Online Bengali Typing Keyboard
কীভাবে বাংলা ফন্ট অনলাইন টাইপ করবেন
ওয়েব পৃষ্ঠার উপরের ডান দিকে দেওয়া "বাংলা কীবোর্ড" লিঙ্কটিতে ক্লিক করুন।
লিঙ্কটিতে ক্লিক করার পরে আপনাকে পরবর্তী পৃষ্ঠায় পুনঃনির্দেশিত করা হবে।
এখন প্রদত্ত জায়গায় ইংরেজিতে লিখুন এবং স্পেস দিন। অতঃপর শব্দটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাংলায় অনুবাদ হয়ে যাবে।
যদি অনুবাদিত শব্দগুলিতে কোনও বানান ত্রুটি পাওয়া যায় তবে নির্দিষ্ট শব্দটিতে ক্লিক করুন এবং লেখার জায়গার নীচে উপস্থিত "শব্দ প্রস্তাবনা" বিভাগটি দেখুন।
পরামর্শ তালিকা থেকে সঠিক শব্দটির ওপর ক্লিক করে সেটিকে নির্বাচন করুন। শব্দটিকে একবার ক্লিক করলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিস্থাপন হবে।
আপনার লেখা সমস্ত কিছু অনুলিপি করার জন্য লেখার জায়গার ঠিক নীচে উপস্থিত "কপি টেক্সট " বোতামটি ক্লিক করুন।
ঠিক একইভাবে লেখার জায়গার ঠিক নিচে অবস্থিত "ক্লিয়ারিং এভরিথিং"-এ ক্লিক করে সব লেখা মুছেও ফেলতে পারবেন ।
How to Type Bengali Font Online
- Click on the “Bengali Keyboard” link given on the top-right hand side of the webpage.
- On clicking the link, you will be re-directed to the next page.
- Now, on the space provided start typing in English and enter space. On entering space, the word will be automatically translated into Bengali.
- If you find any spelling error in the translated words, click on the particular word and look into the “word suggestion” section present immediately below the writing space.
- Select the words from the suggestion list that has appropriate spelling by clicking on it. The word will automatically be replaced once you click.
- Next, to copy everything you have written, click on the “Copy Text” button present just below the writing space.
- Similarly, you can also delete everything you have written by clicking on the “Clear Everything” button present just below the writing space.
বাংলা সাহিত্য ও তার ইতিহাস
বাংলাসাহিত্য মূলত বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্যে কর্মকেই বোঝায় । আনুমানিক খ্রিষ্টপূর্ব সপ্তম শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে বাংলা ভাষাকে কেন্দ্র করে সাহিত্য রচনার সূচনা হয়ে থাকে।
খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যেকারের সময়ে রচিত বৌদ্ধ দোহা সংকলন, চর্যাপদ ,বাংলা সাহিত্যের এক অন্যতম প্রাচীনতম ঐতিহ্য। আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আরও তিনটি গ্রন্থের সমন্বয়ে চর্যা গানগুলি নিয়ে সংকলিত গ্রন্থের নাম দিয়েছিলেন' হাজার বছরের পুরনো বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধগান ও দোহা '।
মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে কাব্য গানের প্রাধান্য ছিল ।প্রধানত হিন্দুধর্ম ,ইসলাম ও বাংলার লৌকিক ধর্মবিশ্বাস গুলিকে কেন্দ্র করে গঠিত হয়েছিল সেই সময়কার বাংলা সাহিত্য । মঙ্গল কাব্য, বৈষ্ণব পদাবলী, শাক্ত পদাবলি, বৈষ্ণব সন্তজীবনী' রামায়ণ, মহাভারত, ভগবতের বঙ্গানুবাদ ,পীর সাহিত্য, নাথসাহিত্য বাউল পদাবলি এবং ইসলামিক ধর্ম সাহিত্য ছিল বাংলা সাহিত্যের মূল উপপাদ্য বিষয়।
