বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ড:শাহ মোহাম্মাদ ফারুকের জীবনী , Dr. Shah Mohammad Faruque biography in bengali
ড: শাহ মোহাম্মাদ ফারুক হলেন একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক। তিনি কলেরার জীবাণু ভিব্রিও কলেরীর একজন অগ্রগণ্য গবেষক হিসেবে পরিচিত। তিনি মূলত খাদ্যবাহিত ও জলবাহিত রোগসৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া নিয়ে গবেষণার কাজ করেছেন।
জন্ম ও শৈশব জীবনের বিবরণ, Birth and childhood Memories
শাহ মোহাম্মদ ফারুকের জন্ম হয় ১৯৫৬ সালে। তিনি বাংলাদেশের যশোর জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এখানেই তিনি তাঁর শৈশব অতিবাহিত করেছিলেন।
শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা, Education
Read also :
শাহ মোহাম্মদ ফারুক প্রাথমিক শিক্ষা লাভ তথা মাধ্যমিক পাশ করেন যশোর জিলা স্কুল থেকে। পরবর্তীতে ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অতঃপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
উক্ত বিষয়ে ১৯৭৮ সালে বিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন মোহাম্মদ ফারুক। পরবর্তী বছরে অর্থাৎ ১৯৭৯ সালে তিনি একই বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে শাহ মোহাম্মদ ফারুক বিদেশে পাড়ি জমান। এর কিছুকালের মধ্যেই, ১৯৮৮ সালে যুক্তরাজ্যের রিডিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি ।
পি এইচ ডি অধ্যয়নকালে তিনি জিনের প্রকাশের হরমোন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গবেষণার কাজ করেছিলেন। এছাড়াও তিনি যুক্তরাজ্যের একজন কমনওয়েলথ স্কলারও ছিলেন।
কর্মজীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিবরণ, Career experiences
কর্মজীবনের প্রাথমিক অবস্থায় ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের অনুষদে যোগদান করেন। উক্ত বিভাগের জৈব রসায়ন এবং আণবিক জীববিদ্যা বিষয়ে অধ্যাপনার কাজ করতেন তিনি।
পরে ICDDR,B-এ একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন তিনি। বাংলাদেশে আণবিক জীববিজ্ঞান গবেষণায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। মারণ রোগ কলেরা মহামারীর গতিশীলতার সাথে সম্পর্কিত প্রাকৃতিক বিষয় বোঝার জন্য তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবং প্যাথোজেনিক ভিব্রিও কলেরির বিবর্তনে আণবিক প্রক্রিয়া, তাঁকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পুরস্কার প্রাপ্তি নিশ্চিত করে।
মোহাম্মদ ফারুক ভারত, জাপান, থাইল্যান্ড, সুইডেন, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশ এবং প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীদের সাথে সহযোগিতা করেছিলেন।
Read also :
উন্নয়নশীল দেশগুলির স্বাস্থ্য সমস্যা মোকাবেলা করে, ফারুক ব্যাকটেরিয়াল প্যাথোজেনগুলির উত্থানের সাথে সম্পর্কিত প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াগুলি বোঝার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। যদিও তিনি শিগেলা এবং ডায়রিয়া জনিত এসচেরিচিয়া কোলি সংক্রমণের মহামারীবিদ্যা এবং সংক্রমণ বোঝার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন, তার প্রধান অবদান হল কলেরা মহামারীর কারণকারী এজেন্ট ভিব্রিও কলেরির মহামারীবিদ্যা এবং জেনেটিক্সে।
জন মেকালানোসের সহযোগিতায়, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল, বোস্টনের মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক অ্যাডেল এইচ. লেহম্যান, ফারুক ভিব্রিও কলেরির মহামারীবিদ্যা, সংক্রমণযোগ্যতা এবং বাস্তুবিদ্যা সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় ব্যাপকভাবে অবদান রেখেছেন। তাদের কাজ মহামারী সম্ভাবনা সহ ভিব্রিও কলেরির নতুন স্ট্রেনের উৎপত্তি এবং বিবর্তনের জেনেটিক ভিত্তির ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিওফেজের ভূমিকা বুঝতে সাহায্য করেছিল ।
