দেশ

Mangalyaan 2 | ন'বছর পর ভারতের ফের 'মঙ্গল-মিশন' মঙ্গলযান-২ এর প্রস্তুতি শুরু করলো ইসরো! কী পরীক্ষা করবে দ্বিতীয় মঙ্গলযান?

Mangalyaan 2 | ন'বছর পর ভারতের ফের 'মঙ্গল-মিশন' মঙ্গলযান-২ এর প্রস্তুতি শুরু করলো ইসরো! কী পরীক্ষা করবে দ্বিতীয় মঙ্গলযান?
Key Highlights

ফের মঙ্গলে পাড়ি দিতে চলেছে ভারত। মঙ্গলযান-২ নিয়ে প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরো। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের টান কাটিয়ে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলো আদিত্য এল ১ ।

একের পর এক মহাকাশ অভিযান করে গোটা বিশ্বকে চমক দিচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) বা ইসরো (ISRO)। চলতি বছর চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) মিশন দ্বারা বিশ্ব ইতিহাস গড়েছে ভারত। সর্ব প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করায় ইসরো। এরপরই সূর্যের উদ্দেশ্যে ভারতের প্রথম সৌরযান 'আদিত্য এল ১' (Aditya L1)-কে পাঠিয়েছে ইসরো। এবার ন’বছর পর আবার পৃথিবীর পড়শি গ্রহ মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।

 ২০১৩ সালের ৫ই নভেম্বর মঙ্গল গ্রহের উদ্দ্যেশ্যে প্রথম মহাকাশযান পাঠায় ভারত।পিএসএলভি-সি২৫ (PSLV-C25) রকেটের মাধ্যমে মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছিল মঙ্গলযান ১ (Mangalyaan 1)-কে। শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ কেন্দ্র (Satish Dhawan Space Center in Sriharikota) থেকে এই রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। এরপর সফলভাবে ২০১৪ সালের ২৪ সে সেপ্টেম্বর মঙ্গলযান মার্সের কক্ষপথে প্রবেশ করে নিজের কর্মজীবনে মঙ্গলের কয়েক হাজার ছবি পাঠিয়েছিল মঙ্গলযান। মঙ্গলযানের পাঠানো তথ্যের উপর নির্ভর করে বহু জার্নাল প্রকাশ করেছে ইসরো। মঙ্গলযান ১ মিশনে খরচ হয়েছিল মাত্র ৪৫০ কোটি টাকা। যা বহু হলিউড মনকি বলিউড সিনেমার খরচের থেকেও কম। যার ফলে এতো কম খরচে মঙ্গলযান ১ মিশন সফল হওয়ায় তা বিশেষ নজর করেছিল গোটা বিশ্বের।

এবার ফের মঙ্গলের উদ্দ্যেশ্যে মহাকাশযান পাঠাতে চলেছে ইসরো। হিন্দুস্তান টাইম্‌সের রিপোর্ট অনুযায়ী, দীর্ঘ ন’বছর পর আবারো মঙ্গলগ্রহের উদ্দেশ্যে মহাকাশযান অর্থাৎ মঙ্গলযান ২ (Mangalyaan 2) পাঠানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। লাল গ্রহে একগুচ্ছ উদ্দেশ্যসাধনের লক্ষ্য নিয়ে পাড়ি দেবে ইসরোর এই মঙ্গলযান ২ (Mangalyaan 2)। ইতিমধ্যেই মঙ্গলযান ২.০ পাঠানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ইসরো। জানা গিয়েছে এই মহাকাশযান মঙ্গলের আবহাওয়া, মাটির ধুলো পর্যবেক্ষণ করবে এবং সেই সংক্রান্ত অজানা তথ্য ভারতে পাঠাবে।

