Winter fruits | শীতে ধারের কাছে আসবে না কোনও রোগ! রোজ এই শীতকালীন ফল খেলে শরীরের সঙ্গে ভালো থাকবে ত্বকও!
শীতে সর্দি-কাশি দূর করে শরীর সুস্থ্য রাখতে রোজ খেতে হবে শীতকালীন ফল। শীত মৌসুমের ফল খেলে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, উজ্জ্বল ও কোমল হবে ত্বক।
শীতকাল মানেই রুক্ষ্মতা, শুষ্কতা, সর্দি-কাশি, শরীর খারাপ!এই ধারণা কমবেশি সকলের। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সঙ্গে আবহাওয়ার পরিবর্তনের জেরে এই মরশুমে শরীরের ওপর নানান প্রভাব পরে ঠিকই। যার ফলে শীতকালে সুস্থ্য থাকতে শরীরের যত্নও নিতে হবে বেশি। এক্ষেত্রে নিয়মিত শরীর চর্চার সঙ্গে ঠিক রাখতে হবে খাদ্যাভাস। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, শীতকালে আবহাওয়া পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে শুরু করে। যার জন্যই এই সময় জ্বর-সর্দি-কাশির মতো নানান শারীরিক অসুস্থতা লেগে থাকে ঘরে ঘরে। এই মরশুমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং ত্বকের যত্ন নিতে অবশ্যই খেতে হবে শীতকালীন ফল (Winter fruits)।
শীতের মরশুমে খাবার তালিকাতে আসে বেশ পরিবর্তন। খাবার তালিকার কেবল শাক সবজি নয় ফলের দিক থেকে শীতের সময়ে দেখা মেলে নানা ধরনের মুখরোচক ফলের। শীত মৌসুমের ফল (Winter season fruits ) হিসেবে দেখা মেলে বেরি, জলপাই, আমলকি, সফেদা, কমলালেবু, আপেল আর ডালিমের। এসব ফলে আছে ভিটামিন ‘সি’ (Vitamin C), ভিটামিন ‘এ’ (Vitamin A), মিনারেল (Mineral), ক্যালসিয়াম (Calcium), ফসফরাস (Phosphorus), ভিটামিন ‘ই’ (Vitamin E), এন্টিঅক্সিজেন (Anti Oxygen), ফাইবার (Fiber) সহ আরও অনেক উপাদান। ভারতে শীতকালীন ফল (Winter fruits in India) কেবল মুখরোচকই নয়, এতে থাকা নানা ভিটামিন এবং মিনারেলসহ ফাইবার দাঁত, মাড়ি মজবুত করতে যেমন সাহায্য করে তেমনি নানা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের যত্ন নেয়। দেখে নিন কোন কোন শীত মৌসুমের ফল (Winter season fruits) খাবেন এবং কেন খাবেন।\
আরও পড়ুন : শীতের শুরুতেই শরীর চলছে না? সকালে এই যোগাসন করলেই সারাদিন থাকবেন তেজোময়! কমবে শরীরের ব্যথাও!
নাশপাতি । Pears :
ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (US Department of Agriculture) বা ইউএসডিএ’র (USDA) মতে, একটি মাঝারি সাইজের নাশপাতিতে থাকে ৫.৫৮ গ্রাম ফাইবার। এই পুষ্টি উপাদান ইমিউন সিস্টেমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ভালো ব্যাকটেরিয়া বিকাশে সাহায্য করে। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আবার নাশপাতি’সহ ফাইবারযুক্ত খাবার অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফাইবার খাওয়ার তৃপ্তি বাড়ায়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়া রোধ হয়।
ক্র্যানবেরি । Cranberry :
বিভিন্ন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ক্র্যানবেরি কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে দারুন উপকারী। ক্র্যানবেরি করোনারি ধমনী রোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে। এই ফল ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস। ইউএসডিএ অনুসারে, ১ কাপ কাঁচা ক্র্যানবেরিতে ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
কমলালেবু । Oranges :
ভারতে শীতকালীন ফল (Winter fruits in India) হিসেবে খ্যাত কমলালেবু ভিটামিন-সি এর সব থেকে বড় এবং ভালো উৎস। তথ্য অনুসারে, একটি কমলায় প্রায় ৮২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, শীতকালে যদি একটা গোটা কমলা খাওয়া যায় তাহলে শরীর স্বাস্থ্যের সঙ্গে ত্বকও ভালো থাকবে। বলা হয় শীতকালে স্কিন কেয়ার রুটিন (Winter Skin Care Routine) মেন্টাইন করার সঙ্গে খেতে হবে কমলালেবুর মতো ফলও। এছাড়া একটি কমলায় ৩.৭ গ্রাম ফাইবার থাকে। তাই শীতে ওজন কমাতে, এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে দৈনিক অন্তত একটি কমলা খাওয়া খুবই ভালো।
