WB Rupashree Prakalpa | "রূপশ্রী প্রকল্প"~ জানুন বিস্তারিত
আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিবাহের সুব্যবস্থা করা হয় রূপশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে।
একনজরে রূপশ্রী প্রকল্প | Rupashree Prakalpa at a glance
রূপশ্রী প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক অনন্য উদ্যোগ যার মাধ্যমে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিবাহের সুব্যবস্থা করা হয়। চিরাচরিত প্রথা অনুযায়ী মেয়েদের বিবাহের সময় দরিদ্র পরিবারের অভিভাবককে বিবাহের আয়োজন করছে অনেক সময় অত্যন্ত চড়া সুদে টাকা ধার করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই অনুদান রূপশ্রী প্রকল্পে মাধ্যমে দেওয়া হয়ে থাকে যার মূল লক্ষ্য এটাই যে মেয়েদের বিবাহের সময় দরিদ্র পরিবার যে সমস্যার সম্মুখীন হয় তা যতটা সম্ভব হ্রাস করতে পারা।
রূপশ্রী প্রকল্পের শুভারম্ভ | The launch of Rupashree Prakalpa
কন্যাশ্রী প্রকল্পের বিশাল সাফল্যের পর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়েছিলেন আরেকটি মহান উদ্যোগ। তিনি দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিয়েতে প্রত্যক্ষ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ৩১ শে জানুয়ারি ,২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় অর্থমন্ত্রী, ২০১৮- ২০১৯অর্থ বর্ষের রাজ্য বাজেটে , দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক কন্যাদের ও দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের বিবাহের জন্য এককালীন ২৫০০০ টাকার আর্থিক অনুদানের জন্য রূপশ্রী প্রকল্প চালু করেন যাতে কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারেন। এই প্রকল্পের জন্য ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য | Purpose of Rupashree Prakalpa
- রূপশ্রী প্রকল্প হল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির এক স্বপ্নের প্রকল্প। আর্থিক অভাবের কারণে মেয়েদের বিবাহের জন্য টাকা ধার নিতে যাতে না হয় অথবা বিয়ে আটকে যাতে না যায়, সেই উদ্দেশ্য নিয়েই এই প্রকল্প মূলত চালু করা হয় ।
- কন্যাশ্রী প্রকল্পে বিশাল সাফল্যের পরেও অনেক নাবালিকার বিবাহ দেওয়া হচ্ছিলো; আর সেটা বেআইনি নাবালিকা বিয়ে বন্দর করার উদ্দেশ্য নিয়েই মুখ্যমন্ত্রী এই রূপশ্রী প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন। কন্যাশ্রী প্রকল্পে যেমন মেয়েরা পড়াশোনা করলে তাদের অর্থ প্রদান করা হতো , রূপশ্রী প্রকল্পের ক্ষেত্রে ১৮ বছর বয়স হলে শুধু মেয়ের বিয়ের জন্যই এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়ে থাকে।
কারা আবেদন করতে পারবেন | Eligibility criteria of Rupashree Prakalpa
পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী যাদের পরিবারে আর্থিক আয় দেড় লক্ষ টাকার বা তার কম, সেই সমস্ত পরিবারের মেয়েরা তাদের বিবাহের জন্য রূপশ্রী প্রকল্পে আবেদন করতে পারবেন।
আবেদন করার নিয়ম | Rules of applying from Rupashree Prakalpa
রূপশ্রী প্রকল্পে আবেদন করার পূর্বে কিছু শর্ত মানা আবশ্যক ।
- এই প্রকল্পের অধীনে বিয়ের দিন ঠিক হওয়ার পরবর্তী সময়ে ফর্ম পূরণ করতে হবে পাত্রীকে।
- বিয়ের ন্যূনতম ৩০ দিন আগে পাত্রীকে আবেদন করতে হবে।
- আয়ের শংসাপত্র, পাত্রীর বয়সের শংসাপত্র, পাত্রের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিয়ে আবেদন করতে হবে।
- রূপশ্রী প্রকল্পটি ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়েছে বলে বৈশাখ মাসে যাঁদের বিবাহ স্থির হয়েছে তাঁদের পরিবার আবেদন করার সময়সীমায় ছাড় পাবে।
- পাত্রীর পরিবারের বার্ষিক আয় ১.৫ লক্ষ টাকা বা তার কম এমন পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক তরুণীরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে এই প্রকল্পের অধীনে এককালীন ২৫ হাজার টাকা করে লাভ করবেন।
