Cough Syrup | ভারতে তৈরী কাশির সিরাপকে 'বিষাক্ত' বলে ইরাকে নিষিদ্ধ করলো হু! কী খেলে ঠিক হবে কাশি?

Tuesday, August 8 2023, 11:55 am
highlightKey Highlights

ভারতে তৈরি এক প্রকারের কাশির সিরাপিকে বিষাক্ত বলে ঘোষণা করলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইরাকে এই কাশির সিরাপ নিষিদ্ধ করার সতর্কতা। সিরাপ বাদে ঘরোয়া পদ্ধতিতে কাশি কমানোর পরামর্শ দিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।


বর্ষার মরশুমে সর্দি, কাশি হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এ যেন বর্ষার সঙ্গে ফ্রি! আবহাওয়ার কারণে হোক কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে, ছোট থেকে বড় সকলেরই এক সমস্যা। খুশখুশে কাশি হোক কিংবা কফ জমা কাশি, অনেকেই ডাক্তার না দেখিয়ে কেবল ওষুধের দোকানে গিয়েই নাম বলে কাশির সিরাপ (Cough Syrup) কিনে খান। তবে এই কাশির সিরাপই হতে পারে প্রাণঘাতক!

ভারতে (India) নানারকমের কাশির সিরাপ তৈরী হয়। যা রমরমিয়ে বিক্রি হয় বাজারে। সর্দি,কাশি,জ্বর হলে অনেক সময় ডাক্তাররা কাশির সিরাপ প্রেসক্রাইব করে থাকেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে দোকানে গিয়ে নাম বলে কাশির সিরাপ কেনার চল এখন খুব দেখা যায়। তবে সেই কাশির সিরাপ আদৌ শরীরের জন্য ভালো কিনা তা জানা খুব জরুরি। নাহলে এই সিরাপই কাশি ঠিক করার বদলে শরীরের উল্টে ক্ষতি করতে পারে। সম্প্রতি ভারতে তৈরি এমনই এক কাশির সিরাপিকে 'বিষাক্ত' বলে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) বা হু (WHO)। ভারতে তৈরী এই কাশির সিরাপ ইরাকে (Iraq) বিক্রির বিরুদ্ধেও সতর্কতা জারি করেছে হু।

ভারতে তৈরি এক কাশির সিরাপিকে 'বিষাক্ত' বলে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 
ভারতে তৈরি এক কাশির সিরাপিকে 'বিষাক্ত' বলে সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 

জানা গিয়েছে,  ভারতের ডাবিলাইফ ফার্মার ফৌরটস ল্যাবরেটরিজে (India's Pharma Fortes Laboratories) তৈরী প্যারাসিটামল সিরাপ কোল্ড আউট (Paracetamol Syrup Cold Out) নামের ওই সিরাপ বিষাক্ত’ ও হজমের পক্ষে ‘বিপজ্জনক’ বলে জানিয়েছে হু। জানা গিয়েছে, ডাইথাইলিন (Diethylene) ও ইথিলিন গ্লাইকলের (Ethylene Glycol) মতো উপাদান ওই ওষুধে ব্যবহৃত হয়েছে যা, সহনীয় মাত্রার অনেক বেশি পরিমাণে রয়েছে। দু’টিরই সহনীয় মাত্রা যেখানে ০.১০ শতাংশ, সেখানে তা যথাক্রমে ০.২৫ ও ২.১ শতাংশ হিসেবে রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সিরাপটির নির্মাতা ও বিপণনকারীরা এর গুণগত মান ও নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনও গ্যারান্টিও দিতে পারেনি। উল্লেখ্য, এর আগে গাম্বিয়ায় (Gambia) ৭০, উজবেকিস্তানে (Uzbekistan) ১৮ ও ক্যামেরুনে (Cameroon) ৬ জন শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে ভারতে তৈরি সিরাপকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল আগেই। সব মিলিয়ে এই নিয়ে ভারতে তৈরি ৫টি ‘বিষাক্ত’ কাশির সিরাপকে নিষিদ্ধ করা হল।

ওই সিরাপ বিষাক্ত’ ও হজমের পক্ষে ‘বিপজ্জনক’ বলে জানিয়েছে হু
ওই সিরাপ বিষাক্ত’ ও হজমের পক্ষে ‘বিপজ্জনক’ বলে জানিয়েছে হু

