লাইফস্টাইল

World Heart Day and Yoga | বয়স্কদের সঙ্গে কমবয়সীদেরও বাড়ছে হার্টের ঝুঁকি! কয়েকটি যোগাভ্যাসের সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে চললেই দূরে থাকবে হার্ট প্রবলেম!

World Heart Day and Yoga | বয়স্কদের সঙ্গে কমবয়সীদেরও বাড়ছে হার্টের ঝুঁকি! কয়েকটি যোগাভ্যাসের সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে চললেই দূরে থাকবে হার্ট প্রবলেম!
Key Highlights

হার্ট সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ২৯সে সেপ্টেম্বর পালন করা হয় বিশ্ব হৃদয় দিবস বা বিশ্ব হার্ট দিবস। জানুন কোন কোন যোগাসন ও কী নিয়মে সুস্থ্য রাখবেন নিজের হার্ট।

প্রতি বছর ২৯সে সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী 'বিশ্ব হার্ট দিবস' (World Heart Day) বা 'বিশ্ব হৃদয় দিবস'পালন করা হয়। বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ (CVD) সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ-স্বাস্থ্যকর জীবনধারা প্রচারের জন্য প্রতি বছর এই দিবস পালন করা হয়। বর্তমানে হৃদরোগে আক্রান্তের ঘটনা কেবল বয়স্কদেরই নয়, দেখা যায় কম বয়সীদের ক্ষেত্রেও। সম্প্রতি সময়ে হার্টের অসুখ এখন যেভাবে ২০র কোঠা থেকেই কাবু করছে, তাতে হার্টের অসুখের বিষয়ে সচেতনা বৃদ্ধির গুরুত্ব দিন দিন আরও বাড়ছে। সেই উপলক্ষ্যেই বাড়ছে 'বিশ্ব হার্ট দিবস' (World Heart Day) বা 'বিশ্ব হৃদয় দিবসে'র গুরুত্বও।

বিশ্ব হৃদয় দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য । History and Significance of World Heart Day :

প্রথম 'বিশ্ব হার্ট দিবস' (World Heart Day) বা 'বিশ্ব হৃদয় দিবস' পালন করা হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের (World Heart Federation) প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী হিসাবে ২৯সে সেপ্টেম্বর দিনটি বেছে নেওয়া হয়। যদিও প্রথম আনুষ্ঠানিক উদযাপনটি ২৪সে সেপ্টেম্বর, ২০০০ সালে হয়েছিল। বিশ্ব হার্ট দিবসের ধারণাটি বিশ্ব হার্ট ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি আন্তোনি বেই ডি লুনা (Antoni Bei de Luna) প্রবর্তন করেছিলেন।

'বিশ্ব হার্ট দিবস' দিনটি হৃদরোগের গুরুত্ব এবং ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের উপর কার্ডিওভাসকুলার রোগের প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য একটি বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্ম হিসাবে কাজ করে। হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকির কারণ এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে মানুষকে শিক্ষিত করা এই দিবসের মূল লক্ষ্য। উল্লেখ্য, প্রতি বছর হৃদরোগে প্রায় ১৮মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়। কার্ডিওভাসকুলার রোগ বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। বিশ্ব হৃদরোগ দিবসের লক্ষ্য হল মানুষকে তাদের দৈনন্দিন অভ্যাসের ইতিবাচক পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করা এবং স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবা, চিকিত্সার বিকল্পগুলির মাধ্যমে হৃদরোগ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

হার্টের সমস্যা হচ্ছে কি না কীভাবে বুঝবেন? । How do You Know if You Have a Heart Problem?

অনেকেরই ধারণা, বুকে ব্যথা হচ্ছে না মানেই হার্টের সমস্যা নেই। কিন্তু এই ধারণা অত্যন্ত ভুল! হার্টের সমস্যা থাকলে সবসময় যে বুকে ব্যাথা করবে তার কোনও মানে নেই। হার্ট অসুস্থ হলে দেখা দিতে পারে অন্যান্য উপসর্গও, যা সাধারণত অনেকেই অবহেলা করে থাকেন। আর এই অবহেলা থেকেই সূত্রপাত হয় বিপদের! দেখে নিন কোন কোন উপসর্গ দেখা দিলে বুঝবেন আপনার হার্ট সুস্থ নেই, রয়েছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।

যোগাসন এবং ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : ২১ টি সেরা যোগাসন এবং তাদের উপকারিতা সঙ্গে ছবি ও ভিডিও

