পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের নাম ও ছবি | 7 wonders of the world in Bengali | পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য

Wednesday, July 10 2024, 10:46 am
highlightKey Highlights

বিপুলা এ পৃথিবীর বৈচিত্রের অন্ত নেই । সেই বৈচিত্রের রহস্যভেদ করা একপ্রকার অসম্ভব । বৈচিত্রের বর্ণচ্ছটায় হতচকিত মানুষ আবেগতাড়িত হয়ে বিস্ময়ের বহির্প্রকাশ ঘটিয়েছে বারবার। যুগ যুগ ধরে তাই ধরিত্রীর এই বহুল নিদর্শন মানবজাতিকে আশ্চর্যচকিত করে চলেছে । পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তম আশ্চর্যের নাম ও ছবি গুলি রইলো এই পোস্টে ।


এসব অত্যাশ্চর্য নিদর্শনের মধ্যে থেকে খ্রিষ্টপূর্ব ২২৫ সালে গ্রিক দার্শনিক 'ফিলো', সাতটি বিস্ময়ের তালিকা প্রকাশ করেন । তাঁর এই কর্মে সহায়তা করেন গ্রিসের ঐতিহাসিক হেরোডোটাস, ক্যালিমেকাস এবং এনিপেটার  ।

কালের আবর্তে ,ঝড় ঝঞ্ঝা ও জলোচ্ছ্বাসে গিজার গ্রেট পিরামিড ছাড়া কোনো টির ই আজ  আর অস্তিত্ব নেই  । এরপর  ২০০৭ সালে Seven Wonders এর নতুন এক তালিকা প্রকাশ করা হয়  । ১০০ মিলিয়ন বেশি মানুষের ভোটের সাপেক্ষে যে নতুন তালিকাটি প্রকাশিত হয় যার ফলাফল ঘোষিত হয় ৭ ই জুলাই ২০০৭ সালে লিসবনে, যা বর্তমানে পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য নামে পরিচিত  ।

গ্রেট ওয়াল চায়না (Great Wall of China)

চায়নিজ রাজত্ব মোগলদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এই দেয়ালটা তৈরি করা হয়ে থাকে। প্রায় ৪,০০০ মাইল ধরে এই প্রাচীরটি তৈরি করা হয়ে থাকে। এটি চীনের যৌথ রক্ষা ব্যবস্থার একটি অংশ এবং এটি মানুষের দ্বারা নির্মিত সবথেকে বড় কীর্তি যা মহাকাশ থেকেও দেখা যায়  । মানব নির্মিত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর মধ্যে এটিই বৃহত্তম । 

Install the latest bengali news app

ক্রাইস্ট দ্য রিডিমার মূর্তি (Christ the Redeemer Statue)

খ্রিষ্টপূর্ব ২২০ কিন শি হুয়াং এবং১৩৬৮-১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দ মিং রাজবংশী এই মহাপ্রাচীরের স্থাপনার ক্ষেত্রে এক অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব  স্থাপন করেছিলেন ।১৯৩১ সালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরিওতে অবস্থিত এই মূর্তিটি পৃথিবীর দ্বিতীয় সপ্তাশ্চর্য। ১৩০ ফুট উঁচু এই মূর্তিটি হিটোর দ্যা সিলভা কোস্টা ডিজাইন করেন এবং এটি তৈরিতে প্রায় ২৫০০০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়ে থাকে। এর বেশিরভাগ অর্থ ডোনেশনের মাধ্যমে যোগাড় করা হয়।

আজকেই ইনস্টল করুন বেঙ্গলBYTE অ্যাপ সংক্ষেপে বাংলা সংবাদ পড়তে 

মাচু পিচু (Machu Picchu)

মাচু পিচু কথার অর্থ ‘পুরোনো পাহাড়’। পঞ্চদশ শতকে ইনকা সম্রাট পাকাশুটেক পাহাড়ে মেঘের মধ্যে যে শহর নির্মাণ করেন তার নাম দেওয়া হয় মাচু পিচু।

১৯১১ সালের আগ পর্যন্ত এটি বিশ্ববাসীর কাছে অপরিচিত ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদ Hiram Bingham এটি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন। পেরুর ইনকা শহরে এটি বর্তমান। এটি  পেরুর উরুবাম্বা উপত্যকার ওপরে একটি পর্বতচূড়ায় অবস্থিত । মাচু পিচু পর্যটক দের কাছে একটি আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান এবং এটিকে ১৯৮১ সালে পেরুর সংরক্ষিত ঐতিহাসিক এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এটিকে ১৯৮৩  সালে তাদের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়  । 