আধুনিকতার সূত্রপাত ঘটে বাংলা সাহিত্যে ,খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে ।বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের উন্মেষ ঘটেছিল ঊনবিংশ শতাব্দীতে, বাংলায় নবজাগরণের যুগে কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে ।এই সময়কাল থেকেই ধর্মীয় বিষয়বস্তুর পরিবর্তে মানুষ, মানবতাবাদ ও মানব মনস্তত্ত্ব বাংলা সাহিত্যের মূল আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রকট হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পরবর্তী কালে বাংলা সাহিত্য ও দুটি ধারায় বিভক্ত হয় ;একটি কলকাতাকেন্দ্রিক পশ্চিমবঙ্গের ধারা এবং অপরটি ঢাকাকেন্দ্রিক বাংলাদেশের সাহিত্য।
আধুনিককালে বিশ্বের দরবারে বাংলা সাহিত্য একটি অন্যতম সমৃদ্ধ সাহিত্যধারা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে ।কথিত আছে 'ব্রাহ্মী লিপি" থেকে বাংলালিপির উদ্ভব ঘটেছে। হাজার বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ বাংলা সাহিত্য মূলত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়ে থাকে ।
- আদি যুগ বা প্রাচীন যুগ: (আনুমানিক ৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ মতান্তরে ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ-১২০০ খ্রিষ্টাব্দ )
- মধ্যযুগ : (১২০১খ্রিষ্টাব্দ - ১৮০০খ্রিষ্টাব্দ )
- আধুনিক যুগ (১৮০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বর্তমান কাল )
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে নির্দিষ্ট সন তারিখ অনুসরণ করে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রকৃতপক্ষে যুগ বিভাজন করা সম্ভব নয়। বৈশিষ্ট্যসমৃদ্ধ সাহিত্যকর্মের বিচিত্র ধারাই হল নির্দিষ্ট যুগের চিহ্ন ও সাহিত্যের বিবর্তনের ধারাসমূহের পর্যালোচনা করে যুগ বিভাজন করা হয়ে থাকে ।
আদি যুগ বা প্রাচীন যুগ
বাংলা সাহিত্য উদ্ভভের পূর্ববর্তীকালে বাংলায় সংস্কৃত, প্রাকৃত ,ও অবহটৃঠ ভাষায় সাহিত্য রচনার রীতির চলন ছিল। বাংলা সাহিত্যের আদি অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল এই সাহিত্যের মধ্য দিয়েই। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে তুর্কি আক্রমণের অনেক কাল আগেই বাঙালিরা একটি বিশেষ জাতি হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছিল । বাংলা ভাষায় উন্মেষ ঘটেছিল ।তবে অদ্যভাগে বাংলাতে আর্য ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতি ও অনার্য সংস্কৃতির মিলন ঘটতে পারেনি ।
সংস্কৃত ভাষায় রচিত অভিনন্দ ও সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত, শরণ, ধোয়ী, গোবর্ধন, উমাপতি ধরের কাব্য কবিতা, জয়দেবের গীতগোবিন্দম, কোবিন্দ্রবচনসমুচ্চয় ও সদুক্তিকর্ণামৃত নামে দুটি সংস্কৃত শ্লোকসমগ্র এবং অবহটৃঠ ভাষায় লেখা কবিতার সংকলন প্রাকৃত+পৈঙ্গল বাঙালির সাহিত্য রচনাশৈলীর প্রথম উৎকৃষ্ট নিদর্শন । এই সকল গ্রন্থ যদিও বাংলা ভাষায় লেখা হয়নি তাও সমকালীন বাঙালি সমাজ ও মানুষের মানসিকতায় এটি গুরুত্বপূর্ণ নথি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে । এর পরবর্তী সময়কালে বাংলা বৈষ্ণব সাহিত্যে 'গীতগোবিন্দম' কাব্য এক বিশাল প্রভাব বিস্তার করেছিল।
