জীবন ও জীবনী

Sarvepalli Radhakrishnan | জন্মদিনে 'শিক্ষক দিবস' পালন করার পরামর্শ দেন ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন নিজেই! জানুন তাঁর সম্পর্কে অজানা তথ্য!

Sarvepalli Radhakrishnan |  জন্মদিনে 'শিক্ষক দিবস' পালন করার পরামর্শ দেন ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন নিজেই! জানুন তাঁর সম্পর্কে অজানা তথ্য!
Key Highlights

ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই ভারতে ৫ই সেপ্টেম্বর পালন করা হয় শিক্ষক দিবস। এদিন ভারতের ৭৫ জন শিক্ষককে দেওয়া হবে জাতীয় শিক্ষক সম্মান।

সকলের জীবনে মা-বাবার পরে সবথেকে বেশি সম্মানীয় স্থান থাকে শিক্ষকদের। কেবল লেখাপড়াই নয়, জীবনের অন্যতম শিক্ষা দেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ভবিষ্যতের পথ প্রদর্শক হিসেবে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন শিক্ষকরা। তাঁদের সম্মান জানাতেই আজ, ৫ই সেপ্টেম্বর পালন করা হয় শিক্ষক দিবস (Teachers' Day)। তবে কেবল ভারতেই এই দিনে শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। গোটা বিশ্বে শিক্ষক দিবস (International Teacher’s Day) পালন করা হয় ৫ই অক্টোবর। তবে এই ভিন্ন দিনের নেপথ্যে রয়েছে এক মহৎ শিক্ষক, ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন (Dr. Sarvepalli Radhakrishnan) । তাঁর জন্ম তারিখে এই বিশেষ দিন পালন করা হয়।

শিক্ষক দিবসের ইতিহাস । History of Teacher's Day :

দেশের শিক্ষক দিবসের সঙ্গে জড়িত ডঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ (Dr. Sarvepalli Radhakrishnan)। রাধাকৃষ্ণণ চেন্নাইয়ের প্রেসিডেন্সি কলেজ (Presidency College, Chennai) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় (Calcutta University) সহ বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পাশাপাশি, তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ বিশ্ববিদ্যালয় (Andhra Pradesh University), দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় (Delhi University) এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের (Banaras Hindu University) উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি অন্ধ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন এবং ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। এরপর ১৯৫৩ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন ড. রাধাকৃষ্ণন।

তামিলনাড়ুর তিরুত্তানিতে (Tiruttani, Tamil Nadu) ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন (Dr. Sarvepalli Radhakrishnan)। তাঁর সীমাতীত জ্ঞান ছাড়াও তাঁর ছাত্রদের প্রতি ভালোবাসা, আদর এবং অভিভাবক ন্যায় আচরণের ফলে তিনি ছাত্রদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। যার ফলে যখন ১৯৬২ সালে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তাঁর ছাত্ররা ৫ই সেপ্টেম্বরকে অর্থাৎ তাঁর জন্ম তারিখে একটি বিশেষ দিন হিসাবে উদযাপন করার অনুমতি চান। কিন্তু রাধাকৃষ্ণণ সেদিন অন্য কোনও বিশেষ দিন নয়, সমাজে শিক্ষকদের অমূল্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ৫ই সেপ্টেম্বরকে শিক্ষক দিবস হিসাবে পালন করার জন্য পরামর্শ দেন। এরপর ১৯৬২ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ডক্টর রাধাকৃষ্ণনের ৭৭তম জন্মদিনে প্রথমবারের মতো শিক্ষক দিবস পালিত হয়। তারপর থেকেই এই ধারা চলে আসছে। মহান শিক্ষাবিদকে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দেশের সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাবিদকে শ্রদ্ধা জানাতেও এই দিনটি পালিত হয়।

ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন সম্পর্কে কম জানা তথ্য । Lesser known facts about Dr. Sarvepalli Radhakrishnan :

১৯৬২ সালে ভারতের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি হিসাবে ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তাঁর জন্ম তারিখে অর্থাৎ ৫ই সেপ্টেম্বর বিশেষ দিন পালন করার আবেদন জানান তাঁর ছাত্ররা। তবে তাতে রাজি হননি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি। সমাজে শিক্ষকদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে ৫ই সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবস পালনের পরামর্শ দেন ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন।

ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন সম্পর্কে আরও পড়ুন : ড: সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান এর জীবনী রচনা

আমি খুব গর্ব অনুভব করব, যদি আমার জন্মদিনের পরিবর্তে এই দিনটি শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন

দার্শনিক ‘ভারতরত্ন’ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনকে সম্মান, শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি দেশের সকল শিক্ষক সম্মান জানাতে ৫ই সেপ্টেম্বরে পালন করা হয় শিক্ষক দিবস। ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান (Dr. Sarvepalli Radhakrishnan) ছিলেন একজন বিশিষ্ট দার্শনিক, একজন শক্তিশালী বক্তা, ভারতের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং দেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এবং মানুষের জীবনযাত্রার উন্নতির জন্য তিনি শিক্ষায় বিরাট অবদান রেখেছিলেন। তবে এই বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের সম্পর্কে অনেক তথ্যই রয়েছে অজানা বা কম চর্চিত। আসুন আজ, ডাঃ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্মবার্ষিকীতে এবং শিক্ষক দিবসের দিন জেনে নেওয়া যাক তাঁর সম্পর্কে কম চর্চিত তথ্য।

  • ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের পিতা সর্বপল্লী বীরস্বামী ছিলেন একজন অধস্তন রাজস্ব কর্মকর্তা এবং তার মা ছিলেন সর্বপল্লী সীতা।
  • ড. রাধাকৃষ্ণান মাত্র ষোল বছর বয়সে বিয়ে করেন। তাঁর পাঁচ কন্যা ও এক পুত্র সন্তান হয়।
  • তিনি ১৭ বছর বয়সে মাদ্রাজ খ্রিস্টান কলেজে (Madras Christian College) ভর্তি হন। এপর তিনি ১৯০৬ সালে কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি এবং দর্শনে তার স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
  • সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের স্নাতক থিসিস পেপার 'দ্য এথিক্স অফ ভেদান্দ আন্ড ইটস মেটাফিজিক্যাল প্রিসাপোজিশনস' ( "The Ethics of Vedanta and Its Metaphysical Presuppositions") শিরোনামে উচ্চ প্রশংসা পায়। উল্লেখ্য, এই থিসিস পেপার রচনার সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর।
  • ১৯১৮ সালে, তিনি মহীশূর বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Mysore) দর্শনের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ১৯২১ সালে, তিনি রাজা পঞ্চম জর্জ (King George V) দ্বারা  কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Calcutta) মানসিক ও নৈতিক বিজ্ঞানের চেয়ার পার্সন হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপরে, তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Oxford) প্রাচ্যের ধর্ম ও নীতিশাস্ত্রের স্প্যাল্ডিং অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এই ঘটনা তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে অধিষ্ঠিত হওয়া প্রথম ভারতীয় হিসেবে গড়ে তোলে।
  •  সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণান জাতিসংঘের (ইউনেস্কো) শিক্ষা, বৈজ্ঞানিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থায় ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৪৮-৪৯ সালে সংস্থাটির নির্বাহী বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নে ভারতীয় রাষ্ট্রদূতও ছিলেন।
  • ১৯৫২ সালে ভারতে ফিরে আসার পর, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয় এবং ১১ই মে, ১৯৬২ সালে তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের (Rajendra Prasad) স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। তবে তাঁর শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে, তিনি ভারতের একমাত্র রাষ্ট্রপতি যিনি প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে যোগ দিতে পারেননি।
  • সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের বিশিষ্ট প্রকাশনার মধ্যে রয়েছে ভারতীয় দর্শন, উপনিষদের দর্শন, জীবনের আদর্শবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, পূর্ব ধর্ম ও পাশ্চাত্য চিন্তা, এবং পূর্ব ও পশ্চিম: কিছু প্রতিচ্ছবি।
  • ১৯৫৪ সালে, ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান (Civilian Honor) এবং ভারতরত্ন (Bharat Ratna) সম্মান পান। এছাড়াও তিনি ১৬ বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার এবং ১১ বার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।
  • ১৯৩১ সালে, রাজা জর্জ পঞ্চম তাঁকে শিক্ষায় অসাধারণ অবদানের জন্য নাইট উপাধিতে ভূষিত করেন।

শিক্ষক দিবসের গুরুত্ব । Importance of Teacher's Day :

 ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শিক্ষাবিদ ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনকে (Dr. Sarvepalli Radhakrishnan) সম্মান জানাতেই ৫ই সেপ্টেম্বর দিনটিকে 'শিক্ষক দিবস' হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এই দিনে ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনকে এবং সকল শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন। সারা দেশে ৫ই সেপ্টেম্বর স্কুল, কলেজ, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার সহ সমস্ত শিক্ষাক্ষেত্রে ডক্টর রাধাকৃষ্ণণের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা জানানো হয় সকল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। মহা সমারোহে পালিত হয় শিক্ষক দিবস। এমনকী স্কুল-কলেজ থেকে পাশ করে গেলেও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নানারকমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন ছাত্র-ছাত্রীরা।

শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদের শুভেচ্ছা বার্তা, কার্ড, ফুল, মিষ্টি এবং উপহার দিয়ে শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। একেবারে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা, সকল ছাত্রছাত্রীরাই শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়। এছাড়াও শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বছর কয়েকজন শিক্ষককে জাতীয় শিক্ষক সম্মানে ভূষিত করা হয়। এবারও জাতীয় শিক্ষক দিবসে মোট ৭৫ জন শিক্ষককে সম্মানিত করতে চলেছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু (President Draupadi Murmu )। তালিকায় রয়েছেন ৫০ জন স্কুল শিক্ষক, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩ জন এবং দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা মন্ত্রণালয়ের ১২ জন শিক্ষক। প্রত্যেক পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষককে মেরিট সার্টিফিকেট, ৫০ হাজার টাকা নগদ পুরস্কার এবং একটি রূপোর মেডেল দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, এই তালিকায় রয়েছেন তিনজন বাঙালি শিক্ষকও।