আমলকি । Amla :
ভারতে শীতকালীন ফল (Winter fruits in India) হিসেবে অন্যতম আমলকি। শীতকালে আমলকি খাওয়ার একাধিক উপকারিতা রয়েছে। আমলকি ভিটামিন সি ভরপুর পরিমাণে থাকে। এই ভিটামিন সংক্রমণের ঝুঁকি কমায়। রোগের সঙ্গে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করে শরীরকে। মরসুমি রোগবালাই থেকে দূরে থাকতে ভিটামিন সি অনবদ্য ভূমিকা নেয়। আমলকি শরীরের নেয় মনেরও। পলিফেনলস এবং ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান সমৃদ্ধ আমলকি মানসিক চাপ কমায়। উদ্বেগ, অবসাদের অন্যতম কারণ হল অক্সিডেটিভ হরমোনের অত্যধিক ক্ষরণ। এই হরমোন ক্ষরণে রাশ টানে আমলকি। এছাড়া আমলকিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা হজমের সমস্যা ঠেকাতে সাহায্য করে। শীতকালে ত্বকেরও যত্ন নেয় আমলকি। শীতে ত্বক প্রচণ্ড আর্দ্র হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে চুল ঝরার পরিমাণও বেড়ে যায়। ত্বক এবং চুলের অধিকাংশ সমস্যার সমাধান লুকিয়ে আছে আমলকিতে। শীতকালে স্কিন কেয়ার রুটিন (Winter Skin Care Routine) এর সঙ্গে ডায়েটে আমলকি রাখলে যত্নে থাকে ত্বক।
জাম্বুরা । Grapefruit :
ভিটামিন সি এর আরেকটি চমৎকার উৎস হলো জাম্বুরা বা জাম। একটি জাম্বুরায় ৪৩.৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে। ইউএসডিএ অনুসারে, জাম্বুরায় আরও থাকে লাইকোপিন। গবেষণার তথ্য মতে, এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রোস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ডালিম । Pomegranate :
ভারতে শীতকালীন ফল (Winter fruits in India) হিসেবে খ্যাত ডালিমও ভিটামিন সি এর একটি ভালো উৎস। ইউএসডিএ এর তথ্য অনুসারে, এক কাপ ডালিমে থাকে ৭ গ্রাম ফাইবার ও ১৭.৮ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া ডালিম ভিটামিন কে (vitamin K ) সমৃদ্ধ, এক কাপে থাকে ২৮.৭ মিলিগ্রাম। ভিটামিন কে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। হাড় সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এই ভিটামিন। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
কিউই । Kiwi :
ইউএসডিএ অনুসারে, একটি কিউই ফলের মধ্যে আছে ৫৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। এছাড়া এই ফলে পর্যাপ্ত ভিটামিন কে থাকে। এক কাপে ৩০.২ মিলিগ্রাম ভিটামিন কে থাকে।
আনারস । Pineapple :
ইউএসডিএ অনুসারে, সাইট্রাস ফলের মধ্যে আনারস হলো ভিটামিন সি এর একটি দুর্দান্ত উৎস। ১ কাপ আনারসে থাকে ৭৮.৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। আনারসে রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য আছে। যা স্নায়ু ও পাচনতন্ত্রের উপকার করে।
শীতকালে সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে। এ কারণে শীতকালীন ফল ও শাকসবজি খাওয়া জরুরি। এতে করে শরীরে যাবতীয় পুষ্টিগুণও মেলে আবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার অনুসারে, সাইট্রাস ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। আর এই ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ কারণে শীতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি’যুক্ত ফল খাওয়া জরুরি। ভিটামিন সি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিভাইরাল। যা শীতকালীন সর্দি ও অসুস্থতা দূর করে। তবে এই ভিটামিন কিন্তু প্রতিদিনই গ্রহণ করতে হবে। কারণ ভিটামিন সি পানিতে দ্রবণীয় হওয়ায় প্রতিদিনেরটা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। অর্থাৎ শীতকালে সুস্থ্য থাকতে রোজই শীতকালীন ফল খেতে হবে।