লাইফস্টাইল

Spinal Cord Exercises | অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ কিংবা ভারী স্কুল ব্যাগ, অসচেতনতায় ক্ষতি হচ্ছে স্পাইনাল কর্ডে! কীভাবে সোজা রাখবেন মেরুদন্ড?

Spinal Cord Exercises | অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ কিংবা ভারী স্কুল ব্যাগ, অসচেতনতায় ক্ষতি হচ্ছে স্পাইনাল কর্ডে! কীভাবে সোজা রাখবেন মেরুদন্ড?
Key Highlights

ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেরই পিঠ-কোমরের সমস্যা। দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা বা ঠিক ভাবে না বসার জেরে বেঁকে যাচ্ছে মেরুদন্ড। এক্ষেত্রে অভ্যাস করতে হবে নিয়মিত বিশেষ কিছু মেরুদন্ডের ব্যায়াম বা ধ্যানমূলক আসন।

আট থেকে আশি কমবেশি সকলেই কোমরে ব্যথা, শিরদাঁড়ায় সমস্যায় ভুগে থাকেন। কেউ অফিসে কাজের জন্য এক টানা ঘন্টার পর ঘন্টা চেয়ারে বসে পিঠের সমস্যায় ভুগছেন, আবার কেউ অতি লম্বা হওয়ার জন্য হয়ে যাচ্ছে কুঁজো। এই পিঠের, কোমরের, স্পাইনাল কর্ডের ব্যথার জন্য দায়ী দৈনন্দিন জীবনযাত্রা-অসচেতনতা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, স্পাইনাল কর্ডের প্রতি যত্ন না নিলে কোমর ব্যথা-পিঠে ব্যথা আরও বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে মেরুদন্ডের ব্যায়াম (Spinal cord exercises) বা ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas) বেশ কার্যকর হতে পারে।

যারা অফিসে গিয়ে কাজ করেন তারা অধিকাংশই পিঠে-কোমরের ব্যাথায় ভুক্তভুগি। অফিস শিফ্ট শেষ করার পর অনেক কিছু করেও সেই ব্যথা ঠিক হয় না। কেবল অফিসে কর্মরত ব্যক্তিরাই নয়, যারা অনেকক্ষণ বসে কাজ করেন, কুঁজো হয়ে বসেন, কুঁজো হয়ে থাকেন তাদেরও কোমরে, পিঠের সমস্যা হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোটবেলায় অনেক সময়েই বাচ্চারা ভুল ভঙ্গিতে বসে। অনেক সময় পড়ুয়ারা পিঠে ভারী ব্যাগের জন্যও কুঁজো হয়ে থাকে। এছাড়া চেয়ার-টেবিলে ঘাড় গুঁজেই সময় কাটে অধিকাংশের। ফলে যেমন শারীরিক ভঙ্গিতে আসছে বিকৃতি, তেমনই দেখা দিচ্ছে নানা গুরুতর সমস্যা। কোমরের ব্যথা, পিঠের ব্যথা কমাতে নানারকমের কোমর ব্যথার জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধ (Homeopathic Medicines for Back Pain), পিঠে ব্যথার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা (Ayurvedic Treatment for Back Pain) পাওয়া গেলেও তা খুব একটা কার্যকর হয়না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই ওষুধের থেকে কোমর-পিঠের ব্যথা কমিয়ে স্পাইনাল কর্ড ভালো রাখতে বেশি কার্যকর মেরুদন্ডের ব্যায়াম (Spinal cord exercises) ও ধ্যানমূলক আসন (Meditative Asanas)। দেখে নিন এক্ষেত্রে কোন যোগাসন করবেন।

বালাসন । Balasana :