আরও পড়ুন : Inspirational stories in bengali

চাচেন ইতজা (Chichen Itza)

মায়ান সভ্যতার সবথেকে বিখ্যাত মন্দির শহর হল  চাচেন ইতজা। মেক্সিকোর ইউকাটান উপদ্বীপে মায়ান সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ, তাদের জীবনযাত্রার নমুনা যেমন পোশাক, মধু, , ক্রীতদাসদের নমুনা এবং লবণ যা ৮০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বের সৃষ্টি এমন নির্দশন পাওয়া যায়। এর বিভিন্ন স্থাপত্যগুলি কুকুলকান পিরামিড ট্রাক মূলের মন্দির হাজার স্তম্ভবিশিষ্ট সভাগৃহ এবং কয়েদিদের খেলার মাঠ-এই দ্রষ্টব্য স্থানগুলি আজও অসামান্য নির্মাণশৈলী ও  মহান কীর্তির পরিচয় বহন করে চলেছে । এটি  সবচেয়ে পুরাতন, ধ্বংসাবশেষ মানমন্দির।

রোমান কলোসিয়াম (The Roman Colosseum)

এই বিশাল অ্যাম্ফিথিয়েটারটি নির্মিত হয়েছিল বিজয় রোম্যান সৈন্যদের পুরস্কৃত করার জন্য এবং রোম সাম্রাজ্যের  গৌরবগাথা তুলে ধরার জন্য । ল্যান্ড অব মার্বেল বা মার্বেলের শহর খ্যাত ইতালির রোমের কেন্দ্রস্থলে   এটি অবস্থিত, যা ফ্লাভিয়ান বংশের সম্রাট ভেস্পাসিয়ান ও তার পুত্র সম্রাট তাইতাস ৭০-৮০ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন।

আরও পড়ুন : আজকের খবর

কলোসিয়াম ‘ফ্লাভিয়ান অ্যাম্ফিথিয়েটার’ নামেও পরিচিত। এখানে গ্লাডিয়েটরদের মল্লযুদ্ধ ও বন্যপ্রাণীদের লড়াই প্রদর্শিত হত। এছাড়াও মঞ্চস্থ হতো বিনোদনমূলক নৌযুদ্ধ। তখন কলোসিয়ামের পুরো গ্যালারি পানিতে ভেসে যেত। বৃহৎ এই অ্যাম্ফিথিয়েটারের দর্শক ধারণক্ষমতা ছিল ৫০ হাজার এবং সূর্যের খরতাপ থেকে দর্শকদের স্বস্তি দিতে শামিয়ানা টাঙানো হত। প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও ভূমিকম্পে এর দুই-তৃতীয়াংশ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায় আজ অবধি এর সৌষ্ঠব-সৌন্দর্য লক্ষ্য করা যায়।।

তাজমহল (Taj Mahal)

তাজমহল উত্তর প্রদেশের আগ্রায় অবস্থিত একটি রাজকীয় সমাধি। যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত এই সৌধটির নির্মাণকার্য শুরু হয়েছিল ১৬০২ খ্রিস্টাব্দে এবং সম্পন্ন হয় ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। তাজমহলের উচ্চতা ৭৩ মিটার ।  পঞ্চম মোঘল সম্রাট শাহজাহানের আদেশে, তাঁর প্রিয়তমা বেগমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এই বিশাল স্মৃতিসোধটি নির্মিত হয়েছিল। সুবিন্যস্ত, প্রাচীর ঘেরা বাগানে শ্বেতমর্মরে প্রস্তুত এই তাজমহল ভারতে মুসলমানি শিল্পের সর্বাপেক্ষা অনুপম রত্ন বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

সম্রাটকে পরবর্তীকালে বন্দি হতে হয়েছিল এবং কথিত আছে যে, তখন তিনি তাঁর ছোট্ট কুঠুরির একটি জানালা দিয়েই কেবলমাত্র তাজমহলকে দেখতে পেতেন। এটি নির্মাণকার্যে প্রায় বাইশ হাজারেরও বেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছিল এবং খরচ হয়েছিল প্রায় বত্রিশ মিলিয়ন টাকা যা বর্তমানে ৫২.৮ বিলিয়ন(২০১৫)। ১৯৮৩ সালে ইউনেসকো তাজমহলকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তালিকাভুক্ত করে এবং ২০০৭ সালে এটিকে বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তালিকাভুক্ত করা হয়।

