সাহিত্য

Maa Sarada | মা সরদার ১১৭তম জন্মবার্ষিকীতে পড়ুন সারদা দেবীর অমর বাণী এবং জীবনী!

Maa Sarada | মা সরদার ১১৭তম জন্মবার্ষিকীতে পড়ুন সারদা দেবীর অমর বাণী এবং জীবনী!
Key Highlights

মা সরদার ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাগবাজার মায়ের বাড়ি থেকে বেলুড়মঠে বিশেষ পুজোর আয়োজন। জানুন সারদা মায়ের জীবনী সম্পর্কে এবং পড়ুন সারদা দেবীর বাণী।

তিথি মেনে বুধবার, ১৭ পৌষ, ৩ রা জানুয়ারি এবার শ্রী মা সারদার ১৭১ তম জন্মতিথি। কৃষ্ণা সপ্তমী তিথিতে মায়ের জন্ম। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের বিভিন্ন কেন্দ্রে পালিত হচ্ছে শ্রী শ্রী মা সারদা (Maa Sarada) দেবীর ১৭১ তম জন্মতিথি। সংঘ জননীর জন্মতিথিতে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এদিন বিশেষ পুজো, হোম, যজ্ঞে মুখরিত বেলুড় মঠ এবং বাগবাজারের মায়ের বাড়ি। সারদা মা (Sarada Maa) এর ১৭১ তম জন্মতিথি উপলক্ষ্যে দেখে নেওয়া যাক তাঁর জীবনীর কিছু অংশ।

শৈশব : 

১৮৫৩ সালের ২২ ডিসেম্বর, বাংলা ১২৬০ সনের ৮ পৌষ  পুণ্য তিথিতেই হুগলী জেলার জয়রামবাটিতে শ্যামাসুন্দরী দেবীর কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন শ্রীশ্রী সারদা দেবী (Sarada Devi)। অত্যন্ত সরল ও সাদাসিধে জীবন যাপন করতেন ছোট্ট সারদামনি। বাল্যকালে তিনি ঘরের নিত্যনৈমিত্তিক কাজকর্ম করার সাথে সাথে  ভাইদের দেখাশোনা  ও করতেন। পোষা গোরুদের আহারের ব্যবস্থা করা থেকে শুরু করে , ক্ষেতের কাজ এবং প্রয়োজনে ধান কুড়ানোর কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। প্রথাগত বিদ্যালয় শিক্ষালাভ করেননি সারদা দেবী আক্ষরিক অর্থে তবে ছেলেবেলায় মাঝে মধ্যে  ভাইদের সাথে পাঠশালায় যাওয়ার সুবাদে কিছু অক্ষরজ্ঞান হয়েছিল তাঁর। তবে পরবর্তী জীবনে কামারপুকুরে বসবাসকরাকালীন শ্রীরামকৃষ্ণের ভ্রাতুষ্পুত্রী লক্ষ্মী দেবীর কাছে মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করেছিলেন বলে জানা যায়। বাল্যকালে  তাঁর গ্রামে আয়োজিত যাত্রাপালার আসর থেকে বেশ কিছু পৌরাণিক আখ্যান ও শ্লোক আত্মস্থ করেছিলেন। কথিত আছে  যে  শৈশবে পুতুলখেলার সময় লক্ষ্মী ও কালীর মূর্তি গড়ে খেলাচ্ছলে পূজা করতেন সারদামণি। সেই সময়  তাঁর  বিবিধ দিব্য দর্শন ও অভিজ্ঞতা হয়ে থাকত। ছোটবেলা থেকেই মহামায়ার ধ্যানে রত থাকতেন তিনি।

বিবাহ :

