দেশ

Ayodhya Ram Mandir | লোহা বা স্টিল নয়, কেবল পাথর দিয়েই তৈরী রামমন্দির! দেখুন ফুলের মালায় সেজে ওঠা রাম মন্দিরের অন্দরমহলের ফার্স্ট লুক!

Ayodhya Ram Mandir | লোহা বা স্টিল নয়, কেবল পাথর দিয়েই তৈরী রামমন্দির! দেখুন ফুলের মালায় সেজে ওঠা রাম মন্দিরের অন্দরমহলের ফার্স্ট লুক!
Key Highlights

রাম মন্দির উদ্বোধনের তারিখ অর্থাৎ ২২সে জানুয়ারির আর বেশি দেরি নেই। এর মধ্যেই সেজে উঠেছে মন্দিরের অন্দরমহল। দেখুন রামমন্দিরের ভেতরের সাজ ও জানুন কীভাবে রাম মন্দির নির্মাণ হলো।

আর ক্ষণিকের অপেক্ষা। এর পরই খুলে যাবে অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) এর দ্বার। ২২সে জানুয়ারি, সোমবার রাম মন্দির উদ্বোধনের তারিখ (Ram Mandir Opening Date)। যেদিনের জন্য অপেক্ষায় অসংখ্য দেশবাসী। ইতিমধ্যেই শুক্রবার প্রকাশ্যে আসে রামলালার ছবি। চোখ খোলা রামলালার বিগ্রহের ছবি ছেয়ে গিয়েছে গোটা সোশ্যাল মাধ্যমে। যদিও এনিয়ে ক্ষুব্ধ শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র। এরই মধ্যে উদ্বোধনের আগেই প্রকাশ্যে এলো রাম মন্দির নির্মাণ (Ram Mandir Construction) এর অন্দরমহলের ছবি। ফুল দিয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে রাম মন্দির। চলছে ফিনিশিং টাচ।

দুরদর্শনের তরফে এক্স হ্যান্ডেলে রাম মন্দির নির্মাণ (Ram Mandir Construction) এর অন্দরমহলের একটি ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, শ্বেতশুভ্র মার্বেলে তৈরি অযোধ্যার রাম মন্দিরের অন্দরমহলের দৃশ্য ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়েছে নেটপাড়ায়। সিঁড়ি দিয়ে ধাপে ধাপে উঠে ক্যামেরা প্রবেশ করেছে রাম মন্দিরের ভিতরে। ঝলমলে আলোয় সেজে উঠেছে অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir)। প্রতিটি পিলারে লাগানো হয়েছে আলো, ফুলের মালা। ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, মইয়ে উঠে সেই ফুলের মালাগুলি লাগাতে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকজন কর্মীকে। শ্রমিকদের শৈল্পিক কাজ, কারুকার্য এবং ভাস্কর্যের একটি ঝলক পাওয়া গিয়েছে রাম মন্দিরের এই ভিডিয়োতে।

রাম মন্দির নির্মাণ :

রাম মন্দির সাধারণ মন্দিরের মতো নয়। এই মন্দির তৈরির নেপথ্যে একাধিক ঘটনা ছাড়াও মন্দির নির্মাণেরও একাধিক চমক রয়েছে। প্রায় পৌনে তিন একর জায়গার উপরে তৈরি হয়েছে চার তলা ভবনের উচ্চতা বিশিষ্ট রাম মন্দির। মন্দিরের বিল্ট আপ এরিয়া প্রায় ৫৭ হাজার বর্গফুট। কিন্তু এই সুবিশাল নির্মাণে ব্যবহার করা হয়নি কোনও লোহা অথবা স্টিল। এমন কি, ব্যবহার করা হয়নি কোনও সিমেন্টও। রাম মন্দিরের নির্মাণ সংক্রান্ত কমিটির প্রধান নৃপেন্দ্র মিশ্র দাবি করেছেন, রাম মন্দির যে প্রযুক্তিতে তৈরি করা হচ্ছে, তাতে তা এক হাজার বছর স্থায়ী হবে। এমনকি দেশের তাবড় বিজ্ঞানীদের পরামর্শেই রাম মন্দির গড়ে তোলা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে ইসরোর প্রযুক্তিও।

