মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা | রোগ প্রতিরোধে কুমড়ো | Benefits of Pumpkin in Bengali
কুমড়ো কে ইংরেজিতে কী বলে ? কুমড়োর উপকারিতা, হেলথ বেনিফিট জেনে নিন । health benefits of pumpkin in bengali
'কুমড়া' বা 'কুমড়ো' প্রধানত মিষ্টিকুমড়ো এবং চালকুমড়ো- এই দুভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। মিষ্টিকুমড়া একটি ফলজাতীয় সবজি যা কিউকারবিটেসি পরিবারের অন্তর্গত কিউকারবিটার প্রজাতির মধ্যে পড়ে। ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ কুমড়ো অনেকের প্রিয় সবজি যা মানবদেহের জন্যও সমানভাবে কার্যকরি ।
সবজি হিসেবে কুমড়ো দেহের নানারকমের পুষ্টির যোগান দেওয়ার কাজে ও অদ্বিতীয়। পশ্চিমি দেশগুলিতেও অক্টোবরের শেষে মিষ্টি কুমড়ার চাহিদা বহু পরিমাণে বৃদ্ধি পায় কারণ এটি দিয়ে তৈরি করা হয় হ্যালোইনের বিশেষ বাতি। হালকা মিষ্টি স্বাদের এই সুস্বাদু সবজিটি সারা বছর বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় নিয়ম অনুযায়ী কুমড়ার উপস্থিতি প্রত্যেকটি মানুষকেই রাখতে পারে রোগমুক্ত; অসুস্থতা থেকে বহু দূরে।
কুমড়া এমন একটি সবজি, যা বহুবিধ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ । ভিটামিন-এ ছাড়াও কুমড়োতে উপস্থিত ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, সি, ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংক, ফ্লেভনয়েড পলি-ফেনলিক, অ্যান্টিঅক্সিডেণ্ট মতন প্রয়োজনীয় উপাদান। আরও বিশেষ কিছু উপাদান যেমন লিউটিন, জ্যানথিন ইত্যাদি ও এই সবজিটিতে উপস্থিত । কুমড়োতে ক্যালোরিও অপেক্ষাকৃত কম থাকে।
কুমড়োকে ইংরেজিতে বলা হয় পাম্পকিন ( Pumpkin ) । Scientific Name - Cucurbita moschata
মিষ্টি কুমড়োর বিভিন্ন উপযোগিতা | health benefits of pumpkin in bengali
দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
কুমড়ো তে উপস্থিত ভিটামিন-এ উপাদান চোখের জন্য খুবই লাভজনক । বিশেষত , কম বা অস্পষ্ট আলোর মধ্যে কর্মরত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কুমড়োর ভিটামিন-এ চোখের কর্নিয়া কে রক্ষা করে থাকে।বিটাক্যারোটিন সমৃদ্ধ এই সবজিটি চোখের স্বাস্থ্য উন্নতি করার পাশাপাশি বয়সকালীন রোগ, বিশেষ করে রেটিনার বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে মিষ্টি কুমড়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
কুমড়োতে ক্যারটিনয়েড নামক উপাদানটি থাকার কারণে চোখে ছানি পড়া প্রতিরোধ হয় । চোখের অসুখ ছাড়াও ভিটামিন এ-এর অভাবজনিত অন্যান্য রোগেও কুমড়ো সমানভাবে কার্যকরি।
সুস্থ ত্বক গঠনের সাহায্যে
মানবদেহে সুস্থ ত্বক গঠনে কুমড়ো অনেকভাবেই সাহায্য করে থাকে ও দেহে টিস্যু তৈরি করতে সাহায্য করে।মিষ্টি কুমড়ার ভিটামিন এ ও সি এবং বিটা ক্যারোটিন চুল ও ত্বক সুন্দর এবং মজবুত রাখে। ভিটামিন-এ ত্বককে সুরক্ষিত রাখার সাথে সাথে বিটা-ক্যারোটিন সূর্যের তাপ -জনিত ত্বকের বিবিধ সমস্যা থেকে মুক্তি প্রদান করে ।
ভিটামিন-বি ও সি ত্বকের কোলাজেন তৈরির কাজে সাহায্য করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও স্বাস্থ্যবান ত্বক তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন বি5 ত্বকের দাগ-ছোপ দূর করতে সাহায্য করে থাকে । তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কুমড়ো উপস্থিত থাকলে চকচকে উজ্জ্বল চুল ও সুন্দর ত্বকের অধিকারী হওয়া যায় অতি সহজেই ।
দেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
