Kalipuja 2024: শাস্ত্রমতে রক্তজবা ছাড়া কালীপুজো নাকি অসম্পূর্ণ! কেন এই অদ্ভুত নিয়ম ? জানুন বিস্তারিতভাবে
' মায়ের পায়ের জবা হয়ে ওঠনা ফুটে মন….' সাধক এবং গায়ক পান্নালাল ভট্টাচার্যের এই গানটি চার দশক পেরিয়ে আজও জনমানসে সমান জনপ্রিয়। আর কিছুদিন পরেই শ্যামাপূজো। আমরা জানি, কালী আরাধনায় জবাফুল অপরিহার্য । রামকৃষ্ণ, রামপ্রসাদ, বামাক্ষ্যাপার মতো কালী সাধকরা দেবীর আরাধনা করতেন রক্তজবা দিয়েই । দেবীর অমন টকটকে লাল জিহ্বার সাথেই এতো মিল কেন জবার রঙের? জানুন শক্তিসাধনায় জবাফুল ব্যবহারের নেপথ্যের কাহিনী, বিস্তারিত ভাবে।
আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরেই উমা ফিরবেন মর্ত্যে।তবে অন্যরূপে, অন্যকায়ায়। লাল টকটকে জিহ্বা, মুণ্ডমালায় সুসজ্জিত হয়ে কালীরূপে বিরাজ করবেন মন্দিরে মন্দিরে, গলায় দুলবে রক্তজবার মালা। তন্ত্রশাস্ত্রে শক্তি উপাসনায় এই জবা ফুলের উল্লেখ পাওয়া যায়। কালীপুজোয় জবাফুল ব্যবহারের ইতিহাস বেশ পুরোনো। প্রাচীন শাস্ত্রমতে যেকোনো শক্তিপুজোয় জবাফুল ব্যবহারের নিয়ম আছে। এমনকি দুর্গাপুজোয় সন্ধিপুজোর সময়ও জবাফুল থাকাটা আবশ্যক। *তবে দেবী কালীর সাথে এই ফুলের নাম জড়ানোর প্রধান কারণ হলো* (তবে দেবী কালীর সঙ্গে লাল জবা ফুলের নাম জড়ানোর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কাহিনী, বিশ্বাস। জেনে নেওয়া যাক কেন কালীপুজোয় জবা ফুল অপরিহার্য-
- জবা ফুলের টকটকে লাল রং, যা দেবীর রক্তবর্ন জিভের রঙের সাথে হুবহু মিলে যায়। জিহ্বা কথার অর্থ হল পরম বাক। কন্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত... জিহ্বা স্পর্শ করলেই তৈরি হয় ধ্বনি, যা আদি বাক-কে নির্দিষ্ট করে।
- এছাড়াও, লাল রং মেয়েদের ঋতুচক্রের প্রতীক, যা পৃথিবীতে নতুন প্রাণসৃষ্টির মূল ভিত্তি। এই কারণেই রক্তজবা কালীপুজোয় অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়।
- আবার, লাল রং ভালবাসা এবং স্নেহেরও প্রতীক। 'মা' কথার অর্থই হল জগতব্যাপি ভালবাসা। তার ভক্তদের তিনি সন্তানস্নেহে ভালোবাসেন। সেই বিচারে লাল রংটিই যথার্থ।
- লাল রং শৌর্যের প্রতীক আবার লাল রঙের দ্বারা বিপদের আভাসও দেওয়া হয়। অসুরদলনি মায়ের শক্তির কথা তো সর্বজনবিদিত। এক হাতে তিনি ধ্বংস করেন সমস্ত অশুভ শক্তিকে, অন্য হাতে অভয় দেন তার ভক্তদের। তাই তার পুজোয় উগ্র লাল জবার ব্যবহারই স্বাভাবিক।
এতো গেলো তত্বকথা , কালী উপাসনায় জবাফুলের মালা ব্যবহারের পেছনে লোকমুখে একটি গল্পও প্রচলিত আছে। ফুলের মধ্যে জবা হচ্ছে সবথেকে দুর্বল, অন্যান্য ফুলের থেকে বেশি তাড়াতাড়ি পঁচে যায় জবা। এছাড়া তার বিশেষ কোনো গন্ধও নেই, তাই প্রাচীনকালে তাকে কোনো পুজোয় ব্যবহার করা হতো না। এই দুঃখে একদিন মা কালীর কাছে কেঁদে পড়লো জবা। ভক্তের দুঃখে মায়ের মন কাতর হলো, তিনি বললেন , ' যাদের কেউ নেই তাদের মা আছে , আজ থেকে আমার পুজোয় তুমিই হবে অপরিহার্য। তোমাকে ছাড়া আমার পুজো সম্পন্ন হবে না। তোমার এই টকটকে লাল বর্ণ হবে আমার ক্রমাগত সৃজন ও সংগ্রামের প্রতীক। তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে।" সেই থেকেই আদিশক্তির আরাধনায় জবাফুলের মাহাত্ম্য জনমানসে প্রচার পায়।
গত শতাব্দীতে রামকৃষ্ণ, রামপ্রসাদ, বামাক্ষ্যাপার মতো সাধকরাও দেবীর পুজো করতেন জবাফুল দিয়েই। অবশ্য শুধু শ্যামাকালীর ক্ষেত্রেই এই নিয়ম খাটে। মায়ের অন্যান্য রূপের ক্ষেত্রে পদ্মফুলের ব্যবহার দেখা যায়। ভক্তরাই আজকাল রংবেরঙের ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলেন মাকে। অভয়াশক্তি, বরপ্রদায়িনী মা তুষ্ট হন তাতেও।
- Related topics -
- পুজো ও উৎসব
- কালীপূজা
- দীপাবলি
- উৎসব ২০২৪