সুরের গুরু-পণ্ডিত রবিশঙ্কর | Biography of an Indian composer Ravi Shankar

Monday, May 16 2022, 10:10 am
highlightKey Highlights

পণ্ডিত রবিশঙ্কর একজন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ যিনি সেতারবাদনে কিংবদন্তিতুল্য শ্রেষ্ঠত্বের জন্য বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত।


ভূমিকা | Introduction of Ravi Shankar

যাঁর সেতারের সুরমূর্ছনা মুহূর্তে ভুলিয়ে দেয় সব আতঙ্ক, সব হতাশা, জাগ্রত করে প্রাণের আশা, তিনি হলেন ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত জগতের এক কিংবদন্তি সেতারবাদক ;পণ্ডিত রবি শংকর। শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের গুরু আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের শিষ্য রবি শঙ্কর ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য এবং ভারতীয় সঙ্গীতকে পাশ্চাত্য বিশ্বের কাছে প্রথম তুলে ধরেছিলেন। তাঁর সাঙ্গীতিক কর্মজীবনের পরিব্যাপ্তি ছিল ছয় দশক জুড়ে।বিশ্ব সঙ্গীতে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমান করে পর্যায়ক্রমে এই বিশ্ববরেণ্য সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের জগতে সত্যিকারের পণ্ডিত হয়ে উঠেন। 

১৯২০ খ্রীস্টাব্দের ৭ই এপ্রিল, বাবা শ্যাম শঙ্কর চৌধুরী ও মা হেমাঙ্গিনী দেবীর কোল আলো করে জন্ম নেন বিখ্যাত এই নৃত্যশিল্পী, সুরকার ও সেতারবাদক রবিশঙ্কর যাঁর পূর্ণ নাম ছিল রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী আর বাড়ির নাম 'রবু'। পৈত্রিক আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলায়। তবে প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পীর জন্ম হয়েছিল ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহরে এবং সেখানেই বড় হয়ে ওঠেন তিনি। পিতা, শ্যাম শঙ্কর চৌধুরী ছিলেন একজন খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ এবং আইনজ্ঞ। চার ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ সন্তান রবিশঙ্কর গোটা বাল্যকাল ই তাঁর বাবার অবর্তমানে কাটান । বলা যেতে পারে যে একপ্রকার দারিদ্রের মধ্যেই রবি শংকরের মা হেমাঙ্গিনী তাঁকে বড় করে তোলেন। মাসিক দুশো টাকা বেতনে চাকরি করতেন তাঁর বাবা। মাস শেষ হলে নানা হাত ঘুরে মোটে ষাট টাকা আসত তাঁর মায়ের হাতে। সেই দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালান তাঁর মাএবং এমনও দিন গেছে উপায়ন্তর না পেয়ে কানের দুল, নাকের নথ বন্ধক রেখে সংসারের খরচ জোগাড় করতে হয়েচে রবিশঙ্করের মা'কে। এরকমভাবেই অতি কষ্টের মধ্যে থেকে বড় হয়ে ওঠেন আজকের বিখ্যাত সেতারবাদক রবিশঙ্কর। বড় ভাই উদয় শংকর ছিলেন একজন স্বনামধন্য ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী ।১৯৩০ সালে রবিশঙ্কর তাঁর মা কে সাথে নিয়ে প্যারিসে বড় ভাই উদয় শঙ্করের কাছে যান ও সেখানে বসবাসকালীন সময়ে প্যারিসে ই আট বছর স্কুল শিক্ষা গ্রহণ করেন। রবিশঙ্করের যখন বারো বছর বয়স তখন তিনি বড় ভাইয়ের নাচের দলের একক নৃত্যশিল্পী ও সেতার বাদক হিসেবে নিজের স্থান করে নিয়েছিলেন। তিনিই সেই বাল্য বয়স থেকেই অনুষ্ঠান করে বেড়িয়েছেন ভারত ও ইউরোপের নানান শহরে। 

আলাউদ্দিন খাঁর সাথে পরিচয় ও সঙ্গীত জীবনে প্রবেশ | Ravi Shankar's acquaintance with Alauddin Khan and his entry into music life

