দেশ

ISRO Xposat | কৃষ্ণ গহ্বরের রহস্য উন্মোচনের পথে ইসরোর Xposat! ব্ল্যাকহোল অভিযানে পেলোড তৈরির নেপথ্যে 'মাথা' বাঙালি বিজ্ঞানী!

ISRO Xposat | কৃষ্ণ গহ্বরের রহস্য উন্মোচনের পথে ইসরোর Xposat! ব্ল্যাকহোল অভিযানে পেলোড তৈরির নেপথ্যে 'মাথা' বাঙালি বিজ্ঞানী!
Key Highlights

চন্দ্রযান-৩ এর ইতিহাস গড়ার পর ২০২৪ সালে ইসরোর পরবর্তী মিশন ব্ল্যাকহোল অভিযানে বছরের প্রথম দিন মহাকাশে রওনা দিলো ইসরোর এক্সপোস্যাট। এই কৃত্রিম উপগ্রহর গুরুত্বপূর্ণ অংশ তৈরী করেছেন বাঙালি বিজ্ঞানী বিশ্বজিৎ।

২০২৩ সালে ভারতের সাফল্যের মধ্যে অন্যতম ছিল চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan 3) মিশন। চাঁদের দক্ষিণমেরুতে প্রথম অবতরণ করে গোটা বিশ্বের নজর কেড়েছিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) বা ইসরো (ISRO)। গড়েছে ইতিহাস। ২০২৪ (2024) সালের শুরুতেও ইতিহাস গড়ার লক্ষ্যে ইসরো। বছরের প্রথম দিনেই কৃষ্ণ গহ্বর বা ব্ল্যাক হোল জয়ের লক্ষ্যে ঝাঁপালো ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। নতুন বছরের প্রথম দিনই বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে মহাকাশে বিশেষ এক কৃত্রিম উপগ্রহ সফলভাবে উৎক্ষেপণ করলেন ভারতের বিজ্ঞানীরা। আর এই বিজ্ঞানীদের মধ্যেই রয়েছেন এক বাঙালি। ইসরোর এই কৃত্তিম উপগ্রহ এক্সপোস্যাট (Xposat)-এ রয়েছে দু’টি পেলোড। এর একটি হল পোলারিমিটার ইনস্ট্রুমেন্ট ইন এক্স-রেজ বা পোলিক্স এবং অপরটি হল এক্স-রে স্পেকট্রোস্কোপি অ্যান্ড টাইমিং বা এক্সস্পেক্ট। এর মধ্যে পোলিক্স তৈরির পরিকল্পনা, নকশা, সবটাই এই বাঙালি বিজ্ঞানী বিশ্বজিতের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে জানা গিয়েছে।

কৃষ্ণ গহ্বর বা ব্ল্যাক হোল কী?

সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুসারে, কৃষ্ণগহ্বর মহাকাশের এমন একটি বিশেষ স্থান যেখান থেকে কোন কিছু, এমনকি আলো পর্যন্ত বের হয়ে আসতে পারে না। এটা তৈরি হয় খুবই বেশি পরিমাণ ঘনত্ব বিশিষ্ট ভর থেকে। কোন অল্প স্থানে খুব বেশি পরিমাণ ভর একত্র হলে সেটা আর স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে না। ইসরোর কৃত্রিম উপগ্রহ এক্সপোস্যাট (Xposat)  কৃষ্ণ গহ্বর নামক মহাকাশের এই রহস্য উদঘাটনের জন্যই রওনা দিয়েছে।

কৃষ্ণ গহ্বরের রহস্য উন্মোচনের পথে ইসরো-

চন্দ্রযান, আদিত্য এল ১ (Aditya L1) এর পর ইসরোর পরবর্তী মিশন (Next ISRO Mission) মহাকাশে নিউট্রোন স্টারের রহস্যের খোঁজেও রয়েছে। এই সম্পর্কীয় নানান তথ্য জোগাড়ের দায়িত্ব রয়েছে এই এক্সপোস্যাট স্য়াটেলাইটের উপর। জানা গিয়েছে, এই গোটা মিশনে ২৫০ কোটি টাকা খরচ করেছে ইসরো। নতুন বছরের প্রথম দিনই বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে মহাকাশে বিশেষ এই কৃত্রিম উপগ্রহ সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে এক্স রে পোলারিমিটার স্যাটেলাইট (এক্সপোস্যাট) পিএসএলভি রকেট মারফৎ লঞ্চ করা হয়। এই নয়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইসরো এবার ব্ল্যাক হোল গবেষণা সহ মহাকাশের নানান ঘটনা ঘিরে গবেষণায় আরও তথ্য জোগাড় করতে পারবে বলে খবর। এই সাফল্যের পর ইসরোর প্রধান সোমনাথ বলেন, ‘নতুন বছর শুরু হল’।

এই এক্সপোস্যাট ভারতের প্রথম এক্সরে পোলারিমিটার স্যাটেলাইট। যা বিশ্বে দ্বিতীয়। এর আগে এমন ধরনের স্যাটেলাইট কেবল মহাকাশে পাঠিয়েছে নাসা (NASA)। আমেরিকার মহাকাশ বিজ্ঞান কেন্দ্র নাসার পর ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞান কেন্দ্র ইসরো এই প্রথম এমন স্যাটেলাইট পাঠাল। ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর ছাড়াও এই স্যাটেলাইট আরও ৫০ টি শক্তির উৎস পর্যবেক্ষণ করতে চলেছে। সাফল্যের সঙ্গে ইসরোর এই স্যাটেলাইট পিএসএলভি চড়ে যাত্রা করে। এদিকে, পিএসএলভির এটি ষাটতম মহাকাশ যাত্রা। জানা যাচ্ছে, পৃথিবীর লোয়ার অরবিট বা নিচু কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করবে এই স্যাটেলাইট। রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ইউআর রাও সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে এর পে লোড তৈরি হয়েছে। 

