Dust Allergy | ধুলোর সংস্পর্শে আসতেই শুরু হাঁচি? ডাস্ট অ্যালার্জি থেকে মুক্তি পেতে মেনে চলুন এই কয়েকটি বিষয়!

Tuesday, May 14 2024, 2:14 pm
highlightKey Highlights

অনেক সময় নিজের ঘরে বসেও হাঁচি-কাশি শুরু হয়ে যায়। রাতে ঘুমোতে গিয়ে বেড়ে যায় অ্যালার্জির সমস্যা। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখলে এবং ডায়েটে বিশেষ কিছু খাবার যোগ করলেই পাওয়া যাবে অনেক আরাম।


যে হারে ক্রমে বায়ু দূষণ বাড়ছে, ধুলো-বালি-ধোঁয়াতে বাড়ছে ডাস্ট অ্যালার্জি আক্রান্তর সংখ্যাও। এই সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। এই অ্যালার্জি মূলত ধুলো, ধোঁয়া এসব থেকেই হয়ে থাকে। যার ফলে একটু ধুলোর সংস্পর্শে এলেই হাঁচি-কাশি শুরু হয়ে যায়। কিন্তু বাইরের দূষণকে কোনওভাবেই প্রতিরোধ করা যাবে না। সেক্ষেত্রে রাস্তায় বেরোলে মাস্ক পরতেই হয়। কিন্তু অনেক সময় নিজের ঘরে বসেও হাঁচি-কাশি শুরু হয়ে যায়। এই অ্যালার্জি সাধারণত ভয়াবহ হয় না। তবে কিছুক্ষেত্রে চিকিৎসা না করলে এটি বড়সড় সমস্যার আকার ধারণ করতে পারে। আপনারও যদি ডাস্ট অ্যালার্জি থাকে তাহলে দেখে নিন কীভাবে এই সমস্যা থেকে আরাম পাবেন।

ডাস্ট যখন আমাদের নাসারন্ধ্রের বা চোখের সংস্পর্শে আসে তখন অনেকের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়
ডাস্ট যখন আমাদের নাসারন্ধ্রের বা চোখের সংস্পর্শে আসে তখন অনেকের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়

 বাতাসে যে ধুলাবালি, বালুকণা, বিভিন্ন ধোঁয়া, কেমিক্যাল, ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া থাকে এগুলোকে ডাস্ট বলা হয়ে থাকে। এসব ডাস্ট যখন আমাদের নাসারন্ধ্রের বা চোখের সংস্পর্শে আসে তখন অনেকের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন হয়। প্রথমে সামান্য রিঅ্যাকশন হয়, এরপর যখন আবার নাক কিংবা চোখের সংস্পর্শে ডাস্ট আসে তখন অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন বেশি হয়। শীতকালে এবং বিশেষ করে ঋতু পরিবর্তনের সময় বাতাস অনেক বেশি শুষ্ক থাকে। তখন বাতাসে এই ডাস্টের পরিমাণ বেড়ে যায়, ফুলের রেণু, বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বাতাসে ভেসে বেড়ায়। এগুলো খালি চোখে সবসময় দেখা যায় না। যে কারণে এই সময়ে ডাস্ট অ্যালার্জির মাত্রাও বেড়ে যায় অন্য সময়ের তুলনায়।  যদিও কমবেশি অনেকেরই এই অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। তবে অ্যালার্জির সমস্যা কারো কারো বংশগতও হতে পারে। পরিবারে কারো যদি অ্যালার্জির সমস্যা থাকে তাহলে তাদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

ডাস্ট থেকে যে অ্যালার্জি যেসব উপসর্গ দেখা যায়-

  • ডাস্ট অ্যালার্জির কারণে অনেকের নাক দিয়ে অনবরত জল পড়ে। প্রথমে কম হয়, ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
  • অনবরত হাঁচি হয়।
  • কারো কারো সর্দি হয়, কাশি হয়।
  • কারো কারো বুক চেপে আসে।
  • ডাস্ট যদি শ্বাসনালীর নিচের দিকে আসে তাহলে অনেকের অ্যাজমার প্রবণতাও দেখা দিতে পারে।
  • অনেকের শ্বাসকষ্ট হয়।
  •  ডাস্ট চোখের সংস্পর্শে আসলে চোখ চুলকায়, লাল হয়ে যায়, জল পড়ে, এমনকি এর থেকে কনজাংটিভাইটিসও হতে পারে।
  • ত্বকের সংস্পর্শে আসলে ত্বকে চুলকানি, র‌্যাশ ও বিভিন্ন চর্মরোগ হতে পারে।
  • ডাস্টের সঙ্গে ক্যামিকেল মিশ্রিত থাকলে ক্যামিকেল রিঅ্যাকশন হতে পারে শরীরে।

