লাইফস্টাইল

Social Media Day | বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি? দেখুন কীভাবে কমাবেন! জানুন ছোটদের ক্ষেত্রে কী করতে পারেন!

Social Media Day |  বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি? দেখুন কীভাবে কমাবেন! জানুন ছোটদের ক্ষেত্রে কী করতে পারেন!
Key Highlights

সোশ্যাল মিডিয়া দিবসের দিন শপথ নেওয়া হোক সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে। জানুন কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি কমাবেন আপনার এবং আপনার সন্তানের ক্ষেত্রে।

বর্তমান যুগে আট থেকে আশি প্রায় সকলেই কম বেশি যুক্ত সোশ্যাল মিডিয়ার (Social Media) সঙ্গে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে একবার ফেসবুক (Facebook) বা ইনস্টাগ্রাম (Instagram) অথবা টুইটার (Tweeter) না স্ক্রোল করলেই নয়। এছাড়া এখন তো আত্মীয়, বন্ধু এমনকি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংবা টিউশনির শিক্ষক-শিক্ষিকার সঙ্গেও যোগাযোগ করার অন্যতম মাধ্যম হল হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp)। বলাই বাহুল্য, বিশ্বের অধিকাংশ মানুষের জীবনে একটা বড় ভূমিকা পালন করছে এই সোশ্যাল মিডিয়া। আর আজ অর্থাৎ ৩০সে জুন বিশ্বব্যাপী এই সকল মাধ্যমগুলির দিন। অর্থাৎ আজ 'সোশ্যাল মিডিয়া দিবস' (Social Media Day)।

সোশ্যাল মিডিয়া দিবসের ইতিহাস । History of Social Media Day :

৩০সে জুন প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় সোশ্যাল মিডিয়া দিবস। ২০১০ সালে প্রথম বার পালিত হয়েছিল এই বিশেষ দিনটি। ম্যাশাবল (Mashable) নামক একটি এন্টারটেইনমেন্ট এবং মাল্টি-বিজ়নেস প্ল্যাটফর্ম (Entertainment and Multi Business Platform) সর্বপ্রথম এই দিনটি পালন করেছিল। এর দিবস পালনের পিছনে মূল লক্ষ্য ছিল একটাই, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এবং বিশ্বব্যাপী যোগাযোগে এর ভূমিকার উপরে নজর দেওয়া।

সোশ্যাল মিডিয়ার ইতিহাস । History of Social Media :

১৯৯৭ সালে প্রথম সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম লঞ্চ করেছিলেন অ্যান্ড্রু ওয়েইনরিচ (Andrew Weinrich)। সিক্স ডিগ্রিজ় (Six Degrees) নামের সেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীরা নিজেদের বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যদের তালিকাভুক্ত করতে পারতেন। পাশাপাশি বুলেটিন বোর্ড (Bulletin Boards), স্কুল অ্যাফিলিয়েশন (School Affiliations) এবং প্রোফাইলগুলি অ্যাক্সেস করার মতো বৈশিষ্টের সুবিধা পেতেন সেই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীরা। প্রায় এক মিলিয়নের থেকেও বেশি মানুষ ব্যবহার করতেন এই  প্ল্যাটফর্ম। তবে ২০০১ সালেই যাত্রা শেষ করে সিক্স ডিগ্রিজ়।

এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্নত হয়েছে প্রযুক্তি, উন্নত হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াও। ২০০২ সালে লঞ্চ হয় ফ্রেন্ডস্টার (Friendster) নামক আর একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। এরপর ২০০৩ সালে বিজ়নেস-ফোকাসড প্ল্যাটফর্ম লিঙ্কডইন (LinkedIn) লঞ্চ হয়। ২০০৪ সালে  লঞ্চ হয় অরকুট (Orkut), সেই বছরেই ফেসবুক (Facebook) এবং মাইস্পেসও (MySpace) চলে আসে। এরপর ২০০৫ সালে ইউটিউব (YouTube), ২০০৬ সালে ট্যুইটার (Twitter), ২০০৯ সালে হোয়াটসঅ্যাপ (WhatsApp),২০০৯ সালে ইনস্টাগ্রাম, ২০১১ সালে স্ন্যাপচ্যাটের (Snapchat) মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম আসে জগতে।

সোশ্যাল মিডিয়া ও আসক্তি । Social Media and Addiction : 

