Capt. Yashika Hatwal Tyagi | গর্ভাবস্থায় সেনা দায়িত্ব! চিনুন কার্গিল যুদ্ধের নায়ক ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগীকে!

পুরু বরফের আস্তরণে ঢাকা কার্গিলের পাহাড়ি অঞ্চলে কনকনে ঠান্ডাতেও পাকিস্তানী সেনার সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগী (yashika hatwal tyagi)। তবে তিনি এক নন, তাঁর সঙ্গেই ছিল আরও দুজন। একজন তাঁর বছর কয়েকের বড় ছেলে এবং ছোট ছেলে, যে ছিল ক্যাপ্টেন ইয়াশিকার গর্ভে। কার্গিল যুদ্ধের নায়কদের কথা বললে ক্যাপ্টেন ইয়াশিকার কথা বলতেই হয়। কার্গিল দিবসে (kargil diwas day) জেনে নিন "কার্গিলের গর্ভবতী যোদ্ধা" নামে পরিচিত ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগীর সাহস, নেতৃত্ব এবং স্টেরিওটাইপ ভাঙার গল্প।
হাড় কাঁপিয়ে দেওয়া কার্গিলের আবহাওয়া (kargil weather), পুরু বরফের আস্তরণে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চলে কনকনে ঠান্ডাতেও পাকিস্তানী সেনার সঙ্গে লড়তে প্রস্তুত ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগী (yashika hatwal tyagi)। তবে তিনি এক নন, তাঁর সঙ্গেই ছিল আরও দুজন। একজন তাঁর বছর কয়েকের বড় ছেলে এবং ছোট ছেলে, যে ছিল ক্যাপ্টেন ইয়াশিকার গর্ভে। কার্গিল যুদ্ধের নায়কদের (kargil war heroes) কথা বললে ক্যাপ্টেন ইয়াশিকার কথা বলতেই হয়। কার্গিল দিবসে (kargil diwas day) জেনে নিন "কার্গিলের গর্ভবতী যোদ্ধা" নামে পরিচিত মহিলা ভারতীয় সেনার (indian army women) ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগীর সাহস, নেতৃত্ব এবং স্টেরিওটাইপ ভাঙার গল্প।
প্রারম্ভিক যাত্রা :
মাত্র ৭ বছর বয়সে সেনা অফিসার বাবাকে হারিয়েছিলেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগী (yashika hatwal tyagi)। ১৯৬২, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১৭১ সালের যুদ্ধে তিনি যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৯ সালে কর্নেল পদে থাকাকালীন শহীদ হন ইয়াশিকার বাবা। দেশের জন্য বাবার আত্মত্যাগই বদলে দিয়েছিলো ইয়াশিকার লক্ষ্য। যেদিন বাবার মরদেহ সেনাবাহিনী ট্রাকে করে নিয়ে আসে, সে দিনই তিনি দেশের সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পরে দেশের সেবা করার সিদ্ধান্ত নেন।

যেহেতু সেনাবাহিনীতে মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না, তাই ইয়াশিকা স্নাতক হওয়ার পর UPSCতে (ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন) যোগদানের সিদ্ধান্ত নেন। তবে ভাগ্য ফের বদলে যায় ১৯৯৩ সালে।সেই সময় সেনাবাহিনী ঘোষণা করে যে মহিলারাও এবার সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন। ব্যাস! সঙ্গে সঙ্গে আবদেন করেন ইয়াশিকা। এরপর ১৯৯৪ সালে ইয়াশিকা সার্ভিসেস সিলেকশন বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগদান:
১৯৯৪ সালে ইয়াশিকা মহিলা স্পেশাল এন্ট্রি স্কিমের অধীনে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং তিনিসহয়ে ওঠেন উত্তর-পূর্বে লজিস্টিক উইংয়ের প্রথম শ্রেণীর মহিলা অফিসারদের মধ্যে একজন। এরপর ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয় পোস্টিংয়ের জন্য ইয়াশিকা লেহকে বেছে নেন এবং সেখানেও ইতিহাস তৈরী করেন। হাই অল্টিটিউডে নিযুক্ত প্রথম মহিলা অফিসার হিসেবে ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগী (yashika hatwal tyagi) নামই উঠে আসে। সেখানে তাঁর দায়িত্ব ছিল সম্মুখ বাহিনীকে প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং উষ্ণ পোশাক থেকে শুরু করে গোলাবারুদ এবং অস্ত্র সরবরাহ করা। এই কাজ যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রসঙ্গত, ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা তাঁর সহকর্মী অফিসার কর্নেল সঞ্জীব ত্যাগীকে বিয়ে করেন এবং ১৯৯৬ সালে মা হন।

