জীবন ও জীবনী

আবুল কাশেম ফজলুল হকের জীবনী, Abul Kasem Fazlul Huq biography in Bengali

আবুল কাশেম ফজলুল হকের জীবনী, Abul Kasem Fazlul Huq biography in Bengali
Key Highlights

আবুল কাশেম ফজলুল হক ছিলেন একজন বাঙালি আইনজীবী, লেখক এবং সংসদ সদস্য। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাঙালি কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত লাভ করেন তিনি। রাজনৈতিক মহল তথা সাধারণ মানুষের নিকট তিনি শের-এ বাংলা এবং 'হক সাহেব' নামে পরিচিত ছিলেন।

জন্ম ও পরিবার, Birth and family

এ. কে. ফজলুল হকের জন্ম হয় ১৮৭৩ সালে ২৬ অক্টোবর। তিনি বরিশাল জেলার রাজাপুর থানাধীন সাতুরিয়া গ্রামে নিজের মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আদি পৈতৃক ভিটা পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত বাউফল উপজেলায়। ফজলুল হকের পূর্বপুরুষ আঠারো শতকে ভারতের ভাগলপুর থেকে পটুয়াখালী জেলার বাউফল উপজেলায় বসতি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর পিতার নাম কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ এবং মাতা সাইদুন্নেসা খাতুন, ফজলুল হক তাদের একমাত্র পুত্র ছিলেন। 

শিক্ষা অর্জন, Education

এ. কে. ফজলুল হকের প্রাথমিক শিক্ষা নিজ বাড়িতেই শুরু হয়। পরে তিনি গ্রাম্য পাঠশালায় ভর্তি হয়েছিলেন। গৃহ শিক্ষকদের নিকটে তিনি আরবি, ফার্সি এবং বাংলা ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৮১ সালে তিনি বরিশাল জিলা স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। হক ১৮৮৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করেন এবং ১৮৮৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় তৎকালীন ঢাকা বিভাগে সকল মুসলমানদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন।

ফজলুল হক তাঁর প্রখর স্মৃতিশক্তির জন্য শিক্ষকদের খুবই স্নেহভাজন ছিলেন। প্রবেশিকা পাশ করে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য তিনি কলকাতায় চলে যান। ১৮৯১ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তখন প্রেসিডেন্সি কলেজে রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। নিজের মেধার ভিত্তিতে তিনি প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এফ.এ. পাশ করে তিনি গণিত, রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় অনার্সসহ একই কলেজে বি.এস সি ক্লাসে ভর্তি হন। ১৮৯৩ সালে বি.এ. পাশ করার পর এম.এ. ক্লাসে প্রথমে ভর্তি হয়েছিলেন ইংরেজি ভাষায়। খেলাধুলার প্রতিও ফুজলুল হক খুবই আগ্রহী ছিলেন। তিনি প্রথম জীবনে নিজে বিভিন্ন খেলাধুলার সাথে জড়িত ছিলেন এবং পরবর্তীকালে বিভিন্ন খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও তিনি পরিচিত ছিলেন। তিনি মোহামেডান ফুটবল ক্লাবের প্রতিষ্ঠার সময় থেকে এর সাথে জড়িত ছিলেন। এছাড়া তিনি দাবা, সাঁতার সহ বিভিন্ন খেলা পছন্দ করতেন।

বৈবাহিক সম্পর্ক, Married life

এ. কে. ফজলুল হক এম.এ. পাশ করার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।  নবাব আবদুল লতিফের পৌত্রী খুরশিদ তালাত বেগমের সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে বেগম খুরশিদ দুটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

কিন্তু খুরশিদ তালাত বেগমের অকালে প্রাণবিয়োগ ঘটে। তখন হক হুগলী জেলার অধিবাসী এবং কলকাতা অবস্থানকারী ইবনে আহমদের কন্যা জিনাতুন্নেসা বেগমের সাথে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে জিনাতুন্নেসাও নিঃসন্তান অবস্থায় পরলোক গমন করেন।

১৯৪৩ সালে এ. কে. ফজলুল হক মীরাটের খাদিজা নামক এক মহিলার সাথে বিবাহ করেন। তাদের সন্তান ছিলেন এ. কে. ফাইজুল হক, তিনি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পাট প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু ২০০৭ তাঁর ইন্তেকাল ঘটে।