বাংলা ভাষায় রচিত বাংলা সাহিত্যের সর্বপ্রথম নিদর্শন হল চর্যাপদ। চর্যাপদ রচনার সময়কাল ধরা হয় খ্রিষ্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী কাল ।এটি ছিল সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের সাধনার জন্য নিমিত্ত সঙ্গীত। আধুনিককালের ভাষাতাত্ত্বিক গণ বিজ্ঞানসম্মতভাবে তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন যে চর্যার ভাষা আসলে হাজার বছর আগেকার বাংলা ভাষা । সাহিত্য উৎকৃষ্টতার বিচারে এই পদগুলি ছিল কালজয়ী এবং তখনকার বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্র এই পদগুলির মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করা যায় ।
মধ্যযুগ
১২০০ থেকে ১৮০০ মধ্যবর্তী বিস্তর সময়কালকে আমরা 'মধ্যযুগ' বলে চিহ্নিত করে থাকি যার প্রথম নিদর্শন ঝড়ু চণ্ডীদাসের 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন'। তিনি রাধাকৃষ্ণের প্রেম কাহিনি অবলম্বনে এই কাব্যটি রচনা করেন আনুমানিক চৌদ্দ শতকের শেষের দিকে কিংবা পনেরো শতকের প্রথমার্ধে । ব্রজবুলি ভাষার আশ্রয় নিয়ে মৈথিলি কবি বিদ্যাপতি, সমসময়ে রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনি বিষয়ক পদ রচনা করেছিলেন । শাহ মুহাম্মদ সগীর ছিলেন পঞ্চদশ শতকে প্রথম মুসলমান কবি যিনি প্রেম বিষয়ক উপাখ্যান ,জাতীয় কাব্য 'ইউসুফ -জোলেখা 'রচনা করেছিলেন । মধ্যযুগে অনুবাদ সাহিত্যের এক বিশাল পরিব্যাপ্তি ঘটে যার সূত্রপাত হয় কবি কৃত্তিবাস দ্বারা রামায়ণ বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে। মধ্যযুগে এক বিশাল অংশ জুড়ে ছিল 'মঙ্গলকাব্য।‘ পনেরো শতকে এই কাব্যধারায় দেবদেবীর মাহাত্ম্যের বর্ণনা পাওয়া যায় যার পরিব্যাপ্তি ষোল শতকে গিয়ে হয়ে থাকে। এই পর্যায়ের বিভিন্ন শাখাগুলির মধ্যে হল ধর্মমঙ্গল, মনসামঙ্গল, শিব মঙ্গল ,চণ্ডীমঙ্গল ইত্যাদি ।এই ধারার অন্যতম কবিতার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন কবি মানিক দত্ত ,কানাহরি দত্ত ,বিজয় গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপিলাই, কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর প্রমুখ । তবে শ্রী চৈতন্যদেবের আবির্ভাব(১৪৮৬-১৫৩৩) বাংলা সাহিত্যে, মধ্যযুগের সমৃদ্ধির পথকে বিপুলভাবে প্রসারিত করেছিল । মধ্যযুগেরই শুরু হয়েছিল আরাকান রাজ্যে বাংলা সাহিত্যের চর্চা ,এছাড়া শাক্ত পদাবলি, নাথসাহিত্য, বাউল ও অপরাপর লোকসংগীত, ময়মনসিংহ গীতিকা ,পূর্ববঙ্গ গীতিকা, প্রভৃতি রচনা মধ্যযুগের এক অনবদ্য সৃষ্টি হিসেবে বিবেচিত করা হয়ে থাকে । বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ; ত্রয়োদশ শতাব্দী : ১২০১-১৩৫০ অবধি সময়কালকে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বা বন্ধ্যা যুগ বলে কেউ কেউ চিহ্নিত করে থাকে । অনেক চিন্তা ভাবনার পরেও পণ্ডিতেরা এই সময়কাল টি থেকে অন্ধকার দূরীকরণ করতে সক্ষম হন নি। হুমায়ুন আজাদের মতে এই সময়কালে রচিত কোন নির্দিষ্ট সাহিত্যকর্মের নমুনা পাওয়া যায়নি বলে এই যুগ টি কে 'অন্ধকার যুগ' বলে আখ্যা দেওয়া হয়ে থাকে। অন্ধকারাচ্ছন্ন এই যুগ টি প্রকৃত অর্থে সাহিত্যের এক বিষণ্ন কাল। তবে কেউ কেউ মনে করেন যে বাংলা সাহিত্যের উল্লিখিত অন্ধকার যুগ প্রকৃতপক্ষে সাংস্কৃতির বন্ধ্যাত্বের যুগ ছিল না। সীমিত আকারে হলেও সেই সময়ে সাহিত্যও শিক্ষা চর্চা বিদ্যমান ছিল। তবে সেই সময় লোক ভাষা বাংলাকে গ্রহণ করা