গর্ভাবস্থায় কার্গিল যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্ব :
১৯৯৯ সালে যখন তাঁর পোস্টিং শেষ হতে চলেছে তখনই শুরু হয় কার্গিল যুদ্ধ। ১৯৯৯ সালের মে মাসে যখন কার্গিল যুদ্ধ শুরু হয়, তখন ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা ছিলেন গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে। কিন্তু তাতেও পিছু পা হননি এই সাহসী মহিলা ভারতীয় সেনা (indian army women)। নিরাপদ পোস্টিং বা ছুটি না নিয়ে তিনি বরং যুদ্ধের সময় লজিস্টিকস ব্যবস্থাপনার গুরুদায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি লেহ থেকে দ্রাস ও বাটালিকের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে খাদ্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও গোলাবারুদের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে একটিও সিকিউরিটি ব্রিচ ঘটেনি, যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বিরল সাফল্য। ফলে কার্গিল যুদ্ধের নায়কদের (kargil war heroes) কথা বললে ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগীর কথা বলতেই হয়।

গর্ভাবস্থা তো বটেই, কার্গিল যুদ্ধের সময় নিজের বড় ছেলেকেও সঙ্গে রেখেছিলেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগী (yashika hatwal tyagi)। উচ্চতা এবং কঠিন ভৌগোলিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও পোস্টিং চলাকালীন ইয়াশিকা বড় ছেলে কানভকে তাঁর কাছে রেখেছিলেন। এদিকে দ্বিতীয় সন্তান ধ্রুব ছিল গর্ভে। এই অভিজ্ঞতা সম্পর্কে ইয়াশিকা একটি ডিজিটাল মিডিয়াকে বলেন, ‘‘আমরা জানতামই না যে ১৯৯৯ সালের মে মাসে যুদ্ধ শুরু হবে। জরুরি অবস্থার কারণে, যুদ্ধের সময় ছেলেকে আমার সঙ্গে রাখতে হয়েছিল। ওঁর উপস্থিতি আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে এবং আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে।’’
সম্মান ও স্বীকৃতি :
অসাধারণ সাহস ও কাজের জন্য ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা একাধিক সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। একজন কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে স্নাতক হয়ে এবং তাঁর যোগ্যতার জন্য রৌপ্য পদক পেয়েছিলেন ইয়াশিকা। এরপর অসাধারণ সাহস ও কাজের জন্য ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা 'অপারেশন বিজয় স্টার মেডেল' লাভ করেন এবং লজিস্টিকস শাখায় প্রথম যুদ্ধ রিপোর্ট জমা দেন।

সেনাজীবনের পরে অন্য পথচলা :
ক্যাপ্টেন পদে থাকাকালীন ২০০১ সালে ইয়াশিকা ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। তবে সেখানেই দেশের জন্য সেবা করা থামিয়ে দেননি। সেনাজীবনের পরে ভারতবাসীদের এবং মহিলাদের অনুপ্রাণিত করে চলেছেন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগী (yashika hatwal tyagi)।
- প্রাক্তন সেনাদের চিকিৎসা পরিষেবা: বিভিন্ন সংবেদনশীল অঞ্চলে ECHS Polyclinic-এর ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন তিনি।
আরও পড়ুন : 'অপারেশন সিঁদুর'-এর 'মুখ' কর্নেল সোফিয়া কুরেশি-উইং কমান্ডার ভূমিকা সিংকে চেনেন? জানুন পরিচয়!
- শিশু শিক্ষায় অবদান: পাটনার আশা স্কুলের প্রিন্সিপাল হিসেবে ভিন্নভাবে সক্ষম শিশুদের মূলধারায় নিয়ে আসেন।
- মোটিভেশনাল স্পিকার: বর্তমানে তিনি খ্যাতিমান বক্তা ও লিডারশিপ কোচ। তাঁর ‘Shaurya Tales’ ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে অনুপ্রেরণামূলক গল্প ছড়িয়ে দেন। এছাড়াও তিনি জোশ টকস এবং টেড টকস-এ তাঁর বক্তব্যের মাধ্যমে সকলকে অনুপ্রাণিত করছেন, বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও উদ্যোগেও তাঁর অবদান উল্লেখযোগ্য।

প্রতি বছর কার্গিল দিবস (kargil diwas day) ছাড়াও প্রত্যেকদিন ইয়াশিকা হাটওয়াল ত্যাগীর জীবন কাহিনী অনুপ্রাণিত করে চলবে ভারতবাসীকে। ক্যাপ্টেন ইয়াশিকা প্রমাণ করেছেন সাহস মানেই শুধু বন্দুক হাতে যুদ্ধ নয়, বরং কর্তব্যের প্রতি অবিচল থাকা। গর্ভাবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করে তিনি দেখিয়েছেন প্রকৃত শক্তি কাকে বলে। তাঁর অবদান কেবল কার্গিল বিজয়েই নয়, ভবিষ্যতের অসংখ্য নারী অফিসারের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
জয় হিন্দ!
- Related topics -
- দেশ
- ভারত
- সেনাবাহিনী
- ভারতীয় সেনা
- ভারতীয় সেনা
- সেনাকর্মী
- জীবন কাহিনি
- জীবন ও জীবনী
- সাফল্যের কাহিনী