 তাঁর যখন মাত্র পাঁচ বছর বয়স, সেই সময় ২৩ বছর বয়সী শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ও সারদা দেবীকে ভক্তেরা স্বয়ং নারায়ণ ও লক্ষ্মী দেবী বলে মনে করতেন। সারদা দেবীতে জগদ্ধাত্রী রূপে পুজো করেছিলেন রামকৃষ্ণদেব। প্রসঙ্গত, সারদা দেবীর যখন আঠারো বছর বয়স তখন তিনি অবগত হয়েছিলেন যে তাঁর স্বামী পাগল হয়ে গেছেন। তাঁর একথাও কর্ণগোচর হয়েছিল যে তাঁর স্বামী একজন মহান সন্তে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। এই ঘটনার পর সারদা দেবী  দক্ষিণেশ্বরে শ্রীরামকৃষ্ণকে দেখতে আসার সিদ্ধান্ত নেন এবং পায়ে হেঁটে   দক্ষিণেশ্বরে আসতে গিয়ে তিনি অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন এবং কথিত আছে যে সেই সময়ে  মা কালী রূপি ঘোর কৃষ্ণবর্ণা এক নারী দিব্যদর্শন দিয়ে তাঁকে সুস্থ করে তোলেন।

মা সারদা :

রামকৃষ্ণদেবের প্রয়াণের পরে তাঁর আদর্শে ধর্ম আন্দোলননে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন সারদা মা। সেই সময় পল্লীগ্রামের এক তথাকথিত শিক্ষাবিহীন রমণী যে ভাবে যাবতীয় লোকচারের ঊর্ধে উঠ সব ভেদাভেদ ভুলে নিজেকে সবার মা হিসেবে পরিচিত করেছিলেন, তা সত্যিই অতুলনীয়। মা সারদা (Saroda) নিজেই বলেছেন, “মনে ভাববে, আর কেউ না থাক, আমার একজন ‘মা’ আছেন।” মা বলতে আমরা বুঝি নিখাদ নিঃস্বার্থ ভালবাসা, যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে, দোষ-গুণ সাংসারিক অবস্থার ঊর্ধ্বে। তাই তিনি সকলের ‘মা’, বিশ্বজননী। তাঁর শ্রেণি, গোত্রের বিচার নেই।

 স্বামী সারদেশানন্দ লিখছেন, মায়ের বাড়িতে কুলি, মজুর, পাল্কি-বেহারা, ফেরিওয়ালা, মেছুনি-জেলে, যে-ই আসুক, সকলেই তাঁর পুত্র-কন্যা; সকলে ভক্তদের মতোই স্নেহ-আদর পায়। যে-কোনও উপলক্ষেই আসুক, জলখাবার মুড়ি-গুড় না হলে অন্তত একটু প্রসাদী মিষ্টি, জল পাবেই। আর সেই সকরুণ স্নেহদৃষ্টি, যা ইহকাল-পরকালে আর ভুলতে পারবে না। যদি বা বিস্মরণ হয়, দুঃখে-কষ্টে পড়লেই মনে হবে অভয়াকে, আর মনে পড়বে তাঁর অভয়বাণী, কৃপাদৃষ্টি!

উল্লেখ্য, ১৮৯৮ সালের ১৭ মার্চ প্রথমবার সারদা (Saroda) মায়ের সঙ্গে সাক্ষাত্‍ করেন নিবেদিতা। বাগবাজারের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় তাঁর বুক দুরদুর করছিল বলে নিজের স্মৃতিকথায় পরবর্তীকালে জানিয়েছেন নিবেদিতা। তবে মায়ের হাসিমুখ ও সহজ সরল ব্যবহার তাঁর মনের সব আশঙ্কা দূর করে দেয়।নিবেদিতা ছাড়াও সেদিন সারদা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বিবেকানন্দের আরও দুই বিদেশিনী শিষ্যা সারা বুল ও জোসেফিন ম্যাকলয়েড। এঁদের সঙ্গেই সেদিন একসঙ্গে বসে ফল মিষ্টি খেয়েছিলেন সারদা দেবী (Sarada Devi)। ইউরোপীয় ও আমেরিকায় মহিলাদের সঙ্গে একসঙ্গে বসে সারদা মায়ের খাবার খাওয়া নিয়ে পরবর্তীকালে রামকৃষ্ণানন্দকে চিঠি লিখে মনের আনন্দ ও বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন স্বামী বিবেকানন্দ।

