লাইফস্টাইল

Winter Yoga | শীতের মরশুমে বাড়ছে গাঁটে গাঁটে ব্যথা? এই যোগাসনগুলি করলেই পাবেন আরাম!

Winter Yoga | শীতের মরশুমে বাড়ছে গাঁটে গাঁটে ব্যথা? এই যোগাসনগুলি করলেই পাবেন আরাম!
Key Highlights

শীতকালে গাঁটের ব্যথায় ভুগে থাকেন অনেকে। এই ব্যথা দূর করতে অভ্যাস করুন উস্ট্রাসন, নৌকাসনের মতো যোগা। জানুন কোন যোগাসন করলে গাঁটের ব্যথা থেকে পাবেন আরাম।

শীত আসতেই শুরু হয় নানারকমের শরীর খারাপ, রোগ। পাশাপাশি কম বেশি গা-হাত পা ব্যথাও হয় অনেকের। বিশেষত যারা বয়োজ্যেষ্ঠ, সারাদিন খাটাখাটনি করেন, তারা শীতে গাঁটে গাঁটে ব্যথাতেও ভুগে থাকেন। গাঁটে ব্যথা মানেই কিন্তু কেবল হাঁটু ব্যথা নয়। এই ব্যথা হতে পারে আঙুল, পায়ের পাতা, গোড়ালি, কনুই, ঘাড় শরীরের প্রায় সব হারের জয়েন্টেই। সাধারণত আর্থ্রাইটিসে (arthritis) আক্রান্তদের এই সমস্যা বেশি হয়। তবে শীতকালে কারও কারও ক্ষেত্রে গাঁটে ব্যথা স্বাভাবিক।

শীতকালে জয়েন্টে ব্যথার কারণ কী?

 শীতের মরশুমে অন্যান্য সময়ের তুলনায় জয়েন্টে ব্যথার সমস্যা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। কারণ শীতে রক্তনালী সংকুচিত হয়। ফলে ঠিক মতো রক্ত চলাচল হয় না। যার  প্রভাব পড়ে হাড়ে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, শীতকালে ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যাও অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। অনেকের আবার জয়েন্টের কার্টিলেজের মধ্যে থাকা ঘর্ষণ প্রতিহতকারী তরলও শীতে শুকিয়ে যেতে পারে। এই কারণেও গাঁটে গাঁটে ব্যথা হতে পারে।

শীতকালে কীভাবে গাঁটের বা জয়েন্টের ব্যথা কমাবেন?

শীত এলেই যারা গাঁটে গাঁটে ব্যথায় ভোগেন, তারা এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে অনেক ওষুধ, মলম, তেল লাগিয়ে থাকেন। তবে কিছুতেই গাঁটের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়না। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে যোগাসন বিশেষজ্ঞরা গাঁটের ব্যথা দূর করতে নিয়মিত কয়েকটা বিশেষ যোগাসন (Yogasana) করার পরামর্শ দেন। তাদের বক্তব্য বেশ কিছু যোগাসন ও আয়ুর্বেদের মিশ্রণে হাড় ভালো থাকতে পারে। ফলে দেখে নিন কোন বিশেষ যোগাসন (Yogasana) করলে শীতে কমবে গাঁটের ব্যথা।

উস্ট্রাসন । Ustrasana :

জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন উস্ট্রাসন (Ustrasana) বেশ কার্জকর। এ আসন করলে কাঁধ ও পিঠের ব্যথা কমতে পারে। উস্ট্রাসন করলে কোমরের পেশীর জোর বৃদ্ধি পায়। স্লিপ ডিস্কের সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য দারুণ কাযর্করী হতে পারে এই ব্যায়াম। উষ্ট্রাসন করার জন্য প্রথমে পায়ের উপর সোজা হয়ে বসুন। এরপর হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উঠে পড়ুন। খেয়াল রাখবেন যাতে দুই পা সোজা থাকে। পরবর্তী ধাপে কোমর থেকে শরীরে উপরের অংশ পিছনের দিকে ঝোঁকাতে হবে। অন্তত ১৫ সেকেন্ড এই ভঙ্গি ধরে রাখুন। উস্ট্রাসনের উপকারিতা (Ustrasana Benefits) কেবল হাড়ের জন্যই সীমিত নয়। এই আসন করলে ব্লাড প্রেশারও স্বাভাবিক থাকে। এ ছাড়াও কিডনি ভালো রাখে ব্যায়ামটি। যেসব ব্যক্তির মেরুদণ্ড সামনের দিকে বাঁকা এবং যাদের বয়স অনুসারে বুকের গড়ন সরু বা অপরিণত, তাদের জন্য আসনটি খুবই কার্যকরী  মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড় নমনীয় ও মজবুত করে তুলতেদিনে দুবার করলেই উস্ট্রাসনের উপকারিতা (Ustrasana Benefits) মিলবে।

মকরাসন । Makarasana :

শীতে গাঁটের ব্যথা দূর করতে মকরাসনের উপকারিতা (Makarasana Benefits)অপরিসীম। হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখার পাশাপাশি পেটের যে কোনো সমস্যার সমাধান করে মকর্টাসন।এই আসন করতে ঘুমানোর আগে বিছানার ওপর বা মেঝেতে ম্যাটের ওপর চিত হয়ে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ুন। এরপর দুটো পায়ের গোড়ালিকে হাঁটু থেকে মুড়ে নিতম্বের কাছে রাখুন। দুটো পায়ের মধ্যে দেড় ফুটের মতো ফাঁক রাখুন, দুটো হাতকে কাঁধ বরাবর টানটান করে রাখুন। এবার ডান হাঁটুকে ডান দিকে ঝুঁকিয়ে মাটির সঙ্গে ঠেকিয়ে দিন। এতটা ঝোঁকান, যাতে বাঁ হাঁটু ডান পায়ের পাতার কাছে পৌঁছে যায় এবং বাঁ হাঁটুকেও ডান দিকে ডান গোড়ালির কাছে বিছানা বা ম্যাটের সঙ্গে ঠেকিয়ে দিন। ঘাড়কে বাঁ দিকে ঘুরিয়ে রাখুন। এভাবে একদিকে ঘোরার সময় শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে মাঝে যাবেন। আসনে থাকা অবস্থায় শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। এভাবে একদিকে আসনটি করার পর অন্য দিকেও আসনটি করুন। লিভার, ফুসফুস ভালো রাখতেও মকরাসনের উপকারিতা (Makarasana Benefits) অতুলনীয়।

শলভাসন । Shalabhasana :

এই ব্যায়াম স্নায়ুতন্ত্রে দারুণ কাজ করে। শলভাসন রক্ত পরিষ্কার করে। এ ছাড়াও অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রেও ভালো কাজ করে এই ব্যায়াম। আর হাড়ের সমস্যায় এই ব্যায়াম ভীষণই কার্যকরী। কোমর থেকে শরীরের নিম্নাংশের ভালো ব্যায়াম হওয়ার ফলে কটিবাত, মাজা ব্যথা, মেয়েদের ঋতুকালীন তলপেটে ব্যথার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় । বাত বা সায়টিকার জন্য এই আসনটি এক অব্যর্থ প্রতিষেধক। অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, অম্ল বা এসিডিটি প্রভৃতি রোগের হাত থেকে মুক্তি দেয় এই আসনটি। এটি দেহের প্রসারক পেশীগুলোকে সঙ্কুচিত করে ও রক্তে প্লাবিত করে। এটি সঙ্কোচক পেশীগুলোকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম দেয় যার ফলে তলপেট ও কোমরের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমে যায় এবং দেহ সুগঠিত হয়ে ওঠে ।

নৌকাসন । Naukasana :

