Saree Cancer | শক্ত করে বেঁধে রাখা পেটিকোটের দড়ির জন্য পড়ে গিয়েছে কালশিটে? এক্ষুণি সতর্ক না হলে হতে পারে 'শাড়ি ক্যানসার'!
দীর্ঘ সময় ধরে পেটিকোটের দড়ির বাঁধা থাকে বলে ওই অংশে কালশিটে পড়ে যায় কারও কারও। চিকিৎসকরা বলছেন এক্ষেত্রে অগ্রাহ্য করলে সেই ঘা হয়ে উঠতে পারে ক্যানসার। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা হতে থাকলে ঘা এবং পরে তা ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। আর এই ক্যানসার সাধারণের কাছে ‘শাড়ি বা ধুতি ক্যানসার’ নামে পরিচিত।
ভারতে প্রায়শই অধিকাংশ মহিলারা শাড়ি পড়ার সময়ে কষে পেটিকোটের দড়ি বাঁধেন। ঘন্টার পরের ঘন্টা, এমনকি সারাদিন কেটে যায় এভাবেই। অবশেষে যখন সেই সেই দড়ির বাঁধন আলগা করা হয় বা খোলা হয়, তখন বাঁধনের জায়গা লাল হয়ে যায়। এমনকি সেখানকার ত্বক জ্বালাও করতে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে পেটিকোটের দড়ির বাঁধা থাকে বলে ওই অংশে কালশিটে পড়ে যায় কারও কারও। এই ঘটনা দেখা যায় প্রায় ঘরে ঘরে। তবে চিকিৎসকরা বলছেন এক্ষেত্রে অগ্রাহ্য করলে সেই ঘা হয়ে উঠতে পারে ক্যানসার! স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা হতে থাকলে ঘা এবং পরে তা ক্যানসারে পরিণত হতে পারে। আর এই ক্যানসার সাধারণের কাছে ‘শাড়ি বা ধুতি ক্যানসার’ (Saree Cancer) নামে পরিচিত।
শাড়ি ক্যানসার বা স্কোয়ামাস ক্যানসার কী?। What is Saree Cancer or Squamous Cancer?
চিকিৎসকেরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের ত্বকের ক্যানসারের মধ্যে এটিএকটি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ক্যানসারকে ‘স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা’(Squamous Cell Carcinoma) বা সংক্ষেপে ‘এসসিসি (scc)’ বলা হয়। চামড়ায় যে কোষগুলো রয়েছে তাকেই বলা হয় স্কোয়ামাস সেল (squamous cells)। সেই কোষগুলোয় যখন কিছু মৌলিক পরিবর্তন ঘটলে এবং হঠাৎ করে এরা বংশবিস্তার করতে শুরু করলে ত্বকের উপর ঘা হতে শুরু করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শীতপ্রধান অঞ্চলে শরীর গরম রাখার জন্য সেখানকার বাসিন্দারা শরীরে হটপটের সেঁক দেন। সেখান থেকেও তো ত্বকে একধরনের ক্ষত তৈরি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা চলতে থাকলে সেখান থেকেও কিন্তু ক্যানসার হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যা ‘কাংরি ক্যানসার’ (Kangri Cancer) নামে পরিচিত। আবার, ধরুন ছোটবেলায় কারও হাত পুড়ে গিয়েছিল। ক্ষত শুকিয়ে গেলেও সেই অংশটিতে মাঝে মধ্যেই কেমন যেন অস্বস্তি হয়, চুলকায়। দীর্ঘ দিন ধরে এমনটা হতে থাকলে সেই ক্ষতস্থানে বেশ কিছু পরিবর্তন আসতে শুরু করে। যা আসলে মার্জোলিন আলসার। সেই কারণেই সানস্ক্রিন (sunscreen) মাখতে। এছাড়া, ত্বকের যে অংশ অতিবেগনি রশ্মির সংস্পর্শে আসে, সেখানেও এই ধরনের সমস্যা হতে পারে। রোদ লেগে ত্বকে যে ক্যানসার হয় তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় ‘পেজ়াল ক্যানসার’ (pezal cancer) বলা হয়। এই অতিবেগুনি রশ্মির হাত থেকে ত্বককে রক্ষা করতেই খেলোয়াড়রা মুখে জ়িঙ্ক অক্সাইড মুখে মেখে খেলতে নামেন। আবার শরীরে যদি হঠাৎ কোনও নতুন আঁচিল তৈরি হয়, তা আকারে বড় হতে শুরু করে কিংবা রক্ত বেরোতে শুরু করে, সেখান থেকেও কিন্তু ক্যানসার হতে পারে। চিকিৎসা পরিভাষায় যা ‘ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা’ (malignant melanoma) নামে পরিচিত। তবে, জন্মগত জরুল বা আঁচিল থেকে এই ধরনের সমস্যা সাধারণত হয় না। ফলত, ত্বকের যে কোনও রকম অস্বস্তি বা সংক্রমণ এই ক্যানসারের কারণ হতে পারে। কোমরের ভাঁজে দীর্ঘ ক্ষণ শক্ত করে দড়ি বা গার্ডার চেপে বসে থাকলে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। শুধু পেটিকোট পরলেই যে এমন সমস্যা হবে, তা নয়। শক্ত ইলাস্টিক দেওয়া প্যান্ট, অন্তর্বাস, ধুতি, লুঙ্গি অর্থাৎ বাঁধন দিতে হয়, এমন পোশাক পরলেই ত্বকে এই ধরনের সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুন: Health tips in bangla
