Stomach Health | গরমকালে এই কয়েকটা জিনিস মেনে চললেই আর হবে না পেট গরম! জানুন পেটের হাল ভালো রাখতে কী খাবেন, কী খাবেন না!
গরমে ভুলভাল খাবার বা তেল-মশলাদার খাবার খেলে শরীরের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যায়। এতে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। বরং উল্টে বাড়ে পেটের সমস্যা। অনেকে চলিত ভাষায় একে বলে থাকেন পেট গরম হয়েছে ৷ পেট গরম এক এমন সমস্যা যা বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবাইকে গ্রাস করে ৷
গরম বাড়তেই ছোট থেকে বড় সকলেরই কমবেশি পেটের সমস্যা দেখা যায়। প্রচন্ড গরমে হিট স্ট্রোক, হিট এক্সজশন, ডিহাইড্রেশনের পাশাপাশি পেটের সমস্যাও খুব স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। কারণ এই সময়ে আমাদের শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকে। এর ওপর ভুলভাল খাবার বা তেল-মশলাদার খাবার খেলে আরও তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এতে খাবার ঠিকমতো হজম হয় না। বরং উল্টে বাড়ে পেটের সমস্যা। অনেকে চলিত ভাষায় একে বলে থাকেন পেট গরম হয়েছে ৷ পেট গরম এক এমন সমস্যা যা বাচ্চা থেকে বয়স্ক সবাইকে গ্রাস করে ৷ পেট গরম একটি কমন বা সাধারণ সমস্যা ৷ গরমের দিনে পেট গরম হলে নানান ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করা যায় ৷ বেশিরভাগ পেট বিশেষজ্ঞ (stomach specialist) বলছেন এই পেট গরমের জন্য বেশ কয়েকটি কারণ দায়ি ৷ জেনে নিন গরমে পেটের হাল ঠিক রাখতে কী কী করবেন, কী খাবেন কী খাবেন না!
গরমে পেটের সমস্যার কারণ ও লক্ষণ । Causes and Symptoms of Stomach Problems in Summer :
পেট বিশেষজ্ঞরা (stomach specialist) বলছেন, গরমে পেট কামড়ানো, তারপর বমি, বমির ভাব আর পেট খারাপ হলো গরমের পেট গরম বা গ্যাস্ট্রোএনটেরাইটিসের লক্ষণ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এগুলো নানা ধরনের ভাইরাসের কারণে হয়। এ সমস্যার আরেক নাম স্টমাক ফ্লু। মাঝে মাঝে এটা ব্যাকটেরিয়াজনিতও হয় বটে। জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেশের ১২ থেকে ৪৮ ঘণ্টা পর উপসর্গ শুরু হয়। বমি ভাব, বমি, পেটব্যথা ও ডায়রিয়া ছাড়া হালকা জ্বর থাকতে পারে। হতে পারে মাথাব্যথাও। পেটের এই সমস্যার কারণ প্রচুর পরিমাণে ঝাল, মশলার খাবার খাওয়ার অভ্যাস, মানসিক চাপ অনুভব করা, খাবার দাবার অনিয়মিত খাওয়া, শরীরে জলশূন্যতা৷ পেট গরম হলে হার্টে একটি অদ্ভুদ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, গলা বুখ জ্বলে, বারবার ঢেকুড় ওঠে, মুখে তেতো তোতো ভাব লক্ষ্য করা যায় ৷ পেট ব্যাথা, পেট ফুলে যাওয়া, পায়ে ক্র্যাম্প, লুজ মোশন, গ্যাস অম্বলের সমস্যার মতো আরও লক্ষণ লক্ষ্য করা যায় ৷
গরমে পেটেরহাল ভালো রাখতে যা যা করবেন । What to do to Keep Stomach Healthy in Summer :
পেট গরম হলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা লক্ষ্য করা যায় ৷ যখন পাচন শক্তি বা পাচন ক্ষমতা প্রয়োজনের থেকে বেশি সক্রিয় ৷ ঠিক তখনই পেট গরম হয়ে থাকে ৷ ক্লান্তি, দুর্বলতা, ডিহাইড্রেশনের পাশাপাশি এই গরমে বুকজ্বালা, অ্যাসিডিটি, পেট ফেঁপে যাওয়া, ডায়ারিয়ার সমস্যা লেগেই থাকে। তার উপর ঘামের মাধ্যমে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ বেরিয়ে যায়। এই অবস্থায় খাওয়া দাওয়ার দিকে রাখতে হবে বিশেষ নজর।
কী খাবেন?