Baba Ustad Alauddin Khan, Ravi Shankar and Ali Akbar Khan in Maihar
Baba Ustad Alauddin Khan, Ravi Shankar and Ali Akbar Khan in Maihar

নৃত্যে পারদর্শী রবি শংকর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মারফতে ভ্রমণ করেন ইউরোপ, আমেরিকার বেশ কিছু দেশ। ইউরোপ ভ্রমণকালে এই নৃত্য গোষ্ঠীর সাথে যোগ দেন মাইহার রাজদরবারের প্রধান সংগীতশিল্পী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান আর সেখানেই রবিশঙ্করের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ ঘটে । রবিশঙ্করকে প্রথম দর্শনেই খাঁ সাহেব অনুধাবন করতে পারেন এই সম্ভাবনাময় যুবকের অসীম দক্ষতার কথা । ১৯৩৮ সালে ১৮ বছর বয়সে বড় ভাই উদয় শঙ্করের নাচের দল পরিত্যাগ করে আচার্য আলাউদ্দীন খান সাহেবের কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব রবিশঙ্করকে একজন একক সেতারবাদক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেন এবং একটা শর্ত রাখেন যে শিক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র রবিশঙ্করকে একনিষ্ঠ থাকতে হবে। রবিশঙ্করের একাগ্রতা,নিষ্ঠা এবং সেতারের তাল, লয়ের মোহনীয় আবেশ মুগ্ধ করে দেয় ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান কে। সেই সময়কালেই তিনি আচার্যের পুত্র, সরোদের অমর শিল্পী ওস্তাদ আলী আকবর খানের সংস্পর্শে আসেন যাঁরা পরবর্তীকালে বিভিন্ন স্থানে সেতার-সরোদের যুগলবন্দী পরিবেশন করে সকলের মন কেড়েছিলেন। গুরুগৃহে থাকাকালীন রবি শংকর দীর্ঘ সাত বছর সেতারে সঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। যার পরিব্যাপ্তি ছিল ১৯৩৮ হতে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত। এরপর থেকে তাঁকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জীবন | Ravi Shankar's life of classical music

ভারতের আহমেদাবাদ শহরে ১৯৩৯ সালে রবিশঙ্কর সর্বপ্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন করেন একটি অনুষ্ঠানে। অসামান্য দক্ষতার অধিকারী এই শিল্পী তখন থেকে আজ পর্যন্ত নিজেকে তুলে ধরেছেন একজন বৈশ্বিক সঙ্গীতজ্ঞ, সঙ্গীত স্রষ্টা, এবং ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একজন অনন্যসাধারণ মেধাবী দূত হিসেবে। ১৯৪৫ সালের মধ্যেই তিনি সেতার বাদক হিসেবে ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে একজন সুপ্রতিষ্ঠিত শিল্পী হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে যান অবলীলাক্রমে।একই সাথে ও সমভাবে রবিশঙ্কর তাঁর সাঙ্গীতিক সৃজনশীলতার অন্যান্য শাখায়ও নিজের কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে শুরু করেছিলেন । সুর সৃষ্টি, ব্যালের জন্য সঙ্গীত রচনা এবং চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার জগতেও তিনি মনোনিবেশ করেন। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য, এই সময়ের বিখ্যাত ,'ধরত্রী কি লাল' এবং 'নীচা নগর' চলচ্চিত্র দুটির সঙ্গীত রচনা ও সুরারোপ তিনি করে থাকেন। ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত তিনি নিষ্ঠার সাথে সকল যন্ত্র এবং ভারতীয় রাগ সঙ্গীতের উপর শিক্ষালাভ করে মাইহার থেকে মুম্বাই আসেন এবং সেখানকার ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটার অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত হয়ে তাঁর কর্মজীবনের সূত্রপাত করেছিলেন।তিনি ১৯৪৫ সালে কবি ইকবালের,' সারে জাঁহাসে আচ্ছা 'কবিতাকে তাঁর অমর সুরে সুরারোপিত করে ভারতীয় জাতীয় সঙ্গীতের পরে সর্বোৎকৃষ্ট জনপ্রিয় গান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।কর্মক্ষেত্রে দায়িত্বশীল আচরণের জন্য পণ্ডিত রবিশঙ্কর ১৯৪৯ সালের আদ্যভাগে 'অল ইন্ডিয়া রেডিও'-এর নয়াদিল্লি শাখার সঙ্গীত পরিচালকের দায়িত্ব পান। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাস অবধি তিনি এই পদেই কর্মরত ছিলেন।