এসসিসি (scc) সাধারণত প্রাণঘাতী নয়। কিন্তু যদি এর চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে ত্বকের স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা বড় হতে পারে বা শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ক্যানসার ত্বকের যেকোনো জায়গায় হতে পারে। এসসিসি সাধারণত একটি লাল, আঁশযুক্ত প্যাচ, একটি ঘা যা নিরাময় হয় না। এটি শরীরের যে কোনো অংশে বিকশিত হতে পারে তবে সাধারণত মুখ, ঘাড়, কান, হাত এবং বাহুগুলির মতো ঘন ঘন সূর্যের সংস্পর্শে আসা জায়গাগুলিতে পাওয়া যায়। এসসিসি-এর ঝুঁকির কারণগুলির মধ্যে রয়েছে সূর্য থেকে অতিবেগুনী (UV) বিকিরণের দীর্ঘায়িত এক্সপোজার বা ট্যানিং বিছানা, ট্যানিং, ফর্সা ত্বক, দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থা, কিছু রাসায়নিক বা বিকিরণের সংস্পর্শ এবং ত্বকের পূর্বের ক্ষত।
স্কোয়ামাস ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ । Symptoms of Squamous Cancer :
- শরীরের কোনও অংশে দীর্ঘ ক্ষণ রক্ত চলাচল বন্ধ হলে ত্বকের রং পাল্টে যায়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটা হতে হতে পারে। বাঁধন আলগা হওয়ার পর ওই নির্দিষ্ট জায়গা অসম্ভব চুলকাতে পারে।
- দীর্ঘ দিন ত্বকের নির্দিষ্ট জায়গায় বাঁধন দিতে দিতে সেই জায়গায় ঘা হয়ে যেতে পারে। অন্তর্বাসের গার্ডার ত্বকের উপর চেপে বসে থাকলেও একই রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- প্রথমে ত্বক লাল হয়ে যাওয়া, ঘা হওয়া, সেখান থেকে সংক্রমণ হলে তা ক্যানসারের পরিণত হতে সময় লাগে না। অনেকের ক্ষেত্রে কোমরের আশপাশে টিউমারও হতে পারে।
- এছাড়া ত্বকে লাল ভাব, চুলকানি প্যাচ, আলসার গঠন, কোমরের কাছে উত্থিত গলদও দেখা দিতে পারে।
স্কোয়ামাস ক্যানসার থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন কীভাবে? । How to Protect Yourself from Squamous Cancer?
স্কোয়ামাস ক্যানসার থেকে রক্ষা পেতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যেমন-
রোদ থেকে দূরে থাকুন : সূর্যের রশ্মি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা রোদ থেকে দূরে থাকতে বলছেন। দরকারে দিনের অন্য সময়ে বাইরের কার্যকলাপের পরিকল্পনা করুন, এমনকি শীতকালে বা আকাশ মেঘলা থাকলেও এই নিয়ম মানতে বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। বাইরে থাকলেও যতটা সম্ভব ছায়ায় থাকুন।
সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন : সারা বছর সানস্ক্রিন (sunscreen) ব্যবহার করুন। এমনকি মেঘলা দিনেও কমপক্ষে ৩০ এসপিএফ সহ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সান প্রোটেকশন ক্রিম (sun protection cream) সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করবে এবং ট্যান পড়তে দেবে না।
UV রশ্মি থেকে ত্বক রক্ষা করুন :এক্ষেত্রে হাত এবং পা ঢাকা জামাকাপড় পড়ুন। পড়তে পারেন টুপি, সানগ্লাস যেগুলি উভয় প্রকারের UV বিকিরণ, UVA এবং UVB রশ্মিকে ব্লক করবে। পাশাপাশি ব্যবহার করুন সান প্রোটেকশন ক্রিম (sun protection cream)।
ঢিলেঢালা জামা পড়ুন : ঢিলেঢালা জামা কাপড় পড়ুন। এমনকি শাড়ি এবং পেটিকোটও ঢিলেঢালা পরুন। পেটিকোট পরলেও তার বাঁধন আলগা করে রাখতে হবে।
পরিচ্ছন্নতা : শরীরের নিম্নাঙ্গের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। দেহের সেই সব অংশে যাতে ঘাম না জমে, সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
আরো পড়ুন: স্বাস্থ্য টিপস বাংলা
প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিজের ত্বকের সাথে নিজেকে পরিচিত করুন। তিল, ফ্রেকলস বা অন্যান্য ত্বকের বৃদ্ধির কোনও পরিবর্তন দেখতে পেলেই মাসিক স্ব-পরীক্ষা করুন। যদি ত্বকে কোনও সন্দেহজনক ক্ষত বা পরিবর্তন লক্ষ্য করেন তবে একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করুন। এছাড়াও দীর্ঘ ক্ষণ কষে পেটিকোটের দড়ি বেঁধে রাখার পর বাড়ি ফিরে ওই অংশ ভাল করে পরীক্ষা করতে হবে। ত্বকের রঙে কোনও বদল এলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- ক্যান্সার
- ক্যান্সার রোগী
- ত্বক
Contents ( Show )