- যিনি আবেদনকারীর তাঁর অবশ্যই ১৮ বছর বয়স হতে হবে।
- পাত্রী তাঁর আবেদন জমা দেওয়ার দিন পর্যন্ত যেন সে অবিবাহিত হয়।
- প্রস্তাবিত বিবাহটি প্রার্থীর প্রথম বিবাহ হওয়াই বাঞ্ছনীয় ।
- পাত্রী কে পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা হতে হবে অথবা গত ৫ বছর ধরে তিনি পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করেছেন অথবা পাত্রীর পিতা-মাতা পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া একান্ত আবশ্যক।
- পাত্রীর প্রস্তাবিত পাত্রের বয়স ন্যূনতম ২১ বছর হতে হবে।
- পাত্রীর নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা প্রয়োজনীয় যেটি সে এককভাবে পরিচালনা করে থাকে। এই বিষয়ে আবেদনকারীকে খেয়াল রাখতে হবে যে ব্যাংক একাউন্ট টি যেন এমন ব্যাংকের হয় যে ব্যাংকের আই এফ এস সি কোড এবং একটা এম আই সি আর কোড থাকবে এবং এন ই এফ টি এর মাধ্যমে ই পেমেন্ট এর সুবিধা আছে।
নিম্নোক্ত কাগজপত্র বা শংসাপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে | Important documents for Rupashree Prakalpa
- আবেদনকারীর বয়সের প্রমাণপত্র যেখানে উল্লেখ্য তথ্যের স-প্রত্যায়িত ফটোকপি উপস্থিত থাকবে;
- আবেদনকারীর জন্ম শংসাপত্র বা ভোটের এপিক কার্ড বা প্যান কার্ড বা মাধ্যমিকের আডমিট কার্ড বা সরকার অনুমোদিত বিদ্যালয় ছাড়ার শংসাপত্র;
- আবেদনকারী যে কখনোই বিবাহ করেননি সেই মর্মে আবেদনকারীর স্বঘোষণা আবশ্যক ।
- পরিবারিক আয় যা আবেদনকারীর স্বঘোষিত থাকবে।
- বসবাসের প্রমাণপত্র
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট: একাউন্ট হোল্ডার এর নাম, অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের নাম, ঠিকানা, আই এফ এস সি কোড, এম আই সি আর কোড এবং অন্যান্য তথ্যাদি আছে সেই পাতা গুলির স্বপ্রত্যায়িত নকল পেশ করতে হবে আবেদনকারীকে।
- পাত্রীর প্রস্তাবিত বিবাহের প্রমাণ: এই ক্ষেত্রে বিবাহের নিমন্ত্রণের কার্ড অথবা বিবাহ নথিভুক্তকরনের নোটিশ, ম্যারেজ রেজিস্ট্রেশন নোটিশ হলেও তা গ্রাহ্য হবে।
- প্রস্তাবিত পাত্রের বয়স এর প্রমাণ: পাত্রের জন্ম শংসাপত্র বা ভোটের এপিক কার্ড বা প্যান কার্ড বা মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড বা আধার কার্ড বা প্রাথমিক বিদ্যালয় ছড়ার শংসাপত্র ; যেকোনো একটি আবশ্যক।
- আবেদনকারী পাত্রী এবং প্রস্তাবিত পাত্রের সাম্প্রতিক রঙিন পাসপোর্ট সাইজের ছবি।
আপনি অনলাইন থেকেও ফর্ম ডাউনলোড করতে পারেন । তবে প্রস্তাবিত বিয়ের কমপক্ষে ২০ দিন আগে থেকে আপনাকে এই প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে হবে।
রূপশ্রী প্রকল্পের আবেদন ফর্ম | Application form of Rupashree Prakalpa
প্রকল্পের দায়িত্বভার | Responsibility of Rupashree Prakalpa
নারী শিশু উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণ দপ্তর এই প্রকল্পে মূল দায়িত্বে রয়েছে। ]
রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধা | Benefits of Rupashree Prakalpa
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধাগুলি হল নিম্নরূপ:
- অল্প বয়সে বিয়ে প্রতিরোধ করতে উৎসাহ প্রদান করা।
- যোগ্যতার অনুযায়ী প্রকল্পের জন্য আবেদন করার পর মেয়েরা তাদের বিবাহের সময় এককালীন ২৫০০০ টাকা পাবে।
- নারী শিক্ষার প্রসার করা।
- পশ্চিমবঙ্গ সকল অভিভাবকরা যাতে মেয়েদের পড়াশুনো করিয়ে শিক্ষিত করতে পারে তার জন্যই এই প্রকল্প।
কোথায় মিলবে ফর্ম | Where can be the Rupashree Prakalpa’s form be found
রূপশ্রী প্রকল্পের আবেদনপত্র নিম্নোক্ত কার্যালয় গুলি থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যাবে:
- গ্রামীণ এলাকায় যারা বসবাস করেন সেই সব আবেদনকারীদের জন্য সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক এর কার্যালয় (বি ডি ও অফিস)
