Water Crisis | কমছে গঙ্গা-সহ ভূগর্ভস্থ জলস্তর! এদিকে গরমে কলকাতায় দৈনিক জলের চাহিদা বেড়েছে ৩ গুণ! জল সংকটের মুখে দেশের অধিকাংশ!

Friday, May 3 2024, 7:57 am
highlightKey Highlights

চাঁদিফাটা গরমে কলকাতায় দৈনিক মাথাপিছু ১৫০ লিটার জলের চাহিদা বেড়ে হয়েছে ৪৫০ লিটার। এমতাবস্থায় যে পরিমাণ জল প্রয়োজন হচ্ছে তা সরবরাহ করে উঠতে পারছে না পুরসভা। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের জলাধারগুলির জলের স্তর ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। যার ফলে জল সংকটের ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে গোটা দেশ জুড়ে।


তীব্র তাপদাহের খেল চলছে গোটা দেশ জুড়ে। প্রতি দিন লাফিয়ে লাফিয়ে চড়ছে উষ্ণতার পারদ। প্রচন্ড গরমে শুকিয়ে যাচ্ছে খাল-বিল-নদী-পুকুর। গরম যত বাড়ছে, তত দেখা দিচ্ছে পানীয় জলের সংকট। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে জল সঙ্কট (bangalore water crisis) এর দৃশ্য নাড়িয়ে দিয়েছিলো গোটা ভারতকে। টাকা থাকতেও মিলছিলো না পর্যাপ্ত জল। তবে এবার জল সংকটের মুখোমুখি কলকাতাও। জানা যাচ্ছে, কলকাতায় দৈনিক মাথাপিছু ১৫০ লিটার জলে কাজ চলত শহরবাসীর। কিন্তু প্রবল গরমে সেই চাহিদা বেড়ে তিনগুণের বেশি হয়েছে। প্রবল দাবদাহে মানুষ যেমন জল বেশি পান করছেন, তেমনি চাঁদিফাটা গরমে দিনে দুই থেকে তিন বার স্নান করছেন অনেকেই। তাতেই জলের চাহিদা অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। এমতাবস্থায় যে পরিমাণ জল প্রয়োজন হচ্ছে তা সরবরাহ করে উঠতে পারছে না পুরসভা। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের জলাধারগুলির জলের স্তর ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বিগত ১০ বছরের মধ্যে এই মাপ সবচেয়ে কম। যার ফলে জল সংকটের ভয়াবহ চিত্র দেখা যাচ্ছে গোটা দেশ জুড়েই।

দক্ষিণ ভারতের জলাধারগুলির জলের স্তর ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে
দক্ষিণ ভারতের জলাধারগুলির জলের স্তর ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে

দিল্লি:

Trending Updates

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শুধু বায়ু দূষণের মাত্রাই বাড়েনি, কোথাও কোথাও জলের সমস্যাও মারাত্মক হারে বেড়েছে। এই গরমে বায়ু দূষণের মতোই চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে দিল্লির জল সংকট (delhi water crisis)। দূষিত যমুনা নদীর জল শোধন করে দিল্লির মানুষকে সরবরাহ করা হয়। দিল্লির বহু জায়গায় জলের অভাব রয়েছে। দিল্লিতে জল সংকট (delhi water crisis) বিষয়টি সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার।

রাজস্থান :

রাজস্থানের রাজধানী এবং দেশের তথাকথিত গোলাপি শহর জয়পুরও জল সংকটের মুখোমুখি। এখানেও জলের চাহিদা বেশি। পর্যটন এবং ঐতিহ্যবাহী শহর জয়পুরের জন্য জল সরবরাহের উৎসগুলি পৃথক হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসন নতুন জলের উৎসের দিকে মনোনিবেশ করছে। বর্তমানে, জয়পুর জলের জন্য রামগড় জলাধারের উপর নির্ভর করে।

মুম্বই :

অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং জলের উৎসগুলির ক্ষতির কারণে মুম্বই মেট্রোপলিটন অঞ্চলে জলের সংকট ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন  ইতিমধ্যে চাপের মধ্যে রয়েছে বিষয়টি নিয়ে। ১ কোটি ২৫ লাখ মানুষের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

চেন্নাই :

দক্ষিণ ভারতের চেন্নাইয়ে এবার ১,৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু চেন্নাইয়েও জলের সমস্যা তার পরেও রয়েছে। পাঁচ বছর আগে চেন্নাই জল সংকটে ভুগেছিল। নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে জল সংকটের পরিমাণ বেড়েছে। তাই পানীয় জলের অভাবে হিমশিম খাচ্ছে চেন্নাই মেট্রোপলিটন কর্পোরেশন।

অদূর ভবিষ্যতে তীব্র জলসংকট দেখা দেবে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে
অদূর ভবিষ্যতে তীব্র জলসংকট দেখা দেবে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে

লখনউয় :

উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের জল পরিস্থিতিও মোটেই ভালো নয়। পরিবেশবিদরা ইতিমধ্যে লখনউয়ের বিদ্যমান জল পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। লখনউ মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন আগামী দশককে টার্গেট করে একটি জল প্রকল্পেরও পরিকল্পনা করছে। এটি বৃষ্টির জলের ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ বৃদ্ধির ইত্যাদির মতো বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। শহরটি ভাকরা নাঙ্গাল জলাধার থেকে জল পায় এবং বিকল্প প্রকল্পগুলিও চলছে। সেগুলিও আসছে। কিন্তু তার মধ্যেই রয়েছে ব্যাপক জল সংকট।

পঞ্জাব :

পঞ্জাবের ভাতিন্ডা শহরেও জলের সংকট দেখা দিয়েছে। এই অঞ্চলের বেশিরভাগ জল কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত হয়। জলাধারের পানীয় জলও ব্যবহার করতে হবে। ভূগর্ভস্থ জলের মাত্রাতিরিক্ত শোষণও সমস্যা সৃষ্টি করছে। পানীয় জলের সমস্যা যাতে না বাড়ে তা নিশ্চিত করতে ভাতিন্ডা নাগরিক সংস্থাও কঠোর পরিশ্রম করছে।

কলকাতা :

সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা জানাচ্ছে, গরমে কলকাতায় জলের দৈনিক গড় চাহিদা এক লাফে ৩ গুণ বেড়েছে। আগে যেখানে সাধারণত মাথাপিছু ১৫০ লিটার জলে কাজ চলে যেত, সেখানে এখন গড় ৪৫০ লিটার জলের প্রয়োজন পড়ছে মাথাপিছু। এদিকে এই সবের মাঝে আবার গঙ্গার জলস্তর কমেছে। এর জেরে পরিস্রুত জল উৎপাদন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে এই সময়কালে বেহালা, যাদবপুর, গার্ডেনরিচ, বাঁশদ্রোণীতে জলের চাহিদা বেড়েছে বেশ খানিকটা। এই পরিস্থিতিতে চাহিদা মেটাতে এই সব জায়গায় অতিরিক্ত জলের গাড়ি পাঠাচ্ছে কলকাতা পুরসভা। পাশাপাশি মানুষকে আরও বেশি সচেতন হয়ে জল অপচয় রোখার বার্তাও দেওয়া হচ্ছে। পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, বহু বাড়িতেই জলের কল খারাপ। কোথাও আবার পুরোপুরি বন্ধ হয় না জল। এদিকে এক এক বিন্দুতে ০.৫ মিলিলিটার জল পড়ে। এভাবে সারা দিন ধরে যদি জল পড়তে থাকে, তাহলে অনেকটাই জল অপচয় হয়। এছাড়া রাস্তার কল খুলে রাখার জন্যও জলের অপচয় হয়। আবার শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় জলের পাইপে ফাটল থাকায় জলের অপচয় হচ্ছে। ফলে এই গরমে জল সংকটের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে কলকাতায়। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত কয়েক সপ্তাহের তাপপ্রবাহের জেরে হুগলি নদীর বিভিন্ন জায়গায় চড়া পড়েছে। গরমের জেরে অনেক জায়গায় নদীর জলস্তর নেমে গিয়েছে। সাম্প্রতিককালে দক্ষিণ ভারতের চেন্নাই, বেঙ্গালুরুতে জল সঙ্কট (bangalore water crisis) দেখা দিয়েছিল।  এবার কি কলকাতার পালা সেই চিন্তায় পুরসভা।

যে পরিমাণ জল প্রয়োজন হচ্ছে তা সরবরাহ করে উঠতে পারছে না কলকাতা পুরসভা
যে পরিমাণ জল প্রয়োজন হচ্ছে তা সরবরাহ করে উঠতে পারছে না কলকাতা পুরসভা

প্রসঙ্গত, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে একই পরিস্থিতি হলেও সবচেয়ে অস্বস্তিতে দক্ষিণ ভারত। কারণ সেখানে ভূগর্ভস্থ জলের স্তর ক্রমশ কমছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় জল কমিশনের (Central Water Commission) প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, দক্ষিণ ভারতের জলাধারগুলির জলের স্তর ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বিগত ১০ বছরের মধ্যে যা সবচেয়ে কম। এছাড়াও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে তীব্র জলসংকট দেখা দেবে অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলঙ্গানা, কেরল এবং তামিলনাড়ুতে। কারণ স্পষ্ট। আসলে দক্ষিণ ভারতের ৪২টি জলাধারে বর্তমানে মোট ৫৩.৩৩৪ বিলিয়ন বর্গ মিটার বা বিসিএম (bcm) জল থাকার কথা। কিন্তু বাস্তবে রয়েছে মোটে ৮.৮৬৫ বিসিএম। যা মোট ধারণ ক্ষমতার মাত্র ১৭ শতাংশ। গত বছর ছিল ২৯ শতাংশ। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর প্রভাব পড়বে দক্ষিণ ভারতের একাধিক রাজ্যের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে। ভূগর্ভস্থ জলের স্তর কমতে থাকায় সেচ এবং জলবিদ্যুৎ উৎপাদনেও প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি পানীয় জলের সংকট দেখা দেবে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File