জীবনের অন্তিম লগ্ন :

১৯১৯ খ্রীস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে মা সারদা জয়রামবাটীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন মা সারদা (Maa Sarada), যেখানে তিনিএক বছর কাটান। জয়রামবাটীতে অবস্থানরত শেষ তিন মাস মায়ের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে এবং ১৯২০ সালে ২৭ সে ফেব্রুয়ারি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাঁকে কলকাতায়  নিয়ে আসা হয়। পরবর্তী পাঁচ মাস তিনি রোগযন্ত্রণায় অত্যন্ত কষ্টসহকারে জীবন অতিবাহিত করেন।  ১৯২০ সালের ২০ই জুলাই রাত দেড়টায় কলকাতার উদ্বোধন ভবনে মাতৃ প্রতীম এই মহীয়সী রমণীর মহাপ্রয়াণ ঘটে। বেলুড় মঠে গঙ্গার তীরে তাঁরশেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়। এই স্থানটিতেই  বর্তমানে গড়ে উঠেছে ঐতিহ্যমণ্ডিত শ্রী সারদা মা (Sarada Maa) এর সমাধিমন্দির।

মা সরদার বাণী - 

  • যদি শান্তি চাও, তাহলে কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের। জগৎকে আপনার করে নাও, কেউ পর নয়, এই জগৎ তোমার।
  • আমি সত্যিকারের মা, গুরুপত্নী নই, পাতানো মা নই, কথার কথা মা নই, সত্যকারের জননী।
  • ভালোবাসা দিয়ে সবকিছু হয়, জোর করে কায়দায় ফেলে কাউকে দিয়ে কিছু করানো যায় না।
  • কাজ করতে হবে সব সময়। কর্ম করতে করতেই কর্মের বন্ধন কেটে যাবে, তবেই নিষ্কাম ভাব আসবে। কাজ ছেড়ে একদণ্ডও থাকা উচিত নয়।
  • ভাঙতে সবাই পারে, কিন্তু গড়তে পারে ক-জনে? নিন্দে ঠাট্টা সবাই করতে পারে। কিন্তু কী করে যে তাকে ভালো করতে হবে, তা ক-জনে বলতে পারে?
  • এই কলি যুগে শুধু সত্যের আঁট থাকলেই ভগবানকে লাভ করা যায়। ঠাকুর বলতেন, 'যে সত্যকথাটি ধরে আছে সে ভগবানের কোলে শুয়ে আছে।'
  • যত বড় মহাপুরুষই হোন, দেহ ধারণ করে পৃথিবীতে এলে দেহের ভোগটি সবই নিতে হবে। তবে পার্থক্য এই যে সাধারণ লোক যায় কাঁদতে কাঁদতে, আর ওঁরা যান হেসে হেসে, মৃত্যুটা যেন ওঁদের কাছে খেলা।

বুধবার, ১৭ পৌষ, ৩ জানুয়ারি এবার শ্রী মা সারদার ১৭১ তম জন্মতিথিতে বাগবাজার মায়ের বাড়ি থেকে বেলুড়মঠ, সর্বত্রই বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। ভোরবেলা বেলুড়ে শ্রী রামকৃ্ষ্ণের মন্দিরে মঙ্গলারতি দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বেলুড় মঠে। এরপর একে একে স্তব গান, বেদ পাঠ, ভজন, বিশেষ পুজো ও হোমের সূচি। দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন বেলুড় মঠ, সারদা মঠ, বাগবাজারে মায়ের বাড়িতে।  সন্ধ্যারতি দিয়ে শেষ হবে সারদা মায়ের জন্মতিথি উৎসব। বাগবাজারে মায়ের বাড়িতেও সারাদিন ধরে চলবে বিশেষ পুজো।