- মিউনিসিপ্যালিটি এলাকায় বসবাসকারী আবেদনকারীদের জন্য এই ফর্ম মহকুমা শাসকের কার্যালয় (এস ডি ও অফিস) থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
- পুর নিগমের কমিশনারের দফতর এবং সরকারি ওয়েবসাইট থেকে ও ফর্ম সংগ্রহ করা যায় ।
কী কী নথি বা ডকুমেন্টস লাগবে | Required documents for Rupashree Prakalpa
আবেদনকারীকে রূপশ্রী প্রকল্পের ফর্মের সঙ্গে জমা দিতে হয় বেশ কিছু নথি। সেগুলি হল ;
- জন্ম প্রমাণপত্র বা বার্থ সার্টিফিকেটের প্রত্যয়িত প্রতিলিপি।
- প্রস্তাবিত পাত্রের বিস্তারিত তথ্য
- বিয়ের কার্ড বা অন্য কোনও প্রমাণ
- আবেদনকারী যে স্বেচ্ছায় বিবাহ করছেন তার স্বীকারোক্তি দিতে হবে
- ভোটার আইডি কার্ড ও আধার কার্ড
- ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য।
রূপশ্রী প্রকল্পে টাকা পাওয়ার উপায় | How to get money for Rupashree Prakalpa
আবেদনকারী প্রয়োজনীয় সমস্ত ডকুমেন্টস এবং নথি জমা দিলে তা খতিয়ে দেখবেন সরকারি আধিকারিক। সব তথ্য যদি নির্ভুল হয় তাহলে বিয়ের ঠিক ৫ দিন আগে পাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়বে টাকা। বি ডি ও, এস ডি ও বা মিউনিসিপ্যালিটির অফিসে আবেদন জমা দেওয়ার পর সেখানকার কর্মীরা আবেদনকারীর দরখাস্ত যাচাই করবে এবং প্রয়োজনে অফিসের কর্মী বাড়িতে এসেও তা পরখ করতে পারেন।
আবেদন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করার পর আবেদনকারীকে দেওয়া হবে একটি স্লিপ। যেটা আবেদনকারীকে যত্ন করে রেখে দিতে হবে কারণ এই স্লিপটাই Rupashree Prakalpa এর প্রমাণপত্র।
পরবর্তী পর্যায়ে আবেদনকারী এই প্রকল্পে তালিকাভুক্ত হবেন এবং অনুমোদিত অর্থ IFMS থেকে আবেদনকারীর ব্যাংক একাউন্টে পাঠিয়ে যার পরিমাণ 25000 টাকা।
আবেদনপত্র কোথায় জমা দিতে হবে | Rupashree Prakalpa’s application submission
আরও পড়ুন: WB Student Credit Card Scheme | স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড স্কিম :পড়ুয়াদের এক নতুন পথের দিশারি
আবেদনকারীকে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং শংসাপত্র দিয়ে সম্পূর্ণ আবেদনপত্রটি আবেদনের বসবাসের এলাকা সংশ্লিষ্ট সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের কার্যালয় (বি. ডি. ও অফিস), মহাকুমা শাসকের কার্যালয় (এস. ডি. ও অফিস) অথবা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের কমিশনারের কার্যালয় জমা দিতে হবে এবং প্রস্তাবিত বিবাহের তারিখের ৩০ থেকে ৬০ দিন আগে তা জমা করতে হবে।বিস্তারিত জানতে আবেদনকারী অফিসের কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা তিনি যদি অনলাইন থেকেও ফর্ম ডাউনলোড করে থাকেন সে ক্ষেত্রে ও আবেদনকারীকে অফিসে গিয়েই ফর্ম জমা দিতে হবে প্রয়োজনীয় দরখাস্তের সঙ্গে।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
রূপশ্রী প্রকল্প করলে সুবিধা কি?
রূপশ্রী প্রকল্পের মাধ্যমে অবিবাহিত মেয়েরা বিয়ের সময় কিছুটা বিয়ের আর্থিক খরচ জোগাতে পারবে।
রূপশ্রী প্রকল্পে কত টাকা পাওয়া যায়?
এই প্রকল্পে এককালীন ২৫০০০ টাকা অনুদান পাওয়া যায়।
বিয়ের কতদিন আগের থেকে আবেদন করতে হবে?
বিয়ের ২০-২৫ দিন আগে থেকে আবেদন করতে হবে।
কোথা থেকে আবেদন করা যাবে?
আবেদনকারী নিকটবর্তী এলাকায় BDO অফিস, SDO অফিস অথবা পৌরসভায় আবেদন করতে পারেন আবার গ্রামের দিকে থাকলে গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়।
কীভাবে আবেদন করতে হবে রূপশ্রী প্রকল্পের জন্য?
বিডিও বা পৌরসভায় গিয়ে সেখানকার কর্মচারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং আবেদন করার জন্য নির্দিষ্ট আবেদনপত্র গ্রহণ করতে হবে।
পাত্রের বিস্তারিত তথ্য কি লাগবে আবেদন করার সময়?
পাত্রের পাসপোর্ট সাইজ ফটো, নাম, ঠিকানা, পরিচয়পত্র দরকার হতে পারে।
আবেদনপত্রেরএ জন্য কোন টাকা লাগবে কি?
না, এর জন্য কোন টাকার প্রয়োজন নেই।
- Related topics -
- রূপশ্রী প্রকল্প
- প্রকল্প
- রাজ্য -প্রকল্প
- নারী
- শুভ বিবাহ
- রাজ্য