লাইফস্টাইল

World Lung Cancer Day | দীর্ঘস্থায়ী কাশি, বুকে ব্যথা? হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার!

World Lung Cancer Day | দীর্ঘস্থায়ী কাশি, বুকে ব্যথা? হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার!
Key Highlights

ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তের মধ্যে ৮০ শতাংশ ব্যক্তিই ধূমপায়ী। ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে মানতে হবে বেশ কিছু নিয়ম। জানুন এই ক্যান্সার প্রতিরোধ করবেন কীভাবে?

ক্যান্সার ভিন্ন প্রকারের হয়, তবে যে প্রকারেরই হোক না কেন সব ক্যান্সারই শরীরের জন্য প্রচন্ড ক্ষতিকর এবং মৃত্যু ডেকে আনতে সক্ষম। ফলে প্রত্যেকদিনই আমাদের সকলকে এই মারণ রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। তবে আজকের দিনটা অর্থাৎ ১লা অগাস্ট বিশেষভাবে ফুসফুসের ক্যান্সার সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতন বার্তা সম্প্রচার করা হয়। কারণ আজ  'বিশ্ব ফুসফুস ক্যান্সার দিবস' (World Lung Cancer Day)। 

ফুসফুসের ক্যান্সার মারাত্মক ক্যান্সার হিসাবে স্বীকৃত। এই ধরণের ক্যান্সার তখন হয় যখন ফুসফুসে কোষগুলি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। মূলত যারা ধূমপান করেন তাদের ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। তবে যারা ধূমপান করেন না তাদের ক্ষেত্রেও ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

জাতীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের (National Cancer Institute) মতে, সব প্রকারের ক্যান্সারের মধ্যে বেশিরভাগ মৃত্যু হয়  ফুসফুস এবং ব্রঙ্কাস ক্যান্সারের (Bronchus Cancer) ক্ষেত্রে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ১,০৩,৩৭১টি ফুসফুস আক্রান্তের ঘটনা দাখিল হয়, যার মধ্যে মহিলা পুরুষ উভয়ই অন্তর্ভুক্ত। ফলে প্রত্যেক বছর ১লা অগাস্ট বিশ্বব্যাপী ফুসফুস ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য বিশ্ব ফুসফুস দিবস পালন করা হয়।

বিশ্ব ফুসফুস দিবসের ইতিহাস ও তাৎপর্য । History and Significance of World Lung Day :

মূলত ২০১২ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অফ লাং ক্যান্সার (International Association for the Study of Lung Cancer) এবং আমেরিকান কলেজ অফ চেস্ট ফিজিশিয়ানদের (American College of Chest Physicians) সহযোগিতায় ফোরাম অফ ইন্টারন্যাশনাল রেসপিরেটরি সোসাইটিজ (Forum of International Respiratory Societies) বিশ্ব ফুসফুস দিবসের প্রচারণার আয়োজন করে। যদিও এর আগের থেকেই ফুসফুস ক্যান্সার নিয়ে জনসমাজকে সতর্ক বার্তা দেওয়ার কাজ শুরু হয়।

একটি তথ্য অনুযায়ী, ভারতে (India) ২০২২ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ১.৪৬ মিলিয়ন থেকে ১.৫৭ মিলিয়ন পর্যন্ত ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও যারা ধূমপান করে থাকেন তাদেরই ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার বেশি সম্ভাবনা থাকে। গবেষণা অনুযায়ী, ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্তদের মধ্যে ৮০ শতাংশেরও বেশি ব্যক্তি ঘন ঘন ধূমপান করে থাকেন। তবে অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত, কেবল যারা ধূমপান করেন তাদের ছাড়াও বাকি আর পাঁচটা সাধারন মানুষেরও এই প্রকার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে সমাজের সকলকেই এই ক্যান্সার সম্পৰ্কে  সচেতন থাকার বার্তা দেওয়া হয়ে থাকে।

ফুসফুস ক্যান্সারের লক্ষণ । Symptoms of Lung Cancer

এই মারণ রোগের লক্ষণগুলি খুব সাধারণ, তবে দীর্ঘস্থায়ী। ফলে অনেকেই এই রোগের লক্ষণগুলিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। তবে সাধারণ থেকেই ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে ফুসফুসের ক্যান্সারের লক্ষণ। ফলে এই প্রকার ক্যান্সারের লক্ষণগুলি দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

১. ক্রমাগত কাশি । Constant Cough :

ফুসফুসের ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হল দীর্ঘস্থায়ী কাশি। এটি বেশ কয়েক সপ্তাহ এমনকি মাস স্থায়ী হতে পারে। প্রথমে হালকা কাশি হলেও সময়ের সঙ্গে এটি আরও খারাপ পর্যায়ে যেতে পারে। অনেক সময়ে কাশির লালে রক্তাক্ত আভা থাকতে পারে। যদি কাশি দীর্ঘস্থায়ী থাকে এবং সেটি না কমে আরও খারাপ পর্যায়ে যায় তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২. শ্বাসকষ্ট । Shortness of Breath :

 ফুসফুসের ক্যান্সারের আরেকটি বড় লক্ষণ হলো শ্বাসকষ্ট। টিউমারের বৃদ্ধি বা বিস্তারের ফলে এই শ্বাসকষ্ট হতে পারে, যা শ্বাসনালীকে সীমাবদ্ধ করতে বা শ্বাসনালীকে সংকুচিত করতে পারে। তবে শাসকষ্ট নানান কারণে হতে পারে। তবে ফুসফুসের ক্যান্সারের জন্য হওয়া শাসকষ্ট দীর্ঘস্থায়ী হয়।

৩. বুকে ব্যথা । Chest Pain :

