আসুন জেনে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি সফল উদ্যোগ "পথ সাথী প্রকল্প" কিভাবে বাংলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ভূমিকা | Introduction of Pathasathi
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'আনন্দধারা' প্রকল্পের অধীনে রূপায়ণ করা এই প্রকল্প 'পথসাথী প্রকল্প' নামে সমাদৃত। এটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি স্বপ্নের প্রকল্প যা পথচারী মানুষদের কষ্ট লাঘব করতে চালু করা হয়েছে। কর্মরত মানুষদের বিশেষ করে মহিলাদের জন্য রাস্তার পাশে শৌচাগার না থাকলে যে ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেই কষ্ট কিছুটা লাঘবের জন্য এই প্রকল্পটি চালু করা হয় । এই প্রকল্পের হাত ধরে পথের পাশে পথসাথী হোটেল তৈরি করা হয়েছে যেখানে একই ছাদের তলায় শৌচাগার, রাতে থাকার ব্যবস্থা, প্রতিক্ষালয় এবং রেস্তরার সু বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
প্রকল্পটির শুভারম্ভ ॥
২০১৮ সালে রাজ্য সরকারের আবাসন দপ্তরের তত্ত্বাবধানে পথসাথী প্রকল্পের ঘোষণা করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের অধীনে ব্যস্ত রাজ্য সড়ক এবং জাতীয় সড়কের ধারে একগুচ্ছ মোটেল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। বর্তমানে ২৩টি জেলার সবক’টিতেই গড়ে উঠেছে এই প্রকল্পটি।
পথসাথী প্রকল্পের উদ্দেশ্য | Purpose of Pathasathi
স্বল্পমূল্যে থাকা এবং খাওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে রাজ্যের জাতীয় সড়কের পাশে তৈরি করা হছে পথসাথী। পথচারীদের কষ্ট লাঘব করাই হলো এই প্রকল্পটির প্রধান উদ্দেশ্য ।
গাড়ির দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার সময় প্রকৃতির ডাক আমরা কেউই উপেক্ষা করতে পারি না। কখনও কখনও শৌচাগারের সমস্যা আমাদের মুশকিলে ফেলে দেয়। প্রয়োজন হলেও কাছেপিঠে কোনো শৌচাগারের দেখা মেলে না; যদি ও বা দেখা মেলে তাও অপরিচ্ছন্নতার কারণে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে । বিশেষত এই সমস্যার সম্মুখীন মহিলারা অধিক মাত্রায় হয়ে থাকে। বাংলার সড়কপথে এই রকম অসুবিধাজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়েই রাজ্য সরকার পথসাথী প্রকল্পটি চালু করেন।
পথচারীদের যাত্রাকালীন সবরকম সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়।
দূরের যাত্রিদের জন্য রাত কাটানোর ব্যবস্থা এবং পাশাপাশি স্বল্প খরচে আশ্রয় এবং আহারের সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ই এই প্রকল্পের রূপায়ন করা হয়।
প্রকল্পের সুবিধাসমূহ | Benefits of Pathasathi
- পথসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে পথের পাশে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহারযোগ্য শৌচাগার, রাত্রিবাসের ব্যবস্থা, প্রতিক্ষালয় এবং রেস্তোরাঁ সম্বলিত পথসাথী হোটেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এ প্রকল্পের মাধ্যমে।
- রাজ্যের সড়ক, প্রত্যেক জাতীয় সড়ক এবং অন্যান্য সড়কের পাশে প্রতি ৫০ কিলোমিটার অন্তর একটি করে পথসাথী স্থাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
- রাজ্যের সমস্ত পথচারীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখেই এই পরিকল্পনা। দূরের যাত্রিদের জন্য রাত কাটানোর ব্যবস্থা এবং পাশাপাশি এই প্রকল্পের অধীনে মিলবে স্বল্প খরচে আশ্রয় এবং একই ছাদের তলায় এলাহি আহার, রাতে থাকার ব্যবস্থা, শৌচাগার প্রভৃতির সুবিধাসমূহ।
- দূরের যে কোনো পর্যাটকরা পথসাথী হোটেলে রাত কাটানোর বন্দোবস্ত করতে পারবে। এর ফলে পথচারীদের কষ্ট লাঘব হবে।
- পথসাথী প্রকল্পের অধীনে হোটেলগুলিতে পর্যাটকদের পরিষেবা প্রদান করার জন্য অনেক কর্মচারী নিয়োগ করা হচ্ছে যার মাধ্যমে অনেক বেকার মানুষ স্বনির্ভর হতে পারবে এবং এর কারণে কর্মসংস্থানের ও প্রভূত বৃদ্ধি ঘটবে।
