ভারতীয় হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী আলী আকবর খানের জীবনী | Biography of Indian Hindustani classical musician Ali Akbar Khan

Wednesday, May 18 2022, 10:59 am
highlightKey Highlights

শাস্ত্রীয় সংগীতে তাঁর অনন্য সাধারণ সৃষ্টি তাঁকে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য জগতে অমর করে রেখেছে।


ভূমিকা | Introduction of Ali Akbar Khan

ওস্তাদ আলী আকবর খান ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে মাইহার ঘরনার একজন সর্বাধিক খ্যাতনামা এবং পরিপূর্ণ সঙ্গীতজ্ঞ যাঁর সরোদের তানের সুরেলা মূর্ছনা সমগ্র বিশ্ববাসীকে করেছে আপ্লুত ও মোহিত। শাস্ত্রীয় সংগীতে তাঁর অনন্য সাধারণ সৃষ্টি তাঁকে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য জগতে অমর করে রেখেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে ওস্তাদ আলী আকবর খানের অবদান আজও চিরস্মরণীয় এবং তাই তিনি বাঙালি জাতির কাছে বিশেষ রূপে সম্মানিত এক ব্যক্তিত্ব।

জন্মকাল ও শিক্ষা | Birth & education of Ali Akbar Khan

কিংবদন্তি সরোদশিল্পী ওস্তাদ আলি আকবর খাঁ জন্মগ্রহণ   করেন ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ এপ্রিল, বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার শিবপুরে । তাঁর  পিতা  ছিলেন সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও মাতা মদিনা বেগম। আলী আকবর খাঁ এর জন্মের পর পিতা   ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সপরিবারে তাঁর কর্মস্থল মাইহরে (ভারতের মধ্যপ্রদেশের প্রিন্স শাসিত রাজ্য) বসবাস করতে শুরু করেন যেখানকার   রাজদরবারের তিনি এক বিখ্যাত  সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। মাত্র তিন বছর বয়সে  পিতার কাছেই আলী আকবরের সঙ্গীত শিক্ষার হাতে খড়ি হয়।কণ্ঠ সঙ্গীতের মাধ্যমে আলী আকবরের সঙ্গীত শিক্ষা শুরু হয়। পিতা দুশটির মত বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারদর্শী ছিলেন । কাজেই বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রে আলী আকবর তালিম ও  গায়কীর শিক্ষা নিতে শুরু করেন। নয় বছর বয়সে তাঁর বাবা তাঁর হাতে তুলে দেন সরোদ।  ধীরে ধীরে তিনি সরোদ বিশেষজ্ঞ রূপে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। কন্ঠ সঙ্গীত ছাড়াও তিনি তবলা বাদনের শিক্ষা পেয়েছিলেন তাঁর চাচা ফকির আফতাবউদ্দিনের কাছে। 

বৈশ্বিক সরোদ দূত
বৈশ্বিক সরোদ দূত

১৯৩৩ সালে চাচা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ নিজ হাতে তৈরি একটি সরোদ আলী আকবরকে উপহারস্বরূপ প্রদান করেন । পরবর্তীতে তিনি সরোদ যন্ত্রটি নিয়েই একনিষ্ঠভাবে সঙ্গীতচর্চা করে গেছেন। সেই সময়কালে তাঁর সতীর্থ ছিলেন পণ্ডিত রবি শঙ্কর ও কন্যা বিদুষী অন্নপূর্ণা।তিনি দৈনিক আঠারো ঘন্টা রেওয়াজ করতেন। এরপর প্রায় ২০ বছর যাবৎ আলী আকবর খান একই ভাবে ও একনিষ্ঠ হৃদয়ে   তাঁর  শিক্ষা ও চর্চা অব্যাহত রাখেন। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য  যে তাঁদের  সাঙ্গীতিক ঐতিহ্য হল ভারতের মাইহার ও রামপুরের শ্রী বাবা আলাউদ্দিন সেনী ঘরানা।আলী আকবরের বাবা আচার্য আলাউদ্দিন খান সাহেবের  যখন ১০০ বছর বয়স ততদিন  পর্যন্ত  তিনি তাঁর পুত্রকে শিক্ষা প্রদান করে গেছেন যা আলী আকবর খানের জীবনে এক অমূল্য সম্পদ স্বরূপ। ১৯৭২ সালে পিতার মৃত্যুর পরবর্তীকালে আলী আকবর তাঁর  পিতার চর্চিত সাঙ্গীতিক ঐতিহ্য  এবং পরম্পরা কে যথার্থভাবে  ধরে রাখতে পেরেছিলেন। 

