Energy Giving Foods | শীতে ক্লান্তি,আলস্য দূর করে এনার্জি যোগাবে 'সুপারফুড'! দেখুন শক্তি পেতে কোন কোন খাবার খাবেন?
সুপারফুড বা শক্তি প্রদানকারী খাদ্য গুলি শরীরের সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে, ক্লান্তি-আলস্য দূর করে এনার্জির যোগান দিতে পারে। জানুন সুপারফুড বা শক্তি প্রদান খাদ্য কী এবং এই খাদ্য তালিকায় কী কী রয়েছে।
শীতকালে কমবেশি সকলের শরীরেই বেড়ে যায় আলস্যতা। যার ফলে এই মরশুমে কমে যায় কর্মক্ষমতাও। প্রচুর কাজ পরে থাকতেও শরীর যেন একদমই চায়না কাজ করতে। বিশেষ করে সকালবেলা, দিনের শুরুতে কাজ করার একদম এনার্জি পাওয়া যায় না। তবে 'এনার্জি নেই'' বললে তো হবে না। কাজ তো করতেই হবে। তবে শীতে অলস্যতা কাটিয় শরীরে এনার্জি যোগাতে পারে বিশেষ কিছু খাবার বা বলা চলে 'সুপারফুড' (Superfoods)! এই সুপারফুড বা শক্তি প্রদানকারী খাদ্য (Energy-giving foods) কেবল শীতে এনার্জি যোগান দিতেই নয়, শরীর স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এই খাবার বেশ উপকারী। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই সুপারফুড বা শক্তি প্রদানকারী খাদ্য (Energy-giving foods) গুলি যদি নিত্যদিনের ডায়েটে রাখা যায়, তাহলে ব্যক্তি নানারকমের রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে তার আয়ুও বৃদ্ধি হবে।
সুপারফুড বা শক্তি প্রদান খাদ্য কী ? । What are Energy Giving Food or Superfoods ?
অনেকের মনে হতে পারে সুপারফুড বা শক্তি প্রদানকারী খাদ্য মানে কোনও সাপ্লিমেন্ট বা কৃত্তিম খাবার। তা কিন্তু নয়। তাহলে সুপারফুড বা শক্তি প্রদান খাদ্য কী (What are energy-giving food)? চিকিৎসকদের মতে, সুপারফুড (Superfoods) এমন একটি খাবার যা খুব বেশি পুষ্টিকর। অর্থাৎ যে সব খাবারে ক্যালোরি থাকে কম, বেশি থাকে নানা পুষ্টিকর উপাদান। যে খাবারগুলির মধ্যে খনিজ, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। পাশাপাশি যে খাবারগুলি শরীরে প্রয়োজন মেটাবে। যে খাবারগুলি খেলে হার্টের সমস্যা, ক্যানসার, আর্থারাইটিস, স্ট্রোকের মতো রোগকে দূরে রেখে ইমিউনিটি বাড়াবে। সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চাইলে এই ধরণের খাবার ডায়েটে রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই জাতীয় খাবারের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস, ফাইবার, ফ্যাটি অ্যাসিড- এইসব উপকরণ ভরপুর থাকে। অর্থাৎ মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় একাধিক পুষ্টি উপকরণ সমৃদ্ধ খাবারকেই বলা হয় সুপারফুড।
আরও পড়ুন : চিনিযুক্ত পানীয় ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ১৮ শতাংশ! চিনির বিকল্প হিসেবে কী কী খেতে পারেন দেখুন!
সুপারফুড বা শক্তি প্রদানকারী খাদ্য চার্ট । Superfood or Energy-giving Food Chart :
শরীরে এনার্জির যোগান দিতে এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দেখে নিন কোন কোন বিশেষ খাবার বা সুপারফুড খাবেন। আপনার জন্য রইলো শক্তি প্রদানকারী খাদ্য চার্ট (Energy-giving Food Chart)।
বেরি :
বেরি স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারি। বিশেষত ব্লুবেরি। এই ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস রয়েছে যা সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক মাত্রায় বজায় রাখে এবং আলস্য কাটিয়ে কাজ করার জন্য শক্তির যোগান দেয়।
বাদাম:
আখরোট, আমন্ড, পেস্তা ইত্যাদি বাদামে কিন্তু একইসঙ্গে ফ্যাট, ফাইবার ও প্রোটিন পাওয়া যায়। বাদামের ফ্যাট মোনোস্যাচুরেটেড, তার সঙ্গেই ওমেগা থ্রি ও সিক্স থাকছে। ভিটামিন ই ও ম্যাগনেশিয়ামেরও ভাল উৎস বলা যেতে পারে বাদামকে। যার জন্য ব্রেন ফুড বলা হয়ে থাকে বাদামকে। রোজকার খাবারে অল্প বাদামও রাখতে পারেন। বিশেষত আমন্ড। এই প্রকার বাদামের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরমাণে ম্যাগনেসিয়াম এবং হেলদি ফ্যাট। এই দুই উপকরণ শরীরে এনার্জির মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি ক্লান্ত, অবসন্ন ভাব দূর করে।
পালংশাক :
