CIBIL Score | ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা থেকে বিনা ঝঞ্ঝাটে লোন পেতে ভালো রাখুন আপনার সিবিল স্কোর!

Friday, December 15 2023, 11:27 am
highlightKey Highlights

ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ পেতে সিবিল স্কোর হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিবিল স্কোরের পরিসংখ্যান ভালো রাখতে মেনে চলুন এই কয়েকটি বিষয়।


ব্যাঙ্ক থেকে বা যে যেকোনও আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ বা লোন (Loan) পেতে সিবিল স্কোর (CIBIL Score) হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। এক্ষেত্রে আপনার যদি সিবিল স্কোর বেশি থাকে তাহলে লোন পেতে বেশি সুবিধা পাবেন এবং যদি এই স্কোর কম হয় তাহলে ঋণের জন্য আবেদন জানাতে বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারেন। ফলে প্রত্যেকেরই সিবিল স্কোরের মাত্রা ঠিক রাখা প্রয়োজন।

লোন পেতে সিবিল স্কোর  হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়
লোন পেতে সিবিল স্কোর  হল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়

যখন আমরা ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন করি তখন, সেই সংস্থা থেকে ঋণ আবেদনকারীর সিবিল স্কোর দেখা হয়। সিবিল স্কোর, যার পূর্ণ অর্থ হলো ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো ইন্ডিয়া লিমিটেড (Credit Information Bureau India Limited) নাগরিকদের অর্থনৈতিক লেনদেন সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য সংরক্ষণ করে।

ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা  আবেদনকারীর সিবিল স্কোর দেখে
ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা  আবেদনকারীর সিবিল স্কোর দেখে

সিবিল স্কোর কী ? । What Is CIBIL Score? : 

ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো ইন্ডিয়া লিমিটেড বা সিবিল ভারতের চারটি শীর্ষস্থানীয় ক্রেডিট তথ্য সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। সিবিল স্কোর তৈরী হয়, সারা দেশে ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করা তথ্যের উপর ভিত্তি করে। যা ব্যাঙ্ক থেকে এক ঋণ আবেদনকারীকে তার আর্থিক আচরণ সম্পর্কে একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে এবং তার ঋণযোগ্যতা সম্পর্কে তথ্য দেয়। এই স্কোর তিন সংখ্যার নম্বর। যার মাধ্যমে কোনও ঋণগ্রহীতার ধার নেওয়ার ইতিহাস সারাংশ জানা যায়। আক্ষরিক অর্থে যার সিবিল স্কোর যত বেশি তাঁর লোন পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। একজন ব্যক্তির সিবিল স্কোর ৩০০ থেকে ৯০০ মধ্যে হতে পারে। ওই ব্যক্তির সিবিল স্কোর পরিসংখ্যান নির্ধারিত হয় তার অতীতে ঋণ বা লোন শোধ করার ক্ষমতার ওপর।

সিবিল স্কোর, যার পূর্ণ অর্থ হলো ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো ইন্ডিয়া লিমিটেড
সিবিল স্কোর, যার পূর্ণ অর্থ হলো ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো ইন্ডিয়া লিমিটেড

সিবিল স্কোর নির্ভর করে কোনও ঋণগ্রহীতা ক্রেডিট কী ভাবে ব্যবহার করেছেন, তিনি ইএমআই (EMI) নিলে সেটি ঠিক সময় শোধ করতে পারছেন কিনা এবং গ্রহীতা কত দিন ধরে  ধার নেন এবং শোধ করেন।

সিবিল স্কোরের গুরুত্ব । Importance of CIBIL Score :

ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার সময় সিবিল স্কোর হলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। কারণ আপনি যখনই ঋণের জন্য আবেদন করবেন, ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা আপনার সিবিল স্কোরের পরিসংখ্যান ও ইতিহাস দেখবে। এই স্কোরের ওপর নির্ভর করে আপনি লোন পাবেন কি না। কারণ সিবিল স্কোর বলে দেয় আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা। ভাল বাবা বেশি  সিবিল স্কোর ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনার সঙ্গে অনুকূল সুদের হারকেও বাড়িয়ে তোলে। অন্যদিকে, কম সিবিল স্কোর হলে ভাল ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দিতে পারে। ব্যক্তিগত ঋণ পেতে ন্যূনতম সিবিল স্কোর ৭৫০ বা তার বেশি হওয়া দরকার।