কর্মজীবন | Career of Ali Akbar Khan

একটি দীর্ঘ সময়কাল প্রশিক্ষণ লাভের পর  ১৯৩৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আলি আকবর খাঁ এলাহাবাদে সর্ব প্রথম এক সঙ্গীত সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করে তাঁর প্রতিভা জনসমক্ষে নিয়ে আসেন। তিন বছর পরে সেই একই সম্মেলনে  ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে  প্রখ্যাত সেতার বাদক পণ্ডিত রবি শঙ্করের সাথে  তিনি  প্রথম সেতার -সরোদের দ্বৈতবাদন পরিবেশন করেন। যা ছিল তাঁদের প্রথম যুগলবন্দী। ১৯৩৮ সালে আলী আকবর খান কাজ করেছিলেন  বোম্বে অল ইন্ডিয়া রেডিও-র সাথে যেখানে তাঁকে তবলায় সঙ্গত করেছিলেন প্রখ্যাত তবলাবাদক  ঊস্তাদ আল্লা রাখা। ২১ বছর বয়সে নিজস্ব প্রচেষ্টায় পেশাদার সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে ভাগ্য অন্বেষণে বেড়িয়ে পড়েন তিনি।১৯৪০ সালে তিনি লাখনৌতে কিছুদিন অল ইন্ডিয়া রেডিও-এর সর্বকনিষ্ঠ  সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেন এবং যন্ত্রসংগীত পরিবেশন করেন  এবং রেডিওর জন্য অর্কেষ্ট্রা রচনার দায়িত্বও তাঁর উপরই ছিল।অবশেষে পেশাদার সঙ্গীতকার হওয়ার উদ্দেশ্যে রবিশংকরের সাথে তিনিও মাইহার ত্যাগ করেন। এরপর ১৯৪৩ সালে পিতা আলাউদ্দিন খানের সুপারিশ অনুযায়ী আলী আকবর খান যোধপুরের মহারাজার (হনবন্ত সিং) দরবারে সভা-শিল্পী হিসেবে নিযুক্ত হন যেখানে তিনি ছয় বছর অবস্থান করেছিলেন । সেখানে  তিনি সঙ্গীত পরিবেশনের সাথে সাথে সংগীতের প্রশিক্ষণ দান এবং সুর রচনার কাজও সমান দক্ষতার সাথে সমভাবে  চালিয়ে যান।  আলী আকবর খানের বহুমুখী প্রতিভার কারণে মহারাজা  হনবন্ত সিং তাঁকে  'উস্তাদ' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।দুর্ভাগ্যক্রমে এক বিমান দুর্ঘটনায় মহারাজের মৃত্যু ঘটলে  ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার সময়কালে আলি আকবর বম্বেতে চ'লে আসেন।

আলী আকবর খানের পোস্ট টিকিট 
আলী আকবর খানের পোস্ট টিকিট 

চলচ্চিত্র জগতে তাঁর কার্যাবলি | His activities in the film world

চলচ্চিত্র জগতেও ওস্তাদ আলী আকবর খান তাঁর সুর সৃষ্টির অনির্বচনীয় প্রভাব বিস্তার করে গেছেন।  

মুম্বইতে ১৯৫২ সালে নির্মিত চেতন আনন্দের 'আন্ধিয়াঁ'  সহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে সুর সংযোজনা   করবার মধ্য দিয়ে  তিনি প্রতিষ্ঠা লাভ করেন । এই ছবিটিতে ওস্তাদ আলী আকবর খানকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানাতে কোকিল কন্ঠী লতা মঙ্গেশকার বিনা পারিশ্রমিকে সংগীত পরিবেশন করেছিলেন। ১৯৬০ সালে নির্মিত  সত্যজিৎ রায়ের 'দেবী',তপন সিনহার 'ক্ষুধিত পাষাণ'  এবং মার্চেন্ট আইভরির 'দ্য হাউসহোল্ডার'-এ অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে বছরের শ্রেষ্ঠ সংগীতকার' হিসেবে পুরষ্কৃত করা হয়।  বিখ্যাত সংগীত পরিচালক  শংকর জয়কিষেণের অনবদ্য  সঙ্গীত পরিচালনায় 'সীমা' (১৯৫৫) চলচ্চিত্রের একটি গানেও তিনি সরোদ বাঁধিয়ে দর্শকদের মোহিত করেছিলেন  । ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর আরও কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অন্যতম হল  ১৯৯৩ সালে  নির্মিত  বার্নার্দো বার্তোলুচির পরিচালিত 'লিট্‌ল্‌ বুদ্ধা' চলচ্চিত্রটি যার জন্য তিনি বেশ কিছু সুর রচনা করেছিলেন। 

