Meghnad Saha | পদার্থবিদ্যাতে দেখিয়েছিলেন নয়া পথ! ব্যক্তিগত সাফল্যের ঊর্ধ্বে দেশকে স্থান দিয়েছিলেন মেঘনাদ সাহা!

Friday, October 6 2023, 1:00 pm
highlightKey Highlights

বিজ্ঞান বা রাজনীতি, সব ক্ষেত্রেই তিনি প্রতিষ্ঠানবিরোধী ছিলেন ডাঃ মেঘনাদ সাহা। বিজ্ঞান, রাজনীতি, দেশের জন্য তাঁর অবদান পায়নি সেভাবে মর্যাদা। পড়ুন মেঘনাদ সাহার জীবনী।


ভারতের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে নয়া পথ দেখিয়েছিলেন মেঘনাদ সাহা (Meghnad Saha)। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি গণিত নিয়ে পড়াশোনা করলেও পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞান তাঁর গবেষণা বিশেষ উল্লেক্ষযোগ্য। ভারতে পদার্থবিজ্ঞানের বিকাশ ও প্রসারের জন্য ডাঃ মেঘনাদ সাহা (Dr Meghnad Saha) এর অবদান অনস্বীকার্য।

ভারতের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে নয়া পথ দেখিয়েছিলেন মেঘনাদ সাহা
ভারতের জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানে নয়া পথ দেখিয়েছিলেন মেঘনাদ সাহা

বাল্যকাল ও শিক্ষা । Childhood and Education :

মেঘনাদ সাহা (Meghnad Saha) ৬ই অক্টোবর, ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলার অন্তর্গত শেওড়াতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জগন্নাথ সাহা ও মাতা ভুবনেশ্বরী সাহার পঞ্চম সন্তান তিনি। পিতা ছিলেন পেশায় মুদি। ছোটবেলার থেকেই তৎকালীন সময়ের ধর্মগোড়া উচ্চ-অহংকারী ব্রাহ্মণদের কুসংস্কারাচ্ছন্ন ধর্মীয় মতাদর্শের শিকার হন মেঘনাদ। পাশাপাশি ছিল আর্থিক সমস্যাও।

মেঘনাদ সাহা (Meghnad Saha) গ্রামের টোলে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। সেই সময় তার গ্রামের বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্তই পড়ালেখার সুযোগ ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই গণিতের প্রতি মেধা দেখতে থাকেন মেঘনাদ। তবে বিদ্যাশিক্ষার থেকে দোকানের কাজ শেখা বেশি আবশ্যিক বলে মনে করতেন মেঘনাদের পিতা। যদিও দাদা জয়নাথ এবং মায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় এবং মেঘনাদের মেধার কথা বিচার করে মেঘনাদ ভর্তি হন শেওড়াতলী গ্রাম থেকে সাত মাইল দূরে শিমুলিয়ায় মধ্য ইংরাজি বিদ্যালয়ে। আর্থিক ও পারিবারিক কারণে তিনি শিমুলিয়ার ডাক্তার অনন্ত নাগের বাড়িতে থেকে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির পাঠ লাভ করেন। এরপর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার জন্য ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। উল্লেখ্য, সেই সময় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের কারণে সারাবাংলা উত্তাল হয়ে পরে। এই সময় মেঘনাদ ও তাঁর সহপাঠীরাও বয়কটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। ফলত আন্দোলনকারী সহপাঠীদের সঙ্গে তিনিও বিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত হন এবং তাঁর বৃত্তি নামঞ্জুর হয়ে যায়। যদিও পার্শ্ববর্তী কিশোরীলাল জুবিলি হাই স্কুলের শিক্ষক স্বঃপ্রণোদিত হয়ে মেঘনাদকে তাদের স্কুলে ভর্তি করে বিনা বেতনে অধ্যয়নের ব্যবস্থা করে দেন। সেখান থেকেই মেঘনাদ সাহা (Meghnad Saha) ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ববঙ্গের সমস্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় মাসিক ৪ টাকার সরকারি বৃত্তি সহ উত্তীর্ণ হন। এই পরীক্ষায় গণিত এবং ভাষা বিষয়ে তিনি সর্বোচ্চ নম্বর অধিকার করেন।

১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ববঙ্গের সমস্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় মাসিক ৪ টাকার সরকারি বৃত্তি সহ উত্তীর্ণ হন
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্ববঙ্গের সমস্ত বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে এন্ট্রান্স পরীক্ষায় মাসিক ৪ টাকার সরকারি বৃত্তি সহ উত্তীর্ণ হন