সিবিল স্কোর ৩০০ থেকে ৯০০ মধ্যে হতে পারে
সিবিল স্কোর ৩০০ থেকে ৯০০ মধ্যে হতে পারে

সিবিল স্কোর ভালো রাখার উপায় । Ways to Maintain a Good CIBIL Score :

ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা থেকে ঋণ পেতে হলে সিবিল স্কোর ভালো রাখা প্রয়োজন। ৭৫০ বা ৭৫০ এর বেশি পরিসংখ্যান থাকলে তা ভালো 'ক্রেডিট স্কোর' (Credit Score) বা ভালো সিভিল স্কোর হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে চট জলদি দেখে নিন কীভাবে ভালো রাখবেন আপনার সিভিল স্কোর।

সিবিল স্কোরের পরিসংখ্যান কম হলে ঋণ পেতে সমস্যা হয়   
সিবিল স্কোরের পরিসংখ্যান কম হলে ঋণ পেতে সমস্যা হয়   

১. বকেয়া টাকা পরিশোধ করা । Payment of Dues :

ঋণের ক্ষেত্রে যে কোনও ধরনের বকেয়া টাকা দ্রুত মিটিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ, এই ক্ষেত্রে কোনোরকম অসাবধানতা প্রভাব ফেলতে পারে সিবিল স্কোরের ওপর। যার ফলে পরবর্তীকালে ঋণের জন্য আবেদন করলে তা পেতে সমস্যা হয় বা তা ক্রেডিট স্কোরকে কমিয়ে দেওয়ার সম্ভবনা থাকে। ফলে যে কোনও ধরনের বিল, যেমন ইলেকট্রিক (Electric Bill), ক্রেডিট কার্ড সহ অন্যান্য বিভিন্ন বিল সঠিক সময় পরিশোধ করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে।  সঠিক সময়ে বিল না পরিশোধ করলে বিলের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং পরবর্তীকালে প্রভাব ফেলে সিবিল স্কোরের ওপর। এক্ষেত্রে ইএমআই-ও সঠিক সময়ে পরিশোধ করা দরকার।

সিভিল স্কোর ভালো রাখতে হলে  বকেয়া টাকা দ্রুত মিটিয়ে দিন
সিভিল স্কোর ভালো রাখতে হলে  বকেয়া টাকা দ্রুত মিটিয়ে দিন

২. তথ্যগত কোনও ত্রুটি সংশোধন । Correction of Any Data Errors :

অনেক সময় সিবিল স্কোর সম্পর্কে তথ্যগত ত্রুটি থাকে, যা ঋণ আবেদন করার ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে তথ্যে কোনও ভুল থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করা দরকার। ব্যাঙ্ক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঋণদাতা সংস্থা-সহ যে কোনও পক্ষেরই অনেক সময়ে ঋণের আবেদনপত্র প্রসেসিংয়ের সময়ে তথ্যগত ভুল থাকতে পারে। এই ভুল সংশোধন করার জন্য প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ দিনের সময় দেওয়া হয়। ফলে তথ্যগত ত্রুটি থাকলে এই সময়ের মধ্যেই সেটি সংশোধন করা দরকার। নাহলে এই ত্রুটি ক্রেডিট কার্ড রেটও (Credit Card Rate) বাড়িয়ে দেয়।

তথ্যে কোনও ভুল থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করা দরকার
তথ্যে কোনও ভুল থাকলে তা দ্রুত সংশোধন করা দরকার

৩. ঋণের পুনরায় আবেদন করা এড়িয়ে যান । Avoid Reapplying for Loans :

আবেদন করা ঋণ খারিজ হয়ে গেলে তার তথ্য আপনার ক্রেডিট রিপোর্টে থাকবে। তাই এক ব্যাঙ্কে ঋণের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে অন্য ব্যাঙ্কে আবেদন না করার চেষ্টা করুন। পূর্ববর্তী ঋণের আবেদন খারিজ হওয়ার রিপোর্ট দেখলে পরবর্তী ব্যাঙ্কও পুনরায় লোনের আবেদন খারিজ করে দিতে পারে।

এক ব্যাঙ্কে ঋণের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে অন্য ব্যাঙ্কে আবেদন না করার চেষ্টা করুন
এক ব্যাঙ্কে ঋণের আবেদন খারিজ হয়ে গেলে অন্য ব্যাঙ্কে আবেদন না করার চেষ্টা করুন

৪. আপনার ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন অনুপাত বজায় রাখুন । Maintain Your Credit Utilisation Ratio :

