শলভাসন যোগের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, A detailed study about Salabhasana In bengali language
আমাদের এই সমাজ ও সভ্যতার সূচনা লগ্নের সময় থেকেই দৈহিক শক্তি লাভ করার জন্যে শরীরচর্চার সূত্রপাত ঘটেছিল। প্রাচীন দ্রাবিড় সভ্যতা এবং ব্যাবিলনীয় সভ্যতায় এই শরীরচর্চা ছিল শিক্ষার এক প্রধান ও অন্যতম অঙ্গ। সে থেকেই পরবর্তী প্রতিটি সভ্যতায় আমরা এর নিদর্শন দেখতে পেয়েছি।
শলভাসন যোগ ব্যায়ামের অভ্যাস, Practising Salabhasana yoga
প্রাচীন বিশ শতকের সময়কাল থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত পাশ্চাত্য দেশগুলিতে স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনেক উন্নত, সমৃদ্ধ এবং পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কিন্তু আজ অবধি যোগ ব্যায়ামের চেয়ে উন্নত আর কিছুই তারা আবিষ্কার করতে পারেন নি।
তাই বর্তমানেও পাশ্চাত্য দেশগুলিতে তথা সারা বিশ্বে সুস্থ থাকার জন্যে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বিপুল সংখ্যক মানুষ শরীরচর্চা বা এই যোগ ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
প্রতি বছরই যোগাসনের প্রতি আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। আজকাল নানা ধরনের রোগ, যেমন: হাঁপানি, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগসহ বিভিন্ন জটিল রোগ নিরাময়ের জন্য অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে যোগ ব্যায়ামের তালিকা থেকে বিভিন্ন আসন অভ্যাসের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ওই আসনগুলোর মধ্যে একটি হল শলভাশন। ‘শলভ্’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল পতঙ্গ। এই আসনটি করার সময় আমাদের শরীরের ভঙ্গি অনেকটা শলভ অথাৎ পঙ্গপাল জাতীয় পতঙ্গের আকৃতি ধারণ করে নেয় বলে এই আসনের নাম দেওয়া হয়েছে শলভাসন।
Read also:
শলভাসন করার নিয়ম ও পদ্ধতি ধাপে ধাপে নিম্নে উল্লেখ করা হয়েছে, How to do Salabhasana yoga step by step
শলভাসন যোগাসন করার জন্য :
● প্রথমে চিবুক মাটিতে ঠেকিয়ে উপুড় হয়ে গিয়ে শবাসনের ভঙ্গিতে শুয়ে পড়ুন।
● এবার উপুড় হয়ে মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। এরপর আপনার হাত দুটো শরীরের দুই পাশে মেঝেতে লাগিয়ে রাখুন।
● এবার হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ করে নিতে হবে এবং থুতনি মেঝেতে লাগিয়ে রেখে দিন।
● এবার শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে প্রথমে ডান পা কে সোজা রেখে দিয়ে ওপরের দিকে তুলে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন হাঁটু ভাঁজ না হয়। তখন বাম পা টি মাটিতে লাগিয়ে রেখে দিন। খেয়াল রাখতে হবে পা যেন ডান বা বাম দিকে বেঁকে না যায়। পা ভূমির সাথে ৪৫ ডিগ্রি কোণে সোজাভাবে ওপরের দিকে তুলতে হবে। এবার এই ভঙ্গিমায় ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড মত সময় অবস্থান করতে হবে।
● একই পদ্ধতি ব্যবহার করে পরের বার বাম পা উপরে তুলে দিয়ে ডান পা মাটিতে লাগিয়ে রেখে দিন।
● এইভাবে একবার ডান পা এবং অন্যবার বাম পা তুলে অভ্যাস তৈরি হয়ে গেলে, দুটো পা একসাথে একই ভাবে মেঝে হতে ৪৫° কোণ বরাবর উপরে তোলার অভ্যাস করতে হবে! তিন থেকে পাঁচ বার আসনটি করতে পারেন।
● আসনটি অভ্যাস করার সময় নিঃশাস স্বাভাবিক রাখতে হবে।
শলভাসনের কার্যকারিতা ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত , Advantages and benefits of Salabhasana yogasana
শলভাসন যোগের বিভিন্ন উপকারিতা হল:
● বর্তমানে অনেকেই কোমর ও পিঠের কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগছেন। এই আসনটি রোজ অভ্যাস করার ফলে পিঠের মাংস পেশি এবং কোমরের নিচের অংশের মাংস পেশি মজবুত হয় এবং এই পেশীগুলো পিঠকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। অর্থাৎ আসনটিতে কোমর এবং শরীরের নিম্নাংশের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে উপযোগী। যার ফলে ব্যথা, কটিবাত, মেয়েদের ঋতুকালীন সময় তলপেটে ব্যথা হওয়ার সমস্যাও কোনদিন হয় না।
● অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা তথা অম্ল বা এসিডিটির মত রোগ অতি সহজেই একের পর এক আমাদের দেহে বাসা বাঁধতে পারে, যার ফলে অনেক সময় আমাদের দেহে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। শলভাসন করতে গিয়ে তলপেটে প্রচণ্ড চাপ পড়ার কারণে ঐ অঞ্চলের অঙ্গগুলোর খুব ভালো ব্যায়াম হয়, যার ফলস্বরূপ তাদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে।
Read also :
● এই বিশেষ আসনটি দেহের প্রসারক পেশীগুলোকে সঙ্কুচিত করে এবং রক্ত প্রবাহ সঠিকভাবে হওয়ার কাজে সহায়তা করে এবং সঙ্কোচক পেশীগুলোকে পরিপূর্ণ বিশ্রাম প্রদান করে বলে আমাদের দেহে উভয় পেশীর কর্মক্ষমতাই বৃদ্ধি পায়।
● আসনটি অভ্যাস করলে কোমর হতে দেহের নিম্নাংশের সকল পেশী এবং স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় থাকে।
● আসনটি আমাদের তলপেট এবং কোমরের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেয় ও দেহকে সুগঠিত করে তোলে।
● নিত্যদিন এই আসনটি করার ফলে ফুসফুস-সংলগ্ন স্নায়ুজাল তথা ফুসফুসের বায়ু কোষগুলো পুষ্ট এবং সবল হয়, যার ফলে তাদের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটে।
● এই আসন নিয়মিত করার ফলে গেঁটেবাত তথা স্পন্ডিলোসিসের মত রোগের উপশম হয়।
● এই বিশেষ আসনটির সাথে পদহস্তাসন, শশাঙ্গাসন অথবা মেরুদণ্ড সামনের দিকে বেঁকে যায় এমন কোন আসন অভ্যাস করলে স্লীপড ডিস্ক, সেকরালাইজেন লাম্বাগো, এই জাতীয় রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।
শলভাসনের বিভিন্ন প্রকার, Different types of Salabhasana yoga
শলভাসন যোগ চর্চায় আরও কয়েকটি বৈচিত্র্যময় আসন বর্তমান। সেগুলি হল:
● পূর্ণ শলভাসন
● অর্ধ শলভাসন
● উত্থান শলভাসন
● বিপরীত শলভাসন
Read also :
শলভাসন যোগ অভ্যাস করার ক্ষেত্রে কিছু নিষেধ বা সতর্কতা, Precautions before doing Salabhasana
শলভাসন অবস্থায় থাকাকালীন আমাদের হৃৎপিণ্ডে ও ফুসফুসে প্রচণ্ড চাপ পড়ে, তাই যাদের হৃদরোগ জনিত সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এ আসন করা উচিত হবে না, এবং সুস্থ হওয়ার পরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শরীর চর্চা করা উচিত।
- কোনো ব্যক্তির যদি হার্নিয়ার সমস্যা থাকে তবে এই আসনটি অভ্যাস না করাই উচিত হবে।
উপসংহার, Conclusion
বাত বা সায়টিকার সমস্যার জন্য এই আসনটি আশ্চর্য এক প্রতিষেধক। আমাদের তলপেটের খাদ্যগ্রহণী নাড়ি, মূলনাড়ি ইত্যাদি কতগুলো যন্ত্র প্রয়োজন অনুসারে আভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি করতে অক্ষম হলে অন্ত্রে অর্ধজীর্ণ খাদ্য এবং মল-নাড়িতে মল জমে থাকতে শুরু করে দেয়।
ঐসব অর্ধজীর্ণ খাবারগুলো এবং মল পচে গিয়ে দেহে বিষ সৃষ্টি করে যা রক্তের সাথে মিশে গিয়ে দেহের সকল দেহ-যন্ত্রকেই বিকল করে দিতে পারে। এরূপ সমস্যা থেকে রেহাই পেতে আজই শলভাসন যোগ অভ্যাস শুরু করতে দিন। আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলি সুস্থ ও গতিশীল রাখতে না পারলে দেহের পেশিগুলোর শক্তি একটা সময় পর বিপর্যস্ত হতে শুরু করে। তাই শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে ব্যায়াম জরুরি।