  • বুকে ব্যথা বা অস্বস্তি : হার্টের সমস্যা থাকলে উপসর্গ হিসেবে সব সময় বুকে ব্যথা করবে তার কোনো মানে নেই। হার্টের সমস্যা থাকলে অনেক সময় হাতে যন্ত্রণা, ঘাড়ে যন্ত্রনা, পিঠে যন্ত্রণার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে।
  •  অনিয়মিত হৃদস্পন্দন : যদি আপনার হার্টে হঠাৎ ধড়ফড়ানি অনুভব হয় অর্থাৎ  অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হয় তাহলে সতর্ক হয়ে যান। অ্যারিথমিয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন, গুরুতর হৃদরোগের ইঙ্গিত হতে পারে।
  • হাত পা ফোলা : হঠাৎ পা, গোড়ালি, পা বা পেট ফুলে যাওয়াও হার্ট অ্যাটাকের আগাম লক্ষণ হতে পারে। যখন হার্ট ঠিক ভাবে পাম্প হয়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্ত পৌঁছে দিতে পারে না তখন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফ্লুিড জমা হতে শুরু করে।
  • শ্বাসকষ্ট :  হঠাৎ শ্বাসকষ্টও হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। শুধু দৌড়াদৌড়ি করলে নয়, হালকা কাজকর্ম করলে বা বিশ্রামে থাকলেই যদি আপনার শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাহলে হার্টের সমস্যা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
  •  ক্লান্তি : হার্টের অবস্থা ভাল নয়, তার জানান দিতে পারে অতিরিক্ত ক্লান্তিও। অকারণে ক্লান্তিও হার্টের সমস্যার কারণে হয়ে থাকে।  
  • মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া : মস্তিষ্কে অপর্যাপ্ত রক্ত ​​​​সরবরাহও কার্ডিয়াক অসুখের  উপসর্গ হতে পারে। সেই সঙ্গে মাথা ঘোরা, মাথা হালকা বোধ হওয়া, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া , হার্টের অসুখের লক্ষণ হতে পারে।
  • অতিরিক্ত ঘাম : অত্যধিক ঘাম একটি কার্ডিয়াক অবস্থার লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে হার্ট অ্যাটাক।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া : হার্ট অ্যাটাক বা অন্যান্য কার্ডিয়াক সমস্যা থাকলে বমি বমি ভাব অনুভব হতে পারে। এই সমস্যা বিশেষত মহিলাদের ক্ষেত্রে বেশ দেখা যায়।
  • শরীরের উপরের অংশে ব্যথা : বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে, উপরের পেট, বাহু, কাঁধ, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা বা অস্বস্তি হার্টের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
  • ওজন বৃদ্ধি: হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়াও হৃদযন্ত্রের অসুখের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।

কীভাবে হার্টের যত্ন নেবেন? । How to Take Care of The Heart?

'বিশ্ব হার্ট দিবস' (World Heart Day) বা 'বিশ্ব হৃদয় দিবসে'র মূল লক্ষ্য হলো সমাজে হৃদরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং সকলকে হৃদরোগ প্রতিকার করার জন্য নিজের যত্ন নিতে উৎসাহিত করা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, হার্ট সুস্থ্য রাখার জন্য বেশ কিছু নিয়ম মানতে হবে।

  • ১. হার্ট সুস্থ্য রাখার জন্য  অন্যতম হল, সঠিক খাদ্যাভাস। এরক্ষেত্রে সম্পৃক্ত চর্বি, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত তেল-ঘির রান্না যথাসম্ভব কম খেতে হবে। চিনি খাওয়া একদম বন্ধ রাখাই ভালো।
  • ২. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মেদ-ভুঁড়ি যেন না জমে। বয়স ও উচ্চতা অনুযায়ী পরিমিত ওজন বজায় রাখতে হবে।
  • ৩.  হার্ট ভালো রাখতে হলে ধূমপান করা চলবে না। সিগারেট-তামাক খাওয়া একদম নিষেধ। কোনো রকম নেশা একদম বাদ। কারণ ধূমপান হৃদ্‌রোগ ডেকে আনে।
  • ৪. তবে হার্ট ভালো রাখার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শরীর চর্চা। দৈনিক শরীর চর্চা করা খুব প্রয়োজন। সকাল বা সন্ধ্যায় ঘণ্টাখানেক হাঁটা ভালো ব্যায়াম। সময়ের অভাব থাকলে অন্তত আধা ঘণ্টা বা ১৫ মিনিটও যদি ব্যায়াম করেন তাতেও কাজ দেবে। তবে সবচেয়ে বেশি উপকার দেবে যোগাসন (Yoga)।

হার্ট ভালো রাখার যোগাসন । Yoga to Keep the Heart Healthy :

যোগাসন (Yoga)শরীর সুস্থ্য রাখার এবং রোগ ব্যাধি থেকে দূরে থাকার সবথেকে কার্যকর এবং সহজ উপায়। বর্তমানে দেখা যায় ২০ এর কোঠার ব্যক্তিদেরও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি এমন ঘটনাও দেখা গিয়েছে, কোনও তরুণ বা তরুণী জিমে শরীর চর্চা করতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় মৃত্যুর মতোও সংবাদ বারংবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সরি চর্চা করতে হেভি ওয়েট লিফটিং বা জিম না করে নিয়মিত কিছু সময়ের জন্য যোগাসন (Yoga) করলেই দারুন সুফল পাওয়া যায়। এমন বেশ কিছু যোগাসন রয়েছে যা গোটা শরীরকে সুস্থ্য রাখার পাশাপাশি বিশেষভাবে সৃষ্টি এবং সচল রাখে হার্ট। দেখে নিন কোন কোন যোগাসন নিয়মিত করলে আপনার হার্ট ভালো থাকবে।