বিদ্যালয়ে শিক্ষার পর তিনি ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বৈশ্য সমিতির মাসিক দুই টাকা বৃত্তিও লাভ করেন। সেই সময় তিনি কলেজের রসায়নের শিক্ষক হিসেবে হরিদাস সাহা, পদার্থবিজ্ঞানে বি এন দাস এবং গণিতের নরেশ চন্দ্র ঘোষ এবং কে পি বসু সহ প্রমুখ স্বনামধন্য শিক্ষকদের সান্নিধ্যে এসেছিলেন। এছাড়াও তৎকালীন সময়ে ডক্টর নগেন্দ্রনাথ সেনের কাছে জার্মান ভাষার প্রশিক্ষণ নেন। এই বিদ্যালয় থেকে তিনি আই এস সি পরীক্ষায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। এরপর ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দে মেঘনাদ সাহা গণিতে অনার্স করার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। সেই সময় তিনি তাঁর সহপাঠী হিসেবে পান সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নিখিলরঞ্জন সেন, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, শৈলেন্দ্রনাথ গুহ, সুরেন্দ্র নাথ মুখার্জী প্রমূখকে। এছাড়াও প্রেসিডেন্সি কলেজে তিনি গণিতের অধ্যাপক হিসাবে বি এন মল্লিক এবং রসায়নে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এবং পদার্থবিজ্ঞানে জগদীশচন্দ্র বসুকে পেয়েছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯১৩ সালে গণিতে স্নাতক এবং ১৯১৫ সালে ফলিত গণিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু প্রথম স্থান লাভ করেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে ১৯১৯ সালে ডক্টর অব সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করে। একই বছর মেঘনাদ প্রেমচাঁদ রায়চাঁদ বৃত্তি লাভ করেন। যার ফলে তিনি ইংল্যান্ড ও জার্মানীতে গবেষণার সুযোগ পান।

মেঘনাদ সাহা তাঁর সহপাঠী হিসেবে পান সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নিখিলরঞ্জন সেন, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, শৈলেন্দ্রনাথ গুহ, সুরেন্দ্র নাথ মুখার্জী প্রমূখকে
মেঘনাদ সাহা তাঁর সহপাঠী হিসেবে পান সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নিখিলরঞ্জন সেন, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, শৈলেন্দ্রনাথ গুহ, সুরেন্দ্র নাথ মুখার্জী প্রমূখকে

কর্মজীবন । Career : 

 উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত হলে যখন চাকরির ব্যাপার আসলো, তখন ডাঃ মেঘনাদ সাহা (Dr Meghnad Saha) চাইলেন একটি সরকারি চাকরি যোগাড় করতে। তাঁর মেধা এবং যে সাফল্যের সঙ্গে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তাতে তিনি যদি সরকারি কোনো পোস্টে চাকরি করতেন তাহলে সরকারেরই উপকার হতো। কিন্তু বিপত্তি হলো যে, কলেজে শিক্ষালাভকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তিনি জড়িত থাকার ফলে তৎকালীন সময়ে তিনি সরকারি চাকরি পাননি। সেই সময়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায় নিজ উদ্যোগে ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ অব সায়েন্স’ প্রতিষ্ঠিত করেন। এরপর তিনিই ডাঃ মেঘনাদ সাহা (Dr Meghnad Saha)-কে ডেকে নিয়ে সেখানে গণিতের প্রভাষক পদে চাকরি দেন। সত্যেন্দ্রনাথ বসুর স্নাতকোত্তরের ফল ভাল থাকায় তাকেও গণিত বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। তাঁরা দুজনেই গণিতের প্রভাষক হিসেবে নিযুক্ত হন। কিন্তু তাঁদের পদার্থবিজ্ঞান পছন্দসই বিষয় হওয়ায় উপাচার্যের অনুমতি নিয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে চলে আসেন।

 ডাঃ মেঘনাদ সাহাকে ডেকে নিয়ে সেখানে গণিতের প্রভাষক পদে চাকরি দেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়
 ডাঃ মেঘনাদ সাহাকে ডেকে নিয়ে সেখানে গণিতের প্রভাষক পদে চাকরি দেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়