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, কাশি হলে কাশির সিরাপ না খেয়ে ঘরোয়া পদ্ধতিতেই কাশি সারানো শ্রেয়। কারণ ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা হোক বা দোকান থেকে বলা হোক, কোন কাশির সিরাপে কী উপাদান থাকবে তা জানা মুশকিল। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো কাশি হলে কীভাবে সারাবেন? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের মতে, এমন বেশ কিছু খাবার আছে যা সঠিকভাবে খেলে দিন কয়েকের মধ্যেই কাশি ঠিক হয়ে যাবে। এই খাবার দ্বারা শরীরের অন্য কোনও ক্ষতিও হবে না। দেখে নিন কাশি ঠিক করতে কী খাবেন (What To Eat To Cure Cough)।

ভারতে তৈরী এই কাশির সিরাপ ইরাকে বিক্রির বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছে হু
ভারতে তৈরী এই কাশির সিরাপ ইরাকে বিক্রির বিরুদ্ধে সতর্কতা জারি করেছে হু

১. মধু । Honey :

 শুকনো কাশিতে মধু খুব উপকারী‌। ছোট থেকে বড় সকলের জন্যই বেশ উপকারী মধু। কাশি ঠিক করতে এক টেবিল চামচ মধু সারা দিনে তিন থেকে চার বার খেতে পারেন। মধু শুধুও খেতে পারেন, আবার কখনও উষ্ণ গরম জল কিংবা চায়ের সঙ্গে মিশিয়েও মধু খেতে পারেন। এক্ষেত্রে বেশি উপকার পেতে পারেন। মধুতে থাকে অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল (Antibacterial) নানা জিনিস। এই উপাদান আদি যুগ থেকে ব্যবহার করা হয় ক্ষত সারানোর কাজে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং শরীরের ভিতরের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। ফলে প্রচণ্ড কাশি ঠিক করতে মধু খাওয়ার পরামর্শ সবসময়ই দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

ছোট থেকে বড় সকলের জন্যই কাশি ঠিক করতে বেশ উপকারী মধু
ছোট থেকে বড় সকলের জন্যই কাশি ঠিক করতে বেশ উপকারী মধু

২. হলুদ । Turmeric : 

 হলুদের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন (Vitamins), খনিজ লবণ (Mineral Salts), ফসফরাস (Phosphorus), ক্যালশিয়াম (Calcium), লোহার (Iron) মতো গুরুত্বপূর্ণ যৌগ। ফলে হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়াও, শুকনো কাশির জন্য হলুদ খুব কার্যকরী। রাতে ঘুমোনোর আগে এক কাপ দুধে ১ চা চামচ হলুদ মিশিয়ে খেতে পারেন। এতে শুকনো কাশির সমস্যা থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া যায়। এছাড়াও  হলুদের রসও খেতে পারেন।

হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে
হলুদ খেলে শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে

৩. তুলসী পাতা । Tulsi leaves :

 তুলসী পাতার শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও সমস্যা মেটাতে ম্যাজিকে মতো কাজ করে। সর্দি, কাশি দূর করে খুব দ্রুত। এই পাতার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল উপাদান শুকনো কাশি কমাতে সাহায্য করে। কাশি কমাতে মধুর সঙ্গে কয়েকটি তুলসী পাতা এমনি চিবিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও তুলসী পাতার রস বার করে, তার মধ্যে মধু মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে।

 তুলসী পাতার শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও সমস্যা মেটাতে ম্যাজিকে মতো কাজ করে
 তুলসী পাতার শ্বাসযন্ত্রের যে কোনও সমস্যা মেটাতে ম্যাজিকে মতো কাজ করে

৪. আদা । Ginger:

