Home Remedies for Dengue | ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতে করছেন চিকিৎসা? ডায়েটে রাখুন এই খাবার! পুজোর আগেই হয়ে উঠবেন সুস্থ্য!

Thursday, December 21 2023, 2:15 pm
highlightKey Highlights

বঙ্গে ডেঙ্গু জ্বরের বাড়বাড়ন্ত অবস্থা। এই অবস্থায় ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার হিসেবে মেনে চলতে হবে বেশ কিছু বিষয়। রোজ কয়েকটি জিনিস খেলেই দ্রুত সুস্থ্য হয়ে ওঠা সম্ভব।


পুজোর মরশুমের শুরু থেকেই বঙ্গে বেড়েছে ডেঙ্গুর দাপট। মশা বাহিতি এই রোগ নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত সরকার। সূত্রের খবর, বর্তমানে দক্ষিণবঙ্গের ১৬টি জেলা এবং স্বাস্থ্য জেলায় মোট ডেঙ্গু আক্রান্তর সংখ্যা ৫৫  হাজারের বেশি। গোটা রাজ্যের নিরিখে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার । গত এক সপ্তাহে নতুন করে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৯ হাজার মানুষ। যার মধ্যে কেবল উত্তর ২৪ পরগনা জেলায়  ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭১৬। ডেঙ্গু আক্রান্তর নিরিখে কলকাতার স্থান দ্বিতীয়, আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজার ৫৪৯। গত সপ্তাহে কলকাতায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সপ্তাহে ১৩৬৭। রাজ্যে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে ডেঙ্গুতে। মৃতের সংখ্যাও ৬০ পেরিয়েছে। তবে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা একটু কমেছে। বাড়াবাড়ি না হলে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে বাড়িতে রেখেই সুস্থ করার ঘটনা বর্তমানে বেশি।

 দক্ষিণবঙ্গের ১৬টি জেলা এবং স্বাস্থ্য জেলায় মোট ডেঙ্গি আক্রান্তর সংখ্যা ৫৫  হাজারের বেশি
 দক্ষিণবঙ্গের ১৬টি জেলা এবং স্বাস্থ্য জেলায় মোট ডেঙ্গি আক্রান্তর সংখ্যা ৫৫ হাজারের বেশি

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে জ্বর, মাথাব্যথা, পেটের সমস্যার মতো একাধিক উপসর্গ দেখা দেয়। তার সঙ্গে প্লেটলেট কাউন্ট কমতে থাকে। ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণ (7 Warning Signs of Dengue Fever) হিসেবে দেখা যায় জ্বর এবং শরীরে ব্যথা, হাতে পায়ে ও কোমরে ব্যথা, শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা, চোখ জ্বালা এবং অস্থিরতা, পেট ব্যথা, কাশি এবং সর্দি, প্রস্রাব। ডেঙ্গু জ্বরের ৭টি সতর্কীকরণ লক্ষণই (7 Warning Signs of Dengue Fever) শরীরকে দুর্বল করে তোলে। শরীর মারাত্মক কাহিল হয়ে পড়ে। ফলে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য ওষুধের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পুষ্টি না মিললে ডেঙ্গু থেকে সুস্থ্য হওয়া সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে যে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করছেন তাদের বেশ কিছু ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies for Dengue) মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বেশ কিছু ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের বেশ কিছু ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা

ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার । Home Remedies for Dengue :

সঠিক ডায়েটের মাধ্যমে ডেঙ্গুর উপসর্গকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে ডেঙ্গু থেকে সুস্থ্য হওয়ার ডায়েটের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা দরকার, যা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এক নজরে দেখে নিন ডেঙ্গু থেকে সুস্থ্য হয়ে উঠতে ডায়েটে কী কী রাখা দরকার।

