After Effects of Dengue | ডেঙ্গুর মিউটেশনের আশঙ্কা! জ্বর বা প্লেটলেটেই সীমাবদ্ধ নয়! প্রভাব পড়ছে হার্ট, কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্গানেও!
কোভিডের মতো ডেঙ্গুরও মিউটেশনের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকমহক। ডেঙ্গুর আফ্টার এফেক্ট হিসেবে জ্বর, প্লেটলেটের প্রভাবের সঙ্গে প্রভাব পড়ছে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অর্গানেও। জানুন ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ ও ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার।
রাজ্যে ক্রমাগত বাড়ছে ডেঙ্গুর আতঙ্ক। সময়ের সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও। এই নিয়ে শুরু হয়েছে রাজ্য সরকার ও বিরোধী দলের বিতর্ক। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতরের তরফে রিপোর্ট পেশ করে জানায়, ২০ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮ হাজার ১৮১ জন। উত্তরবঙ্গের ৮ জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২৭৬ জন। দক্ষিণবঙ্গের ২০টি জেলা ও স্বাস্থ্য জেলা মিলিয়ে সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। তবে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বারবার তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলছে বিরোধীরা। বিরোধীদের মতে, এই পরিসংখ্যান আসলে আরও বেশি। তবে এই পরিস্থিতিতেই আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য এসেছে সামনে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গুর আফ্টার এফেক্ট (After Effects of Dengue) হিসেবে বর্তমানে ডেঙ্গি এক্সপ্যান্ডেড সিনড্রমে একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। লিভার, ব্রেন, কিডনি, প্যানক্রিয়াসের পাশাপাশি কার্ডিয়াকের সমস্যাও হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, চলতি মরসুমে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে ডেঙ্গি এক্সপ্যান্ডেড সিনড্রম (DES)। এতদিন ডেঙ্গি হ্যামারেজিক ফিভার (Dengue Hemorrhagic Fever) এবং ডেঙ্গি শক সিনড্রমের (Dengue Shock Syndrome) উপরই চিকিৎসকরা বিশেষ নজর দিচ্ছিলেন। তবে এ বছর একাধিক রোগীকে দেখার পর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন ডেঙ্গি হ্যামারেজিক ফিভার বা ডেঙ্গি শক সিনড্রমের থেকেও মারাত্মক হচ্ছে এই ডিইএস। ডেঙ্গুর আফ্টার এফেক্ট (After Effects of Dengue) হিসেবে বেশি সময় ধরে জ্বর থাকছে। তার থেকেও চিন্তার বিষয় হল, ডেঙ্গি এক্সপ্যান্ডেড সিনড্রমে একাধিক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। লিভার, ব্রেন, কিডনি, প্যানক্রিয়াসের পাশাপাশি কার্ডিয়াকের সমস্যাও হচ্ছে।
যোগাসন এবং ধ্যানমূলক আসন সম্পর্কে আরও পড়ুন : বয়স্কদের সঙ্গে কমবয়সীদেরও বাড়ছে হার্টের ঝুঁকি! কয়েকটি যোগাভ্যাসের সঙ্গে কিছু নিয়ম মেনে চললেই দূরে থাকবে হার্ট প্রবলেম!
সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিনের অধ্যাপক জ্যোতির্ময় পাল এই বিষয়ে জানান, ক্রমাগত সেকেন্ডারি ডেঙ্গি বাড়ছে। এরমধ্যে ডেঙ্গি শক সিনড্রম ও ডেঙ্গি হ্যামারেজিক ফিভারই ছিল বেশি ভয়ের। এই ডেঙ্গুর আফ্টার এফেক্ট (After Effects of Dengue) এর একটিতে শরীরের জল বেরিয়ে যায়, আরেকটায় প্লেটলেট কমে যায়। এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গি সিনড্রমে শরীরের মাল্টি সিস্টেম প্রভাবিত হয়। এতে শরীরের নানান অর্গানে প্রভাব পড়ছে। চিকিৎসকদের মত, ডেঙ্গুর আফ্টার এফেক্ট (After Effects of Dengue) হিসেবে একটা সময় চিন্তার কারণ থাকত প্লেটলেট। তবে সেই জায়গা থেকে এবার ডেঙ্গু নতুন করে ভাবাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, একটা ভাইরাস দীর্ঘদিন ধরে থাকলে তার মিউটেশন হওয়া স্বাভাবিক। এক্সপ্যানডেড ডেঙ্গি সিনড্রমে একজন রোগীর একাধিক অর্গান একসঙ্গে প্রভাবিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই ডেঙ্গু আক্রান্তের হার্ট, কিডনি প্রভাবিত হওয়ার ঘটনা দেখা যাচ্ছে। এমনকি রোগীকে ভেন্টিলেটরে পর্যন্ত রাখতে হচ্ছে। মারাও যাচ্ছেন।
ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ । 7 Warning Signs of Dengue Fever :
ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত রোগ যা, প্রধানত এডিস মশা থেকে ছড়ায়। ডাক্তারদের মতে, পরিবেশে উপস্থিত কোনো ভাইরাস যদি এডিস মশার মধ্যে থাকে এবং সেই মশা যদি কোনো ব্যক্তিকে কামরায় তাহলে ডেঙ্গু হওয়ার সম্ভবনা থাকে। স্ত্রী এডিস মশা এই সংক্রমণের কাজটি করে থাকে, কোনো ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তির মধ্যে। রোগ বহনকারী মশা দ্বারা কামড়ানোর ৪ থেকে ৬ দিনের মধ্যেই ব্যক্তির ডেঙ্গু জ্বর শুরু হয়। প্রধানত জ্বরই হলো ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ। তবুও অনেকেই এই জ্বরকে ভাইরাল ফিভার ভেবে বিশেষ গুরুত্ব দেন না। ডেঙ্গুর লক্ষণ দিলেই দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন। বর্তমানে ডেঙ্গু কেবল জ্বর বা প্লেটলেটেই কমাতেই সীমাবদ্ধ নেই, ডেঙ্গু এখন প্রভাব ফেলছে শরীরের একাধিক অর্গানেও। ফলে জ্বর হলে লক্ষ্য রাখতে হবে ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ (7 Warning Signs of Dengue Fever) এর দিকে। দেখে নিন ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ (7 Warning Signs of Dengue Fever)।
ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ সম্পর্কে আরও পড়ুন : শহরে বাড়ছে ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত! শিশুর জ্বর হলে তা 'সাধারণ' ভেবে করবেন না ভুল! দেখুন ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ!
