WB Lokprasar Scheme | মানব উন্নয়নে ~ “লোকপ্রসার প্রকল্প"
আসুন জেনে নেওয়া যাক পশ্চিমবঙ্গ সরকার তথা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরেকটি সফল উদ্যোগ "লোক প্রসার প্রকল্প" কিভাবে বাংলার সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
ভূমিকা | Introduction of Lokprasar
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা ব্যানার্জীর অনুপ্রেরণায় , তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে লোকপ্রসার প্রকল্প নামে একটি নতুন উন্নয়ন মূলক প্রকল্প চালু করা হয়েছে।দরিদ্র পরিবারের উন্নতি সাধনের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়া এর আগেও অনেক জনহিতকর প্রকল্প চালু করেছেন। সেই তালিকায় লোকশিল্পীদের জন্য একটি অভিনব প্রকল্প চালু করা হয় যা "লোকপ্রসার প্রকল্প 'নামে প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ।
রাজ্যের বৈচিত্র্যপূর্ণ ও বর্ণময় লোকশিল্পীদের সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন, সমৃদ্ধি এবং বিকাশের পাশাপাশি তাদের জীবনের মান উন্নয়ন, মর্যাদা এবং আর্থিক সহায়তা করার মতন মহৎ লক্ষ্য পূরণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই চালু করা হয়েছিল এই প্রকল্প। বাংলার লোকশিল্পীরা যাতে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা অর্জন করতে পারে সেই লক্ষ্যেই মূলত এই প্রকল্প।
প্রকল্পের শুভারম্ভ | Lokprasar
কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, সবুজশ্রী, সবুজ সাথীর মতন ই রাজ্য সরকারের দ্বারা রূপায়িত হয়েছে লোকপ্রসার প্রকল্প নামের এই অভিনব প্রকল্পটি। এই প্রকল্পটির শুভারম্ভ হয়েছিল ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে যা পরবর্তীকালে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে । ২০১৭ সালে এই প্রকল্পটির পরিধি আরও বিস্তৃত হয় এবং প্রায় ১.৯৪ লক্ষ লোক শিল্পীদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা সম্ভব হয়।
প্রকল্পটির উদ্দেশ্য | Launch of Lokprasar scheme
লোকপ্রসার প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য হল :
(১) বাংলার লোকশিল্পীদের পরিচয়পত্র প্রদান করে তাদের সন্মান জানানো ,
(২) পশ্চিম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এবং সনাতন লোক-আঙ্গিক এবং সংস্কৃতিকে তুলে ধরা ,
(৩) বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির যে শাখাগুলি লুপ্ত-প্রায় হয়ে গেছে সেগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করা,
(৪) পশ্চিম বাংলায় যারা লোক শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সেই সব মানুষদের আর্থ - সামাজিক পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটানো এবং তাদের উপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করা।
(৫)সরকারি প্রচারে বাংলার লোকশিল্পীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ করানো।
অতএব এককথায় বলা যায় , বাংলার প্রত্যেক জনগোষ্ঠীকে নিজেদের হারানো ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ই মূলত এই প্রকল্প সামনে আনা হয়েছে।
প্রকল্পের সুবিধা এবং যোগ্যতা | Advantages and Eligibility of Lokprasar scheme
উক্ত প্রকল্পের অধীনে বাংলার লোকশিল্পীদের অনেক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে: যেমন:~
লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় থাকা ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী লোক শিল্পীরা প্রতিমাসে ১০০০/ - টাকা ধারক ফি হিসাবে লাভ করে থাকেন । সিনিয়র অর্থাৎ বয়স্ক শিল্পীরা, যাঁরা ৬০ বছরের অধিক বয়সীা, তাঁরা পেনশন হিসাবে প্রতি মাসে ১০০০ / - টাকা পেয়ে থাকেন।
