Haryana Violence | হরিয়ানার সংঘর্ষে মৃত ৬, গ্রেফতার ১১৬! আগের থেকে অশান্তির আঁচ করতে পেরেছিলো সিআইডি?
সোমবার হরিয়ানায় এক ধর্মীয় যাত্রাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় গোষ্ঠী সংঘর্ষ। ঘটনার জেরে বুধবারও থমথমে এলাকা। দিল্লি, ফরিদাবাদেও জারি করা হয়েছে সতর্কবার্তা। ঘটনার নেপথ্যে বজরং দলের এক কর্মীর নাম উঠে আসছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
অগ্নিগর্ভ হরিয়ানা (Haryana), গোষ্ঠী সংঘর্ষে জ্বলছে গুরুগ্রাম (Gurugram)। একটি ধর্মীয় মিছিলকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় ছড়িয়েছে উত্তেজনা। ইতিমধ্যেই উত্তর ভারতের এই রাজ্যে এই গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার ১১৬ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনাকে কেন্দ্র করে দায়ের হয়েছে ৪১টি এফআইআর (FIR)। এখনও পর্যন্ত এই অশান্তির জন্য মৃত্যু হয়েছে ৬জনের।
এই গোষ্ঠী সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু গত সোমবারের এক ধর্মীয় যাত্রা। ৩১শে জুলাই সোমবার হরিয়ানার নুহতে (Nuh) 'ব্রিজ মন্ডল জলাভিষেক যাত্রা'র (Bridge Mandal Jalabhishek Yatra) আয়োজন করেছিল বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (Vishwa Hindu Parishad)। কিন্তু এই মিছিল জাতীয় সড়কে পৌছানো মাত্রই একদল যুবক বাধা দেয় এবং যাত্রাকে লক্ষ করে পাথর ছোড়ে বলে অভিযোগ। এরপর ক্রমে শুরু হয় হিংসা, অশান্তি, সংঘর্ষ। অভিযোগ ওঠে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয় জনতা।
জানা গিয়েছে, ওই গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার কারণে যারা মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন মহিলা ও শিশু সহ এমন ২ হাজার ৫০০ জন স্থানীয় একটি মন্দিরে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীকালে সোমবার বিকেলে পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে। অন্যদিকে, সোমবার মাঝরাতে হামলা করা হয় অঞ্জুমান জামা মসজিদে (Anjuman Jama Masjid)। সূত্রের খবর, আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় সেখানে। ধর্মীয় যাত্রাকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া এই অশান্তিতে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। দুই হোম গার্ড, এক ইমাম সহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে এই গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনায়। সংঘর্ষের জেরে এলাকায় জারি করা হয় ১৪৪ ধারা (Section 144)। জারি করা হয়েছে কারফিউও।
উল্লেখ্য, এই ঘটনা নেপথ্যে উঠে আসছে বজরং দলের (Bajrang Dal) কর্মী, মনু মানেসরের (Manu Manesar) নাম। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করা তার একটি ভিডিওকে কেন্দ্র করেই হরিয়ানার নুহ এবং গুরুগ্রাম অশান্ত হয়ে ওঠে বলে জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, এই মনু মানেসর ওরফে মোহিত যাদব হলেন বজরং দলের একজন সক্রিয় কর্মী। নিজেকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী হিসেবে সর্বদাই প্রতিষ্ঠিত করে এসেছেন মোহিত যাদব। এমনকি, গরু রক্ষা করতে গিয়ে বহুবার আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মনুর বিরুদ্ধে। গরু পাচারকারী সন্দেহে গত ফেব্রুয়ারিতেই দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এই ঘটনা পর থেকেই পলাতক মনু। বারবার পুলিশের হাত থেকে বেঁচে পালাতে সক্ষম হলেও সোশ্যাল মিডিয়াযা সক্রিয় ছিলেন বরাবরই।
ধর্মীয় যাত্রাকে কেন্দ্র করে এই অশান্তির কথা আগেই আঁচ করতে পেরেছিল সিআইডি (CID)। এমনকি এর সঙ্গে মনুর যোগসূত্র রয়েছে বলে আগে সতর্ক করা হয়েছিল। এই প্রসঙ্গে, নুহ এলাকার জেলা ইন্সপেক্টর বলেন, আগেই সিআইডির দফতর থেকে অশান্তির আঁচ করে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিলকে কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়াতে পারে বলে ১৩০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা মোতায়নের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি সরকারকে ১০ দিন আগে থেকে এই নিয়ে সমস্ত তথ্য দিয়ে সতর্কতা অবলম্বন করার কথা জানানো হয়েছিল। জেলা ইন্সপেক্টরের বক্তব্য, মনু মানেসরকে নিয়ে আচমকাই এক গুজব উঠেছিল। বলা হয়েছিল মনু নাকি এই ধর্মীয় যাত্রা অংশ নিতে চলেছেন। এরপর থেকে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। ফলে যাত্রার পথ বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল একটি গোষ্ঠীর সদস্যরা। কিন্তু পুলিশ আধিকারিকরা ভেবেছিলেন সেটি হয়তো সাধারণের ভিড়, যা অনায়াসে সামাল দেওয়া যাবে কিন্তু তা হয়নি। যদিও আগের থেকে অশান্তির সতর্কতা নিয়ে অস্বীকার করেন স্টেশন হাউজ অফিসার কিশান কুমার। তিনি বলেন এই অশান্তি নিয়ে আগাম কোনও বার্তা পাননি তিনি, অন্তত তার স্তর পর্যন্ত এমন কোন খবর ছিল না। যদি আগের থেকে জানা যেত তাহলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া যেত।
প্রসঙ্গত, সোমবারের ঘটনায় এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ১১৬ জনকে। তবে দুদিন পরেও থমথমে রয়েছে গুরুগ্রাম এলাকা। এই ঘটনার পর স্কুল কলেজ এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস বন্ধ থাকার গুজব রটেছিল। পরবর্তীকালে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, স্কুল-কলেজ সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি দফতর স্বাভাবিক নিয়মে খোলা রয়েছে। কোনরকম গুজবে কান না দেওয়ার জন্যই বলা হয়েছে সাধারণকে। গুরুগ্রাম সহ ফরিদাবাদ (Faridabad) ও দিল্লীতেও (Delhi) জারি করা হয়েছে অ্যালার্ট। মুখ্যমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টর (Manohar Lal Khattar) জনসাধারণের উদ্দেশ্যে সম্প্রীতি এবং শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার বার্তা জানিয়েছেন।