লাইফস্টাইল

Navratri 2023 | আজ থেকে শুরু নবরাত্রি! ন'দিন ধরে দুর্গার নয় অবতারের পুজো! জানুন কোন দিন কোন অবতার পূজিত হন!

Navratri 2023 | আজ থেকে শুরু নবরাত্রি! ন'দিন ধরে দুর্গার নয় অবতারের পুজো! জানুন কোন দিন কোন অবতার পূজিত হন!
Key Highlights

:আজ, ১৫ই অক্টোবর নবরাত্রি ২০২৩ এর প্রথমা। আজ থেকে দেবী দুর্গার নয় অবতার পুজো করে থাকেন হিন্দু অবাঙালিরা। পঞ্জিকা অনুযায়ী ৪০০ বছর পর নবরাত্রির ৯ দিনেই শুভ যোগ।

 আজ ১৫ই অক্টোবর শুরু হলো নবরাত্রি। হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে গতকাল ১৪ই অক্টোবর মহালয়া পালনের পরে আজ ১৫ই  অক্টোবর রবিবার প্রতিপদ তিথি থেকে শুরু হচ্ছে দেবীপক্ষ। এই সময় অবাঙালি সম্প্রদায় পালন করবে নবরাত্রি। নবরাত্রির নয় রাত ধরে দেবী দুর্গার নয়টি ভিন্ন রূপের পুজো করা হয়। তবে চলতি বছর অর্থাৎ নবরাত্রি ২০২৩ (Navratri 2023 )র নয় দিনেই গঠিত হচ্ছে নয়টি শুভ যোগ। তার মধ্যে তিনটি সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ, তিনটি রবি যোগ ও একটি ত্রিপুষ্কর যোগ গঠিত হবে। ৪০০ বছর পর নবরাত্রির নয় রাতেই গঠিত হবে নয়টি শুভ যোগ। 

হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, শিব-পত্নী পার্বতীরই বিভিন্ন রূপকে বন্দনা করা হয়। শাস্ত্রমতে দেবী পার্বতীর নটি রূপ। শরত্‍কালে নবরাত্রির নয়দিন ধরে চলে দেবী পার্বতীর এই নয়রূপের আরাধনা। বাঙালির কাছে এই সময় দেবী দুর্গাই কন্যাসমা উমা হিসেবে পরিচিত। সর্বগুণসম্পন্না বিশ্বজননী দুর্গা বিভিন্ন সময় অশুভ শক্তিকে পরাজয় করার জন্য বিভিন্ন রূপ ধারণ করেছিলেন। দেবী দুর্গা ও পার্বতীয় উভয়েই আদ্যাশক্তির অন্য রূপ। ঈশ্বরের মাতৃরূপের প্রকাশই হল এই আদ্যাশক্তি। দেবী পার্বতীর নয় রূপ ছাড়াও তাঁকে জগদম্বা,সীতা,রাধা, চামুণ্ডেশ্বরী,ভদ্রকালী,গুহ্যকালী,শ্মশানকালী, মহাকালী,মঙ্গলচন্ডী, মহামায়া, অপরাজিতা, সত্যভামা নামেও পরিচিত। রয়েছে আরও নাম। সব রূপই পার্বতীর আদ্যাশক্তির অন্তর্গত।

দেবী শৈলপুত্রী । Devi Shailaputri :

 নবদুর্গার প্রথম রূপ হল দেবী শৈলপুত্রী। নবরাত্রির প্রথমাতে দেবী শৈলপুত্রীর পুজো করা হয়। অর্থাৎ আজ  দেবী শৈলপুত্রীর পুজো করছেন অবাঙালিরা। দেবী শৈলপুত্রীর নামের অর্থ  শৈল কন্যা। দেবীর দক্ষিণ হস্তে ত্রিশূল আর বাম হস্তে পদ্ম থাকে, তাই দেবীর অপর নাম শুলধারিণী। মস্তকে শোভা পায় অর্ধচন্দ্র। দক্ষকন্যা সতী দেহত্যাগের পরে পরজন্মে গিরিরাজ হিমালয় ও মেনকার ঘরে পার্বতী রূপে জন্মগ্রহণ করেন মহামায়া। শৈলরাজের কন্যারূপী দেবীকে শৈলপুত্রী বলা হয়।ভক্তদের বিশ্বাস-শৈলপুত্রীর আশীর্বাদ পাওয়া গেলে সুস্থ, রোগমুক্ত জীবন পাওয়া সম্ভব। দেবী নৈবেদ্যতে খাঁটি ঘি অর্পণ করা হয়। এই দেবীর আরাধনায় মূলাধার চক্র শুদ্ধ হয়।

দেবী ব্রহ্মচারিণী । Devi  Brahmacharini :