বিভিন্ন ধরণের ভিটামিনের ভাণ্ডারে ভরপুর কুমড়োতে উপস্থিত প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-এ, সি, ই, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এর মতো প্রয়োজনীয় উপাদান। বিশেষত ভিটামিন এ মানবদেহের টিস্যুকে রক্ষা করে থাকে ও বিটা-ক্যারোটিন মানুষের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে এবং ভিটামিন সি র উপস্থিতি মানবদেহে সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। কুমড়োতে জিঙ্কের উপস্থিতি ইমিউন সিস্টেমকে অনেক শক্তিশালী বানায়।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
কুমড়োতে ফাইবার ও পটাশিয়াম প্রচুর পরিমানে থাকার কারণে এবং ক্যালরির পরিমাণ খুব কম থাকার দরুণ মানবদেহের অতিরিক্ত ওজন হ্রাস পায় এবং এতে উপস্থিত ফাইবার' দেহের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রনে অানে। পটাশিয়াম শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় জল ও লবণ নিষ্কাশন করে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে ও সহায়তা করে। এছাড়া, নিয়মিত কুমড়ো জুস সেবন করলে অতি সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
দেহের জ্বালাপোড়ার সমস্যা দূর করে এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে
কুমড়ো তে উপস্থিত ক্যারটিনয়েড দেহের রং উজ্জ্বল করে এবং তা দেহের জ্বালাপোড়ার সমস্যা সমাধানেও সহায়ক।এই সবজির বিটা-ক্যারোটিন মানবদেহের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে ও আলফা-ক্যারোটিনের উপস্থিতি মানবদেহকে টিউমারের প্রকোপ থেকে রক্ষা করে ও আর্টারির দেয়ালে চর্বির স্তর জমাট বাঁধতে দেয় না ।
মিষ্টি কুমড়া নিয়মিত খেলে তাই হৃদরোগও প্রতিরোধ করা যায়। তাছাড়া এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-ই ক্যান্সার ও আলজাইমারের মত মারাত্মক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
পুষ্টি ও ফাইবার সমৃদ্ধ কুমড়ো নিয়মিত খাদ্যে গ্রহণ করলে দেহের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ থাকার কারণে তা সহজেই হজম করা সম্ভব হয় । হজমশক্তি বাড়াতে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীভূত করতে মিষ্টি কুমড়ার জুড়ি মেলা ভার।
ডায়রিয়া সমস্যায় দূর করতে ও কুমড়ো ই সহায়ক। কাঁচা কুমড়োর রস সেবনে মানবদেহের অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর হতে পারে। কোনো ভারী খাবারের ত্রিশ মিনিট আগে এক গ্লাস কুমড়োর জুসের সাথে অল্প পরিমাণে মধু মিশিয়ে তিন বেলা খেলে সবসময় নিজেকে সুস্থ রাখা যায়।
আরো পড়ুন: মটরশুটির উপকারিতা
ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ থেকে প্রতিরোধ
৩৩ মিলিগ্রাম বিটাক্যারোটিন, যা এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কুমড়োতে উপস্থিত থাকে বলে শরীরের ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ করে।দূষণ, স্ট্রেস ও খাবারে উপস্থিত কেমিক্যাল ও ক্ষতিকর উপাদান মানবদেহে ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ করে যার ফলস্বরূপ শরীরের সুস্থ কোষগুলো নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রবণতা শুরু হয় এবং খারাপ কোষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। তাই কুমড়োত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বেশি পরিমাণে থাকার কারণে ফ্রি রেডিকাল ড্যামেজ প্রতিরোধ হয়।
ব্যায়াম করার পর দেহে কুমড়োর উপকারিতা
ব্যায়াম করার পর খাদ্য হিসেবে কুমড়ো খেলে মানবদেহে প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেট এর যোগান সরবরাহ হয় থাকে।ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেহের সুস্থ পেশি তৈরিতেও সাহায্য করে কুমড়ো। যাঁরা ক্রীড়াবিদ, বিশেষ করে অ্যাথলেটিক ট্রেনিং নিয়ে থাকেন, কুমড়ো তাদের বেশি করে খাওয়া উচিত।