ইসরো সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে ভারতের এই বিশেষ স্যাটেলাইটটি কৃষ্ণ গহ্বর ও নিউট্রন স্টার নিয়ে বিস্তর তথ্য সংগ্রহ করবে। যা ইসরোর বিজ্ঞানীদের মহাকাশের এই দুটি রহস্যময় বিষয় নিয়ে অনেক কিছু জানতে সাহায্য করবে। জানা যাচ্ছে, পৃথিবীর লোয়ার অরবিট বা নিচু কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করবে এই স্যাটেলাইট। রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও ইউআর রাও সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে এর পে লোড তৈরি হয়েছে। পিএসএলভি-সি৫৮ রকেটে করে স্যাটেলইট এক্সপোস্যাট মাহাকাশে যায়। উৎক্ষেপণের ২২ মিনিট পরই এই উপগ্রহটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৬৫০ কিলোমিটার দূরত্বে ৬ ডিগ্রি হেলে থাকা নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে যায়।

ইসরোর ঐতিহাসিক মিশনের নেপথ্যে বাঙালি বিজ্ঞানী-

চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan 3) , আদিত্য এল ১ এর পর এই ঐতিহাসিক মহাকাশ অভিযানের অন্যতম রূপকার হলেন বেঙ্গালুরুর 'রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউট'-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিশ্বজিৎ পাল। ইসরোর এই কৃত্তিম উপগ্রহে রয়েছে দু’টি পেলোড। এর একটি হল পোলারিমিটার ইনস্ট্রুমেন্ট ইন এক্স-রেজ বা পোলিক্স এবং অপরটি হল এক্স-রে স্পেকট্রোস্কোপি অ্যান্ড টাইমিং বা এক্সস্পেক্ট। এর মধ্যে পোলিক্স তৈরির পরিকল্পনা, নকশা, সবটাই বিশ্বজিতের মস্তিষ্কপ্রসূত বলে জানা গিয়েছে। বেঙ্গালুরু নিবাসী এই বাঙালি বিজ্ঞানী জানান, কসমিক এক্স-রে’র পোলারাইজেশন নিয়ে গবেষণায় সাহায্য করবে এই অভিযান। এই বিষয়ে গবেষণার জন্য ইসরোর তরফ থেকে এটাই দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ।  প্রসঙ্গত, পোলিক্সের মতো পেলোড মহাকাশে পাঠিয়ে যে এই ধরনের গবেষণা চালানো যায়, সেই প্রস্তাব নাকি ২০০৬ সালেই দিয়েছিলেন বিশ্বজিৎ। তবে সেই প্রস্তাবের ১০ বছর পর, ২০১৬ সালে মেলে অনুমোদন। এই মাঝের দশ বছরের সময়কালে নাকি পেলোডের প্রোটোটাইপ মডেল তৈরির করার কাজ চলে। পরীক্ষাগারে সেই প্রোটোটাইপ ব্যবহার করে দেখানো হয় যে এই পেলোড মহাকাশে পাঠিয়ে গবেষণা বাস্তবসম্মত।

 বিশ্বজিৎ বড় হয়ে উঠেছিলেন উত্তরবঙ্গের ইসলামপুরে। রায়গঞ্জ কলেজ থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর বিশ্বভারতী থেকে  পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ থেকে করেন পিএইচডি। তার পরে রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এখনও সেখানেই আছেন বিশ্বজিৎ। তিনি জানান, পোলিক্সের অনুমোদন পাওয়ার পর ২০১৭ সালে পেলোড তৈরির কাজ শুরু হয়। ২০২১ সালের মধ্যে এই পেলোড মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে অতিমারী কোভিডের জন্য কাজ অনেকটা পিছিয়ে গিয়েছিল। অবশেষে ২০২৪ (2024) সালে এই পেলোড মহাকাশে পাঠানো হয়। বিশ্বজিতের কথায়, পোলিক্স পেলোডটি এক্স-রে ও তার পোলারাইজ়েশন ব্যবহার করে নিকটবর্তী কৃষ্ণগহ্বর ও নিউট্রন স্টার থেকে ধেয়ে আসা বিকিরণ খুঁজে বার করবে ও গবেষণা চালাবে।   

উল্লেখ্য, কোনও নক্ষত্রের জ্বালানি যখন ফুরিয়ে গেলে সেটি মরে যায়। এরপর নিজেরই মাধ্যাকর্ষণের টানে তারাটি ধ্বংস হয়ে যায়। তখন সেখানে পড়ে থাকে নিউট্রন স্টার বা তৈরি হয় কৃষ্ণগহ্বর। ব্রহ্মাণ্ডে কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে বেশি। নিউট্রন স্টারের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এই নিয়ে আগামী পাঁচবছর ধরে মহাকাশে এক্সপোস্যাট উপগ্রহ নানান গবেষণা চালাবে এবং তথ্য সংগ্রহ করবে। এছাড়াও যদি এই অভিযান যদি পুরোপুরি সফল হয়, তাহলে বিশ্বে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে এই নজির গড়বে ভারত। এতদিন কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে তথ্য জানাতো কেবলমাত্র মার্কিন গবেষণা সংস্থা নাসার আইএক্সপিই উপগ্রহ। সব ঠিকঠাক থাকলে ভারতের এক্সপোস্যাট সেই তালিকায় দ্বিতীয় নাম হতে চলেছে। অর্থাৎ আরও একবার ইতিহাস গড়তে চলেছে ইসরো।