ISRO and Aditya L-1 | লক্ষ্যের আরও কাছে 'আদিত্য'! চাঁদ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফেরানোর পাশাপাশি শুক্রেও পাড়ি দেওয়ার পরিকল্পনা ইসরোর!

Monday, October 16 2023, 11:46 am
highlightKey Highlights

বিক্রম ও প্রজ্ঞানের সাড়া না মিললেও পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা করছে ইসরো। চাঁদ থেকে ন্যমুনা সংগ্রহ করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা বিজ্ঞানীদের। পরিকল্পনা শুক্র মিশনেরও। এল পয়েন্টের আরও কাছে পৌঁছেছে আদিত্য এল ১।


সুস্থ স্বাভাবিক, পরিকল্পনা মাফিক চলছে আদিত্য এল-১ মিশন (Aditya L-1 Mission)। ইতিমধ্যেই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান কাটিয়ে কক্ষপথ থেকে বেরিয়ে নতুন ঠিকানার আরও কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে আদিত্য এল-১ (Aditya L-1)। এদিকে সম্প্রতি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) বা ইসরো জানিয়েছে, এখনও সাড়া মেলেনি বিক্রম-প্রজ্ঞানের। চন্দ্রযান-৩ বর্তমান স্ট্যাটাস (Chandrayaan-3 Current Status) এখনও 'স্লিপ মোডে'ই। তবে এখনই আশা ছাড়ছেন না বিজ্ঞানীরা। বরং চন্দ্র ছেড়ে শুক্রর দিকে লক্ষ্য করছে ইসরো।

আদিত্য এল-১ মিশন । Aditya L-1 Mission :

Trending Updates

গত ২ সেপ্টেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টার (Satish Dhawan Space Research Center in Sriharikota, Andhra Pradesh) থেকে সূর্যের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিল আদিত্য-এল১ (Aditya L-1)। তারপর চন্দ্রযান-৩ এর মতো ভারতের প্রথম সৌরযানটিও পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলের অধীনে তার চারপাশেই পাক খাচ্ছিল। ধীরে ধীরে পৃথিবীর কাছে মোট পাঁচটি কক্ষপথ বদলের পর অবশেষে টান কাটিয়ে বেরিয়ে যায় আদিত্য-এল১ (Aditya L-1)।

গত সোমবার ভারতীয় সময় রাত ২টো নাগাদ আদিত্য-এল১ পঞ্চম কক্ষপথ পরিবর্তন করে পৃথিবীর টানের বাইরে বেরিয়ে যায় বলে জানায় ইসরো। পৃথিবী থেকে দূরের কোনও মহাজাগতীয় বস্তুর দিকে আগেও মহাকাশযান পাঠিয়েছে ইসরো। এই নিয়ে পঞ্চম বার ইসরো মহাকাশযানকে পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে পাঠাতে সফল হল।

আদিত্য এল-১ মিশন (Aditya L-1 Mission) এর লক্ষ্য, ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট১ বা এল১ পয়েন্টের চারদিকে হ্যালো কক্ষপথ থেকে সৌরযানটি কাজ করবে। এই কক্ষপথ থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ১৫ লক্ষ কিলোমিটার। এল১ থেকে এল৫ পর্যন্ত মোট পাঁচটি পয়েন্ট রয়েছে ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টে। এই পয়েন্টগুলি ত্রিমাত্রিক। কিন্তু পাঁচটি পয়েন্টের মধ্যে আদিত্য এল-১ মিশন (Aditya L-1 Mission) এর জন্য এল১ পয়েন্টকেই বেছে নিয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।

এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীদের দাবি, পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী এল১ পয়েন্ট থেকে মহাজাগতীয় বস্তু নিপুণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্টও মহাকাশে এমন জায়গায় বিরাজ করে যেখানে দু’টি বড় আকারের বস্তুর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আকারে ছোট অপর একটি বস্তুর সাহায্যে কেন্দ্রাভিমুখী বলের ভারসাম্য বজায় রাখে। আদিত্য-এল১ সূর্য এবং পৃথিবীর মাঝের এই এল১ পয়েন্টে পৌঁছেই কোনোরকম বাধা ছাড়া সূর্যের করোনা, ফোটোস্ফিয়ার এবং ক্রোমোস্ফিয়ার সম্পর্কেও অনেক অজানা তথ্য পেতে পারে। আর পৃথিবী এবং সূর্যের মধ্যবর্তী এই ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ১-এর থেকেই বর্তমানে ক্রমশ কমে আসছে আদিত্য এল-১ এর দূরত্ব।

চন্দ্রযান-৩ বর্তমান স্ট্যাটাস । Chandrayaan-3 Current Status :

বারবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ইসরোর ডাকে সারা দিচ্ছে না বিক্রম প্রজ্ঞান। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ২৩ সে অগাস্ট অবতরণের পর ১৪দিন ধরে পরীক্ষা করার পর চাঁদে সূর্যাস্তের পর স্লিপ মোডে পাঠিয়ে দেওয়া হয় চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার ও রোভারকে। ইসরোর আশা, চাঁদে ফের সূর্যের আলো পড়তেই জেগে উঠবে বিক্রম প্ৰজ্ঞান। কিন্তু তেমনটা হলো না! চন্দ্রযান-৩ বর্তমান স্ট্যাটাস (Chandrayaan-3 Current Status) এখনও স্লিপ মোডে।

 তবে  ইসরো জানিয়েছে, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চন্দ্রযান-৩ এর এই সাড়া পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করবেন বিজ্ঞানীরা। ওইদিন চাঁদে ফের একবার সূর্যের আলো পড়তে চলেছে। যতক্ষণ না পর্যন্ত আলো নিভছে ততক্ষণ বিক্রম এবং প্রজ্ঞানকে ঘুম থেকে ডাকার চেষ্টা করে যাবে এস সোমনাথ (S Somnath) এবং তাঁর টিম। এক নাগাড়ে ইসরোর টিম চন্দ্রযান ৩-কে পিং করে যাবে। ৩০সে সেপ্টেম্বর সূর্যাস্ত না হওয়া পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে বলে জানিয়েছেন ইসরো প্রধান এস সোমনাথ। তবে হাড়কাঁপুনি ঠান্ডায় চন্দ্রযান ৩-এর বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বড্ড ক্ষীণ। এ কথা ধ্রুব সত্য বলেই মনে করছেন তিনিও।

অন্যদিকে, ইতিমধ্যেই পরবর্তী মিশনের জন্য পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে ইসরো। ইসরোর প্রধান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, বিক্রমের দ্বিতীয় সফট ল্যান্ডিংয়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই পরবর্তী চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা করা হবে। সেই অভিযানে চাঁদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মহাকাশযানটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে বলে সূত্রের খবর।

 গত ৩ রা সেপ্টেম্বর, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি ভিডিয়ো পোস্ট করে ইসরো জানিয়েছিল, চাঁদের মাটি থেকে শূন্য ওড়ানো হয় চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডারকে। বিক্রমের সঙ্গে থাকা ইঞ্জিনকে চালু করা হয়। এরপর সেই ল্যান্ডারকে প্রায় ৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতায় উড়িয়ে আগের জায়গায় থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার দূরে সফল ভাবে অবতরণ করানো হয়। এই পরীক্ষা যে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, তা তখনই জানিয়ে দিয়েছিল ইসরো। বিক্রমের 'হপ এক্সপেরিমেন্ট' নিয়ে ইসরোর তরফে জানানো হয়েছিল, ভবিষ্যতে চাঁদে মানব অভিযান করলে তার সাফল্যের জন্য এই পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই হপ এক্সপেরিমেন্ট'ই ইসরোর পরবর্তী চন্দ্রাভিযানে কাজে লাগানো হবে বলে জানানো হয় ইসরোর তরফ থেকে। ইসরো প্রধান বলেন, পরবর্তী অভিযানের জন্য এখনও কোন নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ না করা হলেও পরবর্তী চন্দ্রাভিযানে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হবে। পাশাপাশি সেই অভিযানে চাঁদের থেকে নমুনা সংগ্রহ করে মহাকাশযানটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে।

এছাড়াও নয়া নজির গড়তেও পরিকল্পনা করছে ইসরো। এবার শুক্রগ্রহে মহাকাশযান পাঠাতে চায় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল সায়েন্স অ্যাকাডেমির (Indian National Science Academy) এক অনুষ্ঠানে সোমনাথকে বলেন, ইসরোর বড় পরিকল্পনা রয়েছে শুক্রকে (Venus) নিয়ে। শুক্রকে খতিয়ে দেখার একটি মিশন ছাড়াও পৃথিবীর উপরে মহাকাশের আবহাওয়ার প্রভাব কতটা তা দেখতে দুটি উপগ্রহ প্রেরণের পরিকল্পনা আছে। পাশাপাশি মঙ্গলে মহাকাশযান অবতরণ করাও লক্ষ্য ইসরোর। উল্লেখ্য, আগামী ডিসেম্বরে এক্স রে পোলারিমিটার উপগ্রহ ( X-ray polarimeter satellite) উৎক্ষেপণ করবে ইসরো। সেই উপগ্রহটি তারার মৃত্যুর বিষয়টি নিরীক্ষণ করবে। প্রসঙ্গত. অন্তত ৫ হাজার এক্সো প্ল্যানেট অর্থাৎ সৌরজগতের বাইরের গ্রহের সন্ধান মিলেছে। যাদের মধ্যে কমপক্ষে ১০০টি গ্রহে আবহাওয়ার সন্ধান মিলেছে। ফলে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে নানারকমের পরীক্ষা করতে উৎসাহী ইসরো।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File