Ravi Shankar meets Queen Elizabeth II with his family, 1990
Ravi Shankar meets Queen Elizabeth II with his family, 1990

একই সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বৈদ্য বৃন্দ চেম্বার অর্কেষ্ট্রা। ১৯৫০সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত রবিশঙ্কর অত্যন্ত গভীরভাবে সঙ্গীতের সৃজনশীলতায় ব্যাপৃত ছিলেন। এ সময়ে তাঁর অন্যতম উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো সত্যজিৎ রায়ের অপু ত্রয়ী (পথের পাঁচালী, অপরাজিত ও অপুর সংসার) চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা।পরবর্তীকালে , চাপাকোয়া (১৯৬৬) চার্লি (১৯৬৮) ও গান্ধী (১৯৮২) সহ বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেছিলেন তিনি।

১৯৬২ খ্রীস্টাব্দে পণ্ডিত রবিশঙ্কর বম্বের কিন্নর স্কুল অব মিউজিক এবং ১৯৬৭ খ্রীস্টাব্দে লস এন্‌জেলেসব কিন্নর স্কুল অব মিউজিক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল | Ravi Shankar's International Circle

প্রখ্যাত সেতার বাদক হিসেবে পণ্ডিত রবিশংকর ছিলেন সর্বদা ঐতিহ্যমুখী ও শুদ্ধতাবাদী। সঙ্গীত রচয়িতা হিসেবে তিনি নিজের সীমাকে অতিক্রম করে সংগীতের এক অনন্য মার্গ দর্শন করাতে ফিরেছিলেন বিশ্ববাসীকে। ভারতীয় রাগ সঙ্গীতকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য ১৯৫৬ সালে জানুয়ারি মাসে পণ্ডিত রবিশঙ্কর অল ইন্ডিয়া রেডিওর চাকরি ছেড়ে যুক্তরাজ্য, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন এবং শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। ১৯৫৬ সালে লণ্ডন থেকে তাঁর তিনটি রাগের রেকর্ড প্রকাশিত হয়ে থাকে এবং পরবর্তীকালে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কো সঙ্গীত উৎসবে ও তিনি অংশগ্রহণ করেন।তিনি জ্যাজ সঙ্গীত, পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ও লোকসঙ্গীত নিয়েও অনেক কাজ করেছিলেন।

তিনি ১৯৫৪ সালে একটি সঙ্গীত দলের সাথে সোভিয়েত ইউনিয়নে যান এবং একক সংগীত পরিবেশন করে বিশ্বের দরবারে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বাহক হিসেবে তাঁর সেতারবাদনকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ইউরোপ ও আমেরিকায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং এডিনবার্গ ফেস্টিভাল ও বিখ্যাত সঙ্গীত মঞ্চ রয়াল ফেস্টিভাল হলেও তিনি তাঁর সেতারের সুরের মূর্ছনায় সকলকে মোহিত করেছিলেন।