হয়নি এবং বাংলা সাহিত্যের কোনো নিদর্শন না থাকার কারণেই এই যুগ টিকে মূলত অন্ধকার যুগ বলা হয়ে থাকে। এই সময়ে সাহিত্যের যা যা বিশেষ নিদর্শন পাওয়া গেছে তার মধ্যে অন্যতম হল : ১)প্রাকৃত ভাষার গীতিকবিতায় সংকলিত ,'প্রাকৃত পৈঙ্গল '২)রামাই পণ্ডিতের রচনাসমৃদ্ধ "শূণ্যপুরাণ' (গদ্য পদ্য মিশ্রিত) ৩) হলায়ুধ মিশ্র রচিত 'সেক শুভোদয়া' এবং ৪) ডাক ও খনার বচন । এছাড়া "নিরাঞ্জনের উষ্মা" শূন্য পুরাণের অন্তর্গত এই যুগের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ।
আধুনিক যুগ
বাংলা সাহিত্যে আধুনিক যুগের সঠিক সময়কাল নির্ধারণ করা নি্য়ে বহু মতবিরোধ থাকলেও মোটামুটিভাবে ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে ভারত চন্দ্রের মৃত্যু পরবর্তী কাল থেকে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের শুভারম্ভ হয় বলে বহু সমালোচক মত প্রকাশ করেছেন । কালানুক্রমে আধুনিক যুগকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায় : ১৭৬০-১৭৯৯ সাল,( যুগের প্রথম পর্ব) ১৮০০-১৮৫৮সাল,(যুগের দ্বিতীয় পর্ব) ১৮৫৯-১৯০০সাল,( যুগের তৃতীয় পর্ব) ১৯০১-১৯৪৭সাল, ( যুগের চতুর্থ পর্ব) ১৯৪৮-২০০০সাল,( যুগের পঞ্চম পর্ব) ২০০১খ্রিঃ- বর্তমানকাল পর্যন্ত ( যুগের ষষ্ঠ পর্ব)
বিভিন্ন সময়কার সাহিত্য ধারাসমূহ
চর্যাপদ
বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কাব্যিক নিদর্শন ছিল চর্যাপদ ।এটি রচিত হয়ে থাকে খ্রিস্টীয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়কালে যার রচয়িতা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ। বৌদ্ধধর্মের মূল অর্থ ব্যাখ্যা করা রয়েছে এই পদগুলোতে ।এই চর্যাপদ থেকেই সাধন সঙ্গীতের শাখাটির সূত্রপাতও বিস্তৃতি ঘটেছে।চিত্তাকর্ষক এই পদগুলিতে তৎকালীন বাংলার সামাজিক ও প্রাকৃতিক চিত্র প্রকটভাবে ধরা পড়েছে। চর্যাপদের প্রধান কবিগণ হলেন লুইপাদ, কাহ্নপাদ ,ভুসুকুপাদ, শবরপাদ প্রমুখ বিদ্বজ্জনেরা।
শ্রীকৃষ্ণকীর্তন
ঝড়ু চণ্ডীদাস রচিত 'শ্রীকৃষ্ণকীর্তন' রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক প্রণয় কাব্য । চর্যাপদের পর এটিই ছিল বাংলা সাহিত্যে দ্বিতীয় প্রাচীনতম আবিষ্কৃত নিদর্শন। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে বসন্তরঞ্জন রায় বাঁকুড়ার কাঁকিল্যা গ্রাম থেকে এই কাব্যের পুঁথি আবিষ্কার করেছেন বলে জানা যায়। অনেকের মতে মূল গ্রন্থটির আসল নাম ছিল 'শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ'।জন্ম থেকে শুরু করে বৃন্দাবনে কৃষ্ণের সাথে রাধার প্রেমের সূত্রপাত এবং অবশেষে বৃন্দাবন ও রাধা উভয়কে পরিত্যাগ করে চিরতরে কৃষ্ণের মথুরায় প্রত্যাবর্তন ই ছিল এই কাব্যের মূল উপজীব্য বিষয়বস্তু । তেরো টি খণ্ডে বিভক্ত এই কাব্যটি আখ্যানধর্মী ও সংলাপের আকারে রচনা করা হয়েছিল বলে আভাস মেলে।
মধ্যযুগীয় বাংলা অনুবাদ সাহিত্য
সাহিত্য হিসেবে মধ্যযুগের এই বিশেষ সময়কালে অনুবাদকর্ম এক মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। চৌদ্দ; পনেরো শতকে বাংলাসাহিত্য অনেকাংশে সংস্কৃত -অবহটৃঠ থেকে বর্ণনাভঙ্গি ও বর্ণিত বিষয় আহরণ করেছে। রামায়ণ, মহাভারত ,ভাগবত প্রভৃতি ধর্মশাস্ত্র সমূহ সংস্কৃত- ফারসি- আরবি -হিন্দি থেকে অনূদিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। এভাবে ক্রমপর্যায়ে ভাষা সাহিত্যের বুনিয়াদ গড়ে উঠেছিল। মধ্যযুগে এই অনুবাদকর্মে ও -কবিরাও যথেষ্ট উৎসাহ দেখাতেন। তাই অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি লক্ষ্যণীয় ছিল সেইসব অনুবাদগুলোতে এবং মধ্যযুগীয় বাংলা ভাষায়।
