ISRO and Space Sector | মহাকাশ ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ FDI এর অনুমতি! ইসরোর 'গগনযানে'র গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় সফলতা! শীঘ্রই মহাকাশে যাবে ভারতীয়!
বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোদি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মহাকাশ ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগকে অনুমতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি, বুধবারই 'গগনযানের’ সিই২০ ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনটি সফল ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।
২০২৩ সালে চন্দ্রযান ৩ (Chandrayaan 3) মিশন সফল হওয়ার পর থেকে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার চাকা আরও দ্রুত গতিতে ছুটতে শুরু করেছে। একদিকে যেমন ইসরোর অর্জন (ISRO Achievements) এর তালিকায় যুক্ত হয়ে চলেছে নানান সাফল্য, তেমনই ক্রমশ এগিয়ে আসছে নানান বেসরকারি ভারতের মহাকাশ কেন্দ্র (Space Centers of India) গুলিও। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যেই চলতি বছরেই ‘গগনযান’ (Gaganyaan) মহাকাশচারীদের নিয়ে মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিতে পারে। আর সেই অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিন পরীক্ষা সফল হয়েছে বলে খবর। এরকমভাবেই যাতে ভারত মহাকাশ বিজ্ঞানে আরও এগিয়ে যেতে পারে তার জন্যই এবার বড় পদক্ষেপ নিলো কেন্দ্র সরকার। যার ফলে ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞান ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ আসতে চলেছে কোনও জটিলতা ছাড়াই।
মহাকাশ খাতে পূর্ণ শতাংশ FDI :
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার পথ আরও মসৃন করতে বুধবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে মোদি সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মহাকাশ ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত এফডিআই বা এফডিআই-র পূর্ণাঙ্গ রূপ (FDI Full Form) প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগকে অনুমতি দেওয়া হবে। এর ফলে মহাকাশ অভিযানের জন্যে প্রয়োজনীয় বেশ কিছু যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে সিস্টেম উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে এবং আরও দ্রুত ভারতের মহাকাশ কেন্দ্রগুলি (Space Centers of India) আরও এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিগত বছরগুলিতে ভারতের মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে। এই সব সংস্থায় এবার বিদেশি সংস্থার চাইলেই কোনও জটিলতা ছাড়া বিনিয়োগ করতে পারবে। নির্দেশিকা অনুয়ায়ী, কোনও মহাকাশযান সংক্রান্ত মিশনে কোনও জটিলতা ছাড়া ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত এফডিআই বা এফডিআই-র পূর্ণাঙ্গ রূপ (FDI Full Form) প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদিত। তার থেকে বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হলে তার জন্যে সরকারের অনুমতি নিতে হবে। এদিকে স্যাটেলাইট তৈরির ক্ষেত্রে কোনও অনুমতি ছাড়া ৭৪ শতাংশ এফডিআই অনুমোদিত। আর কোনও যন্ত্রাংশ বা স্যাটেলাইটের সিস্টেম তৈরির ক্ষেত্রে কোনও অনুমতি ছাড়াই ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগ অনুমোদিত।
‘গগনযানে’র পরীক্ষা সফল!