এই আসনটি করতে প্রথমে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। এর পর শ্বাস নিতে নিতে নিতম্ব ও কোমরে ভর দিয়ে দেহের উপরের অংশ ও পা একই সঙ্গে উপরের দিকে তুলুন।  বাহু ও পায়ের পাতা একই দিকে রাখবেন। নৌকা বা ইংরেজি এল আকৃতির মতো অবস্থায় থাকুন ১০ থেকে ৩০ সেকেন্ড। ধীরে ধীরে নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে প্রথম অবস্থায় ফিরে আসুন। প্রতি দিন ৩-৪ বার নৌকাসন (Naukasana) করলে ভালো উপকারিতা পাবেন। ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিনই ব্যায়ামটি করা উচিত। এই ব্যায়াম রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও পাচনশক্তি বাড়ানোর কাজেও ব্যায়ামটি দারুণ কার্যকরী।

গোমুখাসন । Gomukhasana :

গোমুখাসন করার জন্য প্রথমে দণ্ডাসনে বসে পড়তে হবে। তার পর বাঁ পা মুড়ে গোড়ালি নিয়ে আসুন ডান নিতম্বের কাছে। গোড়ালির ওপর বসতেও পারেন। এর পর ডান পা মুড়ে এভাবে বাঁ পায়ের ওপরে রাখবেন, যাতে দুই হাঁটু একে অপরকে স্পর্শ করতে পারে। যে দিকের পা ওপরে রয়েছে, সেই দিকের হাত ওপর থেকে পিছনের দিকে অর্থাৎ পিঠের দিকে নিয়ে যান। এবার নীচে যে পা রয়েছে, সেই দিকের হাত থেকে নীচ থেকে কোমরের দিকে নিয়ে গিয়ে ওপরের দিকের হাতের আঙুলটি ধরে নিন। এ ভাবে দুই হাত ওপর ও নীচ থেকে পরস্পরের আঙুল শক্ত করে ধরে থাকবে। কনুই, ঘাড় ও মাথা সোজা রাখবেন। এক দিকে হয়ে যাওয়ার পর অন্য দিক দিয়ে এটি করুন। গাঁটে গাঁটে ব্যথা কমাতে গোমুখাসনের উপকারিতা (Gomukhasana Benefits) অপরিসীম। এমনকি ফুসফুসের কার্যকরিতা বাড়ানোর কাজেও সাহায্য করে ব্যায়ামটি। পাশাপাশি এই আসন যৌনরোগ কম করতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও স্ত্রী রোগ, সন্ধিবাত ব্যথা কম করতে গোমুখাসনের উপকারিতা (Gomukhasana Benefits) কার্যকরী। এ ছাড়াও লিভার, কিডনি এবং বুক পুষ্ট করে এই আসন।

শীতে গাঁটের ব্যথা কমাতে নিয়মিত যোগাসন বা শরীর চর্চা করা প্রয়োজন। শীতে অনেকেই ঠান্ডার জন্য শরীর চর্চা করেননা। কিন্তু স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতে রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকতে, শরীর সুস্থ্য রাখতে এবং গাঁটের ব্যথা কমাতে শরীর চর্চা প্রয়োজন। এছাড়াও গাঁটে গাঁটে কমাতে কিছু ঘরোয়া টোটকা মানতে পারেন। যেমন- ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি মেটাতে প্রায় ১ ঘণ্টা রোদে বসে থাকা, ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটাতে খাদ্য তালিকায় বার্লি, দুধ, দই, বাটার মিল্ক ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া, পিঠের ব্যথায় ভুগলে হলুদ, মেথি, শুকনো আদা পিষে গুঁড়া তা রাতে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন সকালে পান করা, হাড় মজবুত করতে খাদ্য তালিকায় তিসি রাখা। একই সঙ্গে মেথি, চিনাবাদাম, ছোলা ও শস্য খাওয়া।