 নবরাত্রির দ্বিতীয় দিনে এই দেবীর পুজো হয়। ‘ব্রহ্ম’ শব্দের অর্থ হল তপস্যা। শাস্ত্র মতে বলা হয়, মহাদেবকে স্বামী হিসেবে পেতে নারদের পরামর্শে কঠিন তপস্যা শুরু করেছিলেন দেবী পার্বতী। কঠোর তপস্যার জন্য এই রূপের নাম ব্রহ্মচারিণী। ব্রহ্মচারিণীদেবী তুষ্ট করতে ভক্তরা সাধারণত চিনি নিবেদন করে থাকেন। এতে ভক্তদের দীর্ঘায়ু আশীর্বাদ প্রদান করেন।

দেবী চন্দ্রঘন্টা । Devi Chandraghanta : 

কল্যাণ ও সুমঙ্গলের প্রতীক হল দেবী পার্বতীর তৃতীয় রূপ, চন্দ্রঘণ্টা। মস্তকে শোভ পায় অর্ধচন্দ্র। তাই দেবীকে চন্দ্রঘণ্টা বলা হয়ে থাকে। দেবীর এই রূপের গায়ের রঙ সোনার মতো উজ্জ্বল। এই দেবী দশভুজা। হাতে রয়েছে কমণ্ডলু, তরোয়াল, গদা, ত্রিশূল, রক্তপদ্ম, জপমালা, শঙ্খ. ডমরু ও ধণু। বাহন সিংহের উপর অধিষ্ঠিত। ঘণ্টার প্রচণ্ড শব্দ দিয়ে অসুরকূলকে ঘায়েল করেছিলেন তিনি। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবী সমস্ত অশুভ শক্তির বিনাশ করেন ও যাবতীয় বাধা বিঘ্ন দূর করে থাকেন।

দেবী কুষ্মান্ডা । Devi Kushmanda :

 নবরাত্রির চতুর্থীতে কুষ্মাণ্ডা রূপকে বন্দনা করা হয়। এই দেবী সিংহবাহিনী, ত্রিনয়নী ও অষ্টভুজা। আটহাতে থাকে ধণু, সুদর্শণচক্র, রক্তপদ্ম, কমণ্ডলু, অমৃত কলস, জপমালা। শাস্ত্র মতে, এই দেবী মহাবিশ্বের স্রষ্টা। ভক্তদের জ্ঞানদানের দ্বারা বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটাতে ও কর্মক্ষেত্রে জটিলতা দূর করতে সাহায্য করেন। নিয়ম মেনে দেবীকে মালপোয়া ভোগ অর্পণ করা হয়।

দেবী স্কন্দমাতা । Devi Skandamata : 

নবরাত্রির পঞ্চম দিনে অর্থাৎ দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর  রাতে দেবীকে স্কন্দমাতা রূপে পুজো করা হয়। এই দেবীর ত্রিনয়নী, চতুর্ভুজা। পদ্ম, পুত্র কার্তিক, বরাভয় থাকে হাতে। বাহন সিংহের উপরই উপবিষ্ট দেবী। পুত্র কার্তিককে কোলে নিয়ে উপবিষ্ট এই দেবীর কৃপা পেতে ভক্তরা কলা নিবেদন করেন। দেবীর আশীর্বাদে জীবনে পরম সুখ ও শান্তি বয়ে আসে বলে হিন্দুরা বিশ্বাস করে থাকেন।

দেবী কাত্যায়নী । Devi Katyayani :

 নবরাত্রির ষষ্ঠীতে ক্যাতায়নী দেবীকে পুজো করা হয়ে থাকে। শাস্ত্র মতে বৈদিক যুগে কাত্যান নামে এক মহাঋষি ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন দেবী পার্বতীর ন্যায় এক কন্যা তাঁর ঘরে আলো করে জন্মগ্রহণ করেন। সেই ইচ্ছে পূরণের জন্য তিনি দেবী পার্বতীর তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় তুষ্ট হয়ে কাত্যায়ণের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন দেবী পার্বতী। দেবী কাত্যায়নী মহিষাসুর বধ করেন। তিনি শক্তি, ধর্ম ও জাগতিক সুখের প্রতীক। তাঁর আশীর্বাদ পেতে ভক্তরা মধু নিবেদন করে থাকেন।

দেবী কালরাত্রি । Devi Kalratri :

