World Meditation Day | চিন্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলে কাজেও হবে ভুল! নিয়মিত ধ্যান করে কমান স্ট্রেস, বাড়ান মনোযোগ!
একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৭০,০০০ ভাবনার মুখোমুখি হয়। একটার পর একটা চিন্তার স্রোতে প্রতেক্যেই অবিরাম ভেসে চলেছেন। এই চিন্তার পরিমাণ অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে এর প্রভাব পরে আমাদের মানসিক শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর। তবে এই সকল সমস্যার সমাধান করতে পারে মেডিটেশন বা ধ্যান।
জীবন যাত্রার নানান সময়ে নানান কারণে আমাদের মন, মস্তিষ্ক অশান্ত হয়ে ওঠে। মন শান্ত না থাকলে কোনও কাজই ঠিকভাবে করা যায় না। কোনও কাজে মনোযোগ দেওয়া যায় না। আর এই সমস্যা কোনও ওষুধ নয় ঠিক করতে পারে এক অভ্যাস, মেডিটেশন! মেডিটেশন বা ধ্যান হলো আত্মনিমগ্ন হওয়ার প্রক্রিয়া। মেডিটেশন হচ্ছে একটি উপায় বা পথ। স্বাস্থ্যবিদ থেকে শুরু করে মনোবিদরা নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য ধ্যান মুদ্রা (Meditation Mudra) বা ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) অভ্যাস করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই পরামর্শ ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে পড়ুয়া, প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি সকলকেই দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি ধ্যান বা মেডিটেশনের উপকারিতা সম্পর্কে সকলকে অবগত করতে প্রতি বছর ২১সে মে পালন করা হয় বিশ্ব ধ্যান দিবস বা ওয়ার্ল্ড মেডিটেশন ডে (World Meditation Day)।
মেডিটেশন কী এবং মেডিটেশনের উপকারিতা । What is Meditation and Benefits of Meditation :
গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষ গড়ে প্রতিদিন ৭০,০০০ ভাবনার মুখোমুখি হয়। আপনি যদি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৭ ঘণ্টা সময় ঘুমান তাহলে বাকি থাকে ১৭ ঘণ্টা ব্যাপ্তিতে আপনি কম-বেশি ৭০ হাজার ভাবনা ভাবছেন। আবার ৭ ঘণ্টা সময় যে ঘুমাচ্ছেন, সেখানেও কিছু ভাবনা আপনার ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন হিসেবে দেখা দিচ্ছে বা প্রকাশ পাচ্ছে। একটার পর একটা চিন্তার স্রোতে প্রতেক্যেই অবিরাম ভেসে চলেছেন। এই চিন্তার পরিমাণ বাড়তে বাড়তে আমরা যেন চিন্তাকে নয়, চিন্তা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই। আর তখনই ঘটে সমস্যা। মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণবিহীন চিন্তা প্রভাব ফেলে আমাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও। তবে এই সকল সমস্যার সমাধান করতে পারে মেডিটেশন বা ধ্যান। প্রতিদিন মেডিটেশন (Meditation) বা ধ্যান করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে মনকে শান্ত বা স্থির করার জন্য নিয়মিত মেডিটেশন করা উচিত। চাকুরীজীবি হোক কিংবা পড়ুয়া, সকলেই বেশ উপকৃত হন। চাকুরীজীবি ও শিক্ষার্থীদের জন্য ধ্যানের উপকারিতা (benefits of meditation for students)অসীম। মানসিক চাপ থেকে বাড়ে স্ট্রেস (Stress) এবং অ্যাংজাইটি। এই জাতীয় সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে মেডিটেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করলে যে উপকারিতাগুলো পাওয়া যায়-
- মানসিক অবসাদ বা চাপের পাশাপাশি অ্যাংজাইটি বা উৎকণ্ঠা বোধ দূর করে মেডিটেশন। অনেকেই রয়েছেন সামান্য ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে যান। মেডিটেশন বা ধ্যান নিয়মিত ভাবে অভ্যাসের মাধ্যমে এই উৎকণ্ঠা কমানো সম্ভব।
- মনঃসংযোগ বাড়াতে চাইলে ধ্যানের অভ্যাস খুব উপকারী। যে কোনও কাজে মনঃসংযোগ প্রয়োজন। অনেক সময়ই চিন্তার কারণে গভীর মনসংযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না, এক্ষেত্রে উপকার করে ধ্যান।
- মন শান্ত, ধীর স্থির হয় বা মনঃসংযোগ ছাড়াও মানসিক অবসাদ দূর করতেও মেডিটেশন বা ধ্যানের গুরুত্ব অসীম। সকালবেলা কিছুক্ষণ মেডিটেশন করতে পারলে সারাদিন রিফ্রেশ লাগবে।
- আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকলে অনেকক্ষেত্রেই চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এক্ষেত্রে মেডিটেশন করলে নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাও লাভ করা যায়।
আরও পড়ুন : বারে বারে ভুলে যাচ্ছেন? এই যোগাসনগুলো করলেই বাড়বে স্মৃতিশক্তি! উন্নত হবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা!
