Wrist Pain | কব্জির ব্যথায় নাজেহাল অবস্থা? এই ব্যায়ামগুলি করলেই পাবেন আরাম!

Thursday, June 22 2023, 5:48 pm
highlightKey Highlights

আমরা সকলেই অনেক সময় কব্জির ব্যথায় ভুগে থাকি। নানারকমের ওষুধ খেয়েও মেলেনা সুরাহা। তবে বেশ কিছু ব্যায়াম করলেই পাওয়া যায় ব্যথা থেকে মুক্তি।


আমরা কম বেশি সকলেই কব্জির ব্যথায় ভুগে থাকি। কাজ করতে গিয়ে হোক কিংবা লেখালিখি অথবা শরীর চর্চা করতে গিয়েই হোক, কব্জির ব্যথা প্রায়ই ভোগায়। আর এই যন্ত্রনা মাঝের মধ্যে হয়ে ওঠে অসহ্যকর। নানা রকমের ওষুধ খেয়েও মুক্তি পাওয়া যায়না এই ব্যথা থেকে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন বেশ কিছু হ্যান্ড এক্সারসাইজ (Hand Exercises) বা হাতের ব্যায়াম আছে যা করলেই সহজে এবং দ্রুত কমে যায় কব্জির ব্যথা।

কব্জির ব্যথায় সকলেই কম বেশি ভুক্তভোগী 
কব্জির ব্যথায় সকলেই কম বেশি ভুক্তভোগী 

মানুষের শরীরে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পেশী থাকে মুখমণ্ডলে, তার পরেই সব থেকে পেশী থাকে হাতে। কব্জি বা রিস্টজয়েন্ট (Wrist Joint) একটি জটিল সন্ধি। রেডিয়াস (Radius) ও আলনা হাড়ের (Rack Bone) নিম্নাংশ এবং আটটি ছোট ছোট কারপাল হাড়ের (Carpal Bone) সমন্বয়ে তৈরি আমাদের হাতের কব্জি বা রিস্ট (Wrist)। এই কারপাল হাড়গুলি দুই সারিতে সাজানো থাকে। লিগামেন্টের (Ligament) শক্ত ব্যান্ডগুলি কব্জির হাড়গুলিকে একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে রাখে। এছাড়াও টেনডন গুলো (Tendon) হাড়ের সঙ্গে মাংসপেশিকে সংযুক্ত করে। হাড় ও পেশীর এই জটিলতার কারণেই কব্জিতে কোনোরকম ক্ষতি হলে বা আঘাত লাগলে হালকা থেকে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। যা প্রভাব ফেলে আমাদের দৈনন্দিন কাজের ওপর।

Trending Updates
বেশ কিছু হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলেই সহজে এবং দ্রুত কমে কব্জির ব্যথা
বেশ কিছু হ্যান্ড এক্সারসাইজ করলেই সহজে এবং দ্রুত কমে কব্জির ব্যথা

কব্জিতে ব্যথার কারণ । Causes of Wrist Pain :

বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের কব্জিতে ব্যথা হওয়ার নানান কারণ থাকে। যা খুব সামান্য বা স্বাভাবিক থেকে শুরু করে বড় কারণও হতে পারে।

খুব সামান্য  থেকে শুরু করে বড় কারণে হতে পারে কব্জির ব্যথা
খুব সামান্য  থেকে শুরু করে বড় কারণে হতে পারে কব্জির ব্যথা

১. চোট লাগলে । Injury :

হাতের ওপর ভর দিয়ে সামনের দিকে পড়ে গেলেই কব্জিতে চোট লেগে যায়। ফলে এর থেকে বড় দুর্ঘটনা ঘটলে ক্ষতিও হয় আরও বেশি। অনেক সময় কব্জি মচকে গেলে, কব্জিতে টান পড়লে এবং কব্জির হাড় ভেঙে গেলে অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়। কব্জির বুড়ো আঙুলের দিকে হাড়টির নাম স্কাফয়েড (Scaphoid)। এটি অনেক সময় ভেঙে যায়। এ ধরনের হাড় ভেঙে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেটা এক্স-রে-তে (X-rays) নাও ধরা পড়তে পারে। ফলে এই ব্যথা অনেক দিন থাকে, যা কব্জি নাড়াচাড়া করলে আরও বাড়ে।

কব্জিতে টান পড়লে বা কব্জির হাড় ভেঙে গেলে অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়
কব্জিতে টান পড়লে বা কব্জির হাড় ভেঙে গেলে অসহ্য ব্যথা অনুভূত হয়

২. আর্থ্রাইটিস বা বাতের ব্যথা । Arthritis or Gout Pain :

