সাহিত্য

Rabindra Jayanti | বংশের আসল পদবী ছিল না ‘ঠাকুর’! চিনে তিনি রবীন্দ্রনাথ নয় পরিচিত 'চু- চেন-তাং' নামে! জানুন কবিগুরুর সম্পর্কে অজানা তথ্য!

Rabindra Jayanti | বংশের আসল পদবী ছিল না ‘ঠাকুর’! চিনে তিনি রবীন্দ্রনাথ নয় পরিচিত 'চু- চেন-তাং' নামে! জানুন কবিগুরুর সম্পর্কে অজানা তথ্য!
Key Highlights

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক, ছোটগল্পকার, সংগীত রচয়িতা-সুরকার, নাট্যকার ও দার্শনিক ছিলেন। বাঙালির কাছে তিনি কেবল কবি গুরু নন, 'চিরসখা'ও বটে। রবীন্দ্রনাথ যে কেবল বাঙালি বা ভারতের নন, তিনি গোটা বিশ্বের 'কবি', 'গুরু'।

আজ, ২৫শে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী। এইদিনটি বাঙালির পাশাপাশি গোটা ভারত এমনকি গোটা বিশ্বের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রতিবারের মতোই রবীন্দ্র জয়ন্তী (Rabindra Jayanti) বিশেষভাবে পালিত হচ্ছে বিশ্বভারতীতে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিনে প্রথা মেনে বুধবার কাকভোরে শান্তিনিকেতনের গৌর প্রাঙ্গণে বৈতালিক হয়। ভোর সাড়ে পাঁচটার বৈতালিকে অংশ নেন বহু রবীন্দ্র অনুরাগী। গৌর প্রাঙ্গণে ছিল না তিলধারণের জায়গা। সকাল সাড়ে ৬টায় রবীন্দ্রভবনে কবিকণ্ঠে শোনানো হয় গান। সকাল ৭টায় উপাসনাগৃহে উপাসনার পর সকাল পৌনে ৯টায় মাধবী বিতানে কবির জন্মোৎসব পালিত হয়। সন্ধ্যায় গৌর প্রাঙ্গণেই আয়োজিত হবে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য। এ বছরও রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য-সহ ছাত্র, ছাত্রী, অধ্যাপক সকলেই। এদিন কলকাতায় কবির বাড়ি জোড়াসাঁকোতেও সারা দিন ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলবে। তবে রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath) যে কেবল বাঙালি বা ভারতের নন, তিনি গোটা বিশ্বের 'কবি', 'গুরু'। ফলে রবীন্দ্র জয়ন্তী (Rabindra Jayanti) পালন করা হয় বিদেশের নানান জায়গাতেও।

সৌরজগতের সূর্যের মতোই বাঙালির মনোজগত আচ্ছন্ন করে রেখেছেন‌ মানব রবি - রবীন্দ্রনাথ। রবি ঠাকুর যেন মানুষের সমস্ত আবেগের অভিধান। বাঙালির শিরায়, বর্ণে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ (Rabindranath)।  নানা সুখদুঃখে, জীবনের নানা পর্যায়ে তাঁকেই খোঁজেন অনেকে। তিনি বাঙালির কাছে 'কবিগুরু', 'বিশ্বকবি'। চিনের কাছে 'চু- চেন-তাং'। ভারত তো অবশ্যই, বিদেশেও নানান জায়গায় তিনি সৃষ্টি করে গিয়েছেন রবীন্দ্র ইতিহাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে সকলেই কমবেশি জানেন।তবে বিশ্বকবির সম্পৰ্কে জানান যেন অন্তর নেই।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মতিথিতে নজর রাখা যাক কবিগুরুর সম্পর্কে কম জানা তথ্যের দিকে।

 রবীন্দ্রনাথের বংশের আসল পদবী ‘ঠাকুর’ নয়!