কর্মজীবন, Career

এ. কে. ফজলুল হক ১৮৯৭ সালে কলকাতার রিপন কলেজ থেকে বি.এল. পাশ করার পর স্যার আশুতোষ মুখার্জির শিক্ষানবিশ হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে যোগদান করেন । সেখানে দু'বছর শিখানবিশ হিসেবে কাজ করেন, তারপর ১৯০০ সালে তিনি সরাসরি আইন ব্যবসার কাজ শুরু করেন।

১৯০১ সালে পিতৃবিয়োগ ঘটলে তিনি বরিশালে ফিরে আসেন এবং বরিশাল আদালতে যোগ দেন। সেখানে কর্মরত থাকাকালীন হক ১৯০৩ - ১৯০৪ সালে বরিশাল বার এসোসিয়েশনের সহকারী সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। সেসময়ই বরিশাল রাজচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ ডক্টর হরেন্দ্রনাথ মুখার্জির অনুরোধে হক সেই কলেজে অঙ্কশাস্ত্রের অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

ফজলুল হক ১৯০৬ সালে আইন ব্যবসা ছেড়ে সরকারি চাকরি গ্রহণ করেন। পূর্ব-বাংলার তৎকালীন গভর্নর ব্যামফিল্ড ফুলার তাঁকে সম্মানের সাথে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নিয়োগ করেন। সেখানে কিছুদিন ঢাকা ও ময়মনসিংহে কাজ করার পর তাঁকে জামালপুর মহকুমার এস.ডি.ও হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল। সেখানে বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করে হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ভয়ঙ্কর রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়।

কিন্তু ফজলুল হকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেই দাঙ্গা বন্ধ হয়।  ১৯০৮ সালে এস.ডি.ও –এর পদ ত্যাগ করে তিনি সমবায়ের সহকারী রেজিস্ট্রার পদে যোগ দেন, কিন্তু সরকারের সাথে বনিবনা না হওয়ার ফলে অল্পদিনের মধ্যেই তাঁকে চাকুরি ছেড়ে দিতে হয়। ১৯১১ সালে এ. কে. ফজলুল হক আবার কলকাতা হাইকোর্টে যোগ দেন। 

সাহিত্য সম্পাদনা, Literary editing

বরিশালে থাকাকালীন শিল্প সাহিত্যের সাথে এ. কে. ফজলুল হকের সান্নিধ্য ঘটে। কিশোর-কিশোরীদের উদ্দেশ্যে তিনি নিজের সম্পাদনায় বালক নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। এরপর তিনি ভারত সুহৃদ নামে যুগ্ম সম্পাদনায় আরেকটি সাপ্তাহিক প্রত্রিকা প্রকাশ করেন।

সে সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত নবযুগ পত্রিকার সম্পাদক পদে ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। প্রখ্যাত বামপন্থি রাজনীতিবিদ মুজফ্‌ফর আহ্‌মদের প্রস্তাবে হক নবযুগের প্রকাশনাতে সাহায্য করেছিলেন ।

নজরুলের বিদ্রোহী লেখার কারণে নবযুগ প্রচুর পরিমাণে বিক্রি হতে লাগল। কলকাতার টিউনন নামক এক ইংরেজ বিচারপতি ফজলুল হককে নিজের ডেকে নিয়ে ব্রিটিশ সরকার বিরুদ্ধে লেখার জন্য হুঁশিয়ার করেন, কিন্তু ফজলুল হক নির্ভয়ে টিউননের কাছ থেকে ফিরে নজরুলকে বলেন, “আরো গরম লিখে যাও, ইংরেজ সাহেবদের টনক নাড়িয়ে দাও”।

নজরুল লেখা চালিয়ে যাওয়ায় ব্রিটিশ সরকার নবযুগ পত্রিকা বাজেয়াপ্ত করে কাগজটি বন্ধ করে দেয়। পরবর্তী সময়ে হকের চেষ্টায় আবার নবযুগ চালু হলেও, তিক্ত হয়ে নজরুল নবযুগের কাজ ছেড়ে দেন। এ.কে. ফজলুল হক 'বেঙ্গল টুডে' নামে একটি গ্রন্থও রচনা করেছিলেন।

ব্রিটিশ আমলে রাজনীতি, Politics during British rule

বরিশাল পৌরসভা নির্বাচন:

বরিশাল পৌরসভার চেয়ারম্যান অশ্বিনীকুমার দত্ত ফজলুল হককে কমিশনার পদে প্রার্থী হওয়ার আহবান জানান। হক পৌরসভা ও জেলা বোর্ডের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্ব্ব্বিতা করে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে নির্বাচিত হন। এভাবেই এ. কে. ফজলুল হকের রাজনীতিতে সূত্রপাত ঘটে।