এ ছাড়া লোকশিল্পীরা তাদের সক্রিয় পারফরম্যান্সগুলির মধ্য দিয়ে প্রতি অনুষ্ঠানে পারফরম্যান্স ফি বাবদ ১০০০ / - টাকা করে লাভ করে থাকে যা সরাসরি লোকশিল্পীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যায়। লোকপ্রসার প্রকল্পের আওতায় যেসব তালিকাভুক্ত লোকশিল্পীরা আছে তাদেরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফটো পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়েছে।
কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে | Contact Person for Lokprasar
উক্ত প্রকল্পটির বিষয়ে বাংলার লোক শিল্পীরা আরও জানতে তাদের নিজস্ব জেলার তথ্য ও সাংস্কৃতিক বিষয় বিভাগে যোগাযোগ করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন।
লোকপ্রসার প্রকল্পের জন্য আবেদন | Application for Lokprasar scheme
এ প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে হলে নিচের অফিস ও নাম্বারে যোগাযোগ করুনঃ নিচের লিংকে বিস্তারিত জানানো হলো:
লোকপ্রসার আইনের কর্মসূচি এবং রূপায়ণ | Programs and implementation law of Lokprasar
পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ লোকপ্রসার প্রকল্পের মাধ্যমে নিম্নলিখিত কর্মসূচিগুলি রূপায়িত করে থাকে:
- বাংলার প্রত্যেক লোকশিল্পীকে তাদের যথাযথ সন্মান দেবার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার প্রত্যেক লোকশিল্পীকে পরিচয় পত্র প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখনও পর্যন্ত , সারা রাজ্যে ১৯৪,৩০০ জন শিল্পীকে পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে।
- বয়োজ্যেষ্ঠ ও দুঃস্থ লোকশিল্পীদের জন্য মাসিক পেনশন -এর ব্যবস্থা একটি অতি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এই প্রকল্পের । বাংলায় এমন বহু সংখ্যক লোকশিল্পীর উপস্থিতি আছে যাঁরা সুনামের সঙ্গে বহু অনুষ্ঠান করে থাকেন এবং পাশাপাশি শ্রোতাদের মনোরঞ্জন ও করেন। তবে তাঁদের মধ্যে অধিকাংশ শিল্পী ই বয়সজনিত কারণে বর্তমানে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। এসব ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্পীদের মধ্যে অনেকের নির্দিষ্ট কোনও আয় নেই এবং তাঁদের দেখাশোনা করার কেউ উপস্থিত ও থাকে না । তাঁদের এই দুর্দশা কাটাবার জন্য এবং তাঁদের সহায়তার জন্য রাজ্য সরকার এক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে ।৬০ বছর অধিক লোক শিল্পীরা এই প্রকল্পের অধীনে পেনশন পাচ্ছেন এবং পরিসংখ্যান অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে , বর্তমানে প্রায় ৮,৫৯৬ জন শিল্পী প্রতিমাসে ১০০০ টাকা পাচ্ছেন। পেনশনের নির্ধারিত অর্থ সরাসরি শিল্পীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে।
- লোকশিল্পীদের বহাল ভাতা অনুমোদন করা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আরেকটি অভিনব উদ্যোগ । উক্ত প্রকল্পে তালিকাভুক্ত ৬০ বছরের কম বয়সী লোকশিল্পীরা যাঁরা সরকারের বিভিন্ন প্রচারমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে তাঁরা বহালভাতা হিসাবে প্রতিমাসে ১০০০ টাকা পেয়ে থাকেন । এই সময় পর্যন্ত প্রায় ৭৬,০০০ লোকশিল্পী এই বহাল ভাতা প্রাপ্ত করেছেন আর সেই নির্ধারিত অর্থ সরাসরি শিল্পীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যাচ্ছে ।
- পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের প্রচারে লোকশিল্পীদের যুক্ত করে তাঁদের নুন্যতম উপার্জনের বন্দোবস্ত করার ও এক মহৎ উদ্যোগ নিয়েছে । উন্নয়ন মূলক প্রকল্প গুলিতে প্রচারকার্যে লোকশিল্পীদের যুক্ত করা হচ্ছে এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি যেমন কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, শিক্ষাশ্রী, খাদ্যসাথী ইত্যাদির প্রচারে লোকশিল্পীরা ই আগ্রহ সহকারে এবং উদ্দীপনা নিয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছেন।
