্রম করে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পরে যোগব্যায়ামের চর্চা।

 উল্লেখ্য, পুজোর আর মাস খানেকও বাকি নেই। রীতিমতো কোমড় বেঁধে সকলেই নেমে পড়েছেন পুজোর শপিং করতে। তবে সেই সঙ্গে চলছে শরীরচর্চাও। পুজোর আগে ফিটনেস বা সুঠাম চেহারার হিড়িক জাগে কমবেশি সকলের মধ্যেই। অনেকে আবার শখ করে ভর্তি হন জিমেও। তবে দিন কয়েকের জিম অভ্যাসে সেরকম পরিবর্তন হয়না। তবে এমন কিছু যোগাসন (Yogasana) ও ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) রয়েছে যা করতে সহজ হলেও, এর উপকার প্রচুর। পাশাপাশি খুব কম সময়ের মধ্যেই সাহায্য করে সুঠাম চেহারা পেতে। কেবল মেদ ঝরাতেই নয়, ত্বক এবং চুলেরও বিশেষ জেল্লা এনে দেবে এই যোগব্যায়ামের অভ্যাস। দেখুন পুজোর আগেই সুঠাম চেহারা পেতে এবং ত্বক ও চুলের জেল্লা বৃদ্ধি করতে কোন কোন যোগার অভ্যাস করবেন।

যোগাসন এবং ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : ২১ টি সেরা যোগাসন এবং তাদের উপকারিতা সঙ্গে ছবি ও ভিডিও

১. ভূজঙ্গাসন । Bhujangasana :

ভূজঙ্গাসনের একাধিক উপকারিতা রয়েছে। এই যোগাসন (Yogasana) বা ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) নিয়মিত করলে কোমরের ব্যথা কমে। পাশাপাশি, কোষ্ঠের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে, সেই সঙ্গে ত্বকের জেল্লাও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আসন করার সময়ে ত্বকের অন্দরের টক্সিন (Toxin) বেরিয়ে যায় এবং রক্ত সঞ্চালনও বৃদ্ধি পায়। তাই ভূজঙ্গাসন অভ্যাসে ত্বকের জেল্লা বাড়ে। পাশাপাশি এই যোগব্যায়ামের অভ্যাসে শরীর সুঠাম তো হয়ই।

ভুজঙ্গাসন বা কোবরা ভঙ্গি, মেরুদণ্ডের নমনীয়তা এবং শক্তি উন্নত করার জন্য একটি চমৎকার যোগাসন। এটি একটি রিক্লাইন্ড ব্যাকবেন্ড ভঙ্গি যা আপনার মেরুদণ্ডের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে এবং প্রসারিত করে রক্ত​​প্রবাহ বৃদ্ধি করে। বিশেষত প্রজনন অঙ্গ এবং মেরুদণ্ডের অঞ্চলের সমস্যার জন্য এই যোগাসন খুব কার্যকর। এছাড়াও এটি শ্বাস-প্রশ্বাস, শরীর এবং ভঙ্গির সময় অনুভব করা সংবেদনগুলির সাথে সংযোগ করতে সহায়তা করে।

  • ভূজঙ্গাসন করার নিয়ম :

ভূজঙ্গাসন করার জন্য, প্রথমে উল্টো করে শুয়ে পড়ুন। এবার বুকের দুপাশে হাত রেখে কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ তুলুন। আপনার দৃষ্টি রাখবেন সামনের দিকে। এবার দুই পায়ের পাতা জোড়া রাখার চেষ্টা করুন। এবার এই ভঙ্গিটি ২০ সেকেন্ড বজায় করুন। দ্রুত সুফল পেতে দিনে দুবার করে এই যোগাসন অভ্যাস করতে পারেন।

২. উত্তনাসন । Uttanasana :

বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলে থাকেন, উত্তনাসন করার সময়ে স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। এর ফলে হেয়ার ফলিকলে সঠিক পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছায় এবং চুলের গোড়াও মজবুত হয়। অর্থাৎ উত্তনাসনের নিয়মিত অভ্যাস যেমন চুলের সমস্যা দূর করে তেমনই চুলের জেল্লা বৃদ্ধি করে, চুলকে সুস্থ করে।

  • উত্তনাসন করার নিয়ম :