  • হাইড্রেশন : ডেঙ্গু হলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা যায় তবে এক্ষেত্রে হাইড্রেশন (Hydration) অত্যন্ত জরুরি। ডাবের জল থেকে শুরু করে লেবুর জল সব কিছু খেতে হবে। পাশাপাশি তরল জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খেতে হবে।
  • পেঁপে পাতার রস : ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার (Home Remedies for Dengue) হিসেবে পেঁপে পাতার রস হলো অন্যতম কার্যকর। বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী পেঁপে পাতার রস অনুচক্রিকার সংখ্যা বাড়ায়। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলেই অনুচক্রিকার সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে কমতে থাকে। পেঁপে পাতার রসে থাকে পাপাইন (Papain) ও কাইমোপাপাইনের (Chymopapain) মতো এনজাইম। যা রক্তের অনুচক্রিকার সংখ্যা বাড়ায়। যার ফলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে পেঁপে পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ডেঙ্গু হলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা যায় তবে এক্ষেত্রে হাইড্রেশন অত্যন্ত জরুরি
ডেঙ্গু হলে শরীরে জলের ঘাটতি দেখা যায় তবে এক্ষেত্রে হাইড্রেশন অত্যন্ত জরুরি
  • ডাবের জল :  ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরকে হাইড্রেট রাখার জন্য ডাবের জল বিশেষভাবে কার্যকর। ডাবের জলে রয়েছে, অ্যামিনো অ্যাসিড (Amino Acid), ভিটামিন সি-র (Vitamin-C) মতো নানান পুষ্টিগুণ। যা ডেঙ্গির হাত ধরে আসা দুর্বলতা কাটিয়ে দিতে সক্ষম। শরীরের দুর্বলতা কাটাতেও ডাবের জল খুবই উপকারি।
  • বেদানা : বেদানায় থাকে আয়রন (Iron)। যা শরীরকে শক্তিশালী হতে সাহায্য করে। শরীরের শক্তি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তের অনুচক্রিকাও বৃদ্ধি করে বেদানা। এটি শরীরে জলের মাত্রা বজায় রাখে, রক্তাল্পতার সমস্যা দূর করে।
  • দই : ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে দৈনন্দিন খাবারের মধ্যে দইয়ের মতো প্রোবায়োটিক (Probiotic) রাখা জরুরি। এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। তবে জ্বর যদি দই খেলে বাড়ার প্রবণতা থাকে,তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
  • হলুদ : ডেঙ্গু জ্বরে আরাম দিতে পারে হলুদ দুধ। রাতে ঘুমানোর আগে হলুদ দেওয়া দুধ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে। তাছাড়া সকালে উঠে কাঁচা হলুদ মুখে পুড়ে ফেললেও তা শরীরে উপকার দেবে।
ডেঙ্গু শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে। তাই শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে  ডায়েটে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা দরকার
ডেঙ্গু শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে। তাই শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে ডায়েটে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা দরকার
  • প্রোটিন : ডেঙ্গু শরীরকে ক্লান্ত করে তোলে। তাই শরীরকে চাঙ্গা করে তুলতে  ডায়েটে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখা দরকার। এক্ষেত্রে দই, মুগ ডাল, কিনোয়া, ছাতু, পনিরের মতো খাবার খাওয়া যেতে পারে। এছাড়াও লেবুর রস, মুরগির মাংস, ডিম, মাছও খেতে পারেন। এগুলো দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করবে এবং এনার্জির জোগান দেবে।
  • শস্য : ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য গোটা শস্য খান। এক্ষেত্রে ডালিয়া, ভাত, রুটি, ওটসের মতো ফাইবার ও বিভিন্ন পুষ্টিতে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া যেতে পারে। এসব খাবার রোজ খেলে পুজোর আগেই সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।
  • ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন কে : ডেঙ্গু থেকে দ্রুত সুস্থ্য হয়ে ওঠার জন্য ফলিক অ্যাসিড (Folic Acid) ও ভিটামিন-কে (Vitamin-K) যুক্ত খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এক্ষেত্রে কিউই, বেদানা, ব্রকোলি ও পালং শাক খেলে ভাল উপকার পাওয়া যায়। 
ডেঙ্গু জ্বর ছেড়ে গেলেও খাওয়াদাওয়ার ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে
ডেঙ্গু জ্বর ছেড়ে গেলেও খাওয়াদাওয়ার ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে

প্রসঙ্গত, প্রতি বছরই বর্ষার পর মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ে পশ্চিমবঙ্গে। এ বছরেও তার অন্যথা হয়নি। তবে চলতি বছর বেশ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। জেলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকেরা বলছেন, দু’দিন ধরে ধুম জ্বর, মাথার যন্ত্রণা, সারা গায়ে ব্যথা এবং গায়ে র‌্যাশ থাকলে সাধারণ ভাবে তা ডেঙ্গির লক্ষণ বলেই ধরে নেওয়া হয়। তবে রক্ত পরীক্ষা না করিয়ে ডেঙ্গু সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া উচিত নয়। তবে পুজোর মরশুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঘটিগনা কমছে। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করছেন অনেকে। এক্ষেত্রে পুষ্টিবিদেরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরের সময়ে তো বটেই, তার পরের বেশ কিছু দিন পর্যন্ত শরীরে বিভিন্ন রকম জটিলতা দেখা দিতে পারে ও দুর্বলতা কাটতে অনেক সময় লাগে। তাই ডেঙ্গু জ্বর ছেড়ে গেলেও খাওয়াদাওয়ার ওপর বিশেষ নজর রাখতে হবে। এই সময় প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়ার পাশাপাশি শরীরে বিভিন্ন খনিজের মাত্রায় যেন ঘাটতি না পড়ে, সে দিকেও নজর রাখা প্রয়োজন। 




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File