World Environment Day | আজ পালিত হচ্ছে ৫০তম বিশ্ব পরিবেশ দিবস, জানুন এদিনের ইতিহাস-তাৎপর্য!
প্রতি বছর ৫ই জুন পালন করা হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। ২০২৩ সালের এই দিবসের প্রতিপাদ্য, প্লাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
আজ অর্থাৎ ৫ই জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস (World Environment Day)। পরিবেশের (Environment) ক্ষয়ক্ষতি ও কী ভাবে তা সংরক্ষণ করা সম্ভব, কী ভাবে পরিবেশকে রক্ষা করা যাবে, কীভাবে প্রাকৃতিক সম্পদগুলি সঞ্চয় করা যাবে, কীভাবে বর্তমান আধুনিক প্রযুক্তির ক্ষয়ক্ষতি থেকে পরিবেশকে রক্ষা কর যাবে, এই সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই এবং সমাজে বার্তা দিতে প্রতি বছর এই দিনটিতে পালন করা হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ইতিহাস | History of World Environment Day :
১৯৭২ সালে জাতিসঙ্ঘের তরফে সুইডেনের (Sweden) রাজধানী স্টকহোমে (Stockholm) একটি বড় বৈঠক আয়োজিত হয় যা, 'স্টকহোম কনফারেন্স অন হিউম্যান এনভায়রনমেন্ট' ('Stockholm Conference on Human Environment) নাম পরিচিত। এই বৈঠকটি ৫ থেকে ১৬ জুন, মোট ১২ দিন ধরে চলেছিল। সেখানে পরিবেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু আলোচনা করার পরই ৫ জুন দিনটিকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালন করার জন্য বেছে নেওয়া হয়।
৫ই জুনকে বিশেষভাবে পরিবেশ দিবস হিসেবে পালন করার জন্য বেছে নেওয়া হয় কারণ, ১৮ শতকের গোড়া থেকে একের পর এক বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের মধ্যে দিয়ে শিল্প বিপ্লব (Industrial Revolution) শুরু হয়। এরপর থেকেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে পরিবেশ দূষণ বেড়ে চলেছিল। ১৭৬০ সাল থেকে ১৯৭২ সালের মধ্যে কেটে গিয়েছে দুই শতাব্দী। এই দীর্ঘ সময়ে অনেকটাই ক্ষতি হয়েছিল পরিবেশের। তাই পরিবেশ সম্পর্কে মানুষের সচেতনতা বাড়াতেই আন্তর্জাতিক বৈঠক ডেকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসঙ্ঘ।
১৯৭৩ সালে প্রথম বার উদযাপন করা হয় 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস।' সেইবার এই দিবসের স্লোগান ছিল, 'ওনলি ওয়ান আর্থ' (Only One Earth)। স্টকহোম কনফারেন্স থেকে 'ইউনাইটেড নেশনস এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম' (United Nations Environment Program) বা ইউনেপ (UNEP) নামে একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চও তৈরি করা হয়। এই মঞ্চে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে অংশগ্রহণ করে ১৪৩টিরও বেশি দেশ।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস ২০২৩ এর থিম | Theme of World Environment Day 2023 :
প্রতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবস ভিন্ন ভিন্ন প্রতিপাদ্য বা থিমকে ঘিরে পালন করা হয়। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম, প্লাস্টিক-দূষণ মোকাবিলার পথ সন্ধান করা। তাই এই বছরের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের ক্যাম্পেনের নামকরণ হয়েছে, 'বিট প্ল্যাস্টিক পলিউশন' ('BeatPlasticPollution')।
রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব অনুযায়ী, গোটা বিশ্বে গড়ে ৪০ কোটি টনেরও বেশি প্লাস্টিক তৈরি হয়। কিন্তু তার মধ্যে মোটে ১০ শতাংশই পুনর্ব্যবহারযোগ্য। ফলে বাকি প্লাস্টিকের বিরাট অংশ জলাশয়, নদী, সমুদ্রে এসে জমে থাকে। এর মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক (Microplastics) খাবার, জল ও বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। যার ফলে পরিবেশ দূষণ হওয়ার সঙ্গে ব্যাপক ক্ষতি হয় জল জীবের। তাই কীভাবে এই প্লাস্টিক দূষণের সঙ্গে মোকাবিলা করা যায়, কী ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও বেশি করে এই নিয়ে কাজ করার জন্য উদ্দীপিত করা যায়, কী ভাবে সাধারণ মানুষকে এই নিয়ে সচেতন করা যায় তাই জন্যই এই থিমকে বেঁচে নেওয়া হয়েছে।