- অনেকের স্বভাব থাকবে সবকিছু ভুলে যাওয়ার। এই অভ্যাস মারাত্মক আকার নিতে পারে। এই অমনযোগ দূর করতেও মেডিটেশন বা ধ্যান খুব ভাল ভাবে কাজ করে।
- অনিদ্রার সমস্যা থাকলে সেটাও কমাবে মেডিটেশনের অভ্যাস। মেডিটেশন করলে শরীর শান্ত হয়, শিথিল হয়। তার ফলে ভাল ঘুম হয়। শরীরের ক্লান্তি দূর হয় এবং বিশ্রাম পাওয়া যায়।
ধ্যানমূলক আসন । Meditative Asanas :
মেডিটেশনে মানসিক উপকারিতা এবং এর আসনে শারীরিক উপকারিতাও পাওয়া যায়। মন শান্ত, স্থির করার সঙ্গে সঙ্গে শরীর সুস্থ্য রাখতে হলে প্রতিনিয়ত ধ্যান মুদ্রা (Meditation Mudra) বা আসন অভ্যাস করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। দেখে নেওয়া যাক কী কী আসনে ধ্যান অভ্যাস করবেন-
পদ্মাসন । Padmasana :
পদ্মাসন ভঙ্গিতে মেডিটেশন করলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে। এই আসনটি করার জন্য প্রথমে পা সোজা করে বসতে হবে। এরপর বাঁ পা এমনভাবে ভাঁজ করতে হবে যেন বাঁ পা তির্যকভাবে ডান ঊরুতে এবং বাঁ গোড়ালি যতটা সম্ভব নাভির কাছাকাছি থাকে। ডান পায়ের ক্ষেত্রেও একইভাবে উল্টো দিকে ডান গোড়ালিটি নাভির কাছাকাছি রেখে ধ্যান করতে হবে। পদ্মাসনের উপকারিতা (padmasana benefits) আরও মননশীল করে তোলে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে। পাশাপাশি এটি আপনার শরীরকেও শিথিল করে। পদ্মাসনের উপকারিতা (padmasana benefits) সাধারণ পেশীর টান কমায় এবং মনকে শান্ত করে।
সিদ্ধাসন । Siddhasana :
সিদ্ধাসন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। এটি স্নায়ুতে ভারসাম্যপূর্ণ প্রভাব ফেলে। এই আসন করতে হলে প্রথমে পা সোজা করে বসতে হবে। তারপর ডান পা বাঁকিয়ে পা মেঝেতে শরীরের খুব কাছাকাছি রাখতে হবে। এবার বাঁ পা বাঁকিয়ে বাঁ পা ডান পায়ের ওপরে রাখতে হবে। পায়ের তলা ডান ঊরু স্পর্শ করবে। ডান পায়ের আঙুলগুলো ঊরু এবং বাঁ পায়ের মাঝখানে এবং বাঁ পায়ের আঙুলগুলো ঊরু এবং ডান পায়ের মাঝখানে টেনে আনতে হবে। যদি শরীর সোজা রাখা কঠিন হয় বা হাঁটু মেঝেতে না ঠেকে তাহলে বসার জন্য কুশন ব্যবহার করতে পারেন।
সুখাসন । Sukhasana :
সুখাসন করতে হলে দুটি পা ভাঁজ করে একে অপরের ওপর রাখতে হবে। এভাবে বসে মেডিটেশন করা সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। কারণ এই ধ্যানমূলক আসন সবচেয়ে বেশি আরামদায়ক।
স্বস্তিকাসন । Swastikasana :
স্বস্তিকাসন (Swastikasana) অনেকটা সুখাসনের মতোই। ডান পা-টা বাঁ পায়ের ওপর রেখে এবং বাঁ পা ডান পায়ের তলায় রেখে বসতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন দুটো পায়ের পাতা মাটি স্পর্শ করে। এই ধ্যানমূলক আসনও খুব আরামদায়ক। এই ভঙ্গিতে বসে মেডিটেশন করতে পারেন।
বজ্রাসন । Vajrasana :
বজ্রাসন করতে হলে পা দুটো ভাঁজ করে হাঁটু গেড়ে বসতে হবে। খেয়াল রাখবেন, যাতে এ রকমভাবে বসার সময় দুই পায়ের বড় আঙুলটি একে অপরকে স্পর্শ করে। গোড়ালিগুলো সামান্য বাইরের দিকে রাখবেন। এবার এই ভঙ্গিতে বসে মেডিটেশন করতে হবে। এই আসন শরীরের হজমশক্তিকে উদ্দীপিত করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাবার খাওয়ার পর ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য বজ্রাসনে বসা শরীরের জন্য উপকারী।
মেডিটেশন করার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মেনে চলা প্রয়োজন। প্রথমে একটানা অনেকক্ষণ ধ্যান করতে পারবেন না। ফলে অল্প অল্প সময় করে অভ্যাস করতে হবে। ধ্যান বা মেডিটেশন করার সময় আপনার আশেপাশের পরিবেশ শান্ত থাকা প্রয়োজন। প্রয়োজনে হাল্কা মিউজিক চালিয়ে নিতে পারেন। অনেকে ধ্যান বা মেডিটেশন করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নিয়ে থাকেন।