গর্ভবতী নারীর জন্য কুমড়ো
দেহে বেশি শক্তি যোগান ও গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্যের জন্য কুমড়ো সত্যিকারের একটি উপকারী খাদ্য । গর্ভবতী মহিলার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে ও কুমড়ো তে উপস্থিত প্রয়োজনীয় আয়রন বাচ্চাকে অক্সিজেন দিতে সাহায্য করে ও মায়ের রক্তশূন্যতা ও প্রতিরোধ করে।
দেহের উর্বরতা বৃদ্ধি
কুমড়োর বীজে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আছে যা মানবদেহের উর্বরতা বৃদ্ধি করতে সহায়ক। তাছাড়া এর ভিটামিন-ই উপাদান নারী ও পুরুষ উভয়ের দেহের উর্বরতার শক্তিকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
দেহের কোষকে বিষাক্ত পদার্থ থেকে রক্ষা করতে , পুরুষদের সুস্থ শুক্রাণু তৈরিতে ও নারীদের জরায়ুজনিত কোন সমস্যার সমাধান করতে কুমড়ো সাহায্য করে থাকে। কুমড়োর বীজে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা মানব দেহের উর্বরতা ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকে। প্রজনন অঙ্গে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে এবং হরমোনকে নিয়ন্ত্রনে রেখে মানসিক চাপ দূর করে।
উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে দেয়
কুমড়োতে আছে প্রচুর পরিমানে পটাশিয়াম উপাদান যা মানবশরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে থাকে৷ ভিটামিন-সি ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে । তাছাড়া কুমড়োর বিভিন্ন উপাদান দেহের কিডনি, লিভার, হার্টকে সুস্থ রাখে। কুমড়োর ফাইবার দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রেখে দেহকে স্ট্রোক হবার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
মিষ্টি কুমড়ো বীজের উপকারিতা
কুমড়োর বীজে ট্রিপটোফ্যান নামক যে অ্যামাইনো এসিড থাকে তা ভালো ঘুমের সহায়ক । তাই একে প্রকৃতিপ্রদত্ত স্লিপিং পিল হিসেবেও গণ্য করা হয়ে থাকে।কুমড়ার বীজে প্রচুর প্রোটিন উপস্থিত এবং এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে । ওজন হ্রাস করার সাথে সাথে ডায়াবেটিস কে ও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরো পড়ুন: সূর্যমুখী বীজের উপকারিতা
উপসংহার
মিষ্টিকুমড়া এমন একটি সবজি যার মধ্যে রয়েছে এমন কিছু অতি প্রয়োজনীয় উপাদান যা মানুষের শরীরে পুষ্টি জোগায় ও রোগ নিয়ন্ত্রণ করে । শরীরকে রোগমুক্ত করা, সুস্থ রাখা থেকে শুরু করে ত্বক,কেশ ও চামড়ার পরিচর্যা ;সবেতেই কুমড়োর জয়জয়কার । রান্নায় বিভিন্ন নিরামিষ বা আমিষ পদে সঠিক প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করে কুমড়োর স্বাদকে দ্বিগুণ মাত্রায় বাড়ানো যায়। উপাদেয় এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই সবজি তাই প্রতি ঘরে, প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় থাকাটা খুবই জরুরি।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
কুমড়োর বীজে কয়েকটি বীজপত্র থাকে ?
কুমড়োর বীজে দুইটি বীজপত্রের সংখ্যা থাকে ।
কুমড়ো বা কুমরা কয় ধরনের হয়?
কুমড়া' বা 'কুমড়ো' প্রধানত মিষ্টিকুমড়ো এবং চালকুমড়ো- এই দুই ধরনের হয় ।
কুমড়ো তে উপস্থিত জে কোন দুটি ভিটামিনের নাম কি কি?
ভিটামিন এ, ভিটামিন সি ।
কুমড়োর যে কোনো দুটি গুণাবলি ব্যক্ত করো।
ওজন নিয়ন্ত্রণে এবং দেহের উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য কুমড়ো খুবই উপকারী ।
কুমড়োর বীজে যে অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে তার নাম কী ?
ট্রিপটোফ্যান
- Related topics -
- খাদ্যের গুনাগুন
- স্বাস্থ্য
- পেটপুজো