অনেক ক্ষেত্রে আর্থ্রাইটিস বা বাতের জন্যও কব্জিতে ব্যথা হয়। এই প্রতিকার ব্যথা দুই রকমের আর্থ্রাইটিসে ভুগলে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। প্রথমত, অস্টিও আর্থ্রাইটিস (Osteoarthritis)। সাধারণত কব্জিতে অস্টিও আর্থ্রাইটিস খুব কম হয়। কারুর কব্জিতে আগে চোট থাকলে পরে তার অস্টিও আর্থ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে কার্টিলেজ (Cartilage) বা তরুণাস্থি ছিঁড়ে যায় বা ক্ষয় হতে পারে। এছাড়াও যারা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসে (Rheumatoid Arthritis) আক্রান্ত অর্থাৎ যাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তার নিজস্ব টিস্যুগুলোকে আক্রমণ করে, তাদের কব্জিতে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

আর্থ্রাইটিসের কারণে কব্জিতে ব্যথা হতে পারে
আর্থ্রাইটিসের কারণে কব্জিতে ব্যথা হতে পারে

৩. অন্যান্য রোগ ও অবস্থা । Other Diseases and Conditions :

  • কারপাল টানেল সিনড্রোম । Carpal Tunnel Syndrome: আমাদের কব্জির তালুর দিকের অংশে একটি পথ রয়েছে যার নাম কারপাল টানেল (Carpal Tunnel)। এর মধ্য দিয়ে মিডিয়ান নার্ভ (Median Nerve) অতিক্রম করে। আর এই মিডিয়ান নার্ভে চাপ পড়লেই কব্জি ও হাতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। এ অবস্থার নামই কারপাল টানেল সিনড্রোম।
মিডিয়ান নার্ভে চাপ পড়লেই কব্জিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়
মিডিয়ান নার্ভে চাপ পড়লেই কব্জিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়
  • গ্যাংলিয়ন সিস্ট । Ganglion Cyst: কব্জির ব্যথার আরেক অন্যতম কারণ হলো এক ধরনের টিউমার জাতীয় ফোলা বস্তু থাকে যাকে গ্যাংলিয়ন (Ganglion) বলে। এটি টেনডনের আবরণী (Tendon Sheath) থেকে কব্জির পেছনে অথবা সামনের দিকে হয়। ফলে কব্জি নড়লেই ব্যথা অনুভূত হয়। বড় গ্যাংলিয়ন সিস্টের চেয়ে ছোটগুলো বেশি ব্যথা সৃষ্টি করে।
গ্যাংলিয়ন সিস্টের জন্য কব্জিতে ব্যথা হতে পারে
গ্যাংলিয়ন সিস্টের জন্য কব্জিতে ব্যথা হতে পারে
  • কিয়েন বক্স ডিজিজ । Keen Box Disease: এটি সাধারণত কম বয়সীদের হয়। এ ক্ষেত্রে কব্জির লুনেট (Lunate) নামের ছোট হাড়টিতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে লুনেট হাড়ের ওপরে চাপ দিলে ব্যথা লাগে এবং কব্জিতে ব্যথার সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তি হাত মুঠো করতে পারে না।
লুনেট  হাড়টিতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত  হলে এবং সেটির ওপরে চাপ দিলে কব্জিতে ব্যথা হতে পারে
লুনেট  হাড়টিতে রক্ত চলাচল বাধাগ্রস্ত  হলে এবং সেটির ওপরে চাপ দিলে কব্জিতে ব্যথা হতে পারে

তবে কব্জির ব্যথা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোনও কাজ বারবার করলে যেমন বোলিং, গলফ, জিমন্যাস্টিক, টেনিস খেললে বা দীর্ঘক্ষণ কিবোর্ডে কাজ করলে হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ভয় পাওয়ার কিছু নেই বলেই জানান বিশেষজ্ঞরা।

কব্জি ব্যথার উপশমের উপায় । Ways to Relieve Wrist Pain :

কব্জির ব্যথা একটু দীর্ঘস্থায়ী হলেই অনেকেই ব্যথা কমানোর জন্য দোকান থেকে ওষুধ কিনে খান। যা শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। আর বাজারচলতি ওষুধ সবসময়ে কাজ নাও করতে পারে। পাশাপাশি কব্জির ব্যথার চিকিৎসা নির্ভর করে সেটির আঘাতের ধরন, স্থান ও তীব্রতার উপরে। তবে এমন কিছু ব্যায়াম রয়েছে যা কমাতে পারে কব্জির ব্যথা। পাশাপাশি কব্জি ও হাতের নমনীয়তা ও শক্তিও বাড়ায় এই ব্যায়াম। ফলে দেখে নিন কব্জির ব্যথা কমাতে কীভাবে করবেন ব্যায়াম।