রবিশঙ্করের দুই কন্যা
রবিশঙ্করের দুই কন্যা

১৯৬৫ সালে বীটলস্-এর জর্জ হ্যারিসনের সাথে রবিশঙ্করের যোগাযোগ হয় যা পরবর্তীতে বন্ধুত্বে পরিণত হয় এবং এই বন্ধুত্ব রবি শংকরকে অতিদ্রুত আন্তর্জাতিক সঙ্গীত পরিমন্ডলে এক স্থায়ী অবস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করেছিল। পাশ্চাত্য সংগীত জগৎ রবি শংকরকে পপ সঙ্গীতের গুরু জর্জ হ্যারিসনের "মেন্টর" হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল।সেই সময় তিনি বিভিন্ন সঙ্গীত উৎসবে সঙ্গীত পরিবেশনের আমন্ত্রণ পান যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো "মন্টেরী পপ ফেস্টিভ্যাল", মন্টেরী, ক্যালিফোর্নিয়া; যেই অনুষ্ঠানে ওস্তাদ আল্লারাখা পণ্ডিত রবিশঙ্করকে তবলায় সঙ্গত করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে আমেরিকার অনুষ্ঠানমালায় অভাবনীয় সাফল্যের পরে তিনি বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেবার আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন।১৯৬৯ সালে এই খ্যাতনামা সেতারবাদক উডস্টক ফেস্টিভ্যালে ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রচার হেতুও নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে আয়োজিত "কনসার্ট ফর বাংলাদেশ" অনুষ্ঠানে পণ্ডিত রবিশঙ্কর সেতার বাজিয়েছিলেন যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় এবং একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা সুস্বাদু স্বীকৃত।তাছাড়া জর্জ হ্যারিসন আয়োজিত ১৯৭৪ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনুষ্ঠানমালায় পণ্ডিত রবিশঙ্কর ও তার সঙ্গীরা উদ্বোধনীসঙ্গীত পরিবেশন করে সকলের নজর কেড়েছিলেন।

পণ্ডিত রবিশঙ্করের অমর কীর্তি হল পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের সংগীতের মেলবন্ধন । পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিখ্যাত বেহালাবাদক ইহুদী মেনুহিনের সাথে সেতার-বেহালার যুগলবন্দী তাঁর এক অবিস্মরণীয় সৃষ্টি যা আন্তর্জাতিক সঙ্গীতের উচ্চ আসনে তাঁকে বসিয়েছিল। এছাড়া বিখ্যাত বাঁশীবাদক জ্যঁ পিয়েরে রামপাল, জাপানী বাঁশীর সাকুহাচি গুরু হোসান ইয়ামামাটো এবং কোটো (ঐতিহ্যবাহী জাপানী তারযন্ত্র) গুরু মুসুমি মিয়াশিতার সাথে তৈরি তাঁর বিখ্যাত কম্পোজিশন চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে । বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ফিলিপ গ্রাসের সাথে তাঁর যৌথ প্রযোজনা 'প্যাসেজেস 'একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি বলে বিবেচিত হয়ে থাকে ।

পারিবারিক জীবন | Family life of Ravi Shankar

স্বস্ত্রীক রবিশঙ্কর
স্বস্ত্রীক রবিশঙ্কর

একুশ বছর বয়েসে রবিশঙ্কর তাঁর আচার্য গুরু আলাউদ্দীন খান সাহেবের মেয়ে অন্নপূর্ণা দেবীকে বিবাহ করেন এবং তাঁদের একটি পুত্র সন্তান শুভেন্দ্র শঙ্করের জন্ম হয়। তবে দুর্ভাগ্যক্রমে এই বিবাহ বিচ্ছেদে পরিণতি পেয়েছিল। পরবর্তীকালে আমেরিকান কনসার্ট উদ্যোক্তা স্যু জোন্স এর সাথে তিনি এক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে পড়েন এবং সেই সম্পর্ক একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় যার নাম নোরা জোন্স - যিনি পরবর্তীকালে একজন প্রথিতযশা জ্যাজ, পপ, এবং পাশ্চাত্য লোক সঙ্গীতের শিল্পী ও সুরকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তৃতীয়বারের জন্য রবিশঙ্কর তার গুণগ্রাহী ও অনুরক্তা সুকন্যা কৈতানকে বিবাহ করেন ও রবিশঙ্করের দ্বিতীয় কন্যা অনুশকা শংকরের জন্ম হয়।

পুরস্কার ও সম্মাননা | Ravi Shankar's awards and honors

প্রথিতযশা সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর তাঁর জীবদ্দশায় প্রচুর পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। সেগুলি হল :১৯৬২ ভারতের রাষ্ট্রপতি পদক;১৯৮১ সালে পদ্মভূষণ; ১৯৮৬ সালে ভারতের রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে মনোনীত হন;১৯৯১ সালে ফুকোদা এশিয়ান কালচারাল প্রাইজেস-এর গ্র্যান্ড প্রাইজ লাভ করেন,১৯৯৮ সালে সুইডেনের পোলার মিউজিক প্রাইজ,