বুকে ব্যথা হলো ফুসফুসের ক্যান্সারের আরেকটি লক্ষণ। এক্ষেত্রে একটি নিস্তেজ, ব্যথা সংবেদন বা হঠাৎ ছুরিকাঘাতের মতো ব্যথা বুকে অনুভব হতে পারে। কেবল বুকেই নয়, বাহু, কাঁধেও এরকম ব্যথা অনুভূত হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে এই ব্যথা শ্বাসনালী ক্যান্সার, স্নায়ুতে টিউমার, ফুসফুসের আস্তরণের জড়িত হওয়া বা মেটাস্ট্যাটিক (Metastatic) ক্ষতির কারণ হতে পারে।

৪. ওজন হ্রাস । Weight Loss :

অনেক ক্ষেত্রে ফুসফুসের ক্যান্সার হলে উল্লেখযোগ্যভাবে ওজন হ্রাস হয়। এই প্রকার ক্যান্সারে শরীরের ওজনের ১০ শতাংশের বেশি ওজন হ্রাস হয়ে থাকে। পাশাপাশি খাবারের প্রতি অনীহা, খিদে কম পাওয়ার মতোও লক্ষণ দেখা যায়।অপ্রত্যাশিতভাবে ওজন কমতে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

ফুসফুসের ক্যান্সার হলে প্রার্থমিক লক্ষণ হিসেবে প্রায়শই ক্লান্তি, দুর্বলতা অনুভব হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায় ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি সর্বদা অত্যন্ত ক্লান্ত বোধ করছেন। এছাড়াও ফুসফুসের ক্যান্সার হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় যার ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি প্রায়ই নানান সংক্রমণে আক্রান্ত হন।

ফুসফুসের ক্যান্সারের কারণ । Causes of Lung Cancer :

ফুসফুসের কোষগুলি অনিয়ন্ত্রিত ভাবে বেড়ে গিয়ে টিউমার তৈরি করলে সেটিকে ক্যান্সার বলা হয়। গবেষণায় জানা গিয়েছে, ফুসফুস ক্যান্সারের অধিকাংশ কারণই হয় ধূমপান। সিগারেট, বিড়ির ধোঁয়া ফুসফুসের প্রচন্ড ক্ষতি করে। প্রাথমিক পর্যায়ে ধূমপানের ক্ষতিকর প্রভাব ফুসফুস নিজের থেকেই ঠিক করে নিতে পারে। কিন্তু লাগাতার ধূমপান করলে তা ফুসফুসের পক্ষে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। এর ফলে ফুসফুসের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়  এবং অস্বাভাবিক ব্যবহার করতে শুরু করে, যার ফলে ফুসফুসে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

তবে ধূমপান না করলেও বেশ কিছু পদার্থের কারণ যে কোনো ব্যক্তির ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে। দীর্ঘকাল ধরে এই বিপজ্জনক পদার্থের মধ্যে শ্বাস নিলে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে। যেমন অ্যাসবেস্টসে (Asbestos) সংস্পর্শে থাকলে মেসোথেলিয়োমা (Mesothelioma) নামক ফুসফুসের ক্যান্সারের সম্ভাবনা থেকে যায়। এ ছাড়াও ফুসফুস ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে আর্সেনিক (Arsenic), ক্যাডমিয়ম (Cadmium), ক্রোমিয়ম (Chromium), নিকল (Nickel), পেট্রোলিয়ম পদার্থ (Petroleum Substances), ইউরেনিয়াম (Uranium) ইত্যাদির সংস্পর্শে থাকলে।

ফুসফুসের ক্যান্সার রোধের উপায় । Ways to Prevent Lung Cancer :

বর্তমানে ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধের জন্য নানান উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও সব ক্ষেত্রে কিছু এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ফলে নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে নিজেকেই। ফুসফুসের ক্যান্সার রোধের জন্য মানতে হবে বেশ কিছু নিয়ম।

  • ১. ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার মূল কারণ কিন্তু ধূমপান। ফলে এই মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগের থেকেই সচেতন হতে হবে। যদিও আপনি ধূমপান করে থাকেন তাহলে দ্রুত তা ছাড়তে হবে। ধূমপান করলে যেমন সুস্থ্য থাকবেন তেমনই ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও কমবে।
  • ২. যারা ধূমপান করেন না কিছু ধূমপান করেন এমন ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকেন তাহলে সেক্ষেত্রেও ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কারণ আপনি ধূমপান না করলেও আপনার সামনে কেউ ধূমপান করলে সেই ধোঁয়া আপনারও শরীরে প্রবেশ করে।
  • ৩.  কার্সিনোজেনিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।
  • ৪. সুষ্ঠু খাদ্যাভাস খুব প্রয়োজন সুস্থ্য থাকার জন্য। এক্ষেত্রে ফল ও সবজি বেশি করে খেতে হবে। বিশেষত ভিটামিন-সহ খাবার খেতে হবে।
  • ৫. সুস্থ্য থাকতে এবং ক্যান্সার-সহ অন্যান্য রোগ থেকে দূরে থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চা অত্যন্ত প্রয়োজন। দৈনন্দিন কয়েক মিনিট হাঁটলে এবং শরীর ফিট রাখলে একাধিক রোগ দূরে থাকবে।

বহু ক্ষেত্রে অনেকে ভালো খাদ্যাভাস রাখলেও ধূমপান করেন বা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে এমন পদার্থের সংস্পর্শে থাকেন। এতে ব্যক্তির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নয় বরং অবনতিই ঘটে। ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে দূরে থাকতে হলে যেমন ধূমপানও ছাড়তে হবে তেমনই ঠিক রাখতে হবে খাদ্যাভাস। এছাড়াও ক্যান্সারের লক্ষণ ধরা পড়লে এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া খুব দরকার।