বেশ কিছু ব্যায়াম কব্জিতে ব্যথা কমানোর সঙ্গে বাড়ায় শক্তিও 
বেশ কিছু ব্যায়াম কব্জিতে ব্যথা কমানোর সঙ্গে বাড়ায় শক্তিও 
  • ১. প্রথমে একটি চেয়ারে বসে ডান হাতটিকে নাক বরাবর সোজা লম্বা করে রাখুন। এরপর হাতের তালুকে রাখুন কোনও গাড়ি বা মানুষকে দাঁড়াতে বলার ভঙ্গিমায়। এভাবে কব্জি থেকে হাতের তালুকে টেনে আনুন পিছনে কাঁধের দিকে। এই অবস্থায় ১৫ পর্যন্ত গুনুন। একই ভাবে হাতের তালুকে নীচের দিকে টেনে ধরে ১৫ পর্যন্ত গুনুন। দুই হাতে চার বার করে এই ব্যায়াম করুন।
  • ২. আগের ব্যায়ামের মতোই একই ভাবে হাতের তালু রাখুন পাশ বরাবর। এরপর নব্বই ডিগ্রিতে বুড়ো আঙুলকে রাখুন তর্জমার সঙ্গে। এই ভাবে অন্তত ১৬ বার উপর-নীচ করুন। প্রতিদিন ৩ সেট করে এই ব্যায়াম করুন।
  • ৩. হাত সোজা রেখে হাতের পাতা রাখুন খোলা অর্থাৎ কোনও বস্তু চাওয়ার ভঙ্গিমায়। এবার উপর-নীচ করে কব্জি থেকে হাতের তালুকে ঘোরান। দুই হাতে ১৫ বার, মোট ২ করে এই ব্যায়াম করুন।
নিয়মিত কব্জির ব্যায়াম করুন 
নিয়মিত কব্জির ব্যায়াম করুন 
  • ৪. হাত সোজা রেখে হাতের তালু রাখুন অপেক্ষার ভঙ্গিতে। অন্য হাত দিয়ে আঙুলগুলিকে টেনে ধরুন পিছনের দিকে। এভাবে ২০ সেকেন্ড রেখে হাতের তালুকে নিচু করে ২০ সেকেন্ড আঙুলগুলো ভিতরের দিকে ঠেলুন। এই ব্যায়াম করার সময় প্রথমেই বেশি স্ট্রেচ করবেন না, এতে ব্যথা বাড়তে পারে। এই ব্যায়াম দিনে দু’হাতে ৩-৪ সেট করুন।
  • ৫. আগের ব্যায়ামের মতোই একই ভঙ্গিতে হাতের তালু রাখুন পাশ বরাবর। এরপর বুড়ো আঙুলকে ভাঁজ করে মধ্যমা (Middle Finger) ও অনামিকার (Ring Finger) মাঝে রাখুন। বাকি চারটে আঙুল মুড়ে মুঠো করে নিন হাত। এই অবস্থায় উপর-নীচ, ডান দিক-বাঁ দিক করুন। দিনে ৩ বার করে অন্তত ২০ সেট এই ব্যায়াম করুন।
  • ৬. এই ব্যায়াম করতে হলে প্রয়োজন ডাম্বেলস (Dumbbells)। চাইলে ২৫০ মিলিলিটারের জল ভর্তি বোতলও ব্যবহার করতে পারেন। এই ব্যায়ামের জন্য একটি টেবিলের কোণ বরাবর এমন ভাবে হাত রাখুন যাতে কনুই টেবিলের উপরে এবং কব্জি টেবিলের বাইরে ঝুলে থাকে। এরপর বোতল বা ডাম্বেল মুঠোয় ধরে হাত এমন ভাবে রাখুন, যাতে আঙুলগুলি থাকে ছাদের দিকে। কব্জি থেকে হাত ১৫ বার উপর-নীচ করুন। এরপর উল্টে নিন হাত। মুঠো করা হাতের আঙুল রাখুন মাটির দিকে। এভাবে ১৫ বার উপর-নীচ করুন। দিনে অন্তত ৩ সেট করে করতে হবে এই ব্যায়াম।
 অনেক বেশি ব্যথা থাকলে কিছু দিন কব্জিকে আরাম দিন
 অনেক বেশি ব্যথা থাকলে কিছু দিন কব্জিকে আরাম দিন

তবে যদি আপনার কব্জিতে অনেক বেশি ব্যথা থাকে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এই ব্যায়াম করবেন না। কিছু দিন কব্জিকে আরাম দিন। ভারী কাজ করবেন না। একটু ব্যথ্যা কমলে এই ব্যায়ামগুলো করুন। ব্যায়ামের সময় যত বাড়বে তত কব্জির জোড় বাড়বে এবং ব্যথা কমবে। তবে দীর্ঘদিন ধরে কব্জিতে ব্যথা থাকলে এবং সেই ব্যথা না কমলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File