Guillain-Barré Syndrome | আতঙ্ক বাড়াচ্ছে গুলেন বেরি সিনড্রোম! রোগ থেকে হতে পারে প্যারালাইসিস, মৃত্যুও! পেরুতে জারি ইমার্জেন্সি!

Thursday, July 13 2023, 7:52 am
highlightKey Highlights

পেরুতে বিরল অটোইমিউন ডিসঅর্ডার 'গুলেন বেরি সিনড্রোমে'র আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ৯০ দিনের জন্য জারি জরুরি অবস্থা। কোভিডের পর ভারতেও বাড়ছে সংক্রমণ। এখনও অজানা রোগের কারণ ও চিকিৎসা।


কোভিড-১৯ (Covid-19) থেকে শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় ভুগতে শুরু করেন অসংখ্য মানুষ। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের মনে হয়েছিল সাধারণ ঠান্ডা লাগার মতো এই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও নিরাময় হয়ে যাবে। তবে সেরকম না হয়ে বরং দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে এই অসুখ। এবার সম্ভবত মারণ রোগ কোভিডের কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে আরেক রোগ, 'গুলেন বেরি সিনড্রোম’ ( Guillain-Barré Syndrome)। আর এই ভয়ঙ্কর স্নায়ু রোগে নাজেহাল পেরু (Peru)। হঠাৎই বৃদ্ধি পেয়েছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এমনকি পরিস্থিতি এমনই হয়ে উঠেছে যে দেশে জারি করতে হয়েছে জরুরি অবস্থা বা ইমার্জেন্সিও (Emergency)। 

 সম্ভবত কোভিডের কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে আরেক রোগ, 'গুলেন বেরি সিনড্রোম’ 
 সম্ভবত কোভিডের কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে আরেক রোগ, 'গুলেন বেরি সিনড্রোম’ 

২০২৩ সালে গুলেন বেরি সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৮২ জন। কেবল ২৩ সে জুন পর্যন্তই আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১০৩ জন। জানা গিয়েছে, ১৪৭ জন চিকিৎসার পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এখনও ৩১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই রোগে চার জনের মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। পেরুর এই পরিস্থিতি নিয়ে সেই দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী (Health Minister César Vásquez) জানিয়েছেন, এভাবে এই রোগের আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ হলো শরীরে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার অর্থাৎ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই। ক্রমশ দেশে  গুলেন বেরি সিনড্রোম সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য পেরুতে প্রায় ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

Trending Updates
গুলেন বেরি সিনড্রোম সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য পেরুতে প্রায় ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি
গুলেন বেরি সিনড্রোম সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য পেরুতে প্রায় ৯০ দিনের জন্য জরুরি অবস্থা জারি

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোম কী? । What is Gulen-Barry Syndrome? :

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোম একটি বিরল অটোইমিউন ডিসঅর্ডার (Autoimmune Disorder)। এই সংক্রমণ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আক্রমণ করে স্নায়ুর ওপর প্রভাব ফেলে। ফলে এই সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়েন এবং পেশীতে অসাড়তা দেখা দিতে শুরু করে। যেহেতু এই রোগ স্নায়ুতে আক্রমণ করে, ফলে বহু ক্ষেত্রে এই রোগের ফলে মস্তিষ্কে বা স্পাইনাল কর্ডে (Spinal Cord) বা হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতাও কমিয়ে দেয়।

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোম একটি বিরল অটোইমিউন ডিসঅর্ডার 
গুলেন-ব্যারি সিনড্রোম একটি বিরল অটোইমিউন ডিসঅর্ডার 

 সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (Centers for Disease Control and Prevention) অনুসারে, জিবিএস (GBS) একটি বিরল রোগ যা পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের (Peripheral Nervous System) অংশকে আক্রমণ করে। এই স্নায়ুতন্ত্রের স্নায়ু মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডকে শরীরের বাকি অংশের সাথে সংযুক্ত করে। ফলে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার প্রচন্ড অবনতি ঘটলে প্যারালাইসিসের (Paralysis) মত ঘটনাও ঘটতে পারে। ঘনিয়ে আসতে পারে মৃত্যুও। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে (United States) প্রায় ৩ থেকে ৬ হাজার মানুষ এই রোগে ভোগেন।

জিবিএস  একটি বিরল রোগ যা পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশকে আক্রমণ করে
জিবিএস  একটি বিরল রোগ যা পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রের অংশকে আক্রমণ করে

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমের কারণ কী? । What Causes Gulen-Barry Syndrome?