- জ্বর এবং শরীরে ব্যথা
- হাতে পায়ে ও কোমরে ব্যাথা
- শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা
- চোখ জ্বালা এবং অস্থিরতা
- পেট ব্যথা এবং অসুস্থতা
- কাশি এবং সর্দি
- প্রস্রাব
ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার । Home Remedies for Dengue :
বর্তমানে বেশ উদ্বেগ বাড়িয়েছে ডেঙ্গু। মশা বাহিত এই রজার সর্ব প্রথম লক্ষণ হলো জ্বর, সর্দি, কাশি। এর সঙ্গে প্লেটলেটও যায়। ডেঙ্গু প্রাণনাশক রোগ হলেও সব ক্ষেত্রে রোগীর গুরুতর অবস্থা হয়না। ফলে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই ডেঙ্গু প্রতিকার করা যায়। রোগীর যত্ন নিয়ে এবং ডায়েটে পরিবর্তন করে এবং কিছু বিষয় মেনে চললেই দ্রুত এই রোগ থেকে সুস্থ্য হয়ে ওঠা সম্ভব। ফলে দেখুন ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies for Dengue)
ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার ও ডেঙ্গুর আফ্টার এফেক্ট সম্পর্কে আরও পড়ুন : রাজ্যে ডেঙ্গু 'আতঙ্ক' নিয়ন্ত্রণে আনতে স্বাস্থ্য দফতরে বৈঠক! ঘরোয়া উপায়ে বাড়ান প্লেটলেট!
- ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে রোগীকে বিশ্রাম নিতে হবে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে জল এবং তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। ডেঙ্গু হলে শরীরে জলের পরিমাণ কমে যায়। ফলে শরীরে জলের চাহিদা মেটাতে বেশি করে জলীয় ফল, জুস্, ডাবের পানি, লেবুর শরবত খেতে হবে। উল্লেখ্য, শরীরে পর্যাপ্ত জল থাকলে মাথাব্যথা ও পেশি ব্যথা কম হবে।
- ডেঙ্গু রোগীর প্লাটিলেট কমে যায়। তাই প্লাটিলেট বাড়ে এমন খাবার খেতে হবে। ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies for Dengue) হিসেবে প্লেটলেট বৃদ্ধি করতে সাইট্রাস ফল, কাঠবাদাম, দই, সূর্যমুখী বীজ, গ্রিন টি, ক্যাপসিকাম, ব্রোকলি, পালংশাক, আদা, রসুন ও হলুদ খাওয়া যেতে পারে।
- ডেঙ্গু হলে পেয়ারার শরবত পান করা যেতে পারে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই পানীয়টি ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies for Dengue) হিসেবে বেশ কার্যকর। পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সকৃয় করে ডেঙ্গু সংক্রমণ উপশম করে।
ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার সম্পর্কে আরও পড়ুন : ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে করছেন চিকিৎসা? ডায়েটে রাখুন এই খাবার! পুজোর আগেই হয়ে উঠবেন সুস্থ্য!
- রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে নিম পাতার রসও ভালো কাজ করে। এটি শ্বেত রক্তকনিকার সংখ্যাও বৃদ্ধি করে। নিম পাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর গুণও আছে।
- ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে গায়ে ব্যথার জন্য অ্যাসপিরিন, ক্লোফেনাক, আইবুপ্রোফেন–জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডেঙ্গুর সময় এ জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
প্রসঙ্গত, পুজোর আগেই গোটা রাজ্য জুড়ে বেশ ভয়ানক আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। শহরের পাশাপাশি, গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। ডেঙ্গুর ভয়াবহ ছবিটা উঠে এসেছে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যানেও। ঘরে ঘরে ছড়াচ্ছে মশাবাহিত রোগ। পুজোর সময় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে নবান্ন (Nabanna)। এর ওপর আবার ডেঙ্গুর মিউটেট করার আশঙ্কা করছে চিকিৎসা মহল। এখন কোভিডের মতো ডেঙ্গিরও স্ট্রেনের কোনও সাব-টাইপ তৈরি হয়েছে কি না সেটা বোঝারও সময় এসেছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।