বাংলা সাহিত্যের প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেবল দেশ নয় এশিয়ার প্রথম নোবেলজয়ী কবি। কিন্তু অনেকেই জানলে অবাক হবেন যে, রবীন্দ্রনাথ যে ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের প্রকৃত পদবী আসলে 'ঠাকুর' ছিল না। ঠাকুর বংশের আসল পদবী হল 'কুশারি'। জানা যায়, প্রায় দেড় শতকের ধর্মীয় গঞ্জনা, অপমান সহ্য করে, বছরের পর বছর দরিদ্র মানুষের সেবা নিয়োজিত থেকে কুশারী বংশধরেরা, হয়ে ওঠেন ঠাকুর। শোনা যায়, এক বিশেষ মাংসের গন্ধ শোঁকার অপরাধে সমাজে কলঙ্কিত হতে হয় সুন্দরবন অঞ্চলের চার ব্রাহ্মণ জমিদার ভাই রতিদেব কুশারি, কামদেব কুশারি, শুকদেব কুশারি, জয়দেব কুশারি। এঁদেরই পরবর্তী বংশধর হলেন জগন্নাথ কুশারী। তাঁর বংশধর রামানন্দের মহেশ্বর আর শুকদেব নামে দুই ছেলে ছিল। তাঁরা গোবিন্দপুরে দরিদ্রদের সেবা করা থেকে শুরু করে প্রচুর দান-ধ্যান করে সেখানকার মানুষের মনে জায়গা করে নেন। তাঁরা হয়ে ওঠেন দরিদ্রের ভগবান বা 'ঠাকুর'। এইভাবেই তাঁরা 'কুশারী' পদবীর ত্যাগ করে গোবিন্দপুরে এসে ওখানকার মানুষদের ভালোবেসে দেওয়া নাম ঠাকুর-কেই নিজেদের পদবী হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেন। প্রথমে অবশ্য শুকদেব ঠাকুর পদবী ব্যবহার করতেন। পরে তাঁর ভাই মহেশ্বরের ছেলে পঞ্চাননও কাকা শুকদেবকে অনুসরণ করে 'ঠাকুর' পদবী ব্যবহার করতে শুরু করেন। পরে এই বংশেরই এক বংশধর নীলমণি তৎকালীন সময়ের জোড়াবাগান অঞ্চলের বিখ্যাত ধনী ব্যবসায়ী বৈষ্ণবচরণ শেঠের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে ওঠেন। বৈষ্ণবচরণ শেঠ নীলমণিকে বর্তমানের জোড়াসাঁকোয় দেড় বিঘা জমি বন্ধুত্বের উপহার হিসেবে দেন। তিনি চান যাতে তাঁর পরম মিত্র সেখানেই বাড়ি করে থাকেন। আর এর পর সেখানেই গড়ে ওঠে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি।

রবীন্দ্রনাথের রোজকার রুটিন :

নিয়ম মেনে চলতে ভালোবাসতেন রবি ঠাকুর। প্রতিদিন ভোর ৪টে তাঁর দিন শুরু হতো। স্নান সেরেই তিনি পুজা করতেন। এরপর সকাল ৭টা পর্যন্ত একটানা লিখতেন। সকালের জলখাবার সেরে আবার লেখা শুরু করতেন। বেলা ১১ টা পর্যন্ত লিখে দুপুরের খাবার খেতেন। দুপুরবেলা পত্রিকা কিংবা বই পড়ে সময় কাটাতেন তিনি। সন্ধ্যে ৭ টার মধ্যে সারতেন রাতের খাবার। খানিকটা কম-বেশি এই ছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রুটিন।

একাধিক ছদ্মনাম :

বেশিরভাগ মানুষই জানেন রবীন্দ্রনাথের পাঁচটি ছদ্মনাম রয়েছে। ভানুসিংহ, আন্নকালী পাকড়াশী, অকপটচন্দ্র লস্কর, দিকশূন্য ভট্টাচার্য এবং ষষ্ঠীচরণ দেব শর্মা। কিন্তু এছাড়াও রবি ঠাকুর অনেকগুলি ছদ্মনাম ব্যবহার করতেন যা অনেকেরই অজানা। যেমন নবীন কিশোর শর্মণ, বাণীবিনোদ বিদ্যাবিনোদ, শ্রীমতী কনিষ্ঠা, শ্রীমতী মধ্যমা।

চিনে তিনি চু- চেন-তাং!

১৯২৮ সালের ২৫ শে বৈশাখে সেজে উঠেছিল চিন। পিকিং শহরে পদার্পণ করেন রবি। পিকিং শহরের রাজ অতিথি তিনি। চিনের মানুষ এই গুণী মহামানবকে এতটাই ভালো ভেসেছিলেন যে তাঁর নাম দিয়ে বসেছিলেন চু- চেন-তাং। এই চু-চেন-তাং শব্দের অর্থ হল 'পরাক্রান্ত ভারত- সূর্য'। ভারতের সূর্য যে তখন চিনে। তখন সবেমাত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার (rabindranath tagore nobel prize) পেয়েছিলেন। গীতাঞ্জলি কাব্য লিখে হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বকবি তখন। সারা বিশ্ব তখন রবীন্দ্র ভাবনায় ভাবিত। এদিকে সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নোবেল পুরস্কার (rabindranath tagore nobel prize) পেয়েছিলেন। গোটা বিশ্ব থেকে আমন্ত্রণ আসছে কবিকে শোনার জন্য। পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়েও আমন্ত্রিত ছিলেন কবি। আর সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে খুব আন্তরিক ভাবে পৌঁছেছিলেন তিনি। কবি আসছেন শুনে দেশের সকল নাগরিকদের আবেদনে চিনের রাজপ্রাসাদে স্থান পেয়েছিলেন কবি। চিন সম্রাটের হাত থেকে ৪০০ বছরের প্রাচীন এক ছবি উপহারও পেয়েছিলেন। সে দেশের প্রাচীন রীতি অনুযায়ী, নীল পাজামা কমলা কিমানো, মাথায় বেগুনি টুপি পরে জন্মদিনটি কাটিয়েছিলেন চিনেই। চিনের মানুষকে এক রাতেই আপন করে নিয়েছিলেন কবি। কথা দিয়েছিলেন চিনের চু- চেন-তাং, আবার আসবেন। সে কথাও রেখেছিলেন তিনি, চিনে এসেছিলেন চার বছর পর।