বর্তমানে সবারই হাতের মুঠোয় সোশ্যাল মিডিয়া। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে শুরু করে রাতে ঘুমানোর আগে অনেকেই কম বেশি ব্যবহার করেন সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম। আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং দিনের সব থেকে বড় বিনোদনের উৎস হলো সোশ্যাল মিডিয়া। তবে এখন প্রায়ই দেখা যায় অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর। আগে এই আসক্তি কেবল ছাত্র-ছাত্রী, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে দেখা গেলেও এখন ছোট শিশু থেকে শুরু করে বয়ষ্কপ্রাপ্ত সকলেরই আসক্তি বেড়েছে এই সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর। সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তির কিছু প্রধান কারণ হল কম আত্মসম্মান, উদ্বেগ, বিষন্নতা, এবং মানুষের মধ্যে ব্যক্তিগত অসন্তোষ। কিছু ক্ষেত্রে এটি ভালো হলেও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি কিন্তু ডেকে আন্তে পারে নানান সমস্যা। সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তির ফলে শারীরিক কার্যক্ষমতার হ্রাস, মানসিক অবসাদ, এক ঘরে হয়ে যাওয়ার মতো একাধিক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে জীবনে। ফলে দেখে নিন কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি দূর করবেন।

আরও ভাল বিকল্পের খোঁজ । Find Better Options :

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি কমানোর জন্য অন্য বিকল্প খোঁজা অত্যন্ত দরকার। এই নতুন বিকল্প হতে পারে কোনও কাজ বা হবি (Hobby)। যেকোনো আসক্তি ছাড়ার জন্য কোনও কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা দরকার। যখনই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে ইচ্ছা হবে তখনই এই বিকল্প নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেতে হবে।

 সময়সীমা বেঁধে নিন । Fix a Deadline : 

সোশ্যাল মিডিয়ার  আসক্তি কমাতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো সময়সীমা বেঁধে নেওয়া। প্রতিদিন কিছু ঘন্টা বা মিনিট সময় বেঁধে নিন। নিজের মাথায় রাখুন, বেঁধে নেওয়া সময়ের বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন না। দরকার পড়লে অ্যালার্মও দিতে পারেন।

সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তি দূর করতে সব থেকে বড় বিষয় হলো নিজের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখা। আপনি যদি দিনের অধিকাংশ সময় সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকেন এবং আসক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে এই আসক্তি দূর করতে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা খুব প্রয়োজন। মনে রাখবেন এই আসক্তি সেরকম ক্ষতি করছে না বলে মনে করলেও সব আসক্তিই কিন্তু খারাপ। সেরকমই সোশ্যাল মিডিয়ার আসক্তিও খারাপ।

ছোটদের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি । Children Social Media Addiction : 

বড়দের মতো বর্তমানে ছোটদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি বেড়েছে বহু গুণ। বর্তমান যুগে ছোটদের মন ভোলানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া খুলে মোবাইল ফোন বাড়ির খুদেকে দিয়ে দেওয়ার এক প্রবণতা দেখা যায় অভিভাবকদের। সাময়িকভাবে ছোটদের মন ভালো করলেও, এই প্রবণতা কিন্তু আপনার শিশুর জন্য ডেকে আন্তে পারে বড় বিপদ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাময়িক সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার হয়ে ওঠে আসক্তি। আর মা বাবাদের হাজারও বকুনিও এই ছোটদের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমাতে পারেনা অনেক ক্ষেত্রেই। বরং সোশ্যাল মাধ্যমের ব্যবহার কমাতে বলা হলে তাদের মধ্যে দেখা যায় জেদ, রাগ, ভুল পদক্ষেপ নেওয়ার প্রবণতা। তাহলে এই ক্ষেত্রে মা বাবাদের কী করণীয়? দেখুন ছোটদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কমানোর উপায় নিয়ে বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন। কোন বিষয়গুলিই বা মাথায় রাখতে হবে মা-বাবাদের।

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে কিছু নিয়ম বানান । Make Some Rules About Social Media Usage : 

কেবল ছোটদের জন্যই নয় পরিবারের সকলের জন্যই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে কিছু নিয়ম বানান। যেমন, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করার সময়, কখন শহ্সাল মিডিয়া ব্যবহার করা যাবে ইত্যাদি। পরিবারের বড়রাও যদি ছোটদের সঙ্গে এই নিয়ম মানেন তাহলে ছোটদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা একটি সীমার মধ্যে থাকবে। মনে রাখবেন ছোটরা বড়োদের দেখেই শিক্ষা নেয়। সেক্ষেত্রে আপনি নিজে যদি ঘন্টার পর ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন তাহলে আপনার সন্তানও সেই আসক্তির দিকেই এগোবে।

ছোটদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব সম্পর্কে শেখান । Teach Children About The Effects of Social Media :

ছোটদের সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই রয়েছে। এই দুই ক্ষেত্রে প্রভাব সম্পর্কে আপনার সন্তান অবগত থাকলে সে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি দ্বারা প্রভাবিত হবে না এবং নিজেই বুঝতে পারবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে কোন জিনিষটা ক্ষতিকর এবং কোনটি নয়।

সন্তানের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ওপর নজর রাখুন । Monitor Your Child’s Social Media Usage : 

আট থেকে আশি সকলকেই বুঝে শুনে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে হয়। বড়োরা এই ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করতে পারলেও ছোটরা বুঝে উঠতে পারেনা। ফলে সব সময় সন্তানের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ওপর নজর রাখবেন। অর্থাৎ তারা কিরকম ছবি বা ভিডিও দেখছে, কাদের সঙ্গে কথা বলছে, শহ্সাল মিডিয়ার কোনোরকম নেতিবাচক প্রভাব তাদের ওপর পড়ছে কিনা।

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচকতা সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত। এতে আসক্তি, মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে এমন কন্টেন্ট বা ছবি-ভিডিও, সংঘর্ষ তৈরী করার উৎস নানা রকম খারাপ বা নেগেটিভ জিনিস দেখা যায়। বর্তমানে 'সাইবার বুলিং' (Cyber Bullying) হয়ে উঠেছে এক নতুন বিপদ। 'সাইবার বুলিং' এর অর্থ হলো, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোনও ব্যক্তি বা ব্যক্তি গোষ্ঠীকে যখন মানসিকভাবে অপমান করা বা অপবাদ করা। এই ধরণের 'বুলিং'র (Bullying) ফলে অসংখ্য মানুষ বিষন্নতা, মানসিক অবসাদ, মানসিক রোগে ভোগেন। এরকমও দেখা গিয়েছে যে, এই ধরণের  'বুলিং'র  জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অনেকে। যদিও এরকম ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য আইনত ও প্রযুক্তিগত একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা-সহ সরকার। তবুও যেহেতু সোশ্যাল মিডিয়াতে যে কোনও মানুষ তার নিজস্ব মতামত কোনো বাধায় প্রকাশ করতে পারেন, তাই সকলেরই এই ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া উচিত এবং ভেবে চিনতে এই মাধ্যম ব্যবহার করা উচিত।

সোশ্যাল মিডিয়ার কেবল খারাপ দিকই আছে তা কিন্তু নয় দূরের মানুষের সঙ্গে যেমন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করে দেয়। তেমনই এই মাধ্যম কিন্তু বাঁচাতে পারে প্রাণও। এই বিষয়ে আমরা প্রায় সকলেই বড়ো উদাহরণ দেখতে পেয়েছি মহামারী করোনাকালে (Corona Situation)। সেই সময় দেখা গিয়েছে, রক্ত বা অক্সিজেনের তৎক্ষণাৎ প্রয়োজনের জন্য অসংখ্য মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন এবং সেই পোস্টের ফলেই বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তি খবর পেয়ে সাহায্যের জন্যে ছুটে যায়। কেবল তাই নয়, বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে এক বড় সংবাদ মাধ্যম। সেকেন্ডের মধ্যেই যেকোনো ব্যক্তি তার আশেপাশে ঘটনা কোনও ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে আর পাঁচটা মানুষকে সচেতন করতে পারেন।

অবশেষে বলাই চলে, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার যেমন মানবজীবনের উন্নতি ঘটিয়েছে তেমনই ক্ষতিও করেছে। আসলে সোশ্যাল মিডিয়া খারাপ না ভালো তা কেউই জোর দিয়ে বলতে পারবেন না। কারণ এই সংযোগ মাধ্যমের খারাপ-ভালোর চরিত্র সম্পূর্ণ আমাদের অর্থাৎ সাধারণ মানুষদের হাতে। ফলে আজ অর্থাৎ 'সোশ্যাল মিডিয়া দিবসে'র দিন থেকেই আসুন আমরা সকলেই সমাজকে উন্নত করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়াকে স্বচ্ছ, সুন্দর এবং এক ইতিবাচক মাধ্যম করে তোলার জন্য শপথ নি।