তারা ভিব্রিও কলেরির বেশ কয়েকটি অভিনব ফিলামেন্টাস ফেজ (যেমন, KSF-1, RS1 এবং TLC স্যাটেলাইট ফেজ) আবিষ্কার ও চিহ্নিত করেছে এবং এই ফেজগুলির সংক্রমণের আণবিক প্রক্রিয়া এবং ভিব্রিও কলেরির বিবর্তনে তাদের ভূমিকা বোঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অবদান রেখেছে। পরবর্তী সময়ে সুইডিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন এজেন্সি (সিডা) এর মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা নিয়ে তিনি আইসিডিডিআর,বি-তে জিনোমিক্স সেন্টারও প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আইসিডিডিআর,বি-তে একটি গবেষণা দল সক্রিয়ভাবে ধরে রাখেন। ড . ফারুক এবং তাঁর দল কলেরা প্যাথোজেনের পরিবেশগত জীববিজ্ঞান এবং মহামারীবিদ্যায় আণবিক সংকেতের মাধ্যমে কোরাম সেন্সিং এবং ব্যাকটেরিয়া যোগাযোগের ভূমিকা অধ্যয়ন করেন।
নতুন গবেষণাটির ব্যাখ্যা থেকে জানা যায় যে কিভাবে ব্যাকটেরিয়া তাদের নিজস্ব ভাইরাস দ্বারা সংক্রামিত হয় এবং কিভাবে এই ভাইরাসগুলি ব্যাকটেরিয়াগুলিকে এমন পদার্থ তৈরি করতে দেয় যা অন্ত্রের কোষগুলির সাথে মিথস্ক্রিয়া করে, যাতে তারা ডায়রিয়া নামে পরিচিত প্রচুর পরিমাণে জল এবং ইলেক্ট্রোলাইট আক্রান্ত ব্যক্তির দেহে তৈরি করে।
পরবর্তী সময়ে শাহ মোহাম্মদ ফারুক দেশের অন্যতম প্রধান বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবন বিজ্ঞান গবেষণাকে শক্তিশালী করে তুলতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান। পরে তিনি ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (IUB) এ যোগদান করেন এবং IUB-তে স্কুল অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড লাইফ সায়েন্সেস-এর ডিন হিসেবে কাজ শুরু করেন।
Read also :
বৈবাহিক সম্পর্ক, Married Life
ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক হাসনা হেনাকে বিয়ে করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে এই দম্পতির ঘরে দুই সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তাদের নাম রাখা হয়- ইলোরা ফারুক ও শাহ নাঈম ফারুক।
প্রকাশিত গবেষণাপত্র, Published Research work
ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক ১৫০ টিরও বেশি সংখ্যক মূল গবেষণাপত্র, পর্যালোচনা এবং বইয়ের অধ্যায় রচনা করেছেন। তাঁর গবেষণাপত্র সমূহ নেচার, পিএনএএস, ল্যানসেট এবং এএসএম জার্নাল সহ বেশ কিছু শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও তিনি বেশ কয়েকটি বই সম্পাদনা করেছেন যার মধ্যে রয়েছে "ভিব্রিও কলেরি: জিনোমিক্স অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি" (২০০৮), এবং "ফুডবর্ন অ্যান্ড ওয়াটারবর্ন ব্যাকটেরিয়াল প্যাথোজেনস" (২০১২) নামক বই।
পুরস্কার প্রাপ্তি, Awards
বিজ্ঞানী ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির একজন ফেলো ছিলেন, এছাড়াও নিজের গবেষণার ভিত্তিতে ২০০৫ সালে মেডিকেল সায়েন্স থেকে "ওয়ার্ল্ড অ্যাকাডেমী অব সায়েন্সেস প্রাইজ ২০০৫" (TWAS) পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী বিজ্ঞানী যিনি TWAS পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
উপসংহার, Conclusion
ড. শাহ মোহাম্মদ ফারুক বর্তমানে Independent University, Bangladesh (IUB) এর School of Environment and Life Sciences এর ডীন হিসেবে কর্মরত। অন্যদিকে তিনি আইসিডিডিআর,বি-তে আন্তর্জাতিক স্তরের বিজ্ঞানী হিসাবে তাঁর দলের সাথে গবেষণার কাজ করছেন এবং আণবিক জেনেটিক্সের উপর গবেষণা গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
ড: শাহ মোহাম্মাদ ফারুক কে?
একজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপক।
শাহ মোহাম্মদ ফারুকের জন্ম কবে হয় ?
১৯৫৬ সালে।
ড: শাহ মোহাম্মাদ ফারুকের মূল আবিষ্কার কি?
ভিব্রিও কলেরি স্ট্রেনের উৎপত্তি এবং বিবর্তনের জন্য জেনেটিক ভিত্তি এবং এই প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিওফেজের ভূমিকা।
- Related topics -
- জীবন ও জীবনী
- dr. shah mohammad faruque
- বিজ্ঞানী
- অধ্যাপক
Contents ( Show )
- জন্ম ও শৈশব জীবনের বিবরণ, Birth and childhood Memories
- শিক্ষাজীবনের অভিজ্ঞতা, Education
- কর্মজীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিবরণ, Career experiences<br>
- বৈবাহিক সম্পর্ক, Married Life
- প্রকাশিত গবেষণাপত্র, Published Research work
- পুরস্কার প্রাপ্তি, Awards <br>
- উপসংহার, Conclusion
- প্রশ্নোত্তর ( Frequently Asked Questions )
- পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File