ব্রাজিলে রবীন্দ্রনাথের স্কুল!

 প্রায় এক শতাব্দী আগে, ১৯২৪ সালের মে মাসে, পেরুর স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনে ঠাকুর একটি আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। সেপ্টেম্বর মাসে, তিনি ইউরোপের উদ্দেশ্যে কলম্বোতে হারুনা মারু জাহাজে চড়ে সেই আমন্ত্রণ রক্ষা করতে রওনাও দিয়েছিলেন। ফ্রান্স থেকে দক্ষিণ আমেরিকায় যাওয়ার সময় ঠাকুর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কয়েকদিন পরে জাহাজটি আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে পৌঁছোলে ডাক্তার রবিকে পেরুতে যেতে বাধা দেন। অগত্যা রবি, দেশে ফিরে এসেছিলেন। আর এই ফেরার পথেই, রিও ডি জেনিরোতে একদিনের জন্য থেকে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আর তখনই সৃষ্টি হয়েছিল ব্রাজিলে রবীন্দ্র ইতিহাস।

কলকাতা থেকে ১৫,০০০ কিমি দূরে ওই রিও ডি জেনিরো শহরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজও কবিকে গুরু মানে। ব্রাজিলের বিদেশী কোপাকাবানা সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র আধ ঘন্টার পথের দূরত্বে, ১৯৬৩ এসকোলা মিউনিসিপাল টেগর (মিউনিসিপাল স্কুল ঠাকুর) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এস্কোলা মিউনিসিপ্যাল ​​টেগোর (মিউনিসিপ্যাল ​​স্কুল টেগোর) হল ব্রাজিলের রাজধানীতে এমনই একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যা ঠাকুরের রিওতে প্রথম ভ্রমণকে স্মরণে রাখতে এবং তাঁর বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির নীতিকে আলিঙ্গন করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কর্তৃপক্ষ ঠাকুরের অনন্য দর্শনকে গ্রহণ করে, ইভেন্ট, প্রদর্শনী এবং ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে ডাউন সিনড্রোম এবং অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের জন্য বৈষম্য ছাড়াই শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে।

ঘুমচোর'-'আ লাদরা দো সোনো'!

ব্রাজিলের সাহিত্যিক বৃত্তে ঠাকুরের জনপ্রিয়তা এসেছিল সেসিলিয়া মেইরেলেসের অতুলনীয় প্রচেষ্টার কারণে। সেরা পর্তুগিজ কবিদের একজন এবং একজন ঠাকুর ভক্ত হিসাবে ঠাকুরের অনেক কবিতা অনুবাদ করেছিলেন তিনি। এরপর শিক্ষাবিদ লুসিয়া কাসাসান্তা ঠাকুরের একটি ছোট কবিতা 'ঘুমচোর' অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন নিজের সংকলনে, যা মধ্যবর্তী পাঠের জন্য 'আ লাদরা দো সোনো' হিসাবে অনুবাদ করা হয়েছিল এবং এইভাবে ঠাকুর লক্ষ লক্ষ ব্রাজিলিয়ান শিশুদের মধ্যে একটি জনপ্রিয় নাম হয়ে ওঠেন।

বিশ্বাস করতেন হোমিওপ্যাথিতে!

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় কবিগুরুর বিশ্বাস ছিল। তিনি নিজের জমিদারির প্রজাদের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন। নিজেও এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিতে পছন্দ করতেন। 'হেলথ কো-অপারেটিভ' তৈরি করে চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা ভারতে রবি ঠাকুরই প্রথম চালু করেন।

অভিনয়ে পারদর্শীতা!

১৮৭৭ সালে প্রথম অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৬ বছর বয়সে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা 'এমন কর্ম আর করব না' নাটকে তিনি অলীকবাবুর ভূমিকায় মঞ্চে উঠেছিলেন। নিজের লেখা নাটক 'বাল্মিকী প্রতিভা'য় তিনি প্রথম বাল্মিকীর ভূমিকায় অভিনয় করেন। ১৮৮১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নাটকটি জোড়াসাঁকোয় মঞ্চস্থ হয়। কবিগুরুর অভিনয় দেখে নাট্যাচার্য শিশিরকুমার ভাদুড়ি বলেছিলেন, 'রবীন্দ্রনাথই দেশের শ্রেষ্ঠ অভিনেতা।'

বৃক্ষপ্রেমী!