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সর্বপ্রথম অবতরণ, সূর্যের কাছে হাতছানি এর পর ভারতীয় মহাকাশচারীদের পৃথিবীর সীমানার বাইরে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করেছে ইসরো। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরেই ‘গগনযান’ মহাকাশচারীদের নিয়ে মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিতে পারে বলে খবর। পরবর্তী ইসরো মিশন (next ISRO mission) এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এই মিশন। সেই অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ ইঞ্জিন পরীক্ষা করে দেখল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। যা সফল হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে ইসরোর টুইটার (ISRO Twitter) দ্বারা। ফলে মহাকাশে ভারতীয়দের পাঠানোর বিষয়ে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল ইসরো।
২১সে ফেব্রুয়ারি, বুধবার ইসরো টুইটার (ISRO Twitter) এ জানায়, তাদের সিই২০ ইঞ্জিন গগনযান অভিযানের জন্য প্রস্তুত। ‘গগনযানের’ সিই২০ ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনটি সফল ভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। মহাকাশযানকে কতটা শক্তি প্রদান করতে পারবে এই ইঞ্জিন, তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা চালাচ্ছিল ইসরো। আসল অভিযানেক উৎক্ষেপণের সময়কার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই পরীক্ষা চালানো হয়। ‘ক্রায়োজেনিক’ পর্যায়ে যখন পারিপার্শ্বিকের তাপমাত্রা অত্যন্ত কম থাকে, ওই সময়ে ইঞ্জিনটি কাজে লাগবে বলে জানিয়েছে ইসরো। জানা গিয়েছে, এই ধরনের ভ্যাকুম ইগনিশন টেস্ট আগেও ৬ বার হয়েছে। এই পরীক্ষাটি ছিল সপ্তম। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উঁচ্চতায় অবস্থিত মহেন্দ্রগিরিতে ইসরোর প্রোপালশান কমপ্লেক্সে এই সপ্তম পরীক্ষাটি সংগঠিত হয়। এই পরীক্ষায় ইসরোর ইঞ্জিনটি 'হিউম্যান রেটিং' লাভ করেছে। এই আবহে মহাকাশে মানুষ বয়ে নিয়ে যাওয়ার উপযুক্ত বলে গন্য হয়েছে ইসরোর সিই২০ ইঞ্জিনটি।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরো জানিয়েছে, বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এই ইঞ্জিনকে ৩৯ বার ফায়ার করা হয়েছে। এই ইঞ্জিনটিকে 'হিউম্যান রেটিং' (human rating) পাওয়ার জন্যে ৩৯ বার 'ফায়ার' করা হয়েছে। এমনিতে হিউম্যান রেটিং পেতে একটি ইঞ্জিনকে পরীক্ষার সময় ৬৫৩০ সেকেন্ড পর্যন্ত ফারারিং টেস্ট করতে হয়। তবে ইসরোর ইঞ্জিনের ফায়ারিং টেস্ট চলেছে ৮৮১০ সেকেন্ড পর্যন্ত। অর্থাৎ, প্রয়োজনের থেকে ২৪৬০ সেকেন্ড বেশি। সরোর এই ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তরল অক্সিজেন এবং তরল হাইড্রোজেন। এর জন্য তরল অক্সিজেনকে রাখা হচ্ছে মাইনাস ১৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে আর তরল হাইড্রোজেনকে রাখা হচ্ছে মাইনাস ২৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
১৯৮৪ সালের ৩ রা এপ্রিল রাশিয়ার মহাকাশযানে চেপে মহাশূন্যের উদ্দেশে রওনা দিয়ে নজির গড়েছিলেন ভারতীয় মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা (Rakesh Sharma)। তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয় নভশ্চর। তবে এ বার আর অন্য দেশের নয়, নিজের দেশের প্রযুক্তিতে ভর করেই মহাকাশে পাড়ি দেবেন ভারতীয়েরা। অভিযানের তোড়জোড়ের সঙ্গে ভারতীয় মহাকাশচারী কল্পনা চাওলার পরিণতির কথা মাথায় রেখে নভশ্চরদের কী ভাবে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে হবে, সেই ব্যবস্থাও করেছে ইসরো। বলাবাহূল্য, ইতিমধ্যেই গগনযান অভিযানের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে চার মহাকাশচারীকে। তাঁদের প্রশিক্ষণও দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বেশ কিছু সময় আগের থেকেই। ভারতীয় বায়ুসেনার অধীনে থাকা ইনস্টিটিউট অফ অ্যারোস্পেস মেডিসিন (Institute of Aerospace Medicine) এই মহাকাশচারীদের বেছে নিয়েছে। জানা গিয়েছে, ভারতীয় বায়ুসেনার ৬০ জন টেস্ট পাইলটের মধ্যে থেকে গগনযান অভিযানের জন্য মহাকাশচারীদের বেছে নেওয়া হয়েছে। এই পরীক্ষায় লেভেল ১ পার করেছিলেন ১২ জন। পরে সেখান থেকে ৪ জনকে বেছে নেওয়া হয়েছিল সেই ২০১৯ সালেই। তবে পৃথিবীর বাইরে মহাকাশের ৪০০ কিলোমিটার কক্ষপথে মানুষ পাঠানোর আগে প্রথমে ‘ব্যোমমিত্রা’ (vyommitra) নামের একটি মহিলা রোবটকে মহাকাশে পাঠাবে ইসরো। সেই অভিযান সফল হলে মহাকাশে মানুষ পাঠানো হবে।
- Related topics -
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- ইসরো
- আদিত্য এল ১
- মিশন গগনযান
- মহাকাশচারী
- মহাকাশ
- মহাকাশযান
- কেন্দ্রীয় সরকার
- অন্যান্য