Covishield Vaccine | কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা আদালতে স্বীকার করলো সংস্থা! হতে পারে বিরল রোগ টিটিএস! কতটা ভয়ানক এই রোগ?
কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে অন্যতম হল টিটিএস বা ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’। আর এই বিরল রোগে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে বলে সম্প্রতি একটি আইনি মামলা করা হয়েছে কোভিশিল্ড টিকা প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে।
২০২০ সালে গোটা বিশ্বে হানা দিয়েছিলো অতিমারী ভাইরাস করোনা (Corona)। সেই সময় করোনা বা কোভিড-১৯ এর টিকা হিসেবে ভারত-সহ অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেওয়া হয়েছিল কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন ডোজ (covishield vaccine dose)। অনেকে আবার পরবর্তীকালে কোভিশিল্ড দ্বিতীয় ডোজ (covishield second dose) নিয়েছিলেন। তবে সম্প্রতি এই টিকা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। জানা যাচ্ছে, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (side effects of covishield vaccine) এর মধ্যে অন্যতম হল টিটিএস বা ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ (thrombosis with thrombocytopenia syndrome)। আর এই বিরল রোগে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে বলে সম্প্রতি একটি আইনি মামলা করা হয়েছে কোভিশিল্ড টিকা প্রস্তুতকারীদের বিরুদ্ধে।
কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কী জানা যাচ্ছে?
আদালতে জমা দেওয়া একটি নথিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থা জানায়, তাদের তৈরি করা প্রতিষেধকের কারণে বিরল রোগ থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমে (TTS) আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হলে রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যায় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এই কারণে প্রস্তুতকারী সংস্থাকে গুনতে হতে পারে বিপুল অঙ্কের জরিমানাও। আদালতে পেশ করা নথি বলছে বিরল ঘটনা হলেও কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় (side effects of covishield vaccine) এই রোগ হতে পারে। আর তা হতে পারে মূলত কমবয়সিদেরই।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে জেমি স্কট নামে এক ব্যক্তি অ্যাস্ট্রাজেনেকা সংস্থার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধে যায় তাঁর। জেমি স্কটের মতো আরও অনেক টিকাগ্রহীতাই এরপর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থদের পরিবারের তরফে অ্যাস্ট্রাজেনেকার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও দায়ের হয়। সেই মামলার প্রেক্ষিতেই কোভিশিল্ড প্রস্তুতকারী সংস্থার বিরুদ্ধে চলে মামলা। বিভিন্ন নথি এবং তথ্যপ্রমাণ দেখিয়ে নিজেদের নির্দোষের প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও শেষরক্ষা হয়নি। মামলা চলাকালীন, আদালত জানিয়ে দেয়, সংস্থার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ যদি সত্যি প্রমাণিত হয় তা হলে মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে হবে। শেষ পর্যন্ত কোভিশিল্ড প্রস্তুতকারী সংস্থা আদালতে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয় যে, তাদের তৈরি প্রতিষেধকে কঠিন রোগের ঝুঁকি রয়েছে।
টিটিএস বা ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম’ কী?
টিটিএস বা ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোম এই বিরল রোগে শরীরের নানা জায়গায় রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। কমে যেতে পারে রক্তে প্লেটলেটসের মাত্রা। প্লেটলেটস হল ছোট থোট কোষ যা রক্তকে জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। রক্তে প্লেটলেটসের মাত্রা কমে তা শরীরের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে। সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল টিটিএস বা ‘থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমরোগকে দু’টি পর্যায় ফেলেছে। প্রথম পর্যায় : মস্তিষ্ক, অন্ত্র, পা এবং ফুসফুসে বিরল রক্ত জমাট বাঁধা; প্রতি মাইক্রোলিটারে ১৫০০০০-এরও নীচে প্লেটলেট নেমে যাওয়া ; পজ়িটিভ অ্যান্টি-পিএফ৪ এলিসা টেস্টে ধরা পরতে পারে; প্রথম টিয়ারের রোগ হলে তা প্রাবল্য এবং ঝুঁকি দুই-ই বেশি; কমবয়সিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। দ্বিতীয় পর্যায় : পায়ে অথবা মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধা ; প্রতি মাইক্রোলিটারে ১৫০০০০-এরও নীচে প্লেটলেট নেমে যাওয়া; পজ়িটিভ অ্যান্টি-পিএফ৪ এলিসা টেস্ট জরুরি।
এই রোগ হলে মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা, পেটে যন্ত্রণা, পা ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, ফিট হওয়া বা জ্ঞান হারানো, ভাবনাচিন্তা করতে সমস্যা হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত যাঁরা ভ্যাক্সজেভরিয়া বা অ্যাস্ট্রেজেনেকার কোভিশিল্ড টিকা নিয়েছেন বা জনসন অ্যান্ড জনসন/জ্যানসেন-এর কোভিড টিকা নিয়েছেন, তাঁদেরই এই ধরনের রোগের ঝুঁকি রয়েছে। আসলে কোভিশিল্ডের টিকা নেওয়ার পর যখন আমাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা শরীরে এমন অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করা প্রোটিনের ক্ষতি করে। ফলে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, এই টিকা নেওয়ার দেড় মাসের মধ্যে এই সমস্ত উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কী জানাচ্ছে সেরাম ইনস্টিটিউট?
সম্প্রতি আদালতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার সংস্থা স্বীকার করেছে, তাদের তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন ডোজ (covishield vaccine dose) এর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। তবে অ্যাস্ট্রেজেনেকার স্বীকারোক্তি নিয়ে এবার মুখ খুলেছে সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। একটি সংবাদমাধ্যমে সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতে এখনও পর্যন্ত কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনও ঘটনা ধরা পড়েনি। থ্রম্বোসিস উইথ থ্রম্বোসাইটোপেনিয়া সিনড্রোমে (TTS) আক্রান্ত কোনও কোভিশিল্ড প্রাপকের সন্ধান মেলেনি ভারতে। সেরাম ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতে কোভিশিল্ড উৎপাদনকারী এই সংস্থা মনে করছে, অ্যাস্ট্রেজেনেকা এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার যে স্বীকারোক্তি আদালতে করেছে তা নতুন নয়। বরাবরই কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা জনসাধারণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা মহামারী চলাকালীন, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি AstraZeneca-এই ভাইরাস প্রতিরোধে অক্সফোর্ডের সহযোগিতায় কোভিড ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল। যেখানে ভারতে, ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা সেরাম ইনস্টিটিউট AstraZeneca-এর সাথে চুক্তিতে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল। এরপর দেশের অর্ধেকেরও বেশি মানুষকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। কোভিড অতিমারি পর্বে এই কোভিশিল্ড টিকা রাতারাতি কোটি কোটি মানুষের ত্রাতা হয়ে ওঠে। কোভিডে মৃত্যুর হার ঠেকাতে তড়িঘড়ি ভারতেও চালু হয় এই করোনা টিকা। অগুন্তি মানুষ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন দ্বিতীয় ডোজ (covishield vaccine second dose), এমনকী বুস্টার ডোজও নিয়েছেন। ফলে মারাত্মক সাইড এফেক্টের খবর প্রকাশ্যে আসতেই আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়েছে দেশ। তবে এখনও পর্যন্ত ভারতে কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কোনও ঘটনা ধরা পড়েনি বলেই জানা যাচ্ছে।