এই সময়ে ডাঃ মেঘনাদ সাহা (Dr Meghnad Saha) বিজ্ঞানের নানা বিষয় নিয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রবন্ধ লিখতে শুরু করেন। এইসব প্রবন্ধগুলোকে একইভাবে মেঘনাদের গবেষণাসম্ভারও বলা যায়। তিনি সেইসময়ে যেসব পত্র-পত্রিকাতে লেখালেখি করেন সেগুলো হলো, অ্যাস্ট্রনমিকাল জার্নাল, ফিজিক্যাল রিভিউ, জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইট অব বেঙ্গল, জার্নাল অব দি ডিপার্টমেন্ট অব সায়েন্স, ইত্যাদি। এরপর ১৯১৯ সালে মেঘনাদ সাহা স্কলারশিপ নিয়ে লন্ডনে চলে যান। সেখানে গিয়ে ইম্পেরিয়াল কলেজ অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, অধ্যাপক ফাউলারের অধীনে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন। যা ছিল মেঘনাদের জীবনে অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। এই সময়ে তিনি কেমব্রিজের পৃথিবীবিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জে. জে. থমসনের সান্নিধ্যও লাভ করেছিলেন। লন্ডনে থাকাকালীনই তাঁর ‘ইকুয়েশন অব থার্মাল আইওনাইজেশন’ নামক বিখ্যাত গবেষণাটি প্রকাশিত হয়, ‘ফিলসফিক্যাল’ ম্যাগাজিনে। এই গবেষণাটিই মেঘনাদ সাহাকে বিজ্ঞানবিশ্বে খ্যাতিবান করে তুলেছিলএবং এর কারণেই পরবর্তীতে রয়াল সোসাইটি তাঁকে 'ফেলো' হিসেবে নির্বাচিত করেছিল।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে নভেম্বর মাসে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে খয়রা অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু তৎকালীন আচার্য ও গভর্নরের সঙ্গে উপাচার্যের মতবিরোধ থাকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারে সহকারী পাননি। সেকারণে গবেষণার জন্য তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক নীলরতন ধরের আগ্রহে এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। কিন্তু এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ভালো পরিমণ্ডল না থাকা সত্ত্বেও তাঁর চেষ্টায় তিনি একটি গবেষণা দল গঠন করেন। সেই সময় তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল স্ট্যাটিস্টিক্যাল মেকানিক্স, পরমাণু ও অণুর বর্ণালী, নেগেটিভ ইলেক্ট্রন অ্যাফিনিটি, অণুর উষ্ণতাজনিত বিভাজন, আয়নোস্ফিয়ারে রেডিও তরঙ্গের গতিবিধি, উচ্চতর আবহমণ্ডল ইত্যাদি। এছাড়াও তিনি তাপীয় আয়নন তথ্য পরীক্ষার জন্য একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন।

১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে নভেম্বর মাসে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে খয়রা অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।
১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে নভেম্বর মাসে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে খয়রা অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।

এরপর  ১৯৩৪ সালে তিনি ভারতীয় সাইন্স কংগ্রেসের গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান শাখার সভাপতিত্ব করেন। ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন। ইতালিতে সরকারের আমন্ত্রণে ভোল্টার শতবার্ষিকী উৎসবে আমন্ত্রিত হন এবং মৌলিক পদার্থের জটিল বর্ণালির ব্যাখ্যা সম্পর্কে গবেষণাপত্রটি পাঠ করেন। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে কারনেসি ট্রাস্টের ফেলো নির্বাচিত হয়েছিলেন মেঘনাদ সাহা।সেই সময় তিনি হার্ভার্ড কলেজের ল্যাবরেটরীতে এইচ শেফ্লির সঙ্গে গবেষণা করেন।

মেঘনাদ সাহার আবিষ্কার । Meghnad Saha Invention :