এখনও পর্যন্ত এ রোগের কারণ অজানা। তবে এটা একটা স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া। ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে যে করোনাভাইরাসের কারণে স্নায়ুতন্ত্রের উপর প্রভাব পড়ে। হতে পারেফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস (Facial Nerve Paralysis)। ফলে গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের অনুমান, কোভিড-১৯ এর স্নায়বিক প্রভাবই দায়ী এই রোগের জন্য। কোভিড ছাড়াও যে সব কারণে এই রোগ হতে পারে তা কিছুটা নিম্নরূপ।

 এ রোগের কারণ এখনও  অজানা
 এ রোগের কারণ এখনও  অজানা

ডায়রিয়া বা শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা । Diarrhoea or Respiratory Illness :

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমে আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে ২ জনের শরীরে এই সিনড্রোমের লক্ষণ বিকাশের কয়েক সপ্তাহ আগে তাদের  ডায়রিয়া বা শ্বাসযন্ত্রের অসুস্থতা ছিল।

ভাইরাল সংক্রমণ । Viral Infection :

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগে তারা ফ্লু বা সাইটোমেগালোভাইরাস (Cytomegalovirus), এপস্টাইন বার ভাইরাস (Epstein-Barr Virus), জিকা ভাইরাস (Zika Virus) বা অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণে সংক্রমিত ছিল।

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগে ভাইরাসের সংক্রমণে সংক্রমিত ছিল
গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগে ভাইরাসের সংক্রমণে সংক্রমিত ছিল

 টিকাকরণ । Vaccination :

কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, টিকাকরণের কয়েক দিন বা সপ্তাহ পরেই ব্যক্তি জিবিএস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সাধারণত ফ্লু-র টিকার ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা দেখা গিয়েছে।

টিকাকরণের কয়েক দিন বা সপ্তাহ পরেই ব্যক্তি জিবিএস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন
টিকাকরণের কয়েক দিন বা সপ্তাহ পরেই ব্যক্তি জিবিএস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমের লক্ষণগুলি কী? । What are the Symptoms of Gulen-Barry Syndrome?

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমের লক্ষণগুলি সাধারণত কয়েক সপ্তাহ ধরে বজায় থাকে এবং সমস্যাটি গুরুতর হলে আক্রান্তের প্যারালাইসিস হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) বা হু (WHO) এর তথ্য অনুযায়ী গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমের লক্ষণগুলি নিম্নরূপ।

  • কবজিতে ঝিনঝিন ভাব বা ঝিঁঝিঁর সংবেদন যা পায়ে শুরু হয় এবং বাহু ও মুখে ছড়িয়ে পড়ে।
  • হাত ও পায়ে দুর্বলতা। শুরুতেই পায়ের আঙুল, গোড়ালি, এবং হাতের আঙুল ও কব্জিতে অসাড়তা কাজ করে।
  • হাঁটা চলায় ব্যালেন্সার অভাব, সিঁড়ি চড়তে অসুবিধে। শুরু হয় দুর্বলতা, বিশেষ করে পা দগুর্বল হয়ে হাঁটার ক্ষমতা হারিয়ে যেতে পারে।
  • কথা বলা, চিবানো, গেলায় সমস্যা। যদি সংক্রমণ গুরুতর হয়ে যায়, তখন আক্রান্তের কথা বলা এবং গিলতে অসুবিধা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসা করা আবশ্যক।
  • গা , হাত, পায়ে ব্যথা রাতের দিকে বাড়া।
  • ডাবল ভিশন অর্থাৎ যে কোনও বস্তু দুটি দুটি করে দেখা।
  • প্রকৃতির ডাক সামলাতে অসুবিধে হওয়া।
  • বুক ধড়ফড় করে, অর্ন্তঘাত হৃৎস্পন্দনের গতি বেড়ে যাওয়া।
  • লো ব্লাড প্রেসার অর্থাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া।
  • শ্বাস নিতে অসুবিধে।
  • আক্রান্ত হওয়ার পর ২ সপ্তাহে শারীরিক অবস্থার অবনতি।
কবজিতে ঝিনঝিন ভাব বা ঝিঁঝিঁর সংবেদন যা পায়ে শুরু হয় এবং বাহু ও মুখে ছড়িয়ে পড়ে
কবজিতে ঝিনঝিন ভাব বা ঝিঁঝিঁর সংবেদন যা পায়ে শুরু হয় এবং বাহু ও মুখে ছড়িয়ে পড়ে

গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমের চিকিৎসা । Treatment of Gulen-Barry Syndrome :

এই সিন্ড্রোমের কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে প্লাজমা এক্সচেঞ্জ (Plasma Exchange) এবং ইমিউনোগ্লোবিন থেরাপির (Immunoglobulin Therapy) মাধ্যমে এই সিন্ড্রোমের মোকাবিলা করা সম্ভব। অসুস্থতার তীব্রতা কমাতে রয়েছে কিছু ওষুধও। ফলে গুলেন-ব্যারি সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। দেখে নিন 'হু' অনুযায়ী এই রোগে আক্রান্ত হলে কী করা উচিত।

ইমিউনোগ্লোবিন থেরাপির  মাধ্যমে এই সিন্ড্রোমের মোকাবিলা করা সম্ভব
ইমিউনোগ্লোবিন থেরাপির  মাধ্যমে এই সিন্ড্রোমের মোকাবিলা করা সম্ভব
  • এই রোগে ভুগছেন এমন রোগীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত।
  •  এই সিন্ড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সহায়ক যত্ন, তাদের হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ নিরীক্ষণ করা উচিত।
  •  শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীদের ভেন্টিলেটরে রাখতে হবে।
  •  অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন, সংক্রমণ, রক্ত জমাট বাঁধা এবং উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপের মতো জটিলতার জন্য অসুস্থদের পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
প্লাজমা এক্সচেঞ্জ  দ্বারা এই সিন্ড্রোমের মোকাবিলা করা সম্ভব
প্লাজমা এক্সচেঞ্জ  দ্বারা এই সিন্ড্রোমের মোকাবিলা করা সম্ভব

 ইমিউনোথেরাপি হল জিবিএস-এর জন্য উপলব্ধ সবচেয়ে সহজ চিকিৎসা ব্যবস্থা। কারণ ইমিউনোথেরাপি ইমিউন সিস্টেমকে দমন করতে সাহায্য করে এবং স্নায়ুকে আরও ক্ষতি করতে বাধা দেয়। উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে রোগীদের প্লাজমা (Plasma) বিনিময়ের মাধ্যমে চিকিৎসা করা উচিত।

ভারতেও  এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আগের থেকে বাড়ছে
ভারতেও  এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আগের থেকে বাড়ছে

প্রসঙ্গত, কেবল পেরু বা বিদেশেই নয়, ভারতেও (India) এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আগের থেকে বাড়ছে। ভারতের শুধু মুম্বই (Mumbai) শহরেই এখনও অবধি ২৪ জন কোভিড রোগীর ক্ষেত্রে এই সিন্ড্রোম দেখা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই ডাক্তার এলএইচ হিরানন্দনী হাসপাতালের (Dr LH Hiranandani Hospital) স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা কোভিড রোগীদের মধ্যে এই সিন্ড্রোমের বিকাশের কারণ বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করছেন। তবে যেহেতু এখনও এই রোগের উৎস এবং চিকিৎসা সম্পর্কে জানা যায়নি, ফলে এই রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File