বর্ষাকালে কাশি হওয়ার আগে গলায় খুসখুসে ভাব তৈরী হয়, যা পরবর্তীকালে গিয়ে কাশিতে পরিণত হয় এবং দীর্ঘদিন ভোগায়। গলার এই খুসখুসে ভাব দূর করতে খুব উপকারী আদা। এর জন্য প্রথমে ২ কাপ জলে কিছুটা আদা কুচি দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর এর সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে খেলেই গলার খুসখুসে ভাব থেকে মুক্তি। আদা ও মধুর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল (Antibacterial) ও প্রদাহনাশক উপাদান গলার ব্যথা দূর করে সহজেই। পাশাপাশি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান গলার গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া কমায় এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করে। আদা দিয়ে জল ফুটিয়ে, সেই জল দিয়ে গার্গল করতে পারলেও অনেকটা স্বস্তি পেতে পারেন গলার খুসখুসে ভাব এবং কাশি থেকে। তবে এক্ষেত্রে গার্গল করার আধ ঘণ্টা আগে ও পরে কোন খাবার খাবেন না এবং কম কথা বলবেন। মধুর মতোই আদারও অনেকগুলো উপকারিতা আছে। গরম জল, চা কিংবা স্যুপের সঙ্গে কাঁচা আদা খেলেও কাশি কমতে পারে।

গলায় খুসখুসে ভাব দূর করতে খুব উপকারী আদা
গলায় খুসখুসে ভাব দূর করতে খুব উপকারী আদা

৫. রসুন । Garlic :

রসুনের মধ্যে রয়েছে অ্যালিসিন (Allicin) নামে একটি যৌগ। যা আদতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (Antimicrobial) যৌগ বলেই পরিচিত। রসুন চিবিয়ে খেলে অ্যালিসিন সক্রিয় হয়। এগুলি শ্বেত রক্তকণিকার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে সাধারণ সর্দি-কাশি যে ভাইরাসের জন্য হয়, সেগুলির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। তাই প্রতি দিন একটি করে রসুনের কোয়া খেতে পারলে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে পাওয়া যায়। মধুর মতো রসুনকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করার প্রচলনও অনেক দিনের পুরনো। এর অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাংগাল (Anti-Fungal) বৈশিষ্ট্য শরীরের নানা উপকার করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত রসুন খেলে তা সর্দি এবং কাশির সমস্যা কমায়। তাই কাশি হলে রসুন খেতে পারেন।

প্রতি দিন একটি করে রসুনের কোয়া খেতে পারলে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে পাওয়া যায়
প্রতি দিন একটি করে রসুনের কোয়া খেতে পারলে সর্দি-কাশি থেকে রক্ষা পেতে পাওয়া যায়

৬. জোয়ান জল । Ajwain Water : 

কেবল হজমের জন্যই নয়, কাশিও ঠিক করতে পারে জোয়ান। প্রচন্ড কাশিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠলে হাতের কাছে থাকা জোয়ানই অনেক সময়  সমস্যা মুক্তির পথ দেখাতে পারে। এক্ষেত্রে এক পাত্র জলে কিছুটা পরিমাণ জোয়ান ও তুলসী মিশিয়ে দিন। তারপর জলটা ভালো করে ফুটিয়ে নিন। এরপর সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে এই জল পান করতে থাকুন। এতেই অনেকটা কাশি কমবে। এমনকী বুকে জমে থাকা কফও বেরিয়ে যাবে।

প্রচন্ড কাশিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠলে জোয়ানই অনেক সময়  সমস্যা মুক্তির পথ দেখাতে পারে
প্রচন্ড কাশিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠলে জোয়ানই অনেক সময় সমস্যা মুক্তির পথ দেখাতে পারে

এই সকল খাবার খাওয়া ছাড়াও কাশি, গলা ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে নুন জলে গার্গল (Gargle) করা কিন্তু মাস্ট। নুন ও গরম জলের এই কম্বিনেশন গলায় উপস্থিত জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে তা প্রতিরোধ করে। ফলে কমতে থাকে গলার ভাইরাল লোড। আর এই কারণেই গলা ব্যথা, ফোলার মতো সমস্যা কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রশমিত হয়। এছাড়াও কাশি, গলা ব্যথা দূর করতে স্টিম বা ভ্যাপার (Steam or Vapor) নিতে পারেন। একটা বড় বাটি বা গামলায় প্রথমে জল গরম করুন। এরপর গ্যাস বন্ধ করে মাথার উপর দিয়ে কোনও কাপড় বা গামছা বা তোয়ালে ঢাকা দিয়ে ফুটন্ত জল থেকে ওঠা বাষ্প নাক ও মুখ দিয়ে টানতে থাকুন। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্টিমের জন্য নাক খুলে যাবে, এমনকী কমবে মাথা ব্যথার সঙ্গে গলা ব্যথাও।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File