ডাঃ মেঘনাদ সাহা (Dr Meghnad Saha) ২৪ বছর বয়সে ফিলোসফিক্যাল মাগাজিনে “On Maxwell’s Stress” শিরোনামে তাঁর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। সব মিলিয়ে তিনি কমবেশি ৮০ টি মৌলিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তিনি সবকটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাই ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করেছেন। এই তালিকায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের পালিত গবেষণাগার এবং ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্স অন্যতম। পাশাপাশি মেঘনাদ সাহা বিদেশে ফাউলার এবং নার্নস্টের গবেষণাগারে কিছুদিন গবেষণা করেন। যদিও সেখানে একটাও গবেষণাপত্র প্রকাশ করেননি তিনি। তাঁর গবেষণার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান। এই বিষয়ে তিনি আয়নন তত্ত্ব এবং নক্ষত্রের শ্রেণিবিন্যাসে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। এছাড়াও বিকিরণ তাপ, পরমাণু বিজ্ঞান, তাপগতিতত্ত্ব, বর্ণালী বিজ্ঞান এবং আয়নোস্ফিয়ার সম্পর্কিত অনেক বিষয় নিয়েও গবেষণা করেন তিনি। পাশাপাশি পরমাণু ও নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিষয় নিয়েও গবেষণা করেন মেঘনাদ। ভারতে নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের গবেষণাগার প্রতিষ্ঠা করায় উৎসাহ দেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পরমাণু বিজ্ঞান, জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা, নিউক্লিয় পদার্থবিদ্যা, আয়ন মণ্ডল, বায়ুমণ্ডল ও মহাকাশবিজ্ঞান, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা সহ নানা বিষয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনামূলক নিবন্ধও লেখেন মেঘনাদ সাহা। তবে মেঘনাদ সাহার আবিষ্কার (Meghnad Saha Invention) এর মধ্যে উল্লেখ্য অবদান হলো তাপীয় আয়ন-তত্ত্বে আয়নীভবন সংক্রান্ত একটি সমীকরণ উপস্থাপন করেন যা সাহা আয়নীভবন সমীকরণ নামে পরিচিত। ১৯২০ সালে ফিলোজফিক্যাল ম্যাগাজিন–এ প্রকাশিত প্রবন্ধে সাহা এই সমীকরণ প্রকাশ করেন।

মেঘনাদ সাহার আবিষ্কার-র মধ্যে উল্লেখ্য অবদান হলো তাপীয় আয়ন-তত্ত্বে আয়নীভবন সংক্রান্ত একটি সমীকরণ
মেঘনাদ সাহার আবিষ্কার-র মধ্যে উল্লেখ্য অবদান হলো তাপীয় আয়ন-তত্ত্বে আয়নীভবন সংক্রান্ত একটি সমীকরণ

রাজনীতি । Politics :

মেঘনাথ সাহা ভারতের সফল বিজ্ঞানীর পাশাপাশি ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা চিন্তাশীল সক্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি বরাবরই তাঁর বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মীদের কাছে জাতীয় পরিকল্পনা এবং অর্থনৈতিক উন্নতির বিষয়ে উৎসাহ দিতেন। তবে তাঁর রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে মহাত্মা গান্ধীর মতাদর্শের বৈপরীত্য ছিল। শরৎচন্দ্র বসু এবং তাঁর সহকর্মীরা মনে করতেন মেঘনাথ সাহা জাতীয় পরিকল্পনার বিষয়ে বহু দূর পর্যন্ত চিন্তাভাবনা করেছিলেন এবং ভারতীয় সংসদের তাঁর উপস্থিতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মেঘনাদ বরাবরই মহাত্মা গান্ধীর চরকা-খাদি-হ্যান্ডলুম ইন্ডাস্ট্রির বিরোধী ছিলেন। ১৯৫২ নির্বাচনের সময় শরৎচন্দ্র বসুর স্ত্রী বিভাবতী বসু মেঘনাদ সাহাকে নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য অনুরোধ করেন এবং ১৯৫২ সালে ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনে কলকাতা উত্তর-পশ্চিম লোকসভা কেন্দ্র থেকে বামপন্থী দলের সমর্থনে নির্দল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং জয়লাভ করেন। উল্লেখ্য, মেঘনাদ সাহা  বাম মনোভাবাপন্ন হলেও কোনদিন বামপন্থী দলের সদস্য ছিলেন না।

১৯৫২ সালে ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনে  জয়লাভ করেন
১৯৫২ সালে ভারতীয় লোকসভার নির্বাচনে  জয়লাভ করেন

১৯৫৬ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি মেঘনাদ সাহা কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হন। তাঁর কর্মস্থল ভারতীয় রাষ্ট্রপতি ভবনের পরিকল্পনা কমিশনের দিকে যাওয়ার সময়ই তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। সেদিনই চিরকালের মতো  মেঘনাদ সাহাকে হারিয়ে ফেলে গোটা ভারত। দেশের জন্য মেঘনাদ সাহার অবদান অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানে দেশের অর্থনীতিকে। দেশের জন্য তিনি চিন্তা করেছিলেন বহু দূর।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File