বঙ্গীয় আইন পরিষদ:

১৯১৩ সালে ফজলুল হক বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ৩৯ বছর। ১৯১৫ সালে হক পুনরায় ঢাকা বিভাগে বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯১৬ সালে তাঁর অদম্য চেষ্টায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কারমাইকেল ও টেইলার হোস্টেল স্থাপিত হয়। তৎকালীন শিক্ষা বিভাগের ডি.পি.আই কর্ণেল সাহেব হকের শিক্ষা বিষয়ে উদ্যোগের প্রশংসা করে তাঁকে বাংলার "বেন্থাম” নামে আখ্যায়িত করেন।

নিখিল ভারত মুসলিম লীগ

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ নিয়ে বাংলার জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়লে, সে বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে নবাব সলিমুল্লাহ ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স- এর আহ্বান জানান। সেই সম্মেলনে একটি কমিটি গঠিত হয়। নবাব সলিমুল্লাহ নিজে কমিটির সভাপতি ছিলেন এবং যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান নবাব ভিকারুল মুলক ও এ. কে. ফজলুল হক।

এই সম্মেলনে নবাব সলিমুল্লাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠনের প্রস্তাব পেশ করলে সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। ১৯১৮ সালে দিল্লীতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে ফজলুল হক সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। বাঙালিদের মধ্যে একমাত্র তিনিই নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। ১৯১৯ সালে হক নিখিল ভারত মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হন।

নিখিল ভারত কংগ্রেস

ফজলুল হক ১৯১৪ সালে নিখিল ভারত কংগ্রেস দলে যোগ দিয়ে একসাথে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস দলের নেতা হয়ে যান। ১৯১৮ সালে হক ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সেক্রেটারি জেনারেল পদে নির্বাচিত হন।

বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে আবুল কাশেম ফজলুল হক, Education minister of Bengal

১৯২২ সালে গান্ধীজী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করার পর ফজলুল হক খুলনা জেলার উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হন। ১৯২৪ সালে তিনি খুলনা অঞ্চল থেকে পুনরায় আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হলে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লিটন হককে বাংলার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিয়োগ করেন। পরবর্তী সময়ে স্বরাজ্য পার্টি ১৯২৪ সালের বাজেটের প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করলে সেই সালের ১ আগস্ট হক মন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন।

ম্যাকডোনাল্ডের গোলটেবিল বৈঠক, Round table Conference

ভারতের ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রের রূপরেখা নির্ধারণের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার র‌্যামজে ম্যাকডোনাল্ড এক গোলটেবিল বৈঠক ডাকেন। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গান্ধীজী বৈঠকটি প্রত্যাখান করেন। কিন্তু, সেই বৈঠকে মুসলিম লীগ অংশগ্রহণ করেছিল ।

Read also :

১৯৩০ - ১৯৩১ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম গোলটেবিল বৈঠকে ফজলুল হক বাংলা এবং পাঞ্জাবের মুসলমানদের জন্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন এবং স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষে বক্তৃতা দেন। ১৯৩১- ১৯৩২ সালের দ্বিতীয় গোলটেবিল বৈঠকে কংগ্রেসও যোগ দেয়। কিন্তু বৈঠকে সাম্প্রদায়িক প্রশ্নের সমাধান না হওয়ার কারণে ভারতের শাসনতন্ত্রের দায়িত্ব ব্রিটিশের হাতে চলে যায় ।

মেয়র নির্বাচন, Elected as Mayor

১৯৩৫ সালে ফজলুল হক কলকাতার মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচিত হন। কলকাতা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র ছিলেন তিনি। 

বাংলার প্রধানমন্ত্রী, A. K. Fazlul Huq as Prime minister of Bengal

১৯৩৭ সালে বাংলার প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব পান শেরে বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হক। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন । প্রধানমন্ত্রী হিসেবে হক শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশি জোর দিয়েছিলেন । তাঁর শাসনে দরিদ্র কৃষকের উপরে কর ধার্য না করে 'বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ'-এর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। এরপর ১৯৩৮ সালের ১৮ আগস্ট বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী পাস হলে জমিদারদের লাগামহীন অত্যাচার চিরকালের জন্য বন্ধ হয়। কৃষি আধুনিকীকণের জন্য ঢাকা, রাজশাহী এবং খুলনার দৌলতপুরে কৃষি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।