গাছ ভালোবাসতেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর গানে, কবিতায় ছড়িয়ে আছে অসংখ্য উদ্ভিদ আর ফুলের নাম। শুধু কাব্যেই উল্লেখ রয়েছে ১০৮ টি গাছ ও ফুলের নাম। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদেশি ফুলের বাংলা নাম তিনি দিয়েছিলেন। অগ্নিশিখা, তারাঝরা, নীলমণিলতা, বনপুলক, বাসন্তী এই নামগুলো তাঁরই দেওয়া।

নোবেলের টাকায় জনহিতকর কাজ!

নোবেল পুরস্কারে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কৃষকদের জন্য একটি ব্যাঙ্ক তৈরি করেন। বাড়ির সংলগ্ন এলাকায় সেতু, রাস্তা ইত্যাদি মেরামতের জন্য তিনি নোবেলের টাকা দান করেছিলেন।

শেষ জন্মদিন কাটিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ে!

মংপুর টানে বার বার ছুটে যেতেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন (rabindranath tagore shantiniketan) ছাড়াও বেশ ভালোবাসতেন দার্জিলিং। ফলে পাহাড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত মংপু। প্রতি বছর রবীন্দ্র জয়ন্তীতে সেজে ওঠে মংপু। পাহাড়ের কোলে মংপুতে এক ভবনে বিশ্বকবিকে ঘিরে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এই ভবন মৈত্রেয়ী দেবীর এই বাড়ি। ১৯৪৪ সালের ২৮ মে বাড়িটিকে রবীন্দ্রভবন বা রবীন্দ্র সংগ্রহশালা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। এই বাড়িতে বসেই কবি ‘ছেলেবেলা’, ‘নবজাতক’, ‘জন্মদিন’ প্রভৃতি কবিতা লেখেন কবি। ১৯৩৮ থেকে ১৯৪০ সালের মধ্যে কবি চার বার আসেন মংপুতে। এমনকি এই বাড়িতে শেষ জন্মদিন কাটিয়েছিলেন রবিঠাকুর। মৈত্রেয়ী দেবীর এই বাড়ি এখন পর্যটকদের ভীষণ পছন্দের জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রবীন্দ্রনাথ 'ঠাকুরের' মন্দির!

সাদা রঙের মূর্তি। গলায় মালা। ধূপ ধূনোয় মুখরিত বাতাস। অন্যান্য দেবতার মতো করে পুজোর বেদিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। স্থানীয়রাও বিশ্বাস করেন যে এই ঠাকুর তুষ্ট হলে জ্ঞানের সঞ্চার হয়। বছর ২০ আগে শিলিগুড়ির ঠাকুরনগরে এই মন্দির তৈরি করেছিলেন, স্থানীয় এক বাসিন্দা শরৎচন্দ্র দাস। জানা গিয়েছিল যে একেবারে ঠাকুরের স্বপ্নাদেশেই নাকি এই মন্দির তৈরি করেছিলেন শরৎচন্দ্র। প্রথমদিকে কেবলমাত্র ছবি দিয়েই মন্দিরে পুজো চলত। পরে ভক্তের সমাবেশ বেড়ে যাওয়ায় মূর্তি তৈরি হয়। পরবর্তীকালে এই মন্দিরের পুজোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন স্বামী সুধাকৃষ্ণ দাস গোস্বামী মহারাজ। রবীন্দ্র জয়ন্তীতে, কবির এই মন্দিরে পুজো হয় ধুমধাম করে। গত বছর এমনকী রবি ঠাকুরের বিশেষ পুজো উপলক্ষ্যে মেলাও বসেছিল। প্রসাদও বিলি করা হয়েছিল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  একাধারে কবি, চিত্রশিল্পী, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সাহিত্যিক, ছোটগল্পকার, সংগীত রচয়িতা-সুরকার, নাট্যকার ও দার্শনিক ছিলেন। বাঙালির কাছে তিনি কেবল কবি গুরু নন, 'চিরসখা'ও বটে। হাসি হোক বা কান্না, রাগ হোক বা দুঃখ প্রতিনিয়ত সব আবেগে তাঁর সৃষ্টি আমাদের চলার পথের সঙ্গী। তাঁর অমর সৃষ্টি আজও বাঙালির কাছে সমান ভাবে প্রাসঙ্গিক। মানুষের নানা আবেগ, অনুভূতি, আকাঙ্ক্ষা, অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটেছে তাঁর রচনায়। তাই কবিগুরুর জন্মজয়ন্তীর উৎযাপন আসলে বাঙালির আবেগের উৎযাপন।