এছাড়াও নানান ধরনের ইনফেকশন বা জীবাণু আছে যা পেট গরমের হাত থেকে মুক্তি পেতে বেশ কিছু খাবার আছে যা প্রয়োজন খাওয়ার ক্ষেত্রে ৷
আরও পড়ুন : গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে শিশু? বিশেষ কিছু বিষয়ে নজর দিলেই এই গরমেও সুস্থ্য থাকবে আপনার ছোট্ট সন্তান!
আদা: আয়ুর্বেদে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে আদার। বিশেষত শুকনো আদা ব্যবহার করা হয় পেটের চিকিৎসায়। এটি হজমজনিত যে কোনও সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। আদা বমি বমি ভাব, পেশির যন্ত্রণা, সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, পেট ফাঁপা, বদহজমের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। পাশাপাশি আদা ও আদার রস (ginger juice) ওজন কমায়, শারীরিক প্রদাহ ও এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। আদা দিয়ে চা, আদার রস (ginger juice) কিংবা খাবারে আদা মিশিয়ে খেতে পারেন।
শশা : গরমে পেট ঠান্ডা রাখার জন্য শশা অত্যন্ত জরুরি, কেননা শশায় প্রচুর পরিমাণে জল বা জলীয় উপাদান রয়েছে ৷ শশাতে প্রচুর পরিমাণে, ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, কপার বা তামা, পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানীজ, সিলিকা জাতীয় খনিজ প্রচুর পরিমাণে আছে ৷
পুদিনা পাতা : গরমে পুদিনা পাতা খেলে শরীর ও পেট ঠান্ডা হবে ৷ কেননা পুদিনা পাতায় ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, আয়রন, ক্যালশিয়াম, অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে ৷
লেটুস : গরমে লেটুস খাওয়া উপকারী। লেটুস পাতায় জলের ভাগ বেশি। ফলে শরীরে জলের ঘাটতি পূরণ করে এই পাতা। এ ছাড়া, শরীরের তাপমাত্রা কমাতে লেটুসের জুড়ি মেলা ভার। পেটের সমস্যাও কমায় এই পাতা। লেটুসের গুণে গরমেও চাঙ্গা থাকা যায়।
লাউ : লাউয়ে প্রচুর পরিমাণে জল রয়েছে। এই সময়ে এমনিতেই শরীরে জলের পরিমাণ কমে যায়। লাউ কিন্তু সেই ঘাটতি পূরণ করবে। তা ছাড়া, পেটের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, লাউ তাঁদের জন্য বেশ উপকারী।
ঝিঙে : এই সব্জি রান্না করার সময়ে যে পরিমাণ জল বেরোয়, তাতেই বোঝা যায় এতে কতটা পরিমাণ জল আছে। গ্রীষ্মকালীন নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি কমায় ঝিঙে।
পেঁপে : গরমের মরশুমে ফল খাওয়া খুবই প্রয়োজনীয়। এই ফলে রয়েছে এমন কিছু উপাদান যা শরীর ভালো রাখতে পারে। এছাড়া পেঁপেতে রয়েছে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার। এই ফাইবার পেটের খেয়াল রাখতে পারে। খাদ্য হজম ও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করতে পারে এই খাবার। এছাড়া এই ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জল। এই জল ডিহাইড্রেশন দূর করতেও পারে।
ডাব : ডাবের জল যে পেটের জন্য ভালো। এক্ষেত্রে ডায়েব জলে ভালো পরিমাণে থাকে ইলেকট্রোলাইটস যা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দূর করতে পারে। ডাব তীব্র গরমে শরীরে ভালো পরিমাণে জল পৌঁছে দেয়। ফলে শরীরকে ডিটক্সিফাই করে দিতেও পারে এই জল।
তরমুজ : তরমুজ হল গরমের অন্যতম সেরা ফল। এই ফলে অনেকটা জল থাকে। ফলে শরীরে জলের ঘাটতি কমে। এছাড়া তরমুজে রয়েছে ভালো পরিমাণে ভিটামিনও রয়েছে। এই ভিটামিন শরীরকে পুষ্টি দেয়। তাছাড়া এই ফলে রয়েছে ভালো পরিমাণে ফাইবার। ফলে পেটের পক্ষেও এই ফল দারুণ উপকারী।
কলা : কলারমধ্যে ভালো পরিমাণে পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম ও ফাইবার রয়েছে। এই পটাশিয়াম ও ফাইবার শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে। পটাশিয়াম অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করতে পারে। পাশাপাশি কলা শরীরকে শক্তি জোগাতেও পারে।