১. পদহস্তাসন । Padahastasana :

পদহস্তাসন কেবল হার্টের বিশেষ যত্ন নেওয়াই নয়, যত্ন নেয় গোটা শরীরকে। একাধিক উপকারিতা রয়েছে এই যোগাসনের। ডায়াবেটিস, ক্ষুধামান্দ্য, পেটের অসুখ, অজীর্ণ, সায়েটিকা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস, কোলাইটিস, পেটে মেদ, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ, লম্বা হওয়ার প্রয়োজনে, সাইনাসাইটিস ইত্যাদিতে উপকারী পদহস্তাসন। এই আসনটি করতে প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। তার পর ধীরে ধীরে পা দুটো সামান্য ফাঁক করুন। এ বার ভাল করে শ্বাস নিতে নিতে হাত দুটো উপরের দিকে তুলুন। এ বার শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে কোমর থেকে শরীরের উপরের অংশ সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন। হাতের সাহায্যে গোড়ালি স্পর্শ করুন। খেয়াল রাখবেন হাঁটু যেন না ভাঙে। ২০-৩০ সেকেন্ড এই অবস্থায় থাকার পর আগের অবস্থায় ফিরে আসুন।

২. দণ্ডাসন । Dandasana :

এই আসন করার জন্য প্রথমে মাটিতে বসে পা দুটি সামনের দিকে মেলে দিন‌। এই অবস্থায় পা দুটির গোড়ালি পাশপাশি লেগে থাকবে। এরপর মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হবে। শরীরের উপরের অংশকে সাপোর্ট দিতে দুই হাত নিতম্বের পাশাপাশি মাটিতে ভর দিয়ে রাখুন।

৩. সুখাসন । Sukhasana :

সংষ্কৃত শব্দ ‘সুখ’ এর অর্থ ‘সহজ’ বা ‘আরামদায়ক’। সহজ ও আরামদায়ক ভঙ্গিমায় করা হয় বলেই আসনটির এই নামকরণ। সুখাসন আসলে পা মুড়ে আরাম করে বসার এক চেনা ভঙ্গি। এটি অত্যন্ত প্রাচীন যোগাসন। মূলত ধ্যান করার সময় এই ভাবে বসা হয়। ওই যোগাসন করার সময় নিশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হবে।

৪. নৌকাসন । Naukasana :

নৌকাসনে পুরো ভরটাই থাকবে আপনার কোমর ও নিতম্বের উপর। এই আসনে আপনার শরীর কিছুটা পিছনে হেলিয়ে দিন। পা দুটো মাটি থেকে কিছুটা উঠে আসবে এই মুহূর্তে। এর পর আপনার হাত দুটো সামনের দিকে এগিয়ে দিন।  

৫. সন্তোলনাসন । Santolanasana :

 শরীরের ভারসাম্যকেই বলা হয় সন্তোলন। এই ব্যায়াম শরীরের বিভিন্ন পেশির মজবুত করে। ফলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকে। এই ব্যায়ামে উপুড় হয়ে মেঝের উপর দুই হাত দিয়ে ভর রাখুন। এই অবস্থায় এক হাত উপর দিকে বাড়িয়ে ফিরিয়ে আনুন।‌ একই কাজ অন্য হাতের ক্ষেত্রেও করুন।

৬. ভুজঙ্গাসন । Bhujangasana :

ভুজঙ্গাসন নিয়মিত অভ্যাস করলে হার্ট সুস্থ্য থাকে পস্থাপাশি পিঠের হাড় মজবুত হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়, গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। পেটের অতিরিক্ত চর্বি দূর হয় এবং হজমে উন্নতি হয়। ভুজঙ্গাসন করে কিডনি এবং লিভার সুস্থ থাকে। এই আসনটি করতে প্রথমে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন। এ বার হাতের তালু মেঝের উপর ভর দিয়ে পাঁজরের দুই পাশে রাখুন। এর পর কোমর থেকে পা পর্যন্ত মাটিতে রেখে হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে বাকি শরীরটা ধীরে ধীরে উপরের দিকে তুলুন। এর পর মাথা বেঁকিয়ে উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে ২০-৩০ সেকেন্ড থাকার পর আগের অবস্থায় ফিরে যান।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ঘরে ঘরে হাইব্লাড প্রেসারের রোগ, হৃদরোগ। শুধু বয়স্করা নয়, কমবয়সীরাও রীতিমতো ঘায়েল হচ্ছেন, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায়। আর তার ফলস্বরূপ কমবয়সেই হচ্ছে হার্ট অ্যাটাক। যার ফলে হার্ট সুস্থ্য রাখার তাগিদ কেবল বয়স্কদেরই নয় কম বয়সীদেরও। চিকিৎসকদের মতে, কম বয়স থেকেই নিয়মিত শরীর চর্চা, সঠিক খাদ্যাভাস রাখা প্রয়োজন সুস্থ্য হার্টের জন্য।