Protein for Breakfast | শরীরে প্রোটিনের মাত্রা ঠিক রাখতে ব্রেকফাস্টে অবশ্যই খেতে হবে এই খাবারগুলি!
ওজন এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন হয় শরীরের প্রোটিনের চাহিদার পরিমাণ। আর এই পরিমাণ পরিপূর্ণ না হলে হতে পারে একাধিক শারীরিক সমস্যা।
আমাদের শরীর সুস্থ্য রাখতে এবং শরীরের কার্যক্ষমতার জন্যও সব থেকে প্রয়োজন যেসব উপাদানের তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রোটিন (Protein)। প্রোটিনকে বলা হয় দেহের ‘বিল্ডিং ব্লক’ (Building Block)। আমাদের শরীরের প্রত্যেক অঙ্গে, প্রত্যেক অংশেই রয়েছে প্রোটিনের সমাহার। চুল থেকে শুরু করে হাড় পর্যন্ত, শরীরের সকল অঙ্গেই প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ভিন্ন প্রোটিন বিদ্যমান। এই খাদ্য উপাদান শরীরের একাধিক জরুরি কাজ সামলায়। তাই দেহে প্রোটিনের ঘাটতি হলে শরীরে নানা প্রকার সমস্যা ও রোগের বাসা বাধে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীরের সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ২০টি ভিন্ন অ্যামিনো অ্যাসিড (Amino Acid) প্রয়োজন। যার মধ্যে ১১টি উৎপাদন করতে পারে প্রোটিন। যার মধ্যে ৯টি হলো সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, যাকে বলা হয় 'অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড' (Essential Amino Acid)। প্রোটিনগুলি অ্যামিনো অ্যাসিড নামক অণুর সংমিশ্রণে গঠিত। তবে আমাদের শরীর যেহেতু অ্যামিনো অ্যাসিড সঞ্চয় করতে পারে না, তাই প্রতিদিনই আমাদের অ্যামিনো অ্যাসিডের ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
প্রোটিনের অভাবে শারীরিক সমস্যা । Physical Problems Due to Lack of Protein :
প্রোটিনের সঙ্গে সুঠাম পেশী ও শরীর গঠনের সুসম্পর্ক থাকলেও, এই উপাদানের মাহাত্ম কেবল পেশির তৈরির কাজেই আটকে নেই। বরং দেহের একাধিক এনজাইম (Enzyme) তৈরি, শরীরকে শক্তি প্রদান করা এবং ইমিউনিটিকে (Immunity) শক্ত রাখার কাজেও প্রোটিনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
দেহে প্রোটিনের চাহিদা না মিটলে অর্থাৎ পযাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন শরীরে না থাকলে একাধিক রোগ হতে পারে। যা হালকা থেকে মাঝারি এমনকি গুরুতর পর্যাতেও যেতে পারে। শরীরে প্রোটিনের ঘাটতিতে যে সকল শারীরিক সমস্যা বা রোগের লক্ষণ দেখা যায় তা হল -
- ভঙ্গুর চুল এবং নখ । Brittle Hair and Nails.
- অধিকাংশ সময়ে দুর্বল বা ক্ষুধার্ত বোধ করা । Feeling Weak or Hungry Most of the Time.
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া । Reduced Immunity.
- মেজাজ পরিবর্তন ও চিন্তা বৃদ্ধি পাওয়া । Mood Changes and Increased Stress.
- পেশী দুর্বলতা । Muscle Weakness.
প্রতিদিন কত প্রোটিন খাওয়া উচিত? । How Much Protein Should be Eaten Per Day?
বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রতি পাউন্ড শরীরের ওজনের (০.৪ গ্রাম প্রতি কেজি) প্রতিদিন কমপক্ষে ০.৩৬ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণের পরামর্শ দেন। অর্থাৎ ১২০ পাউন্ড ওজনের ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ৪৩ গ্রাম ও ১৫০ পাউন্ড ওজনের ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ৫৪ গ্রাম এবং ২০০ পাউন্ড ওজনের ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ৭২ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন।
শরীরে প্রোটিনের মাত্রা সঠিক রাখতে ব্রেকফাস্টে কী খেতে পারেন? । What Can You Eat for Breakfast to Keep the Right Protein Level in the Body?