উল্লেখ্য, রাম মন্দির নির্মাণের মূল দায়িত্বে রয়েছেন চন্দ্রকান্ত সোমপুরা। চন্দ্রকান্ত সোমপুরার পরিবার এই ধরনের ঐতিহ্যশালী নির্মাণের সঙ্গে প্রায় ১৫ পুরুষ ধরে যুক্ত। তিনি মন্দির নির্মাণ প্রসেঙ্গে জানিয়েছেন, উত্তর ভারতীয় মন্দিরের নগরশৈলী অনুযায়ী রাম মন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে রুরকির সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্ড ইনস্টিটিউট (সিবিআরআই)-এর ডিরেক্টর প্রদীপ কুমার রমনচারলা জানিয়েছেন, সবথেকে উৎকৃষ্ট মানের গ্র্যানাইট, মার্বেল, স্যান্ডস্টোন ব্যবহার করে রাম মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। পাথরগুলি জোড়া দিতে কোনও সিমেন্ট বা সুরকি জাতীয় জিনিস ব্যবহার করা হয়নি। তার বদলে খাঁজে খাঁজে পাথরগুলিকে বসিয়ে একটিকে অন্যটির সঙ্গে জোড়া হয়েছে৷। যেহেতু লোহার আয়ু ৮০-৯০ বছরের বেশি হয় না, সেই কারণেই মন্দিরের নির্মাণে লোহা অথবা স্টিল ব্যবহার করা হয়নি। সিবিআরআই-এর দাবি, রাম মন্দিরের চারতলা সমান উচ্চতার এই নির্মাণটি হাজার হাজার বছর পর্যন্ত ভূমিকম্পের ধাক্কা সহ্য করে নেবে।

মন্দির নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কর্তারা জানিয়েছেন, নির্মাণ কাজ শুরুর আগে মাটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, যেহেতু নির্মাণস্থলের খুব কাছ থেকে সরযূ নদী বয়ে গিয়েছে, তাই ওই জায়গার মাটি এত বড় নির্মাণের পক্ষে খুব একটা উপযুক্ত নয়। মাটিতে যেমন বালির ভাগ বেশি এবং তা ভঙ্গুর প্রকৃতির। ফলে প্রথমে ওই জায়গাটি প্রায় ১৫ মিটার খুঁড়ে পুরো মাটি তুলে ফেলা হয়। এর পর ইঞ্জিনিয়ারদের পরামর্শ মতো বিশেষ ধরনের মাটির মিশ্রণ তৈরি করে ১২ থেকে ১৪ মিটার পর্যন্ত ভরাট করা হয় কোনোরকম  স্টিলের বার ব্যবহার ছাড়াই।৪৭টি মাটির স্তর তৈরি করে পুরো ভিতটিকে পাথরের মতো মজবুত করে ফেলা হয়। মাটির এই স্তরের উপরে দেড় মিটার পুরু এম-৩৫ গ্রেডের ধাতব বিহিন কংক্রিটের আস্তরণ বসিয়ে ভিতটিকে আরও মজবুত করা হয়। এর উপরে আবার ৬.৩ মিটার পুরু দক্ষিণ ভারত থেকে আনা গ্র্যানাইট পাথরের স্ল্যাব বসানো হয়। মন্দিরের একতলায় রয়েছে ১৬০টি স্তম্ভ বা পিলার, দোতলায় ১৩২টি স্তম্ভ এবং তিন তলায় ৭৪টি স্তম্ভ। এর প্রতিটি স্তম্ভই স্যান্ডস্টোন দিয়ে তৈরি করে বাইরে থেকে খোদাই করে নকশা করা হয়েছে৷। কম্পিউটারে তৈরি প্রায় ৫০টি নকশার মধ্যে থেকে বর্তমান রাম মন্দিরের নকশাটি বেছে নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, সাধারণ মানুষ মন্দিরের যে অংশ দেখতে পাবেন, সেটি রাজস্থানের বংশি পাহাড়পুর নামে গোলাপি স্যান্ডস্টোন দিয়ে তৈরি করা।

উল্লেখ্য, রাম মন্দির উদ্বোধনের তারিখ (Ram Mandir Opening Date) অর্থাৎ ২২সে জানুয়ারি ঠিক দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা সমারোহের উৎসব শুরু হবে। ইতিমধ্যেই রাম মন্দিরের গর্ভগৃহে রামলালার মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। ৫১ ইঞ্চির মূর্তিটি রামলালার পাঁচ বছর বয়সী রূপ ফুটিয়ে তুলেছে। এই মূর্তি নির্মাণ করেছেন মাইসোরের ভাস্কর্যশিল্পী অরুণ যোগীরাজ। শুক্রবারই প্রকাশ্যে আসে মূর্তিটির ফার্স্ট লুক। নিষ্পাপ হাসি এবং প্রসন্ন মুখের সেই মূর্তি দেখে মুগ্ধ রাম ভক্তরা। রামলালার মূর্তির সঙ্গেই রয়েছে সোনার তির-ধনুক।

প্রসঙ্গত, অযোধ্যা রাম মন্দির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi) মূল অতিথি। সঙ্গে গর্ভগৃহে উপস্থিত থাকবেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। শিল্পপতি মুকেশ আম্বানি, মেগাস্টার অমিতাভ বচ্চন এবং প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেট তারকা সচিন তেন্ডুলকরের মতো অতিথিরা থাকবেন অযোধ্যার মহোৎসবে। আট হাজারেরও বেশি অতিথিকে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়াও ওইদিন সমস্ত সরকারি অফিস, দফতর, স্কুল-কলেজে অর্ধদিবস ছুটি ঘোষণা করেছে কেন্দ্র সরকার।