১৯৯৯ সালে ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত ভারতরত্ন;২০০০ সালে ফরাসি পুরস্কার ,লিজিয়ন অব অনার; ২০০১ সালে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ দ্বারা প্রদত্ত অনারারী নাইটহুড;২০০২ সালে ভারতীয় চেম্বার অব কমার্স-এর লাইফ টাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ড এর উদ্বোধনী পুরস্কার;২০০২ সালে দুটি গ্র্যামি এওয়ার্ড;২০০৩ সালে লন্ডনের আই এস পি এ ডিস্টিংগুইশ্‌ড আর্টিস্ট এওয়ার্ড, ২০০৬ সালে ফাউন্ডিং এম্বাসেডর ফর গ্লোবাল এমিটি এওয়ার্ড, স্যান ডিয়েগো স্টেট ইউনিভার্সিটি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র;১৪টি সম্মানসূচক ডক্টরেট;ম্যাগাসাসে এওয়ার্ড, ম্যানিলা, ফিলিপাইন;গ্লোবাল এম্বাসেডর উপাধি, দেশিকোত্তম পুরস্কার।

তিনি আমেরিকান একাডেমী অব আর্টস্ এন্ড লেটারস্-এর অনারারী সদস্যও ইউনাইটেড নেশনস্ ইন্টারন্যাশনাল রোস্ট্রাম অফ কম্পোজারস-এর মেম্বার ছিলেন।

মৃত্যু | Ravi Shankar's death

কয়েক বৎসর যাবৎ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভোগার কারণে প্রবাদপ্রতিম এই সেতারবাদক বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে পণ্ডিত রবিশঙ্করকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তবে শল্যচিকিৎসার ধাক্কা তাঁর দুর্বল শরীর সহ্য করতে না পেরে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরলোকগমন করেন এই মহান কিংবদন্তি শিল্পী ।মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। মৃত্যুর কয়েক সপ্তাহ আগে নভেম্বরের ৪ তারিখে তিনি ক্যালিফর্নিয়াতে শ্রোতাসাধারণের উদ্দেশ্যে তাঁর সর্বশেষ সেতারবাদন টি নিবেদন করেছিলেন।

একই মঞ্চে অনুষ্কা শঙ্কর পিতা রবি শঙ্করের সাথে  
একই মঞ্চে অনুষ্কা শঙ্কর পিতা রবি শঙ্করের সাথে  

উপসংহার | Conclusion of Ravi Shankar

একজন ভারতীয় বাঙালি সঙ্গীতজ্ঞ ও প্রখ্যাত সেতারবাদক পণ্ডিত রবিশঙ্কর তাঁর সেতারবাদনের জন্য ছিলেন বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে তিনি এক অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। । ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত যে কোনো সংগীতের চেয়ে কম নয়, বরং আরও বেশি সমৃদ্ধ তা তিনি তাঁর জীবদ্দশায় প্রমাণ করে দিয়ে গেছেন।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

পণ্ডিত রবিশঙ্করের শিক্ষাগুরু কে ছিলেন?

ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সাহেব

পণ্ডিত রবিশঙ্কর কত সালে এবং কোথায় জন্মগ্রহণ করেন ?

১৯২০ খ্রীস্টাব্দের ৭ই এপ্রিল ভারতবর্ষের উত্তরপ্রদেশের বারাণসী শহরে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।

পণ্ডিত রবিশঙ্কর সর্বপ্রথম কোথায় একক সেতার বাদন পরিবেশন করেছিলেন ?

ভারতের আহমেদাবাদ শহরে ১৯৩৯ সালে রবিশঙ্কর সর্বপ্রথম সাধারণের জন্য উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন করেন ।

পণ্ডিত রবিশঙ্করের বড় ভাইয়ের নাম কি?

উদয় শঙ্কর

পণ্ডিত রবিশঙ্কর ফরাসি দেশের কোন বিশেষ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন?

'লিজিয়ন অব অনার' সম্মাননায় পণ্ডিত রবিশঙ্কর বিশেষ সম্মানে সম্মানিত হয়েছিলেন।

প্রবাদপ্রতিম সেতারবাদক রবিশঙ্করের কত সালে মৃত্যু হয় ?

২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর এই প্রবাদপ্রতিম শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পীর মৃত্যু হয় ।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File