এই বছর অর্থাৎ চলতি বছর ২০২৩ সালে পালন করা হচ্ছে ৫০তম বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এই বছর আইভরি কোস্ট (Ivory Coast) দ্বারা হোস্ট করা হচ্ছে এই দিবস। নেদারল্যান্ডসের (Netherlands) সহযোগিতায়, প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের নেতৃত্ব প্রদর্শন করে৷ আইভরি কোস্ট ২০১৪ সালে প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছিল, পুনঃব্যবহারযোগ্য প্যাকেজিং প্রচার করে এবং তাদের আবিদজান শহর পরিবেশ-সচেতন স্টার্টআপগুলির জন্য একটি কেন্দ্রে পরিণত করে, স্থায়িত্বের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যত প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে তত বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। আগের তুলনায় বেড়েছে এসির (AC) সংখ্যা, বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা, যার ফলে ক্রমশ বাড়ছে দূষণ। এমত অবস্থায় সরকারের তরফ থেকে, নানান সংস্থার তরফ থেকে পরিবেশকে সুস্থ্য রাখার জন্য বহু সচেতনতামূলক বার্তা, ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হলেও সাধারণ মানুষ অর্থাৎ আমার-আপনারও দায়িত্ব পরিবেশে দূষণ কমানো। খুব নূন্যতম অভ্যাস বদলেই আপনি কমাতে পারেন পরিবেশ দূষণ। এই অভ্যাস বদল আনবে ভবিষ্যতেও।
পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধ করার ৫টি অভ্যাস | 5 Habits To Prevent Environmental Pollution:
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো | Reduce Use Of Plastic :
চলতি বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম হলো প্ল্যাস্টিক দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। বর্তমানে সরকারের তরফ থেকে প্ল্যাস্টিক ব্যবহার কমানোর জন্য বহু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্দিষ্টি মাইক্রোন (Microne) বেঁধে দেওয়া হয়েছে প্ল্যাস্টিক ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষেত্রে। তবুও প্রতিদিনই নানান ভাবে প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার করে থাকি আমরা। পরিবেশ দূষণ কমাতে এই প্ল্যাস্টিক দিয়ে তৈরী পদার্থের ব্যবহার কমান। প্ল্যাস্টিক ব্যাগের বদলে ব্যবহার করুন কাপড়ের বা কাগজের ব্যাগ।
জলের ব্যবহার | Water Usage:
যথেচ্ছ পরিমাণে জলের ব্যবহার মোটেই ভালো অভ্যাস নয়। ভবিষ্যতে জলসঙ্কটের আর বেশি দেরি নেই। তাই এখন থেকেই সতর্ক হন। স্নানের ও কাপড় কাচা ও শৌচের সময় জল বুঝে ব্যবহার করুন। এছাড়াও জল অপচয়, জল ফেলে দেওয়া এই অভ্যাসগুলিও বদল করুন।
নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলা | Disposing Of Waste At Specified Places:
প্লাস্টিকের মতো পরিবেশ দূষণকারী পদার্থ যেখানে সেখানে ফেলা ঠিক নয়। তাই সবসময় বর্জ্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। পৌরসভার নির্দিষ্ট স্থানে সময় করে সেই বর্জ্য ফেলে আসুন। ঠিক জায়গায় বর্জ্য না ফেললে সেখানে স্থান দূষণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আশেপাশের পরিবেশও দূষিত হয়। এছাড়া সেখান থেকে তৈরী জীবাণু বহু ক্ষতি করে পরিবেশে। ফলের নির্দিষ্টি স্থানে বর্জ্য ফেলুন। বহু জায়গায় ফেলে দেওয়া পদার্থ পুনঃব্যবহার করার জন্য দেখা যায় রিসাইকেল বিন (Recycle Bin)। এই বিশেষ বিনের ব্যবহার করুন।
বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি | Electronic Equipment:
যদি আপনি দু চাকা বা চার চাকার গাড়ি কেনার পরিকল্পনা করে থাকেন, তাহলে সেই ক্ষেত্রে বেছে নিন বিদ্যুতে চালিত অর্থাৎ ইলেকট্রিক গাড়ি (Electronic Car)। পাশাপাশি যতটা সম্ভব গ্যাসের বদলে ইনডাকশনে (Induction Oven) রান্না করুন। এতে প্রাকৃতিক সম্পদ সঞ্চয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষণও কমবে।
গাছের পরিচর্যা | Plant care:
পরিবেশ দূষণ রোধ করতে যত সম্ভব গাছ লাগান। অক্সিজেন প্রদান করা ছাড়াও পরিবেশকে সতেজ ও সুস্থ্য রাখে গাছ। বর্তমানে অনেকেই বাড়িতে নানান রকমের গাছ লাগিয়ে তা পরিচর্যা করে। এক্ষেত্রে তাদের বাড়িতে একটি সুস্থ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। কেবল বাড়িতেই নয়, পারলে আপনার বাড়ির সামনে রাস্তা ও অফিস ডেস্কেও গাছ লাগাতে পারেন।
যে পরিবেশে আমরা বাস করি, যেখান থেকে আমরা আমাদের খাদ্য, যোবন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করে থাকি, সেই পরিবেশকে সুস্থ্য রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। ফলেই আজ, বিশ্ব পরিবেশ দিবসের দিন থেকেই একটু একটু করে পরিবেশকে সুস্থ্য, দূষণমুক্ত র্রাখার চেষ্টা করুন।