‘মার্স অরবিটর মিশন-২’-এর পরিচিত নাম ‘মঙ্গলযান-২’ (মঙ্গলযান ২)। সূত্রের খবর, মঙ্গলের মাটিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানোর জন্য এই মহাকাশযানের সঙ্গে মোট চারটি পেলোড পাঠাবে ইসরো। প্রথম পেলোডের নাম মার্স অরবিট ডাস্ট এক্সপেরিমেন্ট বা মডেক্স (MODEX)। এর মাধ্যমে মঙ্গলের মাটি থেকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় ধুলোর উৎপত্তি, ঘনত্ব, গতিবিধি বোঝার চেষ্টা করা হবে। দ্বিতীয় পেলোড রেডিয়ো অকালটেশন বা আরও (RO)। এর মাধ্যমে মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে ইলেকট্রন, নিউট্রনের ঘনত্ব পরিমাপ, বায়ুমণ্ডলের সার্বিক চরিত্র বিশ্লেষণ করা যাবে। মঙ্গলযান-২-এর তৃতীয় পেলোড এনার্জেটিক আয়ন স্পেকটোমিটার বা ইআইএস (EIS)। মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে সৌরশক্তি কণা এবং সুপার থার্মাল সৌরবায়ু কণা চিহ্নিত করার জন্য এই পেলোড তৈরি করা হবে। চতুর্থ পেলোডটির নাম ল্যাংমিওর প্রোব অ্যান্ড ইলেকট্রিক ফিল্ড এক্সপেরিমেন্ট বা এলপেক্স (LPEX), যা মঙ্গলের বায়ুমণ্ডলে প্লাজমার পরিবেশ পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে ইলেকট্রনের ঘনত্ব, ইলেকট্রনের তাপমাত্রা পরিমাপ করা যাবে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলযান-এ পাঁচটি যন্ত্র ছিল – মার্স কালার ক্যামেরা, থার্মাল ইনফ্রারেড ইমেজিং স্পেকট্রোমিটার, মিথেন সেন্সর ফর মার্স, মার্স এক্সোস্ফেরিক নিউট্রাল কম্পোজিশন অ্যানালাইজার এবং লাইম্যান আলফা ফটোমিটার। গতবছর অক্টোবরেই জ্বালানি ফুরিয়ে যায় মঙ্গলযানের। আশা ছাপিয়ে আটবছর ধরে ইসরোর সেই উপগ্রহটি প্রদক্ষিণ করেছিল লাল গ্রহকে। উল্লেখ্য, মঙ্গলযানের মেয়াদ হওয়ার কথা ছিল ৬ মাস। তবে তা কাজ করে প্রায় আটবছর। তবে গতবছর অক্টোবরে জ্বালানি ফুরিয়ে যায় ‘মার্স অরবিটার মিশন’-এর। স্যাটেলাইটের ব্যাটারির শক্তিও শেষ হয়ে যায়।  তবে এবার ফের মঙ্গল গ্রহের উদ্দ্যেশ্যে মহাকাশযান পাঠাতে বেশ উচ্ছসিত ইসরো। জোর কদমে চলছে মঙ্গলযান ২ (Mangalyaan 2) এর প্রস্তুতি পর্ব। মঙ্গলযান ২ লঞ্চের তারিখ (Mangalyaan 2 Launch Date) সম্পর্কে যদিও কোনও ইঙ্গিত দেননি ইসরোর বিজ্ঞানীরা।

একদিকে যেমন চলছে মঙ্গলযান ২ মিশনের প্রস্তুতি অন্যদিকে চিরনিদ্রায় চন্দ্রযান ৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান। ২৩ সে অগাস্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস গড়েছিল বিক্রম-রোভার। সফল অবতরণের পর পরিকল্পনা মতো ডিউটিও পালন করে ল্যান্ডার রোভার। এরপর চাঁদে সূর্যাস্ত হতেই স্লিপ মোডে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাদের। তবে বিজ্ঞানীদের আশা ছিল, চাঁদে ফের সূর্যের আলো পড়লে ফের জেগে উঠবে বিক্রম-প্রজ্ঞান। তবে তা আর হলো না। এখন চিরনিদ্রায় তারা। তবে অন্যদিকে, স্বভাবিকভাবে পরিকল্পনা মতো ধীরে ধীরে ক্রমশ পৃথিবী ও সূর্যের মধ্বর্তীস্থল, এল পয়েন্টের দিকে এগিয়ে চলেছে আদিত্য এল ১ (Aditya L1)। ইসরো জানিয়েছে আদিত্য এল ১ মিশন (Aditya L1 Mission) ঠিকভাবেই চলছে।

সম্প্রতি ইসরো জানিয়েছে, পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাটিয়ে অগ্রসর হল ভারতের সূর্যযান আদিত্য এল ১ (Aditya L1)। মঙ্গলযানের পর এই দ্বিতীয় বার ভারত মহাকাশযান পাঠাল, যা পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছিন্ন করে অগ্রসর হয়েছে। ইসরো সোশ্যাল মাধম্যে আরও জানিয়েছে, পৃথিবী থেকে ৯.২ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করেছে আদিত্য এল ১ (Aditya L1)। উল্লেখ্য, গত ২রা সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ান মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র থেকে সূর্যের উদ্দেশে পাড়ি দিয়ে সূচনা হয়েছিল আদিত্য এল ১ মিশন (Aditya L1 Mission)। তারপর পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে তার চারপাশেই পাক খাচ্ছিল সৌরযানটি। পৃথিবীর কাছে মোট পাঁচটি কক্ষপথ বদলের পর অবশেষে টান কাটিয়ে বেরিয়ে যায় সেটি। আদিত্য এল ১ মিশন (Aditya L1 Mission) এর গন্তব্য সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝের এল১ পয়েন্ট। সেখানে পৌঁছে সূর্যকে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করবে আদিত্য এল ১ (Aditya L1)। সূর্যের সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য এর ফলে বিজ্ঞানীরা জানতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। সূর্যের করোনা, ফোটোস্ফিয়ার এবং ক্রোমোস্ফিয়ার সম্পর্কেও অনেক অজানা তথ্য পাওয়া যেতে পারে আদিত্য এল ১ মিশন (Aditya L1 Mission) এ।