অসচেতনতা এবং জীবন পরিচালনায় কিছু অভ্যাসের জন্য শরীরের ভুল ভঙ্গি বা পশ্চার থেকে স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা শুরু হয়। এই ভুল ভঙ্গি ঠিক করতে চাইল্ড পোজ় বা বালাসন বেশ কার্যকর। বালাসন করতে হলে আপনার পিঠ সামান্য খিলান দিয়ে মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসুন। এরপর আপনার বাহু একসঙ্গে আনুন এবং আপনার সামনে প্রসারিত করুন। হাতের তালু মেঝেতে বিশ্রামে রাখতে হবে। এরপর আপনার মেরুদণ্ড প্রসারিত করার সঙ্গে গভীরভাবে শ্বাস নিন। এই আসন স্ট্রেস (Stress) দূর করে আপনার পুরো শরীরকে চনমনে করে তোলে। পাশাপাশি এটি কম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। ফুসফুস ভালো রাখতেও এই যোগাসন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। রোজ অন্তত পাঁচ সেট করুন এই ব্যায়াম।

   চক্ৰাভাকাসনা । Chakravakasana:

ক্যাট কাউ পোজ় আসন বা চক্ৰাভাকাসনা দেহের গঠনে ভারসাম্য রক্ষা করে এবং কাঁধের ব্যথা নিরাময়েও বেশ কার্যকর। এই আসন করার জন্য প্রথমে চার হাতে পায়ে ভর দিয়ে বসুন। হাতের পাতা ও হাঁটুকে সমান্তরালে রাখুন। এ বার প্রথমে মাথা নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়ে পিঠ উঁচু করুন। কুড়ি সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে মাথা যতটা সম্ভব উপরের দিকে তুলুন। সে সময় পেট নামিয়ে আনুন মাটির কাছাকাছি। খেয়াল রাখবেন, হাত যেন কনুই থেকে ভাঁজ না হয়। এই আসন অভ্যাস করুন ৫ বার করে অন্তত পক্ষে ৫ মিনিট।

হাই ও সাইড প্ল্যাঙ্ক । High and Side Plank :

এই দুই প্ল্যাঙ্ক শরীরের ভঙ্গি ঠিক করতে বেশ কার্যকর। হাই প্ল্যাঙ্ক করার জন্য প্রথমে উপুড় হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। এবার দুই পায়ের পাতা এবং হাতের তালুর ভরে শরীরটাকে মাটি থেকে উপরের দিকে তুলুন। খেয়াল রাখবেন, হাঁটু এবং কনুই যেন ভাঁজ না হয়। উপর বা নীচে নয়, দৃষ্টি রাখুন একেবারে সোজা। এই অবস্থায় পনেরো গুনুন। তারপর দশ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে আবার করুন।

অন্যদিকে, সাইড প্ল্যাঙ্ক করার জন্য একই ভাবে মাটিতে ডান পাশ ফিরে শুয়ে পড়ুন। এ বার ডান পা এবং ডান হাতের উপরে ভর দিয়ে শরীরটা উপরের দিকে তুলুন। বাঁ পা সমান্তরাল ভাবে ডান পায়ের উপরে রাখুন। বাঁ হাত রাখুন তার উপর। এই অবস্থায় দশ সেকেন্ড থাকুন।  এবারপাঁচ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে অন্য পাশ ফিরে একই নিয়মে এটি করুন। চাইলে সাইড প্ল্যাঙ্কে প্রশিক্ষকের পরামর্শে হাত-পায়ের অবস্থান ভঙ্গিতে সামান্য বদলও আনতে পারেন।

  রোটেশনাল স্ট্রেচ । Rotational Stretch :

এই আসনটি বা এক্সারসাইজটি পিঠ, কোমরের ব্যথা সংক্রান্ত ব্যথা কমাতে বিশেষ খ্যাত। রোটেশনাল স্ট্রেচ করার জন্য প্রথমে দুই পা ফাঁক করে, দুই হাত দু’দিকে প্রসারিত করে দাঁড়ান। এবার ডান হাত দিয়ে ডান পায়ের পাতা স্পর্শ করুন। বাঁ হাত রাখুন কাঁধ বরাবর উপরের দিকে। আপনার দৃষ্টিও রাখুন বাঁ হাতের দিকেই। ঠিক দু’-তিন সেকেন্ড এই অবস্থায় থেকে এবার বিপরীত দিকেও একই কাজ করুন। এ ছাড়াও, শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে তো বটেই অন্য নানা ভঙ্গিতেও এই স্ট্রেচ করা সম্ভব।