​এই আসন করার জন্য, প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। তারপর দুই হাত সোজা করে উপরের দিকে তুলতে হবে এবং সামনের দিকে ঝুঁকে ধীরে ধীরে হাত নামাতে হবে। এই সময়ে মাটিতে হাত দিয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। অন্তত ১৫ সেকেন্ড এই ভঙ্গি বজায় রাখুন। সুফল পেতে দিনে দুবার এই যোগাসন অভ্যাস করুন।

৩. উষ্ট্রাসন । Ustrasan :

এই আসনটি কোনও রকম দ্বিতীয় ব্যক্তির সাহায্য ছাড়াই সহজে আপনি করতে পারবেন। এই যোগাসনটি নিয়মিত করলে কোমরের পেশীর জোর বৃদ্ধি পায়। এমনকী কোমর এবং পিঠের ব্যথাও কমে। যেসব ব্যক্তির মেরুদণ্ড সামনের দিকে বাঁকা এবং যাদের বয়স অনুসারে বুকের গড়ন সরু বা অপরিণত, তাদের জন্য আসনটি খুবই কার্যকরী । এ আসনটি মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড় নমনীয় ও মজবুত করে তোলে। বুকের পেশী ও পাঁজরের হাড় বৃদ্ধিতে সহায়ক। হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। যারা দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ করেন তাদের জন্য এই যোগাসন অত্যন্ত কার্যকর। থাইরয়েড (thyroid), প্যারাথাইরয়েড (parathyroid) ও টনসিল গ্রন্থি (tonsils) সুস্থ ও সক্রিয় রাখতেও সাহায্য করে এই যোগাসন। পাশাপাশি দেহে শীত-তাপ সহ্যশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক এবং দেহের মধ্যভাগে সঞ্চিত অপ্রয়োজনীয় মেদ হ্রাস করে দেহকে সুগঠিত করে। এছাড়াও চুলের বৃদ্ধি করতেও সাহায্য করে এই আসন।

  • উষ্ট্রাসন করার নিয়ম :

উষ্ট্রাসন করার জন্য প্রথমে পায়ের উপর সোজা হয়ে বসুন। এরপর হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উঠে পড়ুন। খেয়াল রাহবেন যাতে দুই পা সোজা থাকে। পরবর্তী ধাপে কোমর থেকে শরীরে উপরের অংশ পিছনের দিকে ঝোঁকাতে হবে। অন্তত ১৫ সেকেন্ড এই ভঙ্গি ধরে রাখুন। দিনে দুবার করলেই মিলবে সুফল।

৪. বালাসন । Balasan :

ভূজঙ্গাসন করার পরেই বালাসন করে নেওয়া জরুরি। কারণ, এই আসনটি নিয়মিত করলে কোমরের পেশীর জোর বাড়বে এবং ত্বকও ভালো থাকবে। এই আসন করার সময়ে মুখের ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। যার ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বকের টক্সিন বেরিয়ে যায় এবং জেল্লা উপচে পড়ে। বালাসানা ওরফে একটি শিশুর ভঙ্গি, একটি মৃদু বিশ্রামের ভঙ্গি যা শরীর এবং মন উভয়ের জন্য একাধিক সুবিধা প্রদান করে।

  • বালাসন করার নিয়ম :

বালাসন করার জন্য প্রথমে দুই পা ভাঁজ করে হাঁটুর উপরে সোজা হয়ে বসুন। তারপর মেঝেতে মাথা রাখুন। দুই হাত সামনের দিকে ছড়িয়ে দিন। আপনার শরীরের উপরের অংশ স্ট্রেচিং হবে। এই আসনটি অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। দিনে দুই থেকে তিনবার বালাসন করতে পারেন।

পুজোর আগে সুঠাম, ঝরঝরে শরীর এবং পরিষ্কার ত্বক ও সাইনি-সিল্কি চুল সবার কাছেই যেন মিঠে স্বপ্নর মতো। যার ফলে অনেকেই পুজোর মাস খানেক আগের থেকেই শরীর ও রূপ চর্চার জন্য উঠেপড়ে বসেন। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়ে জিমে গিয়ে হাজার হাজার টাকা খরচ করে মেম্বারশিপ না নিয়ে বা মুখে ও চুলে একাধিক রাসায়নিক ব্যবহার না করে দৈনিক বাড়িতে কিছু যোগাসন করলেই সুফল পাওয়া যাবে। তবে এই যোগাসনগুলি করার সঙ্গে ডায়েট মেনে চলা আবশ্যিক।