ক্রেডিট ব্যবহারের হার সামগ্রিক ক্রেডিট সীমার ৩০ শতাংশের নিচে রাখা উচিত। আপনার ক্রেডিট ব্যবহারের অনুপাত কমার ফলে আপনার ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি পাবে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকতে হবে। এই কার্ড ব্যবহার করে যে কোনও সময় লোন নেওয়া যায়। তাই অবশ্যই খেয়াল রাখবেন ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের সীমা যেন ৩০ শতাংশ অতিক্রম না করে। আপনার ক্রেডিট কার্ডের সীমা যদি ৫০ শতাংশ বা তার বেশী হয় তাহলে আপনার সম্পর্কে ব্যাঙ্কের ধারনা হবে, আপনি হয়তো প্রায়শই ধার বাকি রাখেন। সেক্ষেত্রে লোন পেতে সমস্যা হতে পারে। আরও একটি বিষয় মাথায় রাখবেন, নতুন লোন বা ক্রেডিট কার্ড যদি নিতে চান তাহলে একসঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করবেন না। এক্ষেত্রে আপনার সিবিল  স্কোরের ওপর প্রভাব পড়তে পারে।

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের সীমা যেন ৩০ শতাংশ অতিক্রম না করে
ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের সীমা যেন ৩০ শতাংশ অতিক্রম না করে

৫.  বার্ষিক ৩ বার ক্রেডিট হিস্ট্রি বিবেচনা । Credit History Review 3 Times Annually :

কিছু সময় অন্তর অন্তর আপনার সিবিল রিপোর্ট দেখুন।  প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস অন্তর ক্রেডিট হিস্ট্রি অবশ্যই পর্যালোচনা করবেন। তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার ক্রেডিট স্কোর কেমন রয়েছে। যদি কোথাও ঋণ বাকি থাকে সেক্ষেত্রেও আপনি সতর্ক হয়ে যেতে পারবেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লোন শোধ করে ফেলুন। তাহলে আপনার সিবিল স্কোরও ঠিক থাকবে। তবেও প্রতি মাসে সিভিল স্কোর চেক করা উচিত নয়। কারণ এক্ষেত্রে আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতী নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে।

প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস অন্তর ক্রেডিট হিস্ট্রি অবশ্যই পর্যালোচনা করুন 
প্রতি ৩ থেকে ৪ মাস অন্তর ক্রেডিট হিস্ট্রি অবশ্যই পর্যালোচনা করুন 

৬. জয়েন্ট অ্যাকাউন্টে বিশেষ নজর । Special Focus on Joint Accounts :

আপনার যদি কারোর সঙ্গে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট (Joint Account) থাকে তাহলে সেক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখতে হবে। খেয়াল রাখবেন, আপনার সঙ্গে যিনি অ্যাকাউন্ট হোল্ডার (Account Holder) হিসেবে রয়েছেন তিনিও সঠিক সময় ঋণের  অর্থ পরিশোধ করছে কিনা। মনে রাখবেন, জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে যদি একজন ঋণ পরিশোধে কোনও গণ্ডগোল করে তাহলে সেই প্রভাব সিভিল স্কোরের ওপর পড়বে। তাই সঠির সময় যাতে জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের লোন পরিশোধ হয় সেটা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখতে হবে
জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখতে হবে

জীবনে অনেক সময় নানা কারণে আমাদের ঋণ নিতে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের পরিচিত কারুর কাছ থেকে লোন নিয়ে থাকি। কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় তখন ব্যাঙ্ক বা আর্থিক সংস্থা থেকে আমরা ঋণ নিয়ে থাকি। তবে এক্ষেত্রেও বহু পদক্ষেপ অতিক্রম করতে হয় ঋণ আবেদনকারীকে এবং এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে অন্যতম হল সিবিল স্কোর। আপনার সিবিল স্কোর বলে দেয় আপনার আর্থিক পরিস্থিতি ও ঋণ শোধ করার ক্ষমতা। এছাড়াও এই পরিসংখ্যান বেশি হলে কোনো সমস্যা ছাড়াই ঋণ পাওয়া যায়। ফলে  WWW.CIBIL.COM এই ওয়েবসাইটে আজই আপনার সিবিল স্কোর চেক (CIBIL Score Check) করুন। যদি স্কোরের পরিসংখ্যান কম হয় তাহলে মেনে চলুন উপরোক্ত বিষয়গুলি।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File