রাগের স্রষ্টা আলী আকবর খান | Composer Ali Akbar Khan

সরোদ বাদনের সাথে সাথে ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ বিভিন্ন রাগের রচনা ও করেছিলেন।  ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এইচএমভির সাথে মিলে একত্রিতভাবে ৭৮ আর. পি. এম. এর সিরিজ রেকর্ডে কাজ করেছিলেন। সেই সময়ে ৭৮ আরপিএমএ-এর রেকর্ডে মাত্র তিন মিনিটের একটি সরোদবাদন রেকর্ড করা হয়েছিল এবং সেটি  ছিল মূলত একটি মিশ্র রাগের সমন্বিত একটি ভিন্ন  রূপ  এবং সেই সময়ে রেকর্ড টি   সফলতার শিখরে উঠেছিল । ওস্তাদ আলী আকবর খান  এই রাগটির নাম রেখেছিলেন, রাগ 'চন্দ্রানন্দন'। রাগটি মূলত মালকোষ, চন্দ্রকোষ, নন্দকোষ এবং কৌষিকী কানাড়ার সমন্বয়ে সৃষ্ট । পরবর্তীকালে তিনি এই রাগটি ২২ মিনিট দীর্ঘ একটি রূপ সংযোজন করে পুনরায় তা বাজান যেটি ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে রেকর্ড হিসাবে প্রকাশিত হয়ে থাকে।সারা পৃথিবী ব্যাপী এই রাগটির নিজস্ব শ্রোতা তৈরি হয়।

পাশ্চাত্য দুনিয়ায় আলী আকবর | Ali Akbar Khan in the western world

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের পাশাপাশি ওস্তাদ আলী আকবর খান পশ্চিমের দেশগুলিতেও ভ্রমণ করে তার সঙ্গীতের অবদান রেখেছিলেন।১৯৫৫ সালে  বিশ্ববিখ্যাত বেহালাবাদক ইহুদী মেনুহিন-এর আমন্ত্রণ লাভ করে  আলী আকবর খান আমেরিকায় যান।দেশের মাটিতে ফিরে এসে ১৯৫৬ সালে হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ ও প্রচারের উদ্দেশ্যে কলকাতায় তিনি 'আলি আকবর কলেজ অব মিউজিক' প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকালে  তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কলিতে একই নামে আরেকটি কলেজ স্থাপন করেন যেটি পরবর্তীকালে সান রাফায়েলে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে।এরপর থেকে আলী আকবর খান  ক্যালিফোর্নিয়াতেই স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করেন। ১৯৬৯ সালে অনুষ্ঠিত বস্টনে পিবডি ম্যাসন কনসার্ট সিরিজে আলী আকবর খান  সঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন   এবং তাঁর সাথে তবলা সঙ্গতে ছিলেন পন্ডিত শংকর ঘোষ।  এই প্রতিষ্ঠানের আরেকটি শাখা তিনি  উদ্বোধন করেন ১৯৮৫ সালে সুইৎজারল্যান্ডের বাসেলে। ওস্তাদ আলী আকবর খান  ই প্রথম ভারতীয় যিনি  যুক্তরাষ্ট্রে লং প্লেয়ার অ্যালবামে রেকর্ড করে জনপ্রিয়তা লাভ করেন   এবং যুক্তরাষ্ট্রের দূরদর্শনে সরোদ পরিবেশন করেন ও বিশাল খ্যাতি অর্জন করেছিলেন।

দেশ ও বিদেশে ওস্তাদ আলী আকবর খান ও তাঁর যুগলবন্দি | Ustad Ali Akbar Khan and his duet in the country and abroad

বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞদের সাথে ওস্তাদ আলী আকবর খানের যুগলবন্দি প্রভূত   জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল।  রবিশংকর, নিখিল ব্যানার্জী ও এল. সুব্রমনিয়মের সাথে আলি আকবরের অসংখ্যও যুগলবন্দী রয়েছে  যা ভারতীয়  শাস্ত্রীয় সংগীতের আঙিনায়  এক মূল্যবান সম্পদ।   বিলায়াৎ খানের সঙ্গে তাঁর  কিছু যুগলবন্দী রয়েছে যা বিপুল জনপ্রিয়তা  অর্জন করে। পাশ্চাত্যের সঙ্গীতকারদের সাথেও তিনি যৌথ কাজ করেছেন।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান | Outstanding contribution in the liberation war of Bangladesh of Ali Akbar Khan

আলি আকবর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যার্থে  ১৯৭১ সালের ১লা অগাষ্টে রবিশংকর, আল্লা রাখা, কমলা চক্রবর্তী প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাথে ম্যাডিসন স্ক্যোয়ার গার্ডেনে সঙ্গীত পরিবেশবন করে সর্বত্র এক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহের জন্য তিনি  জর্জ হ্যারিসনকে উৎসাহী করে তুলেছিলেন।এই আয়োজনে তিনি ভারতবর্ষ এবং পাশ্চাত্য অন্যান্য আরও বহু বিখ্যাত শিল্পীদের একত্রিত করেন যার ফলস্বরূপ  পাশ্চাত্যের প্রতিথযশা শিল্পীরা যেমন  জর্জ হ্যারিসন, বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, রিঙ্গো স্টার  এই কনসার্টে অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে কনসার্টটির একটি লাইভ অ্যালবাম এবং  একটি চলচ্চিত্র ও  প্রকাশিত হয়ে থাকে।এই অনুষ্ঠানের জন্য তিনি  'বাংলাদেশ ধুন' নামক একটি নতুন সুরবিন্যাস করেছিলেন। আলী আকবর খান সৃষ্ট  'বাংলাদেশ ধুন'  এর যুগলবন্দি বাদনে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন পণ্ডিত রবি শঙ্কর।এই অনুষ্ঠানটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্ব জনমত গঠনে এক কার্যকর ভূমিকা পালন করেছিল। কনসার্টের প্রাপ্ত সমগ্র অর্থ বাংলাদেশের শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে  ইউনিসেফের শরণার্থী ফান্ডে দান করা হয়ে থাকে। 

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

পরিবার-পরিজন | Family of Ali Akbar Khan

ওস্তাদ আলী আকবর খান সর্বমোট তিনবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন  ।১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দ সময়কালে  তিনি প্রথম বিবাহ করেন ; স্ত্রীর নাম জুবাইদা বেগম। তাঁর  দ্বিতীয় স্ত্রীর  রাজদুলারী (আনিসা চৌধুরী) ছিলেন একজন বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী যিনি অল-ইন্ডিয়া সঙ্গীত প্রতিযোগিতায়  প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন।তৃতীয় স্ত্রী মেরি ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিবাসী। ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর সাত ছেলে এবং চার মেয়ের মধ্যে  আশিস খান (জুবাইদা বেগমের পুত্র) সরোদে সুনাম অর্জন করেন।

সম্মাননা | Ali Akbar Khan

প্রতিথযশা সরোদবাদক ওস্তাদ আলী আকবর খান শাস্ত্রীয় সংগীতে তাঁর অবদানের জন্য বিভিন্ন পুরস্কারে সম্মানিত হয়ে থাকেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো : 

  1. ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তপনি সিংহের 'ক্ষুধিত পাষাণ' চলচিত্রের সঙ্গীত পরিচালক হিসাবে Best Musician of the Year Award পুরস্কার প্রাপ্ত করেন। 
  2. ১৯৬৩ ও ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে President of India award পুরস্কার।
  3. ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রামি নমিনেশানে মনোনীত হন 'শ্রী' রাগের জন্য।
  4. ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মভূষণ সম্মাননা।
  5. ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পান ডক্টর অফ লিটারেচারের উপাধি ।
  6. ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ লিটারেচার সম্মাননা।
  7. ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায় গ্রামি নমিনেশান পান 'মিশ্র পিলু' রাগের জন্য।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মভূষণ সম্মাননা।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পদ্মভূষণ সম্মাননা।
  1. ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টর অফ লেটার উপাধি।
  2. ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে পদ্ম বিভূষণ ।