উপরোক্ত কর্মসূচি ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আরও আকর্ষণীয় উপায়ে নতুন প্রজন্মের কাছে ঐতিহ্যবাহী লোক-আঙ্গিকগুলি তুলে ধরার লক্ষ্যে লোকসংস্কৃতির গবেষকদের সহায়তায় প্রতিটি জেলায় লোকশিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করতে সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন ।পশ্চিমবঙ্গের গ্রামবাংলার তথাকথিত অবহেলিত লোকশিল্পীরা ব্যাপক উৎসাহ সহকারে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ ও করছে ।
প্রকল্পের সাফল্য | Lokprasar’s success
পশ্চিমবঙ্গ সরকার লোকপ্রসার প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে ইতিমধ্যেই বিপুল সাফল্য অর্জন করেছে । বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি ধীরে ধীরে প্রত্যাবর্তন করার ফলে এবং বাংলার ঐতিহ্যপূর্ণ লোকসংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আরও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরার এই অভিনব প্রয়াস সফলভাবে রূপায়িত হওয়ার ফলে এই প্রকল্পটি আজ বহুল প্রশংসিত। লোক আঙ্গিকগুলিকে আরও পরিশীলিত করার জন্য লোকসংস্কৃতি গবেষকদের সহযোগিতায় প্রতিটি জেলায় কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ, লোকপ্রসার প্রকল্পটির মান অধিকতর উন্নত করে তুলেছে । বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর 'বোর্ড' গঠনের মাধ্যমে এই কাজ পেয়েছে আরও গতিময়তা । এই প্রকল্পের সফল রূপায়ণের সমস্ত কৃতিত্ব যায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সৎ প্রচেষ্টাকে । এই প্রকল্পের সাফল্যের অন্যতম নিদর্শন এই যে বাংলার গ্রামীণ লোকশিল্পীরা খুব উৎসাহ সহকারে এই প্রকল্পে অংশগ্রহণ করছেন । পশ্চিমবঙ্গের বুকে লোকপ্রসার প্রকল্প এক ইতিবাচক আলোকরেখার জন্ম দিয়েছে, যেই আলোক রশ্মি বাংলার প্রান্তিক মানুষের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্র এবং লোকসংস্কৃতির অঙ্গনটি আরও প্রজ্জ্বলিত করে তুলবে ; সে বিষয়ে নিশ্চিত।
পরিশিষ্ট | Adder of Lokprasar scheme
পশ্চিমবঙ্গের বর্ণময় লোক সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন , বিকাশ ও সমৃদ্ধির সাথে সাথে লোকশিল্পীদের মানোন্নয়ন ঘটানো এবং উপযুক্ত মর্যাদা দান , উন্নয়নমূলক এই প্রকল্পটি এক অতীব গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত । বাংলার সংস্কৃতিকে পুষ্ট করে তোলার প্রয়াস করার মধ্য দিয়ে ঘটানো হয়েছে মূলধারার সংস্কৃতির সাথে লোক সংস্কৃতির মেলবন্ধন। এর ফলে বাংলা সংস্কৃতির গুণমানও পরিমাণ দুটোই সমানভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
লোকপ্রসার প্রকল্পের সুবিধা কি?
লোকপ্রসার প্রকল্পের অধীনে বাংলার লোকশিল্পীদের পরিচয়পত্র, বেকার ভাতা, পেনশন প্রভৃতি প্রদান করা হয়ে থাকে।
লোকপ্রসার প্রকল্পে কত টাকা করে বেকার ভাতা দেওয়া হয়?
লোকপ্রসার প্রকল্পের অধীনে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে বেকার ভাতা দেওয়া হয়।
লোকপ্রসার প্রকল্পে কত টাকা করে পেনশন দেওয়া হয়?
লোকপ্রসার প্রকল্পের অধীনে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে পেনশন দেওয়া হয়।
লোকপ্রসার প্রকল্পের বেকার ভাতা কাদের দেওয়া হয়?
লোকপ্রসার প্রকল্পের বেকার ভাতা ৬০ বছরের কমবয়সী লোকশিল্পীদের দেওয়া হয়ে থাকে।
লোকপ্রসার প্রকল্পে পেনশন কাদের দেওয়া হয়?
লোকপ্রসার প্রকল্পের পেনশন ৬০ বছরের বেশি বয়সী লোকশিল্পীদের দেওয়া হয়।
- Related topics -
- প্রকল্প
- লোকপ্রসার প্রকল্প
- মমতা ব্যানার্জী
- মুখ্যমন্ত্রী
- রাজ্য