পালংশাক শীতের মরশুমের অন্যতম পরিচিত শাক। এই শাকের মধ্যে রয়েছে আয়রন। এই উপকরণ সারা শরীরে অক্সিজেন সঠিকভাবে সঞ্চালনে সাহায্য করে। তার ফলে মানবদেহের মেটাবলিজম রেট ঠিক থাকে এবং ক্লান্তি, অবসন্ন ভাব দূর হয়।
কিনুয়া :
কিনুয়া এমন একটি খাবার যা প্রোটিন সমৃদ্ধ। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে এই খাবারের মধ্যে। ভরপুর প্রোটিন যুক্ত এই খাবার মানবদেহে এনার্জির মাত্রা সঠিকভাবে বজায় রাখে এবং একইসঙ্গে অনেকক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে।
চিয়া সিডস :
বর্তমানে অনেকে ওজন হ্রাস করার জন্য চিয়া সিডস খেতে থাকেন। তবে চিয়া সিডস শুধুমাত্র ওজন কমাতেই কাজে লাগে, তা নয়। এর মধ্যে থাকা ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার এবং প্রোটিন রয়েছে, যা শরীরে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং একই সঙ্গে শরীরে এনার্জির মাত্রা সঠিকভাবে বজায় রাখে।
স্যামন মাছ :
স্যামন মাছের মধ্যে ভরপুর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি রয়েছে। মস্তিষ্ক সজাগ, সক্রিয় রাখতে এবং মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপ প্রখর করতে কাজে লাগে এইসব উপকরণ। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখার জন্য স্যামন মাছে থাকা উপকরণগুলি সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে।
গ্রিক ইয়োগার্ট :
গ্রিক ইয়োগার্টের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। এই খাবার ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর পাশাপাশি হজমশক্তি ভাল রাখে। এছাড়াও শরীরে এনার্জি বাড়াতেও কাজে লাগে।
মিষ্টি আলু :
সুইট পটেটো বা মিষ্টি আলুর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট কনটেন্ট রয়েছে। মিষ্টি আলু শরীর চাঙ্গা রাখতে অর্থাৎ এনার্জি লেভেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে। মানসিক ভাবে প্রখর, সক্রিয়, সজাগ এবং সচেতন রাখে।
গ্রিন টি :
সাধারণ দুধ চা বা কফির থেকে গ্রিন টি বেশ উপকারী। গ্রিন টি- এর মধ্যে রয়েছে ক্যাফাইন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। এই দুই উপকরণের সাহায্যে মানবদেহে মেটাবলিজম রেট বৃদ্ধি পায় এবং মানসিক ভাবে সচেতন থাকতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এনার্জি লেভেল বৃদ্ধি করতেও সহায়তা করে।
ডার্ক চকোলেট :
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, এমনি চকোলেটের থেকে ডার্ক চকোলেট বহুগুনে উপকারী। ডার্ক চকোলেটের মধ্যে রয়েছে ক্যাফাইন। এই উপকরণ এন্ডরফিনসের নিঃসরণকে উদ্দীপিত করে। তার ফলে মনমেজাজ ভাল থাকে এবং শরীরে কাজ করার এনার্জি বা শক্তিও পাওয়া যায়।
মশলা:
দারুচিনি, লবঙ্গ, হলুদেও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে। এদের ওর্যাক ভ্যালুও অনেক। ওর্যাক ভ্যালু হলো খাবারের অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট লেভেল। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টস যেহেতু অনাক্রম্যতা তৈরি করে তাই এই ভ্যালুর বিশেষ গুরুত্ব আছে।
ডাবের জল:
প্রাকৃতিক হেল্থ ড্রিঙ্ক বলা যেতে পারে। এতে তো প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন (থায়ামিন, রাইবোফ্লাভিন, নিয়াসিন, ভিটামিন সি) ও মিনারেলস (ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ) থাকে। ১০০ মিলিলিটার ডাবের জলে প্রায় ১৯ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। তাই শরীরে ইনস্ট্যান্ট শক্তি বাড়াতেও এর জুড়ি নেই।
তবে সুপারফুডের তালিকা নিয়ে বেছে বেছে তা খেলেই কিন্তু চলবে না। প্রত্যেক দিনের খাবারে যেমন প্রোটিন থাকবে, তেমনই কার্বসও খেতে হবে। পাশাপাশি সুপারফুড কিন্তু সকলের কাছে সমান পুষ্টিকর নয়। বিএমআর, বয়স, শারীরবৃত্তীয় সমস্যা আছে কি না সব দেখে খেতে হবে সুপারফুড। ফলে ডায়েটে কোনোরকমের খাবার যোগ করার আগে বা কোনও রকমের সুপারফুড ডায়েটে রাখার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- খাদ্যগুণ
- স্বাস্থ্য
- শরীর সুস্থতা
- শীত ঋতু
- পেটপুজো