সিসিএফ টি: সিসিএফ চা (ccf tea) তৈরী জিরে (cumin), ধনে (coriander) ও মৌরি (fennel)দিয়ে। এটি হজমজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। পাশাপাশি মেন্সট্রুয়াল ক্র্যাম্পও কমায় সিসিএফ চা (ccf tea)। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, তলপেটের ব্যথা কমায়, গা গোলানো ও বমির সমস্যা থেকে রেহাই দেয়। এমনকি শারীরিক প্রদাহ কমায় এই চা। ১ গ্লাস জলে ১ চামচ করে জিরে, ধনে ও মৌরি নিন। ৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। এরপর ছেঁকে নিয়ে পান করুন।
মিছরি: অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য মিছরি খেতে পারেন। মিছরিতে কোনও রকম রাসায়নিক ব্যবহার করে তৈরি হয় না। তাই আয়ুর্বেদে মিছরি ব্যবহার বেশি। মিছরি ভেজানো জল খেলে হজমের সমস্যা কমবে। পাশাপাশি পিসিওএস, ওবেসিটি, অটো-ইমিউন ডিসঅর্ডারের সমস্যার সঙ্গে মোকাবিলা করতে পারবেন।
ঘোল: গরমে যত বেশি ঘোল খাবেন, ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি কমাতে পারবেন। পাশাপাশি হজমজনিত সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন। দই দিয়ে তৈরি ঘোল অন্ত্রে ভাল ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং এটি সহজ পাচ্য।
ঘি: দেশি ঘি (desi ghee) অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ উপকারী। ঘি হজম স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত করে, স্মৃতিশক্তি বাড়ায় এবং পেশির যত্ন নেয়। এমনকি ইমিউনিটি বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে দেশি ঘি (desi ghee)। যে কোনও খাবারের সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া দুধের সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন।
কী খাবেন না?
হজমজনিত সমস্যা থেকে দূরে থাকতে গেলে তেল ও মশলাদার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। মশলাদার, ভাজাভুজি ও ফাঙ্ক ফুড অ্যাসিডিটি, পেট ফাঁপা ও পেটের প্রদাহ বাড়িয়ে তোলে। বিরিয়ানি, রোল, মোমো, চাউমিনের পাশাপাশি পিৎজা, পাস্তা, বার্গার, কেক, চিপস ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন। খাদ্য বিষক্রিয়ার সমস্যা এড়াতে রাস্তায় কাটা ফল, শরবত, লেবুর জলও এড়িয়ে চলুন। এছাড়াও এই গরমে কফি, মদ ও কোল্ড ড্রিংক্স থেকে দূরে থাকুন। এগুলো শরীরকে ডিহাইড্রেটেড করে তোলে। পাশাপাশি পেটের গণ্ডগোল বাড়িয়ে তোলে। এই ধরনের পানীয় গরমে হজম হতে বেশি সময় নেয়। তাই এগুলো এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে এবং পেটের হাল ঠিক রাখতে হালকা খাবার খান। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এই গরমে বাড়ির হালকা রান্না করা খাবারই খাওয়া উচিত।শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই সময় সবাইকে ভারী এবং তৈলাক্ত খাবার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন। এতে শারীরিক সুস্থ্যতা বজায় রাখতে সাহায্য হবে। পাশাপাশি হজমশক্তি উন্নত করতে ফল এবং সবজি খান বেশি করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে জল খান। এছাড়াও শরীরকে সুস্থ এবং ফিট রাখতে নিয়মিত করুন শরীরচর্চা আর ব্যায়াম। হজমের সমস্যা প্রতিরোধ করা থেকে শুরু করে শরীরের সুস্থ্যতা বজায় রাখা, নিয়মিত শরীরচর্চার একাধিক উপকারিতা রয়েছে। তাই অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- খাদ্য
- খাদ্যগুণ
- খাদ্যের গুনাগুন