Happy Hormone Food | শরীর ও মন ভালো রাখতে দরকার হ্যাপি হরমোন! এই খাবার খেলেই ভুগবেন না অবসাদে!
মস্তিষ্ক থেকে নিঃসরণ হয় হ্যাপি হরমোন নামের বিশেষ হরমোন যা শরীরের পাশাপাশি সুস্থ্য রাখে মনও। এই হরমোন নিঃস্বরণ দুরে রাখে মানসিক অবসাদ, অশান্তি।
বর্তমানে দৈনন্দিন নানান কারণে মানসিক অবসাদে (Depression) ভুগে থাকেন অনেকেই। তবে শারীরিক সমস্যার মতো কখনোই গুরুত্ব দেওয়া হয়না মানসিক অসুস্থতা বা অবসাদকে। কিন্তু চিকিৎসকরা এবং বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, মানসিক শান্তি ও সুস্থ্যতা না থাকলে এর প্রভাব পরে শরীরেও। আবার একইরকম ভাবে শরীর ভালো না থাকলে মনও ভালো থাকে না। তবে এক্ষেত্রে এক ঢিলে দুই পাখি মারার উপায় কি? কীভাবে মন ও শরীর উভয়ই একসঙ্গে ভালো রাখা যায়? শরীর ও মন দুই ভালো রাখার অন্যতম উপায় হলো হ্যাপি হরমোন (Happy Hormone)।
হ্যাপি হরমোন কী ? । What is Happy Hormone?
হরমোন এবং নিউরোট্রান্সমিটারগুলি (Neurotransmitters) শরীরের অভ্যন্তরে ক্রমাগত ঘটতে থাকা অনেক প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়াগুলি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে কিছু হরমোন কেবল শারীরিক ক্ষেত্রেই নয়, মানসিকভাবেও অনেক সহায়তা করে। মস্তিষ্ক থেকে একরকম সুখী হরমোন বা হ্যাপি হরমোন নিঃসৃত হয়। যা মন ভাল রাখতে এবং ভাল ঘুম হতে সাহায্য করে। এই হরমোনের মধ্যে রয়েছে সেরোটোনিন (Serotonin), এন্ডোরফিন (Endorphin), ডোপামিন (Dopamine), অক্সিটোসিন (Oxytocin)।
- ডোপামিন । Dopamine : "ফিল-গুড" হরমোন (Feel Good Hormone) হিসাবে পরিচিত, ডোপামিন হল একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা মস্তিষ্কের রিওয়ার্ড সিস্টেমের (Reward System) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই হরমোন আনন্দদায়ক অনুভূতি, সংবেদন অনুভূতি, শিক্ষা ক্ষমতা, স্মৃতি এবং আরও অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত।
- সেরোটোনিন । Serotonin : এই হরমোন এবং নিউরোট্রান্সমিটার মেজাজের পাশাপাশি ঘুম, ক্ষুধা, হজম এবং স্মৃতিশক্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
- অক্সিটোসিন । Oxytocin : এই হরমোনকে 'প্রেমের হরমোন' (Love Hormone) বলা হয়। অক্সিটোসিন সম্পর্কের মধ্যে বিশ্বাস, সহানুভূতি এবং বন্ধনকে উন্নীত করতে সাহায্য করতে পারে। এই হরমোন সাধারণত শারীরিক স্নেহ সঙ্গে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ আলিঙ্গনের মতো শারীরিক স্পর্শের সঙ্গে এই হরমোন যুক্ত।
- এন্ডোরফিনস । Endorphins : এই হরমোনগুলি শরীরের প্রাকৃতিক ব্যথা উপশমকারী, যা শরীর চাপ বা অস্বস্তির প্রতিক্রিয়া হিসাবে তৈরি করে। এই হরমোন শরীর চর্চা বা শারীরিক চর্চার সঙ্গে যুক্ত।
যে খাবার 'হ্যাপি হরমোন' নিঃসরণে সহায়তা করে । Foods That Help Release 'Happy Hormones' :
সুস্থ্য জীবন পরিচালনার জন্য শরীর ও মন দুই ভালো রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন এবং এর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ছাড়া আর ভালো কোনও উপায় নেই বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। পুষ্টিবিদরা বলেন, এমন কিছু খাবার রয়েছে যা খেলে নিঃসরণ হয় হ্যাপি হরমোন। ফলে এর থেকে যেমন শরীর ভালো থাকে, তেমনই ভালো থাকে মনও। দেখে নিন এই তালিকায় রয়েছে কোন কোন খাবার।
১. ডার্ক চকোলেট । Dark Chocolate :