গ্লুট ব্রিজ । Glute Bridge :

গ্লুট ব্রিজ তিন সেট করে করলে শরীরের ভঙ্গি ঠিক হবে এবং পিঠ ও কোমরের ব্যথা কমবে। এই ব্যায়াম করার জন্য প্রথমে চিত হয়ে মাটিতে শুয়ে হাঁটু থেকে পা দুটো ভাঁজ করে নিন। হাত দুটো শরীরের দুই পাশে সোজা রাখুন। এবার মাটিতে মাথা রেখে পায়ের উপর ভর দিয়ে কোমর থেকে শরীর উপরের দিকে তুলুন। এই অবস্থায় দশ গুনুন।

শোল্ডার ব্লেড স্কুইজ । Shoulder Blade Squeeze :

  শোল্ডার ব্লেড স্কুইজ করার জন্য মাথা ও কোমর সোজা করে দাঁড়ান। এরপর কাঁধের দু’পাশে কনুই থেকে ভাঁজ করে হাত রাখুন। হাতের তালু কাঁধের সমান্তরালে, অপেক্ষা করতে বলার ভঙ্গিতে রাখুন। এ বার দুই কাঁধকে টেনে ধরুন পিছনের দিকে। দশ সেকেন্ড এই ভাবে ধরে থাকুন। পাঁচ সেকেন্ড বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় একই ভাবে করুন।

চিন টু চেস্ট স্ট্রেচ । Chin to Chest Stretch :

শরীরের ভঙ্গি ঠিক করার সঙ্গে পিঠের ব্যথা কমাতে পারে চিন টু চেস্ট স্ট্রেচ। এই শারীরচর্চার শুরুতে মাথা রাখুন সোজা। এ বার ধীরে ধীরে মাথা নামিয়ে চিবুক ঠেকান বুকে। এই অবস্থায় দশ গুনুন। ঘাড়ের শিরায় টান লাগলে আস্তে আস্তে মাথা তুলে আবারও সোজা করুন। একটু বিশ্রাম নিয়ে এই পদ্ধতি দিনে অন্তত পাঁচ বার করুন।

প্রসঙ্গত, অনেকেই শরীরের ভঙ্গি ঠিক করতে এবং পিঠ-কোমরের ব্যথা ঠিক করতে কোমর ব্যথার জন্য হোমিওপ্যাথিক ওষুধ (Homeopathic Medicines for Back Pain) ব্যবহার বা পিঠে ব্যথার আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা (Ayurvedic Treatment for Back Pain)করে থাকেন। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, এক্ষেত্রে শরীরচর্চা করতেই হবে। দরকার হলে চিকিৎসা করতে পারেন তবে শারীরিক ভঙ্গিতে ত্রুটি বা স্পাইনাল কর্ডের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রাথমিক পর্যায়ে নিয়মিত অন্তত ৪৫ মিনিট অবশ্যই করতে হবে শারীরচর্চা। কারণ এই সমস্যা প্রধানত তৈরী হয় নিজেদের ভুলেই। অফিস কর্মীদের দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকা, ছোটদের কুঁজো হয়ে পড়তে বসা বা ফোন ঘাটা-এরকম নানান কারণে প্রভাব পরে স্পাইনাল কর্ডের ওপর এবং পরবর্তীতে সৃষ্টি হয় পিঠ-কোমরের ব্যথা। এই সমস্যা দূর করতে ছোটদের এবং বড়দের- উভয়কেই নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।