বৈষ্ণব পদাবলি
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে একটি বিশাল কালপর্ব জুড়ে ছিল বৈষ্ণব পদাবলী সাহিত্যের ভান্ডার । বিদ্যাপতি, চণ্ডীদাস ,জ্ঞানদাস ,গোবিন্দ দাস প্রমুখ বহু বিশিষ্ট কবি বৈষ্ণব ধর্মাশ্রিত পদ রচনা করে গেছেন । কৃষ্ণের মাধুর্য লীলাই ছিল এই পদাবলির মূল বৈশিষ্ট্য । অন্যান্য মধ্যযুগীয় সাহিত্যের মতো এটিও বিশেষভাবে ধর্মের দ্বারা আশ্রিত এবং এভাবেই কালক্রমে বৈষ্ণব ধর্মের তত্ত্ব বিশ্বের উপরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।বৈষ্ণব ধর্মতত্ত্বের বিভিন্ন ঘরানা গুলির মধ্যে তাত্ত্বিকভাবে বৃন্দাবনের বৈষ্ণব গোষ্ঠী ছিল সবথেকে বেশি প্রভাবশালী। এই সাহিত্যে ঐশ্বর্য মূর্তি না থাকায় কৃষ্ণভক্তি এখানে শুদ্ধতম রূপে প্রকাশ পেয়েছে এবং বৈষ্ণব কবিসাধকরা কৃষ্ণকে কেউ প্রভু,কেউ পুত্র ,কেউ সখা ও কেউ প্রেমিকরূপে প্রার্থনা করেছেন বৈষ্ণব পদাবলিতে কৃষ্ণের লীলা বিলাসকে সূক্ষাতিসূক্ষ রূপে বিন্যাস করা হয়েছে বিভিন্ন পর্যায়ে ,যথা: অনুরাগ, আক্ষেপানুরাগ কিংবা বিপ্রলব্ধা, খণ্ডিত বা বাসরসজ্জিতা অথবা অভিসার। অনেকে পদাবলির ভাষার মাধুর্যের কারণে একে 'ব্রজবুলি' ভাষা হিসেবে কল্পিত করেছেন । জ্ঞানদাসের কিছু পদও এই ভাষাতেই রচিত হয়েছিল। সাহিত্যিক গুণাবলিতে বৈষ্ণব পদাবলি সু- সমৃদ্ধ ছিল।
মঙ্গলকাব্য
'মঙ্গল' শব্দের আক্ষরিক অর্থ 'কল্যাণ' । দেবদেবীর মহিমা এবং পূজার প্রতিষ্ঠার কাহিনি নিয়েই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সমৃদ্ধ ছিল এ মঙ্গলকাব্য ।এই কাব্যের তিনটি প্রধান ঐতিহ্যের মধ্যে : মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, ধর্মমঙ্গল কাব্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং এই কাব্যে তিন প্রধান চরিত্র হলেন মনসা, চণ্ডী ও ধর্ম ঠাকুর।
বাংলা সাহিত্যের আরও কিছু সম্ভার
বাংলা সাহিত্যের সু সমৃদ্ধির পথে আরো কিছু নাম যেমন: শিবায়ন কাব্য, শাক্তপদাবলি, নাথসাহিত্য, বাউল সাহিত্য, বাংলা লোকসাহিত্য বিশেষভাবে অবদান রেখেছে ।
বর্তমান যুগের সাহিত্যের রূপরেখা
আধুনিক যুগে মানুষের জীবনধারা বদলে যাবার সাথে সাথে বাংলা সাহিত্যেও দেখা গেছে প্রভূত পরিবর্তন। লেখার আঙ্গিক, শব্দচয়ন ও ভাষার উৎকৃষ্টতা তেও এসেছে এক আমূল পরিবর্তন। বিশিষ্ট গদ্যকার প্রমথ চৌধুরী বাংলা সাহিত্যকে একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর স্থাপন করে গিয়েছিলেন। বাংলা গদ্যের উন্মেষ পর্বকালে কিছু রচনাশৈলী বাংলার সাহিত্যকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে রেখেছে :যেমন বঙ্কিম সাহিত্য ,রবীন্দ্রসাহিত্য, আধুনিক বাংলা কবিতা, বাংলা কথাসাহিত্য, বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্য প্রভৃতি উল্লেখনীয় ।
ক্রমবর্ধমান প্রসারের ফলে বাংলা সাহিত্যের এই বিবর্তন প্রত্যেক বাঙালিকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলার মানুষ তাদের জ্ঞানভান্ডারকে উজ্জীবিত করছে এবং নিজেদের সুবিশাল ঐশ্বর্যকে অনুধাবন করতে শিখেছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস তাই আমাদের ঐতিহ্য; আমাদের সত্যিকারের অলংকার।