কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর কিছুই মনে থাকছে না? কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
মারণ কোভিড থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও শরীরে থেকে যাচ্ছে নানা রকম উপসর্গ। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে মস্তিষ্কে ধোঁয়াশা বা ব্রেন ফগ সেই রকমই একটি সমস্যা।
মারণ করোনা ভাইরাসকে অসংখ্য মানুষ পরাজিত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন । কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, কোভিড থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও শরীরে থেকে যাচ্ছে নানা রকম উপসর্গ। মস্তিষ্কে ধোঁয়াশা বা ব্রেন ফগ সে রকমই একটি সমস্যা।
‘ব্রেন ফগ’ -এই কথাটি আদতে কোনও বৈজ্ঞানিক শব্দবন্ধ নয়। সাধারণত এই সমস্যায় আক্রান্ত রোগীরা নিজেদের শারীরিক অবস্থা ব্যাখ্যা করার জন্য এই শব্দটি বলে থাকেন। আচমকা ভাবনা-চিন্তা শ্লথ হয়ে যাওয়া, মনোযোগের অভাব, স্মৃতিলোপের মতো নানা ধরনের সমস্যাকে এই রোগের উপসর্গের অন্তর্গত ভাবা হয়। আবার অনেকে সমস্যায় পড়েন কথা বলার সময়েও। কথা বলতে গিয়েও বলতে না পারার সমস্যা দেখা দিতে পারে অনেক ক্ষেত্রে।
ব্রেন ফগ সিন্ড্রোম কি? | What Is Brain Fog Syndrome?
মস্তিষ্কের কুয়াশা বিভ্রান্তি, ভুলে যাওয়া এবং মনোযোগের অভাব এবং মানসিক স্বচ্ছতার দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটি অতিরিক্ত কাজ, ঘুমের অভাব, চাপ এবং কম্পিউটারে অত্যধিক সময় ব্যয় করার কারণে হতে পারে।
সেলুলার স্তরে, মস্তিষ্কের কুয়াশা উচ্চ মাত্রার প্রদাহ এবং হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে বলে মনে করা হয় যা আপনার মেজাজ, শক্তি এবং ফোকাস নির্ধারণ করে। হরমোনের ভারসাম্যহীন মাত্রা পুরো সিস্টেমকে বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও, মস্তিষ্কের কুয়াশা সিন্ড্রোম অন্যান্য অবস্থার কারণ হতে পারে যেমন স্থূলতা, অস্বাভাবিক মাসিক, এবং ডায়াবেটিস মেলিটাস।
ব্রেন ফগ সিনড্রোমের কারণ | Causes of brain fog syndrome
মস্তিষ্কের কুয়াশা সাধারণত একটি জীবনধারার মধ্যে নিহিত থাকে যা হরমোনের ভারসাম্যহীনতাকে উন্নীত করে এবং স্ট্রেসের দ্বারা বৃদ্ধি পায়।
- ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ - কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট
- স্ট্রেস - মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ হ্রাস করে যার ফলে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়
- ঘুমের অভাব, ব্যায়াম নেই
- ডায়েট - অ্যামিনো অ্যাসিড, ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
- টক্সিন, দূষণ, রাসায়নিক পদার্থ এবং কীটনাশক
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, কোভিডের পরেও ৬ থেকে ৯ মাস পর্যন্ত এই উপসর্গ থাকতে পারে কোনও কোনও রোগীর। এই অবস্থা (ব্রেন ফগ সিনড্রোম) থেকে বেরোবেন কী করে? তারও উত্তর দিচ্ছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল মনোবিদ।
মাথা খাটানোর খেলা | Brain Teaser
এমন কিছু খেলা রয়েছে, যা মাথার ব্যায়ামে কাজে লাগে। যেমন- শব্দছক, তাসের কিছু খেলা বা দাবার মতো বোর্ড গেমে মাথার ভাল ব্যায়াম হয়। এই ধরনের মাথার ব্যায়ামের মতো খেলা যদি প্রতিদিন কিছুটা সময় খেলা যায়, তা হলে মানসিক ক্লান্তি কাটতে পারে।
যা শুনছেন, তা ভাগে ভাগে মনে রাখুন | Remember what you hear in parts:
কোনও ফোন নম্বর ভাগ করে মনে রাখলে, তা মনে থেকে যায়। ঠিক তেমনই আপনি যা শুনছেন, তা ভাগে ভাগে মনে রাখার চেষ্ঠা করুন। আপনি ভুলে যাবেন এইটা কখনও মাথায় রাখবেন না।
যা শুনছেন, তা জোরে জোরে বলুন | Say what you hear out loud:
আপনি যা শুনছেন, তা নিজে ফের উচ্চারণ করুন উচ্চ স্বরে। এতেই বাড়বে স্মৃতিশক্তি। যেমন - কোনও ব্যক্তির সঙ্গে প্রথম আলাপেই যদি আপনি তাঁর নাম বেশ কিছু বার নিয়ে ফেলেন, তা হলে সেই নাম আপনার মস্তিষ্কে গেঁথে যায়।
মানসিক চাপ কমান | Reduce your stress :
এখন প্রত্যেকের ফোনে সর্বদা নানা নোটিফিকেশন আসতেই থাকে। মেসেজ বা ই-মেল তো আছেই, তার বাইরে নানা অ্যাপের নানা নোটিফিকেশন। এতে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য প্রতিদিন কিছুটা সময় ধ্যান করা যেতে পারে।
বাম হাতে কাজ করার চেষ্টা করুন | Try to work with the left hand:
ডান হাতে আমরা যে কাজ রোজ করে থাকি, সেটা যদি হঠাৎ বাঁ হাতে শুরু করি, তা হলে মস্তিষ্কের উপর বেশি চাপ পড়বে। এই টোটকাও মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে বেশ উপকারী।
প্রতিটি মস্তিষ্ক বয়সের সাথে পরিবর্তিত হয় এবং মানসিক কার্যকারিতা তার সাথে পরিবর্তিত হয়। মানসিক পতন সাধারণ, এবং এটি বার্ধক্যের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর পরিণতিগুলির মধ্যে একটি। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখতে আপনি সাহায্য করতে পারেন এমন উপায় রয়েছে: স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং কম্পিউটারের ব্যবহার হ্রাস করা, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং বিশেষজ্ঞদের একটি দল দ্বারা প্রস্তুত প্রয়োজনীয় পরিপূরক গ্রহণ করা। এগুলো স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে, চাপ কমাতে এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে।
- Related topics -
- স্বাস্থ্য
- লাইফস্টাইল
- মানসিক স্বাস্থ্য
- ট্রেন্ডিং