আরও পড়ুন : Ajker bangla khabar

পেত্রা (Petra) 

নামটি একটি গ্রিক শব্দ ‘petros’ থেকে এসেছে বলে মনে করা হয় যার অর্থ পাথর l আরব মরুভূমির ধারে, নবাটায়েন সাম্রাজ্যের রাজা চতুর্থ আরেটাসের (খ্রিস্টপূর্ব ৯ – ৪০ খ্রিস্টাব্দ) উজ্জ্বল রাজধানী ছিল পেত্রা। জল বহন ও সংরক্ষণ প্রযুক্তিতে পারদর্শী নবাটাইনরা তাদের শহরে বড় বড় সুড়ঙ্গ ও জলধারক কুঠুরি নির্মাণ করেছিল।

গ্রীকো-রোমান শৈলির অনুকরণে নির্মিত একটি নাট্যশালায় ৪০০০ দর্শকের বসার ব্যবস্থা ছিল। এল-ডেয়ার আশ্রমের উপরে অবস্থিত ৪২ মিটার উঁচু হেলেনীয় মন্দিরদ্বার সহ পেত্রার প্রাসাদোপম সমাধিগুলি আজ মধ্য-পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতির উৎকৃষ্ট নিদর্শন।


আরও পড়ুন :  Health tips in bangla

রহস্যময় পৃথিবীর বুকে মানবসৃষ্ট এই নিদর্শনগুলো সত্যিই আশ্চর্য করে চলেছে আমাদের। পরিশেষে বলা যায় যেতে পারে যে ভোটাভুটির মাধ্যমে এই নিদর্শনগুলি শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে শিরোপা পেলেও এ কথা অনস্বীকার্য যে যা সুন্দর তা সমর্থনের পরিসংখ্যান দিয়ে হিসেব করা যায় না, কারণ  সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্য এমন একটি সূক্ষ্ম অনুভূতি যার  তারতম্য  করা চলে না।

FAQ ( সম্ভাব্য প্রশ্নাবলি )

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

বিশ্বের 'সপ্তাশ্চর্যের' মধ্যে ৭ সংখ্যাটির বিশেষ কী তাৎপর্য ?

গ্রিকরা মনে করত, ৭ সংখ্যাটি ‘নিখুঁত’ ও ‘বহু’র পরিচায়ক। সেই থেকেই ৭টি বিস্ময়কর বস্তু নিয়ে এই উন্মাদনার শুরু।

বিশ্বের কোন সংস্থা পৃথিবীর আশ্চর্যজনক স্থানগুলিকে তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল ?

আধুনিক পৃথিবীতে এসে ২০০১ সাল থেকে সুইস করপোরেশনের নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্স ফাউন্ডেশন পৃথিবীর আশ্চর্যজনক স্থান ও স্থাপত্যগুলাকে তালিকাভুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং এগুলি সাম্প্রতিক জরিপে উঠে আসে আধুনিক সপ্তাশ্চর্য হিসেবে।

কোন নিদর্শনকে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বলে দাবি করা হয়ে থাকে ?

সাম্প্রতিক সময়ে গবেষকরা নিউজিল্যান্ডের লেক রোটোনোহনার সিলিকা উপত্যকাকে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য বলে দাবি করছেন। তবে সেটি এখনা স্বীকৃতি পায়নি।

প্রাচীনকালে কারা প্রথম বিশ্বের সাতটি আশ্চর্যের কথা প্রকাশ করেছিলেন ?

খ্রিষ্টপূর্ব ২২৫ সালে গ্রিক দার্শনিক 'ফিলো', সাতটি বিস্ময়ের তালিকা প্রকাশ করেন । তাঁর এই কর্মে সহায়তা করেন গ্রিসের ঐতিহাসিক হেরোডোটাস ক্যালিমেকাস এবং এনিপেটার ।

প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যগুলোর মধ্যে কোন নিদর্শন টিকে সাম্মানিক স্থান দেয়া হয়েছে ?

প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যগুলির মধ্যে থেকে একমাত্র মিশরের পিরামিডকে সাম্মানিক স্থান দেয়া হয়েছে ।

কত সালে এবং কোথায় নতুন সপ্তাশ্চর্যের তালিকা প্রকাশ করা হয় ?

২০০৭ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে নতুন সপ্তাশ্চর্যের তালিকা প্রকাশ করা হয় ।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File