পাকিস্তান আমলে রাজনীতি


দেশভাগ হয়ে পাকিস্তান গঠিত হবার পর থেকে হক সাহেব ঢাকা হাইকোর্টে পুনরায় আইন ব্যবসায় যোগদান করেছিলেন। সেখানে বারের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। তারপর ১৯৫১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি এবং ১৯৫৩ সাল অবধি এই পদে ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ফজলুল হক ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনকেও সমর্থন করেন।

Read also :

অবসর প্রাপ্তি, Retirement

১৯৫৮ এর ২৭ অক্টোবরে ফজলুল হককে পাকিস্তান কর্তৃক “হেলাল-ই-পাকিস্তান” খেতাব দেওয়া হয়। ১৯৬১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দ হককে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন। এই সংবর্ধনা সভার পর থেকে তিনি আর কোনও জনসভায় যোগদান করেননি।

তিনি জীবদ্দশায় বিভিন্ন রাজনৈতিক পদে অধিষ্ঠান করেছেন। সেগুলোর মধ্যে ১৯৩৫ সালে কলকাতার মেয়র, ১৯৩৭-১৯৪৩ সাল অবধি অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী, ১৯৪৩ সালে পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, ১৯৫৫ সালে পূর্ব পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ১৯৫৬-১৯৫৮ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ইত্যাদি পদগুলো অন্যতম। যুক্তফ্রন্ট গঠনের ক্ষেত্রে প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।

মৃত্যু, Death

১৯৬২ এর ২৭ মার্চ হককে শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। তিনি প্রায় একমাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল ৮৮ বছর বয়সে এ. কে. ফজলুল হক মৃত্যু বরণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। একই স্থানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনের কবর রয়েছে। তাদের তিনজনের সমাধিস্থলই ঐতিহাসিক তিন নেতার মাজার নামে পরিচিত। রেডিও পাকিস্তান সেদিন সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে সারাদিন কোরআন পাঠ করে। জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখে তাঁর প্রতি সম্মান দেখানো হয়। এরপর ৩০ এপ্রিল সোমবার পাকিস্তানের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্কুল কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

Read also :

সম্মাননা, Honor and recognition 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হকের নামে একটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল জিন্নাহ হলের নাম পরিবর্তন করে তাঁর নামে করা হয়। কুয়েতে তাঁর নামে একটি ছাত্র আবাসিক হল আছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর নামে একটি ছাত্র আবাসিক হল রয়েছে।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় হকের নামে শের-ই-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যা ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তৎকালীন পাক-ভারত উপমহাদেশে প্রথম কৃষিশিক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ছিল। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক নিজেই এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়া এই শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নামে একটি হল ও রয়েছে।

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় তাঁর নামে একটি এলাকার নাম রাখা হয় শের-এ-বাংলা নগর, যেখানে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অবস্থিত। ঢাকার মিরপুর স্থিত জাতীয় ক্রিকেট মাঠ শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়াম বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট হিসেবে খ্যাত। বরিশালে তাঁর নামে একটি সরকারি মেডিকেল কলেজের নামকরণ করা হয়েছে। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল দক্ষিণবঙ্গের বিশিষ্ট চিকিৎসা-শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল।

উপসংহার, Conclusion 

পাকিস্তানে এ. কে. ফজলুল হককে দেশের  প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রনায়কদের একজন হিসাবে স্মরণ করা হয়। ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে তিনি অত্যন্ত সরল ছিলেন।    ফজলুল হকের  জীবদ্দশায় জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল মানুষ তাঁর উদার ও দানশীল স্বভাবের জন্য তাঁকে শ্রদ্ধা করত। বাংলার মানুষ আবুল কাশেম ফজলুল হককে অনগ্রসর মুসলিম জনগোষ্ঠীর উন্নতি, বিশাল কৃষক জনগণের দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং তাঁর উদার প্রকৃতি তথা আন্তরিক প্রচেষ্টার জন্য আজও স্মরণ করে।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

এ কে ফজলুল হক কে?

আবুল কাশেম ফজলুল হক ছিলেন একজন বাঙালি আইনজীবী, লেখক এবং সংসদ সদস্য।

হক সাহেব কবে জন্মগ্রহণ করেন?

১৮৭৩ সালে।

ফজলুল হক কবে বাংলার প্রধানমন্ত্রী পদে নিযুক্ত হন?

১৯৩৭ সালে।

হক সাহেবের লেখা গ্রন্থের নাম কি?

বেঙ্গল টুডে।

হকের জীবনাবসান কবে হয়?

১৯৬২ সালে।