Yoga for Mental Health | মানসিক অসুস্থ্যতাকে এড়িয়ে যাবেন না! যোগাসন করে দূর করুন ডিপ্রেশন,অ্যানজাইটি!
২০১৯ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী বিশ্বের ৯৫০ মিলিয়ন মানুষ মানসিক অসুস্থ্যতায় আক্রান্ত। ফলে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সমাজে গুরুত্ব এবং সচেতনতা প্রচার করতে ১০ই অক্টোবর পালন করা হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। দেখুন কোন যোগাসন বা ধ্যানমূলক আসন করলে ভালো থাকবে মানিসক স্বাস্থ্য।
'হেলথ ইজ ওয়েলথ' বাণীটির সঙ্গে সকলেই ছোট বেলার থেকে পরিচিত। তবে 'হেলথ' বা স্বাস্থ্য মানে কিন্তু কেবল শরীর স্বাস্থ্য নয়, শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও! আমাদের শরীরে কিছু অসুবিধা, অস্তিত অনুভব হলেই ডাক্তার, ওষুধ কত কিছুর সাহায্য নিয়ে থাকি আমরা। কিন্তু যদি কেউ মানসিক অসুস্থতা কিংবা মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে তা 'মাথার ব্যামো' বা 'পাগলমি' বলে থাকেনা অনেকেই। আবার অনেক ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্বই দেন না। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি মানব জাতিতে বিশেষত ভারতীয়দের মধ্যে বেশি অগ্রাহ্যতা দেখা যায়। তবে এই অগ্রাহ্যতা থেকেই সূত্রপাত হয় ভয়াবহ ঘটনার। সমাজে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বিশ্বব্যাপী ১০ই অক্টোবর পালন করা হয় 'বিশ্ব মানসিক দিবস ' (World Mental Health Day)।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের ইতিহাস । History of World Mental Health Day :
১৯৪৮ সালে বিশ্ব ফেডারেশন ফর মেন্টাল হেলথ (WFMH) প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৯২ সালে তারা বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের সূচনা করে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ১৫০টিরও বেশি দেশে ১০ই অক্টোবর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। চলতি বছর বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বা থিম হলো ‘মানসিক স্বাস্থ্য একটি সর্বজনীন মানবাধিকার’ (Mental Health is a Universal Human Right)।
যোগাসন ও ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : বয়স্কদের সঙ্গে কমবয়সীদেরও বাড়ছে হার্টের ঝুঁকি! কয়েকটি যোগাভ্যাসের সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে চললেই দূরে থাকবে হার্ট প্রবলেম!
মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যোগাসন । Yoga for Mental Health :
ডায়বেটিস, ব্লাড প্রেশার, জ্বর, সর্দি-কাশির মত শরীরের অন্যান্য রোগের সঙ্গে মানসিক রোগের কোনও পার্থক্য নেই। সম্প্রতি মানসিক অসুস্থ্যতার ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও অনেকেই ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটির মত সমস্যাকে রোগ হিসাবে গণ্য করে না। কিন্তু এগুলিও এক প্রকার মানসিক অসুস্থতা , যা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক হয়ে যায়। অনেকেই এই ক্ষেত্রে ভেবে থাকেন এই ধরণের মানসিক অসুস্থ্যতার চিকিৎসা মানেই ডাক্তার, একগাদা ওষুধ। তার ওপর যেহেতু অনেকের মতে এখনও মানসিক অসুস্থ্যতা 'পাগলামির রোগ', তার ফলে সকলের সামনে ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটির কথা কাউকে জানাতেও চাননা মানসিক অসুস্থ্যতায় আক্রান্ত ব্যক্তি। তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মত, ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটি, উদ্বেগের মতো মানসিক অসুস্থ্যতা যোগাসন (Yoga) করেও ঠিক করা সম্ভব!
যোগাসন ও ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : এক ঢিলে তিন পাখি! এখন থেকেই এই যোগাসনগুলি করলে পুজোয় মিলবে সুঠাম শরীর, জেল্লাদার ত্বক ও চুল!
নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে শরীর ও মনে একটা সতেজতা দেখা দেয়। এতে প্রভাব উজ্জ্বল ভাবে ফুটে ওঠে, যার ফলে খুব সহজেই মেজাজ ফুরফুরে থাকে। নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের সঠিক নিয়ন্ত্রণের ফলে উত্তেজনা ও দুশ্চিন্তা কমে আসে, যার ফলে মনও ভাল থাকে। এখান থেকেই অনেকটা কমে যায় অ্যানজাইটি ও ডিপ্রেশনের মত মানসিক রোগের ঝুঁকি। অন্যদিকে, নিজের মধ্যে তৈরি করে আত্মসংযমবোধ। মনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর হয়ে যায় যোগাসন করার পড়ে। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে মানসিক চাপ ও ক্লান্তিভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং তার সঙ্গে দূর হয়ে যায় ডিপ্রেশন, অ্যানজাইটির মত সমস্যাও। তাই অ্যানজাইটি ও ডিপ্রেশন এবং পড়াশোনা বা কাজের দ্বারা তৈরি হওয়া মানসিক চাপ কমানোর জন্য নিয়মিত যোগাসন (Yoga)বা ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। দেখে নিন কোন কোন যোগাসন (Yoga)বা ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) করলে ভালো থাকবে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য।
১. সুখাসন । Sukhasana :
সংষ্কৃত শব্দ ‘সুখ’ এর অর্থ ‘সহজ’ বা ‘আরামদায়ক’। সহজ ও আরামদায়ক ভঙ্গিমায় করা হয় বলেই এই যোগাসন (Yoga) এর এই নামকরণ। সুখাসন আসলে পা মুড়ে আরাম করে বসার এক চেনা ভঙ্গি। এটি অত্যন্ত প্রাচীন যোগাসন। মূলত ধ্যান করার সময় এই ভাবে বসা হয়। ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) হিসেবে এই আসন অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই যোগাসন করার সময় নিশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে হয়। এই আসনের নিয়মিত অভ্যাসে উদ্বেগ কমে, মানসিক শান্তি লাভ হয়।
যোগাসন ও ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : দৈনন্দিন ১০ মিনিটের যোগাভ্যাস নিয়ন্ত্রণে রাখবে ডায়াবেটিস! কোন কোন যোগাসন করবেন?