- প্রত্যেকটি ‘পথের সাথী’ মোটেলেই পরিচ্ছন্ন শৌচাগারের ব্যবস্থা রয়েছে। থাকার ঘরেও পাওয়া যাবে শৌচাগার এবং ডাইনিংয়ের সুবিধা। বেশ কয়েকটিতে এসি ঘরও বর্তমান । এই মুহূর্তে আবাসন দপ্তরের তালিকায় ২৩টি জেলাতে ৬৫টি মোটেল চালু আছে যার সবক’টিই পরিচালনা করে থাকেন বিভিন্ন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যরা । এই প্রকল্পটি পর্যটকদের আপ্যায়নের সুবন্দোবস্ত করার সাথে সাথে নারী ক্ষমতায়নের জন্যও এক সুদৃঢ় পদক্ষেপের উদাহরণ স্থাপন করেছে।
- প্রকল্পটির আওতায় তৈরি মোটেলগুলিতে সুস্বাদু প্রাতরাশ এবং রাতের খাবার পাওয়া যায়।
‘পথের সাথী’ হোটেলের তালিকা | Hotel list of Pathasathi
নিম্নলিখিত এইসব জেলাগুলিতে পথসাথী হোটেলের সুবন্দোবস্ত আছে:
আলিপুরদুয়ার, বাঁকুড়া, বীরভূম, দক্ষিণ দিনাজপুর, দার্জিলিং, হুগলি, হাওড়া, ঝাড়গ্রাম,জলপাইগুড়ি, মালদা, মুর্শিদাবাদ ,নদিয়া , উত্তর চব্বিশ, পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান , পূর্ব বর্ধমান , পুরুলিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর , দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, উত্তর দিনাজপুর ।
পথসাথী প্রকল্পের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন:
আরও তথ্যের জন্য দেখুন http://www.wbhousing.gov.in/pathasathi
প্রকল্পটির স্বার্থক রূপায়ণ | Implementation of Pathasathi
- পথসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে পথের পাশে স্বল্প অর্থের বিনিময়ে ব্যবহারযােগ্য শৌচাগার,রাত্রিবাসের ব্যবস্থা, প্রতিক্ষালয় এবং রেস্তোরাঁ সম্বলিত পথসাথী নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুসারে রাজ্য সরকার প্রধানত এই প্রকল্পের মাধ্যমে জাতীয় সড়ক ও অন্যান্য সড়কে পঞ্চাশ কিলোমিটার অন্তর একটি করে পথ সাথী শৌচাগার নির্মাণ করেছে।
- এছাড়াও ৩১ টি পথসাথী ইতিমধ্যেই নির্মিত হয়ে গেছে। বর্ধমানের শক্তিগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে পথসাথী চালু করা হয়েছে যেখানে ক্লান্ত পথচারীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর এবং এলাহি খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ।
- ‘পথের সাথী’ প্রকল্পের আওতায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে ৪টি হাইওয়ে মোটেল তৈরি করা হয়েছে।
- এই মোটেল গুলির মাধ্যমে খাবার, ইন্টারনেট পরিষেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শৌচাগার ইত্যাদির পরিষেবা দেওয়া হবে। কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, ঘাটিগাছা, রানাঘাট,দেবগ্রাম ও কালীগঞ্জে মোটেল স্থাপন করা হয়েছে ইতিমধ্যেই।৭০ টি প্রতীক্ষালয় নির্মিত হয়েছে।
রাজ্য সরকারের এই পরিকল্পনার সার্থক রূপায়ণের ফলে মানুষ স্বনির্ভর হয়েছে এবং কর্মসংস্থান ও অনেকাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইদানীংকালে পশ্চিমবঙ্গে র নানা প্রান্তে উন্নত হাইওয়ে গড়ে উঠছে যার ফলে সড়কপথে ভ্রমণের প্রবণতাও বৃদ্ধি করেছে । যেসব জায়গায় কেবল সড়কপথে যাওয়া যায়, সেখানেও নিত্যনতুন গেস্ট হাউস এবং রিসর্ট নির্মাণ হচ্ছে ; আর এর পাশাপাশি পথের সাথী’ মোটেলগুলির চাহিদাও বেড়ে চলেছে।
- Related topics -
- রাজ্য
- প্রকল্প
- পথসাথী প্রকল্প
- রাজ্য -প্রকল্প
Contents ( Show )
- ভূমিকা | Introduction of Pathasathi
- প্রকল্পটির শুভারম্ভ ॥
- পথসাথী প্রকল্পের উদ্দেশ্য | Purpose of Pathasathi
- প্রকল্পের সুবিধাসমূহ | Benefits of Pathasathi
- ‘পথের সাথী’ হোটেলের তালিকা | Hotel list of Pathasathi
- প্রকল্পটির স্বার্থক রূপায়ণ | Implementation of Pathasathi
- পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File