ত্বকের ফেসিয়াল করুন কিছু বিশেষ পদ্ধতিতে, Best type of facials for glowing skin in bengali
সুন্দর হতে সকলের ভালো লাগে। আজকাল মেয়েদের সাথে সাথে ছেলেরাও সৌন্দর্য নিয়ে সচেতন হয়েছে। নিয়মিত ফেসিয়াল আমাদের ত্বক কে সুস্থ করে তোলে এবং সৌন্দর্য ও ধরে রাখে
ফেসিয়াল কেনো জরুরি, Need for a facial
নিত্যদিনের অতিরিক্ত কাজের চাপ, নানা বিষয় নিয়ে চিন্তা ভাবনা, কোনোও মানসিক উৎকণ্ঠা এবং রাতের বেলা ঠিকমতো ঘুম না হওয়া; এই বিষয়গুলি আমাদের শরীরের সাথে সাথে ত্বকের উপরেও সমানভাবে প্রভাব ফেলে।
এমন পরিস্থিতিতে ফেসিয়াল অথবা ফেস ম্যাসাজের ফলে আমাদের ত্বকের অভ্যন্তরীণ রক্ত চলাচল সচল হয় এবং মৃত কোষ গুলি পরিষ্কার হয়ে যায়। তাছাড়া ত্বকে অক্সিজেনের আদানপ্রদানও সঠিক মতো হয়। ফেসিয়াল যে শুধুমাত্র আমাদের ত্বককে টানটান করে তাই নয়, বর্ণকেও উজ্জ্বল করে তোলে।
Read also :
রূপচর্চায় ফেসিয়াল, Facial in Beauty treatment
স্বাভাবিক রূপচর্চা হোক কিংবা অনুষ্ঠান বাড়ির সাজসজ্জা, ত্বকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করা হয়েই থাকে, পাশাপাশি যেটা করা বাঞ্ছনীয় সেটা হল ফেসিয়াল। সাধারণত বেশিরভাগ মহিলারা মাসে একবার হলেও পার্লারে ফেসিয়াল করাতে যান।
তবে কিছু কিছু মহিলা বাড়িতে বসেই ঘরোয়া পদ্ধতিতে ফেসিয়াল করতে পছন্দ করেন। সেলুনে গেলে অনেক রকমের ফেসিয়ালের পণ্যের লম্বা তালিকা আমাদের হাতে ধরিয়ে দেয়, তবে এইসব ফেসিয়াল পণ্যগুলো কতটা কার্যকর তথা সেগুলো ব্যবহার করাটা ত্বকের পক্ষে নিরাপদ কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। তাছাড়া পার্লারে গিয়ে ফেসিয়াল করার মত সময় সকলের কাছে থাকে না, আর পার্লারে আপনার ত্বকে কি কি উপকরণ দিয়ে ফেসিয়াল করা হচ্ছে তা আপনি জানতেও পারেন না। আমাদের বাড়িতেই এমন অনেক জিনিস রয়েছে যার মাধ্যমে ফেসিয়াল করা যেতে পারে।
এইসব প্রাকৃতিক উপাদানগুলো ত্বক সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকরী, কারণ এইসব ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদানগুলি ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ করে রাখে। যেমন - কাঁচা দুধ, যা মুখে লাগালে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়।
ঘরে বসে ফেসিয়াল করার পদ্ধতি, How to do facial at home
মুখ পরিষ্কার বা ক্লেনজিং, Cleansing is the first step
ফেসিয়াল করার প্রথম ধাপ হল মুখ পরিষ্কার করে নেওয়া। সেক্ষেত্রে নিজের ত্বকের ধরনের সাথে মানানসই ক্লেনজার বেছে নিতে হবে। মুখে হালকা গরম জলের ঝাপটা দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে তারপর ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নিন।
Read also :
প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে মুখ পরিষ্কার করার জন্য বেছে নিতে পারেন মধু। মধুর আর্দ্রতা আমাদের ত্বক কে কোমল ও নরম রাখবে। ভেজা মুখে কয়েক ফোঁটা মধু লাগিয়ে নিয়ে এক মিনিট ধরে মাসাজ করে মুখ ধুয়ে ফেলুন। সব রকম ত্বকের পক্ষেই এই উপাদানটি বিশেষ উপযোগী।
এক্সফোলিয়েট করুন , Exfoliate your skin
ক্লেনজিং করার পর ত্বক থেকে মৃত কোষগুলো তুলে ফেলার পালা। স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে এক চা-চামচ ওটমিল গুঁড়ো করে নিয়ে তার সাথে এক চা-চামচ মধু আর একই মাপে অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করে নিন।
আপনার যদি শুষ্ক ত্বক হয় তবে মধু ও অলিভ অয়েলের সঙ্গে এক চা-চামচ চিনি মেশান। আর তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে মধু ও চিনির সঙ্গে এক চামচ জল মিশিয়ে নিতে হবে! মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কোমলভাবে আঙ্গুল দিয়ে মালিশ করে যাবতীয় মৃত কোষ তুলে নিন। তবে ভুলেও কড়া হাতে ঘষবেন না, তাতে ত্বকের স্তর ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।