ডার্ক চকোলেট যেমন খেতে সুস্বাদু তেমনই এর রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্য উপকারিতাও। এটিতে এমন যৌগ রয়েছে যা এন্ডোরফিন নামক এক প্রকার হ্যাপি হরমোন নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। ফলে ডার্ক চকোলেট শরীরের ব্যথা কমাতে এবং আনন্দের অনুভূতি প্ররোচিত করে। এছাড়াও ডার্ক চকোলেটে ম্যাগনেসিয়ামও (Magnesium) রয়েছে। এই খনিজ চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসকরা মানসিক অবসাদ দূর করতে এবং শরীর ভালো রাখতে নির্দিষ্ট পরিমান ডার্ক চকোলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
২. অ্যাভোকাডো । Avocado :
অ্যাভোকাডোতে পটাসিয়াম (Potassium), ফাইবার (Fiber) এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি-সহ সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এটি ভিটামিন বি ৬ (Vitamin-B) এর একটি ভাল উৎস, যা সেরোটোনিন নামক হ্যাপি হরমোন নিঃসরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও অ্যাভোকাডো নিউরোট্রান্সমিটার নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩. ব্লুবেরি । Blueberry :
ব্লুবেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে (Antioxidant) ভরপুর। যা শরীরকে মানসিক চাপের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও এটি ভিটামিন সি (Vitamin-C) এর একটি ভাল উৎস। যা স্ট্রেস (Stress) অর্থাৎ মানসিক চাপ কমাতে এবং শরীরকে স্ট্রেসের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে স্ট্রেস মোকাবেলা করতে সাহায্য করে।
৪. সালমন । Salmon :
সালমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (Omega-3 Fatty Acid) সমৃদ্ধ। যা প্রদাহ কমাতে এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। এছাড়াও এই ধরণের মাছের স্বাস্থ্যকর চর্বিগুলি কর্টিসল (Cortisol) কমাতেও সাহায্য করতে পারে। এটি স্ট্রেস হরমোনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে।
৫. সবুজ শাক । Green Vegetables :
পালং শাক এবং কলির মতো শাক-সবজি ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে ভরপুর থাকে। যা শরীরের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজন। সবুজ শাক ম্যাগনেসিয়ামের একটি ভাল উৎস। যা শরীরের চাপের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৬. বাদাম এবং বীজ । Nuts and Seeds :
অনেক বাদাম এবং বীজ ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ, যা চাপের মাত্রা কমাতে এবং শিথিলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। এগুলিতে স্বাস্থ্যকর চর্বিও বেশি থাকে, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং শরীরে প্রদাহ কমাতে সহায়তা করতে পারে। ফলে বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, বেশি স্ট্রেস অনুভব করলে এক মুঠো বাদাম খেলে তা দুর্দান্ত কাজ করতে পারে।
৭ . কলা । Banana :
কলাতে সেরোটোনিন থাকে যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য পরোক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে। শরীরে সেরোটোনিন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন ভিটামিন বি (Vitamin-B), যা প্রচুর পরিমাণে থাকে কলাতে।
এখন কাজের চাপে কারুরই সেরকমভাবে নিজের শরীরের ওপর যত্ন নেওয়া হয়না। এর ফলেই মূলত নানা রকমের রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তও শারীরিক কোনও সমস্যা হলে ওষুধ খেয়ে নিলেই অনেকটা রেহাই পাওয়া হয়। এটি কিন্তু মানসিক অবসাদ বা রজার জন্য প্রযোজ্য নয়। মানসিক অশান্তি এবং অবসাদ থাকলেই শুরু হবে শারীরিক সমস্যাও। এর প্রভাব পড়বে কাজের ওপরও। ফলে শরীরের সঙ্গে সঙ্গে মনের সুস্থতার ওপরেও দিতে হবে বিশেষ নজর।