রিপোর্ট অনুযায়ী, অধিকাংশ ভারতীয়দের শরীরেই প্রোটিনের ঘাটতি রয়েছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন ব্যক্তিকে সব সময় দিনের প্রথম খাবার অর্থাৎ ব্রেকফাস্ট ভারী করা উচিত। ফলে শরীরে প্রোটিনের মাত্রা ঠিক রাখতে এবং শরীর সুস্থ্য রাখতে ব্রেকফাস্ট থেকেই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। ফলে দেখে নিন সকালে প্রোটিনযুক্ত কী কী খাবার খেতে পারেন।
১. ডিম । Egg :
ডিমকে বলা হয় 'প্রোটিনের রাজা'। কারণ এক একটি থাকে ডিমে থাকে ৬ থেকে ৭ গ্রাম প্রোটিন। আর ডিমের প্রোটিন কিন্তু অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের। অর্থাৎ এর বায়োলজিক্যাল ভ্যালু (Biological Value) অনেকটাই বেশি। এছাড়াও ডিম আমাদের শরীর সহজেই গ্রহণ করে নেয়। পাশাপাশি, এতো কম দামে প্রোটিনের এর থেকে ভালো সমাহার পাওয়া মুশকিল। ফলে ডিম থেকে কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকলে রোজ সকালে অন্তত একটি করে গোটা ডিম খান। তবে যদি শুধু ডিমের সাদা অংশটি খেতে চান সেক্ষেত্রে দিনে ২ থেকে ৩টি পর্যন্তও খাওয়া যায়।
২. দুধ । Milk :
দুধে প্রোটিন ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে রয়েছে ক্যালশিয়াম (Calcium), ভিটামিন ডি (Vitamin D), ভিটামিন এ (Vitamin A) সহ অন্যান্য জরুরি কিছু ভিটামিন (Vitamin) এবং খনিজ (Minerals)। ছোটবেলায় দুধ আমাদের শরীরের জন্য সব থেকে প্রয়োজনীয় পানীয়। তা বলে কিন্তু বড়বেলাতে দুধের প্রয়োজনীয়তা মিটে যায় তা কিন্তু নয়। বয়স যেমনই হোকনা কেন আমাদের শরীরে অন্তত এক গ্লাস দুধ প্রয়োজন।
তবে বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেকেই দুধে অ্যালার্জি রয়েছে। এই সমস্যার নাম ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স (Lactose Intolerance)। সেক্ষেত্রে ল্যাকটোজ মুক্ত দুধ খেতে পারেন বা পনির এবং ছানা খেতে পারেন। অবশ্যই মাথায় রাখবেন, দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
৩. দই । Curd :
দই আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি খাবার। এতে রয়েছে অনেকটা পরিমাণে প্রোটিন ছাড়াও ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়ামের মতো প্রয়োজনিয় খনিজ এবং ভিটামিন। পাশাপাশি এই খাবারে রয়েছে প্রোবায়োটিকের (Probiotic) ভাণ্ডার। যা আমাদের পেটের খেয়াল রাখে। ফলে চেষ্টা করুন রোজ ব্রেকফাস্টে দই খাওয়ার। তবে মাথায় রাখবেন, দোকান থেকে দই কিনে খাওয়ার থেকে বাড়িতে দই পেতে খাওয়া ভালো ও বেশি স্বাস্থ্যকর।
৪. মাছ বা চিকেনের স্টু । Fish or Chicken Stew :
বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, ব্রেকফাস্ট ভারী করা উচিত কারণ এই মিল (Meal) হচ্ছে আমাদের দিনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ মিল। ফলে ব্রেকফাস্টের মাধ্যমেই ভারী খাবারের সঙ্গে প্রোটিন পেতে খেতে পারেন মাছ বা চিকেনের স্টু। এই দুই খাবারেই রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন। ফলে দেহের প্রোটিনের চাহিদা সহজেই মিটে যায়। মাছ ও মাংসের প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। এইপ্রকার স্টু-র প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে এর সঙ্গে দিতে পারেন একাধিক সবজিও।
৫. টোফু । Tofu :
টোফু নামক এই খাবারটি হলো সোয়াবিনের দুধ থেকে তৈরি পনির। যার মধ্যে রয়েছে প্রোটিনের সমাহার। টোফু শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিনের ঘাটতি মেটাতে পারে। পাশাপাশি পুষ্টি যোগান করে। যাদের টোফু খেতে ভালো লাগেনা তারা সোয়াবিন (Soybean) খেতে পারেন। সোয়াবিনেও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে।
মনে রাখবেন প্রোটিনের অভাবে নানা রকমের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। ফলে শরীর সুস্থ্য রাখতে প্রতিদিন এবং সব মিলেই প্রোটিন যুক্ত খাবার রাখুন।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- শরীর সুস্থতা
- হাই প্রোটিন খাদ্য
- ভিটামিন ডি
- পেটপুজো