স্টিম নিতে হবে, Intake of steam
চওড়া একটি পাত্রে কিছুটা জল ফুটিয়ে নিতে হবে। তারপর মাথায় উপরদিক থেকে একটা তোয়ালে চাপা দিয়ে গরম জলের পাত্রটার উপর ঝুঁকে পড়ুন, এতে ভাপটা ঠিকভাবে মুখে লাগবে। পাঁচ থেকে সাত মিনিট এইভাবে ভাপ নিতে হবে। ইচ্ছে হলে এই জলে পছন্দ অনুযায়ী এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিতে পারেন, এতে ত্বক একটু বাড়তি সতেজতা পাবে।
Read also :
ফেস মাস্ক তৈরি করতে হবে, Prepare face mask
ফেসমাস্কের মূল কাজ হল আমাদের ত্বকে পুষ্টি জোগানো। স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে মধু ও টক দইয়ের প্যাক, শুষ্ক ত্বকের জন্য আধখানা চটকানো পাকা কলা আর মধুর মিশ্রণ, তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে মুলতানি মাটির সাথে মধু মিশিয়ে তৈরি প্যাক দারুণ ভালো ফল দেবে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী মিশ্রণটি সমানভাবে সারা মুখে লাগিয়ে নিয়ে আধঘণ্টা চোখ বন্ধ করে চুপচাপ শুয়ে থাকুন। চোখের উপর শসা কেটে চাপা দিয়ে রাখতে পারেন, তা না হলে গোলাপ জলে অল্প তুলো ভিজিয়ে চোখে চেপে রাখুন। এতে ত্বক এবং চোখ দুইই স্নিগ্ধ থাকবে। আধঘণ্টা পর ঠান্ডা জল দিয়ে মাস্কটা ধুয়ে তুলে নিন।
টোনারের ব্যবহার, Usage of toner
অন্য পদ্ধতির মাধ্যমে ত্বকের খুলে যাওয়া রোম-ছিদ্র বন্ধ করার জন্য দরকার হয় টোনারের। আধ চা-চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনিগার নিয়ে তার সঙ্গে এক চা-চামচ জল মিশিয়ে তার মধ্যে তুলো ভিজিয়ে মুখটা মুছে নিতে হবে। এই অ্যাপল সাইডার ভিনিগার আমাদের ত্বকের পিএইচ ব্যালান্সকে অটুট রাখবে। এছাড়া শসার রসও খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে, এটি আমাদের ত্বককে স্নিগ্ধও রাখে। সুতরাং অ্যাপল সাইডার ভিনিগার অথবা শসার রস ছাড়াও ঠান্ডা বরফের জলেও মুখ ধুয়ে নিতে পারেন, কিন্তু সে থেকে বাড়তি উপকার পাবার সম্ভাবনা থাকেনা।
ত্বকে ময়শ্চারাইজার লাগাতে হবে, Moisturize your skin
পার্লার হোক বা ঘরোয়া, এটি ফেসিয়ালের শেষ ধাপ। নিজের ত্বকের সাথে মানানসই ময়শ্চারাইজিং প্রোডাক্ট অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন, এই ধাপে সেই প্রোডাক্টও মাখতে পারেন, কিন্তু যদি ঘরোয়া ময়শ্চারাইজার মাখতে ইচ্ছে হয় তবে স্বাভাবিক ত্বকের ক্ষেত্রে আধ চা-চামচ আমন্ড অয়েল বা অলিভ অয়েল মেখে নিতে পারেন। যদি শুষ্ক ত্বক হয় তবে নারকেল তেল বা আর্গান অয়েল মাখুন, তবে যাদের তেলতেলে ত্বক তাদের ক্ষেত্রে জোজোবা অয়েল অথবা এক চা-চামচ অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে!
উপসংহার, Conclusion
ফেসিয়াল করার পরেও ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
ফেসিয়াল করলে যেহেতু ত্বকের ময়লা দূর হয়ে যায় এবং মালিশের কারণে রক্তসঞ্চালনও সঠিকভাবে হয় সেজন্যই মুখে ঔজ্জ্বল্য পরিলক্ষিত হয়। তবে এই তরতাজা ভাব ও জেল্লা বেশি দিন ধরে রাখতে হলে ত্বকের যত্নও সেইভাবে নিতে হবে।
Read also :
বিশেষ করে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি, না হলে ত্বক ভিতর দিক থেকে শুষ্ক হয়ে উঠতে পারে এবং অনেক কম বয়সেই মুখে বলিরেখা বা ফাইন লাইন এসে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে, ত্বক তৈলাক্ত হলে ওয়াটার বেসড ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া সুষম আহার গ্রহণ করুন এবং সারাদিনে প্রচুর পরিমাণ জল পান করুন, এতে শরীরের টক্সিন বেরিয়ে গিয়ে ত্বকে এক আলাদা রকম জেল্লা দেখা যায়।
- Related topics -
- রূপচর্চা
- ফেশিয়াল
- লাইফস্টাইল