১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে যে পুরস্কারগুলো তিনি অর্জন করেছিলেন সেগুলি হল―

  1. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের MacArthur Foundation Fellowship থেকে MacArthur Fellowship.
  2. 'মধ্য প্রদেশ এ্যাকডেমি অফ মিউজিক এবং ফাইন আর্টস থেকে' পান 'কালিদাস সম্মান'।
  3. সম্মান সূচক ডক্টরেট ডিগ্রি California Institute of the Arts থেকে।
  4. ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে লণ্ডনে 'মহাত্মা গান্ধী' সম্মাননা।

১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে  যে পুরস্কারগুলো পান সেগুলি হল  :-

  1. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের Bay Area Music Awards Foundation (Bammies) থেকে The Bill Graham Lifetime Achievement Award সম্মাননা।
  2. যোধ পুরের মাহারাজা থেকে প্রাপ্ত Hathi Saropao and Dowari Tajeem উপাধি ।
  3. ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে পান গ্র্যামি নমিনেশন ,Then and Now কম্পোজিশানের জন্য।
  4. ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পান গ্র্যামি নমিনেশন Legacy কম্পোজিশানের জন্য।

এছাড়া ওস্তাদ আলী আকবর খান  শান্তিনিকেতন থেকে পান ডক্টরেট উপাধি, NARAS (National Academy of Recording Arts and Science) থেকে প্রাপ্ত করেন   Governor's Award সম্মাননা। কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি থেকে Indira Gandhi Gold Plaque সম্মাননা ও লাভ করে থাকেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে  কলকাতায় অনুষ্ঠিত  সঙ্গীত সম্মেলনে (Dover Lane Music Conference in Calcutta ) 'সঙ্গীত সম্মান' সম্মাননা দিয়ে তাঁকে   ভূষিত করা হয় । 

২০০০ খ্রিষ্টাব্দে বোষ্টনের  The New England Conservatory of Music in Boston থেকে তাঁর প্রাপ্তি   Degree of Doctor of Musical Arts।

মৃত্যু:

কিংবদন্তি সরোদবাদক ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ   ২০০৯ সালের ১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিসকোতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

উপসংহার:

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বা রাগসঙ্গীতের সাথে পাশ্চাত্যবাসীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যেসব ব্যক্তিত্বের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন ওস্তাদ আলী আকবর খান । কখনো একা আবার কখনো বা যৌথভাবে  সারা বিশ্বে তিনি রাগসঙ্গীত পরিবেশন করে  বিশ্বের দরবারে ভারতীয় রাগ সঙ্গীতকে একটি অন্য পর্যায়ে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

ওস্তাদ আলী আকবর খান কে ছিলেন?

ওস্তাদ আলী আকবর খান ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতে মাইহার ঘরনার একজন সর্বাধিক খ্যাতনামা এবং পরিপূর্ণ সঙ্গীতজ্ঞ যাঁর সরোদের তানের সুরেলা মূর্ছনা সমগ্র বিশ্ববাসীকে করেছে আপ্লুত ও মোহিত।

ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর বাবার নাম কী ছিল?

সঙ্গীত আচার্য আলাউদ্দিন খান ।

ওস্তাদ আলী আকবর খান কত বছর বয়সে কোন সংগীত সম্মেলনে প্রথম সংগীত পরিবেশন করেছিলেন?

১৯৩৬ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আলি আকবর খাঁ এলাহাবাদে সর্ব প্রথম এক সঙ্গীত সম্মেলনে সঙ্গীত পরিবেশন করেন।

আলী আকবর খানকে 'ওস্তাদ' উপাধি কে প্রদান করেছিলেন?

যোধপুরের মহারাজা হনবন্ত সিং আলী আকবর খাঁকে 'উস্তাদ' উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।

আলী আকবর খাঁর সৃষ্টি করা রাগের নামটি কী ?

ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর সৃষ্টি করা রাগের নামটি হল , 'চন্দ্রানন্দন'।

ওস্তাদ আলী আকবর খাঁর কবে মৃত্যু হয়েছিল ?

কিংবদন্তি সরোদবাদক ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ ২০০৯ সালের ১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রানসিসকোতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File