২. পশ্চিমোত্তানাসন । Paschimottanasana :
ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) হিসেবে বেশ জনপ্রিয় এই আসনটি রক্তচাপ এবং উদ্বেগ কমাতে বেশ কার্যকর। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকলে উদ্বেগ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।এছাড়াও এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। হাত, পা, পেট ও বস্তিপ্রদেশের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখতে, জঠরাগ্নি বৃদ্ধি করতে, অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, বহুমূত্র, স্বপ্নদোষ, অর্শ প্রভৃতি রোগ দূর করতে এই আসনটির বিকল্প হয় না।
যোগাসন ও ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : আর্থ্রাইটিসের ব্যথায় মুঠো মুঠো ওষুধ খাওয়ার বদলে নিয়মিত করুন যোগাসন! মিলবে আরাম!
৩. ধনুরাসন । Dhanurasana :
ধনুরাসন মানসিক শান্তির যোগান দেয়। এই আসন করলে মন শান্ত হয়ে ওঠে, যার ফলে ডিপ্রেশন, উদ্বেগ, ট্রমার মতো মানসিক অসুস্থ্যতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ।এই যোগব্যায়াম করার জন্য প্রথমে পেট উপুড় করে শুয়ে পড়ুন। এরপর হাঁটু ভাঁজ করে পায়ের পাতা যতখানি সম্ভব পিঠের উপর দিকে নিয়ে আসুন। এবার হাত দুটো পিছনে নিয়ে গিয়ে গোড়ালির উপর শক্ত করে চেপে ধরুন। চেষ্টা করুন পা দুটো মাথার কাছাকাছি নিয়ে আসতে। এই ভঙ্গিতে মেঝে থেকে বুক হাঁটু ও উরু উঠে আসবে। এভাবে থেকে তলপেট ও পেট মেঝেতে রেখে উপরের দিকে তাকান। এই ভঙ্গিতে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড বজায় থেকে তারপর পূর্বের ভঙ্গিতে ফিরে যান। ভালো ফল পেতে রোজ এই যোগ তিনবার করে করুন।
৪. বজ্রাসন । Vajrasana:
বজ্রাসন করতে হলে পা দুটো ভাজ করে হাঁটু গেড়ে বসুন। খেয়াল রাখবেন যাতে এরকমভাবে বসার সময় দুই পায়ের বড় আঙুলটি একে অপরকে স্পর্শ করে। গোড়ালিগুলি সামান্য বাইরের দিকে রাখবেন। এবার এই ভঙ্গিতে বসে মেডিটেশন করুন। এই ধানমূলক আসন শরীরের হজম শক্তি উদ্দীপিত করে। ফলে বিশেষজ্ঞরা, খাবার খাওয়ার পর ৫ থেকে ১০ মিনিটের জন্য বজ্রাসনে বসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বজ্রাসন নিয়মিত করলে মানসিক সুস্থ্যতা বজায় থাকে, ডিপ্রেশন দূর হয়।
যোগাসন ও ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : বারে বারে ভুলে যাচ্ছেন? এই যোগাসনগুলো করলেই বাড়বে স্মৃতিশক্তি! উন্নত হবে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা!
৫. বালাসন । Balasana :
বালাসন করতে হলে আপনার পিঠ সামান্য খিলান দিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসুন। এরপর আপনার বাহু একসঙ্গে আনুন এবং আপনার সামনে প্রসারিত করুন। হাতের তালু মেঝেতে বিশ্রামে রাখতে হবে। এরপর আপনার মেরুদণ্ড প্রসারিত করার সাথে সাথে গভীরভাবে শ্বাস নিন। এই আসন স্ট্রেস (Stress) দূর করে আপনার পুরো শরীরকে চনমনে করে তোলে। পাশাপাশি এটি কম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
যোগাসন ও ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : পুজোর আগেই চাই মেদহীন শরীর! নিয়মিত করুন এই কয়েকটি যোগাসন! ওজন কমবে তরতরিয়ে!
আজও আমাদের সমাজে গুরুত্ব পায় না মানসিক স্বাস্থ্য। আজও মনের অসুখ হয়েছে বললেই অনেকেই তা ‘মাথার ব্যামো’ বলে ধরে নেন। যার ফলে অনেকে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েও সাহায্য চাইতে পিছু পা হন। এতে অনেক সময়ই পরিণতি হয় মর্মান্তিক। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে আরও বেশি করে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ে তার জন্যেই বিশ্বজুড়ে ১০ই অক্টোবর পালিত হয় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এই দিবস পালনের লক্ষ্য, মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে গুরুত্ব প্রচার। ফলে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস থেকেই গুরুত্ব দিন মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর। নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আপনার কাছের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও নজর রাখুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন। মনে রাখবেন, শরীর যেমন অসুস্থ্য হয় তেমনই মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হতেই পারে।