 ডাস্টের সঙ্গে ছত্রাক, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া মিশে থাকে। ডাস্টে বিভিন্ন রোগের জীবাণু মিশে থাকার ফলে বিভিন্ন রোগ হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। যেমন- যক্ষ্মার জীবাণু থাকলে যক্ষ্মা হতে পারে, ভাইরাল ডিজিজ হতে পারে।

ত্বকের সংস্পর্শে আসলে ত্বকে চুলকানি, র‌্যাশ ও বিভিন্ন চর্মরোগ হতে পারে
ত্বকের সংস্পর্শে আসলে ত্বকে চুলকানি, র‌্যাশ ও বিভিন্ন চর্মরোগ হতে পারে

ডাস্ট অ্যালার্জির প্রতিকার । Dust Allergy Remedy :

যাদের অ্যালার্জির মাত্রা বেশি থাকে তাদের বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব। তবে বলা বাহুল্য অ্যালার্জির সমস্যা কখনো পুরোপুরি সেরে যায় না। তাই অ্যালার্জিকে প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে ভালো উপায়। এক্ষেত্রে যেসব বিষয় মেনে চললে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা যেতে পারে-

  • ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং ঘর পরিষ্কার করার সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ঘরের বাইরে গেলেও সবসময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
  •  যথাসম্ভব ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে।
  • বাইরে থেকে এসে মুখ, হাত-পা জল দিয়ে ধুতে হবে। সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে নিজেকে। প্রতিদিনের ব্যবহৃত পোশাক ময়লা হলে নিয়মিত ধুতে হবে ভালোভাবে।
  • প্রতিদিন ব্যবহৃত বালিশ, মশারি মাঝেমাঝে রোদে দিতে হবে। বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, মশারি ময়লা হলে ধুয়ে নিতে হবে।
  • সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।
  • পর্যাপ্ত সময় ঘুমাতে হবে।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে।

অ্যালার্জির সমস্যার বিরুদ্ধে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে যেসব খাবার-

বাদাম: শুকনো ফল এবং বাদাম (dry fruits and nuts) শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যে উন্নতি করে সে কথা সবাই জানে। শুকনো ফল এবং বাদাম (dry fruits and nuts) রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায‌্য করে যার ফলে অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তাই রোজ নিয়ম করে কাজু, আখরোট, কাঠবাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন।

গ্রিন টি: অর্গানিক গ্রিন টি (organic green tea) রোজ খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। স্বাস্থ্যবিদরা পরামর্শ দেন দিনে দু-তিন বার অর্গানিক গ্রিন টি (organic green tea) খাওয়ার জন্য। এর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট অ্যালার্জির সমস্যার সঙ্গে লড়তে সাহায্য করে। চোখে লাল ভাব, র‌্যাশ বেরোনোর সমস্যা রুখতে এটি বিশেষ কার্যকর।

হলুদ: কাঁচা হলুদ (raw turmeric) এ অ্যান্টি-ব্যাক্টেরিয়াল গুণ অ্যালার্জি প্রতিরোধে সাহায্য করে। তাই আপনার ধুলোবালিতে অ্যালার্জি থাকলে রোজ নিয়ম করে গরম দুধে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। অথবা খেতে পারেন কাঁচা হলুদ (raw turmeric)। এতে উপকার বেশি পাবেন।

দুগ্ধজাত পদার্থ: খাওয়ার পাতে রাখুন টক দই, ছানা, লস্যি। এদের প্রোবায়োটিক উপাদান অসুখের জীবাণুর সঙ্গে যেমন লড়ে, তেমনই শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং, ধুলোবালি থেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে।

দারচিনি: হেঁশেলের এই মশলাটিও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। রোজের ডায়েটে দারচিনি দেওয়া চা রাখতে পারেন। এতে শরীর থেকে দূষিত পদার্থগুলি দূর হবে আর অ্যালার্জির সমস্যা থেকেও রেহাই পাবেন। জলের ভিতরেও একটি দারচিনির টুকরো ফেলে রেখে দিতে পারেন। তার পর সারা দিন ধরে সেই জলে চুমুক দিলেও উপকার পাবেন

আপনারও যদি ডাস্ট অ্যালার্জি থাকে তাহলে ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি সুষম খাবার খেতে হবে 
আপনারও যদি ডাস্ট অ্যালার্জি থাকে তাহলে ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি সুষম খাবার খেতে হবে 

শিশু এবং বয়স্ক যারা, যাদের কোমরবিডিটি রয়েছে, অ্যাজমার সমস্যা রয়েছে এবং যাদের শরীরের অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশনের মাত্রা অনেক বেশি হয় তারা বাইরে কম যাবেন, জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নিতে হবে। এগুলো অ্যালার্জি কমাতে সরাসরি প্রভাব ফেলে না। কিন্তু শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File