 মহাসপ্তমীতে দেবীর কৃষ্ণবর্ণা কালরাত্রির পুজো করা হয়ে থাকে।  এই রূপকে বলা হয় কালিকা। ত্রিনয়নী দেবীর শ্বাস ও প্রশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসে আগুনের গোলা। এই রুদ্ররূপী দেবীর তিন হাতে থাকে অস্ত্র।শাক্তমতে এই দেবী অত্যন্ত শুভ। এই দেবীর বাহন সিংহ নয়, গাধা। এখানে দেবী ত্রিশূলধারী। কালরাত্রির আশীর্বাদে জীবনের সমস্ত কুপ্রভাব বিনষ্ট হয়। এই দেবীকে গুড় নিবেদন করলে আশীর্বাদ মেলে।

দেবী মহাগৌরী । Devi Mahagauri :

 হিমালয়ের কন্যা হলেন গৌরবর্ণা। তিনি শিবকে স্বামী হিসেবে পেতে কঠোর তপস্য়া শুরু করেছিলেন। সেই তপস্যা করা সময় তিনি কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছিলেন। মহাদেব তুষ্ট হলে তিনি গঙ্গাজলে স্নান করেন। সেই জলেই তাঁর কৃষ্ণবর্ণ রূপ ধুয়ে যায়। তিনি হয়ে ওঠেন উজ্জ্বল ও গৌরবর্ণা। এই রূপকেই বলা হয় মহাগৌরী। মহাঅষ্টমীর দিন সব পাপ থেকে ধুয়ে মুছে মুক্তি পাওয়ার জন্য রাতে দেবী পার্বতীর এই রূপকে পুজো করা হয়ে থাকে। এই দেবীর বাহন হল ষাঁড়। চতুর্ভুজা ও সাদা পোশাক পরিহিতা। হাতে থাকে ডমরু, ত্রিশূল, বরাভয় ও পদ্ম। তাঁর নৈবেদ্যতে নারকেল রাখার রীতি।

দেবী সিদ্ধিদাত্রী । Devi Siddhidatri : 

দেবীভাগবত পুরাণে উল্লেখ, রয়েছে, মহাদেব দেবী পার্বতীকে সিদ্ধিদাত্রী রূপে পুজো করেছিলেন। তারফলেই মহাদেব সব সিদ্ধি লাভ করেছিলেন। সিংহবাহিনী এই দেবীর রূপ চতুর্ভুজা। এই দেবীর হাতে কোনও অস্ত্র থাকে না। চার হাতই থাকে আশীর্বাদী মুদ্রা। এই দেবীর আরাধনা করলে সুখ ও সমৃদ্ধি ভরপুর হয়ে ওঠে সংসার। প্রথা অনুসারে, সিদ্ধিদাত্রীকে ভক্তরা তিল নিবেদন করে থাকেন।

প্রসঙ্গত, নবরাত্রি ২০২৩ (Navratri 2023) তে ৯ দিনই শুভযোগ পড়েছে। আজ,দেবীপক্ষের প্রথম দিন ১৫ই অক্টোবর, রবিবার থাকছে পদ্মা যোগ ও বুধাদিত্য যোগ। তার সঙ্গে থাকবে চিত্রা নক্ষত্র। এই দিনটি কেনাকাটা করার জন্য খুবই শুভ। এছাড়াও আগামীকাল, দ্বিতীয়া তিথিতে গঠিত হবে ছত্র যোগ। তার সঙ্গে থাকবে স্বাতী নক্ষত্র ও ভদ্র তিথি। নবরাত্রি ২০২৩ (Navratri 2023)র তৃতীয় দিন, ১৭ই  অক্টোবর মঙ্গলবার দেবীপক্ষের গঠিত হবে প্রীতি যোগ, আয়ুশ্মান যোগ ও শ্রীবত্‍স্য যোগ। ১৮ই অক্টোবর বুধবার নবরাত্রি ২০২৩ (Navratri 2023)র চতুর্থীতে গঠিত হবে সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ ও অমৃত সিদ্ধি যোগ। ১৯সে অক্টোবর বৃহস্পতিবার দেবীপক্ষের পঞ্চমী । সেদিন গঠিত জ্যেষ্ঠ নক্ষত্র ও পূর্ণা তিথি। ২০ সে অক্টোবর শুক্রবার পালিত হবে  নবরাত্রি ২০২৩ (Navratri 2023)র মহাষষ্ঠী। সেদিন মূল নক্ষত্রে গঠিত হবে রবিযোগ। ২১সে অক্টোবর শনিবার দুর্গাপুজোর মহাসপ্তমী। সেদিন থাকবে ত্রিপুষ্কর যোগ। ২২সে অক্টোবর রবিবার পালিত হবে মহাষ্টমী। সেদিন গঠিত হবে সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ ও রবি যোগ এবং নবরাত্রি ২০২৩ (Navratri 2023)র শেষ দিন ও দুর্গাপুজোর মহানবমীতে ২৩ তারিখ গঠিত হবে সর্বার্থ সিদ্ধি যোগ ও রবি যোগ।